![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতই এই তিতির। মাঝে মাঝে অসাধারণ হতে ইচ্ছে করে খুব। ইচ্ছে করে রহস্যের জট পাকাতে, ভালবাসি জট খুলতেও। স্বপ্ন দেখি হরেক রঙের; লাল স্বপ্ন, নীল স্বপ্ন, আর দেখি মহাবিস্ব ভ্রমণের স্বপ্নও। প্রকৃতি খেলে সৃষ্টি নিয়ে, আর আমি খেলি তাকে নিয়ে। খুব খেলি নিজের মনে। খেলতে খেলতে হঠাৎ হেসে উঠি খিলখিল করে... বই পড়তে ভালবাসি। ছবি আঁকতে ভালবাসি; লেখালেখির প্রবণতাও আছে কিছুটা। ভালবাসি গান শুনতে, আর গাইতেও। মাঝে মাঝে গানের সুরে হারিয়ে যাই অজানা এক রাজ্যে। বাবা, মা, দুই ভাই আর আমাকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। বেঁচে আছি সুখ-দুঃখ আর মান-অভিমান নিয়ে। একটু দুষ্টু, একটু মিষ্টি আর একই সঙ্গে বিপরিতমুখী স্বভাবের এই আমি; এগিয়ে যাচ্ছি অজানা ভবিষ্যতের দিকে।
১
{মন খারাপ করে বসে আছে মুগ্ধা । দৃষ্টিঅ কেমন জানি উদাস উদাস । হঠাৎ শব্দ শুনে সে পিছে ফিরল । মহুয়া এসেছে । }
মহুয়া : মন খারাপ কেন মুগ্ধ'র মুগ্ধার ?
মুগ্ধা : জরুরি কাজ পড়েছে ওর । হঠাৎ যেতে হয়েছে । বলেছে পরশু ফিরবে ।
মহুয়া : ও আচ্ছা । তো এই ব্যপার ? আচ্ছা দেখ , কি এনেছি তোমার জন্য...
একটা ক্যানভাস এগিয়ে দিলো সে মুগ্ধার দিকে । এখানে এসে ক্যামেরার অভাবে মুগ্ধর সঙ্গের যে মুহূর্তটুকু সে ধরে রাখতে পারেনি এবং আদৌ আফসোস করে , এটা যে সেই ছবি ।
মুগ্ধা : এটা তুমি এঁকেছ ?
মহুয়া : হুম ।
মুগ্ধা : কিন্তু ...
মহুয়া : তুমি যে বর্ণনা দিয়েছিলে , তারই সুত্র ধরে আঁকা । দেখতো , হয়েছে কি_না ?
মুগ্ধা : হয়েছে জিজ্ঞেস করছ ? দৌড়াচ্ছে । ক্যামেরার ছবিতে তো প্রাণ থাকেনা , কিন্তু এই ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে অই মুহূর্তটুকু কেটে আটকে দিয়েছ । কিভাবে করলে ?
মহুয়া : আরেহ ! হয়েছে , আর বলতে হবেনা ।
মুগ্ধা : হুম হুম , বুঝেছি । আচ্ছা বল , কি খাবে ? কফি চলবে ?
মহুয়া : খারাপ না , চাইলে খাওয়াতে পারো ।
মুগ্ধা : আচ্ছা , তুমি একটু বোস _ আমি আনছি
{মুগ্ধা কফি আনতে চলে গেল । মহুয়া ঘুরে ঘুরে মুগ্ধার রুমের দেয়ালের মুগ্ধ আর মুগ্ধার ছবিগুলো দেখছে আর তাদের কিছু একটা উপহার দেওয়ার কথা ভাবছে । এমন কিছু একটা , যা তারা কখনও না ভুলে । }
মুগ্ধ আর মুগ্ধার বিয়ে হয়েছে সপ্তাহ দুই আগে । মধু-চন্দ্রিমার জন্য তারা বেছে নিয়েছে শহরের অদুরের গাজীপুরের এই বাগান বাড়িটা । দিন দুই হল তারা এসেছে এইখানে । কিন্তু জরুরি কাজে মুগ্ধকে ঢাকায় যেতে হয়েছে ।
আর পাশের বাংলোটা মহুয়াদের । মহুয়ার মা নেই । কোন এক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন । আর একই দুর্ঘটনায় মহুয়া হারিয়েছে তার চলন শক্তি । বাবা অত বড় ধাক্কা সাম্লাতে না পেরে নাকি হার্ট এটাক করেছিলেন । তারপর থেকে বদ্ধ উন্মাদ বলা চলে । কারও সাথে কথা বলেন না , শুধু মহুয়াকে দেখলে আঁতকে ওঠেন ।
এবার আসা যাক মহুয়ার কথায় । মুগ্ধ আর মহুয়া ছোতবেলার বন্ধু । একসাথে বড় হয়েছে অনেকটা সময় । এখন মুগ্ধ লেখাপড়া শেষ করে বাবার ব্যবসা ধরেছে_প্রেমিকা মুগ্ধা কে বিয়ে করেছে । আর মহুয়া বিদেশ থেকে ডাক্তারি পড়ে এসেছে । মেয়েটা শান্ত_গম্ভীর । ভালো ছবি আঁকে । এখানে এসেছে মুলত বাবাকে দেখতে আর বায়ু পরিবর্তনের নাম করে কিছুদিন ছুটি কাটাতে ।
{হঠাৎ মহুয়ার ফোন বেজে উঠলো । মুগ্ধ ফোন দিয়েছে ।}
মুগ্ধ : হ্যালো মহু , কাল ফিরছি । একটু সাহায্য করবি ?
