![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আমার পথ চলা শুরু পুরো পৃথিবী চড়াব বলে। আমি তিমির রাত্রির মাঝে হেঁটে চলেছি ঘোর কাল অমানিশাকে আলোকিত করবে বলে। আমার হাতে আছে চন্দ্রদ্বীপের একখণ্ড আলোকবর্তিকা। আমি চির উন্মাদ এই বসুন্ধারার সুন্দর কে ভালবেসে। আর তাই আমি চির সংগ্রামী এই সুন্দরকে সাজিয়ে রাখার নিমিত্তে। আমি তাই হাঁটিতেছি দুর্গম অরন্নের মাঝে। আমি স্বপ্নবাজ। শরতের আকাশে চারদিকে শুনশান শব্দে শুভ্র মেঘের খেলা মানুষের মনকে যেমন উদ্বেলিত করে, তেমন সুন্দর কোন পৃথিবীর খোজে আমি চলিতেছি শতাব্দীর পথে। আমি চাইনি আবু গারিবের কারাগার, আমি চাইনি পার্ল হারবার কিংবা হিরোশিমা নাগাসাকি। আমি চাই এই পৃথিবী নামক মহা অরণ্যকে হিংস্র পশুর হাত থেকে মুক্ত করে, আগাছা আর জঞ্জাল পরিস্কার করে সুশোভিত বিমোহিত উদ্যান বনাতে। আমি এই পৃথিবীকে স্বপ্ন দেখিয়েছি, আমিই এই স্বপ্ন পৃথিবীর বুকে রংধনুর সাত রঙ দিয়ে আকব। আমি ছিলাম, আছি, থাকব। মানব থেকে মানবের মাঝে। আমার শুরু ছিল না, শেষও নেই। আমার শুধু রূপান্তর ঘটে মানবের মাঝে। আমি এসেছি চে’র মাঝে, আমি এসেছি সুকান্তের মাঝে, আমি এসেছি তিতুমিরের মাঝে। আমিই চির যৌবনা।
আবার তোরা মানুষ হঃ
বনফুলের লেমন বরপি মিষ্টিটা আমার খুব প্রিয়। কাল আব্দুল্লাহপুর গিয়েছিলাম এক কাজে। ভাবলাম এক কেজি লেমন বরপি নিয়ে যাই। আব্দুল্লাহপুর থেকে যখন রওনা দিব তখন মিষ্টি কেনার জন্য বাসস্ট্যান্ড পুরো ঘুরলাম। কিন্তু বনফুলের শো-রুম পেলাম না। জানামতে আজমপুরে একটা শো-রুম ছিল। কি আর করা প্রিয় মিষ্টি বলে কথা। তাই আজমপুরে বাস থেকে নেমে মিষ্টি কিনে আবার বাসার উদ্দেশ্যে বাসে চড়লাম। আমার মিষ্টিটা খুব প্রিয় তাই ওটা পাওয়ার জন্য একটু কাঠখড় পোড়ালাম।
সোবাহান ঘরামী। থাকেন মহাখালী বস্তিতে। কাজ করেন গুলিস্তানের একটা পাউরুটি বানানোর কারখানায়। মাসের শেষদিন আজ। বেতন পাবেন। গত তিন মাস যাবত ছোট মেয়েটা বায়না ধরেছে একটা স্কুল ব্যাগ কিনে দেওয়ার জন্য। রেললাইনের পাসে যে ব্যাগটা এক বছর আগে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পেয়েছিল সেটা দিয়ে স্কুলে বই নিতে গেলে বই পরে যায়। এযাবৎ কুড়ি খানেক সেলাই পরেছে ব্যাগটাতে। কিছুক্ষণ পরে বেতন পাবেন। ভাবলেন গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে একটা ব্যাগ কিনে নিয়ে যাবেন। সারাদিন গাধার খাটুনি খেটে সন্ধ্যা বেলায় বেতন নিয়ে কারখানা থেকে বের হলেন। সদ্য পাওয়া ঘামে ভেজা টাকা দিয়ে ছোট মেয়ের জন্য একটা পুরনো ব্যাগ কিনে বাসে উঠলেন বাসায় যাওয়ার জন্য। ভাগ্যক্রমে জানালার পাশের সিটেই বসার সুযোগ হল। বারবার ব্যাগটার দিকে তাকাচ্ছেন আর ভাবছেন ব্যাগটা পেয়ে মেয়েটা কতটুকু খুশি হবে। ব্যাগটা হলুদ না হয়ে লাল হলে কি আর একটু ভাল হত। ব্যাগের পকেট কম হল কিনা। একবার বাইরে তাকাচ্ছেন আর একবার ব্যাগের দিকে তাকাচ্ছেন। আর মুচকি মুচকি হাসছেন। পাশের সিটের লোকটা তার হাসি দেখে হয়ত ভাবছে লোকটার মাথায় সমস্যা আছে। হালকা হালকা শীতের হাওয়া বইছে। খোলা জানালা দিয়ে শীতল হাওয়া এসে সোবাহান ঘরামীর সারাদিনের ঘাম শুকাতে ব্যাস্ত। হঠাৎ করে কিরকম যেন একটা বিকট আওয়াজ হল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে না তাকাতেই একটা আগুনের ফুলকি জানালা দিয়ে ঢুকল। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার সারা শরীর ঝলসে উঠল। নির্বাক সোবাহান ঘরামী শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। কি হল, কিভাবে হল কিছুই তার বোধগম্য নয়। পাশে তাকিয়ে দেখে হলুদ ব্যাগটা লাল হয়ে গেছে। গায়ের সব বস্ত্র পুড়ে গেছে। গায়ে কিছু নেই। কিছু লোক হৈ হৈ করে লোকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। তাকেও কিছু লোক কোলে তুলে নিল। মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। উলঙ্গ সোবাহান ঘরামীর লজ্জা নিবারণের কোন তাড়া নেই। সে শুধু চারদিকে তাকিয়ে ব্যাগটা খুজছে। কে বা কারা যেন তার ইচ্ছেটা পূর্ণ করেছে। হলুদ ব্যাগটা লাল করে দিয়েছে।
সোবাহান ঘরামী এখানে একটা কল্পিত চরিত্র মাত্র। এর বাস্তব চিত্র আজ আমরা প্রতিদিনই দু চারটি দেখে চলেছি। নাহিদ থেকে শুরু করে মোজাম্মেল। সবাই যেন এক একজন সোবাহান ঘরামী। মনির পুড়েছে? না মনির পুড়ে নি। পুড়েছে বাঙ্গালীর হাজার বছরের গর্বের বিবেক। বাঙ্গালী সভ্যতা আজ অসভ্যের কাছে নত শীর। কাল দুষিত রাজনীতির বলি আজ হাজার বছরের আত্মীয়তার বন্ধনে গড়া এই বাংলার জনপদ। আমার বাংলা মা আজ প্রতিদিন ধর্ষিত হচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধে যে মা তার সতীত্বকে একবার বিলিয়ে দিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে নিজেকে, নিজের সন্তানদের মুক্ত করেছেন, সে মা আজ বিয়াল্লিশ বছর পরে তারই কুলাঙ্গার সন্তানদের রাক্ষসী ক্ষুধা মিটাতে গিয়ে বারবার ধর্ষিত হচ্ছেন।
গর্বিত বাঙ্গালী জাতির এই অধঃপতনের জন্য দায়ী কে? আপনি? আমি? সাধারণ জনগন? নাকি রাজনীতিবিদ? আমরা সবাই এর জন্য দায়ী। আমেরিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট Thomas Jefferson গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন The price of freedom is eternal vigilance- জাগ্রত জনতাই গণতন্ত্রের রক্ষা কবচ। জনগন কে? আমি কি জনগন নই? আপনি কি নন? যদি হয়েই থাকি তাহলে জাগ্রত নই। সোজা হিসেব আমরা জনগন জাগ্রত নই, তাই জাগ্রত রাজনীতিবিদ। আর তাদের এই জাগরনে জ্বলছে পুরো দেশ। অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মত বিড়ম্বনা আর নাই। আমরা তো রাজনীতিকে দোষারোপ করে রাজনীতি করার অধিকার ছেরে দিয়েছি। তাহলেতো যারা নীতির রাজাকে রাজার নীতি করে প্রজাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন তাদের দোষটা মুখ্য নয়, গৌণ। রাজনীতির স্টেডিয়ামে আমরা জনগন দখল করে নিয়েছি গ্যালারী আর দুই দলে বিভক্ত হয়ে স্কোয়াড ঘোষণা করেছি কুলাঙ্গারদের নাম লিখে। এখন কুলাঙ্গাররা সবুজ মাঠ দখল করে নিয়েছে। সবুজ মাঠ এখন কর্দমাক্ত মাঠে রূপান্তরিত হয়েছে। পাঁচবছর পর পর এক দেরহাজার টাকার বিনময়ে পাঁচবছর মাকে ধর্ষণ করার জন্য ইজারা দিয়ে দেই। আমরা জনগণই সবচেয়ে বেশি দায়ী।
বিরোধীদলের প্রতি একটা প্রশ্ন আপনারা নিরীহ মানুষকে কেন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন? সাধারণ মানুষতো আপনার বারা ভাতে ছাই দেয় নি। যারা ছাই দিয়েছে তাদের খুলি উড়িয়ে দিন। তত্ত্বাবধায়ক তো সাধারণ জনগন বাদ দেই নি। নির্বাচনী ম্যান্ডেটেও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেয়ার কথা ছিল না। তো কোন অপরাধে জনগণকে আপনাদের দুষিত রাজনীতির বলি করছেন?
সরকারী দলতো আরও বেশী স্বৈরাচারী। যেখানে দেশের নব্বই ভাগ লোক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সেখানে আপনারা কেন জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন না? সংবিধান সংশোধনীর সংসদীয় কমিটিও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেয়ার বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছিল। বিরোধী দলের প্রতি যেভাবে সরকারী দল দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে তাতে সরাকারের প্রতি তারা কিভাবে আস্থাশীল হবেন? মাত্র পাঁচ বছর আগেও যেখানে মিছিলে লাঠিচার্জ করলে টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে যেত সেখানে আজ প্রায় প্রতিদিন প্রতিটা মিছিলে অবলীলায় গুলি করা হচ্ছে। একটা অপমৃত্যু খবরের আয়ু থাকে ঘণ্টা খানেক। বিরোধী দলের জাতীয় নেতারা আজ প্রায় সবাই কারাগারে। সরকারী দলের অফিসে নির্বাচনী সুশীতল হাওয়া, আনন্দের বন্যা। অপরদিকে বিরোধীদলের অফিসে আজ সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালানোর কেউ নেই। লোকজনকে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না, চারদিকে অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র। এমতাবস্থায়তো আন্দোলনের কোন ভাষা খুজে না পেয়ে চোরাগুপ্তা হামলা করবেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আর কিই বা করার আছে? কোন পথে তারা আন্দোলন করলে আপনারা তাদের দাবি মেনে নিবেন?
আসল কথাটা হল, বিচার মানি কিন্তু তাল গাছটা আমার।
এই কুলাঙ্গার রাজনীতিবিদদের প্রতি আজ একটাই কথা, আবার তোরা মানুষ হ।
©somewhere in net ltd.