মহুয়া : তোর বউ তো বলল পরশু ফিরছিস ।
মুগ্ধ : হুম , ও তা-ই জানে । ওকে একা ফেলে এসে খারাপ লাগছে । তাই ভাবছি ওকে সারপ্রাইজ দেব । একটু সাহায্য কর না রে দোস্ত ?
মহুয়া : বাব্বাহ ! আমাদের মুগ্ধ বড় হয়ে গেছে নাকি ?
মুগ্ধ : যাহ ! এমন করিস না তো । সাহায্য করবি কি_না বল ?
মহুয়া : আচ্ছা বল , কি করতে হবে ?
মুগ্ধ : বেশি কিছুনা । তুই খালি কাল ওকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তোর কাছে রাখবি । আমি এসে ঘর সাজানোর ব্যবস্থা করব । যদিও এখানে কিছু কাজ আছে , তবুও জলদি ফিরব । কাজ ছেড়েই আসব , কিছু করার নেই ।
মহুয়া : তাতে আমার কি লাভ ?
মুগ্ধ : যা । তোকে খুব ভালো একটা বর খুঁজে দেবনে । খুশি ?
মহুয়া : আহ ! রাখ তো ফাযলামো । এবার আমি বলি , তুই শোন _ মুগ্ধাকে তার রুম থেকে সারাদিনের জন্য হটানো সম্ভব না । আমি মেয়ে , আমি বুঝি । আমি এক কাজ করি , আমার বাসার দো'তলার দক্ষিনের রুমটা সাজিয়ে রাখবো । তুইও তোর কাজ শেষ করেই আসবি । এসে ওকে সারপ্রাইজ দিবি । ঠিকাছে ?
মুগ্ধ : ঠিক আবার না থাকে রে দোস্ত ? আমি সন্ধ্যা ছ'টার মাঝে চলে আসব । থ্যাংক ইউ দোস্ত , থ্যাংক ইউ ভেরি ভেরি মাচ । তুই দেখিস , আমি তোকে সব শোধ করে দেব ।
মহুয়া : হেহ ! তা আর বলতে ...
হয়েছে , আর ঠ্যাঙ খাওয়ানো লাগবেনা । রাখি , বাই ।
মুগ্ধ : ওকে দোস্ত , বাই ।
মহুয়া এতক্ষনে ভেবে ফেলেছে তাদের কি উপহার দেবে । তার ঠোঁটের কণে রহস্যভরা এক হাসি ফুটে উঠল ...
২
মহুয়া : এসে পড়েছিস ? যা উপরে , তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে ।
{মুগ্ধ উপরে উঠছে...}
এইদিকে মুগ্ধ উপরে উঠছে আর ওইদিকে তার মুগ্ধা নিজের শেষ নিঃশ্বাস গুনছে । আর কিছু করারও নেই । দরজা খুললেই মুগ্ধা ...
রুমের প্রায় অর্ধেক বিস্তৃত একটা কাঁচের পানিপুর্ণ ট্যাংক রাখা , অসহনীয় গরম পানি । মুগ্ধাকে বেঁধে রাখা হয়েছে ঠিক তার উপরে । মুগ্ধার হাত-পা আর মুখ বাঁধা । আর গলার সাথের দড়িটার সংযোগ দরজার সাথে । দরজা খুললেই সে পড়বে ফুটন্ত গরম পানিতে । মহুয়া বলেছে তার মুগ্ধর হাতেই হবে তার মৃত্যু ।
মুগ্ধ দরজা খুলতেই ঝুপ করে কিছু একটা পানিতে পড়ার আওয়াজ হল । আর মুগ্ধর মাথার পিছে সজোরে আঘাত হানলো মহুয়া । মুগ্ধ আর মুগ্ধা একে অপরের শেষ মুহূর্ত দেখছে । মুগ্ধার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে । অজ্ঞান হওার আগে মুগ্ধ খালি একটা কথাই বলেছে ,
মুগ্ধ : আমার মুগ্ধা কে বাঁচা মহু ...
৩
মুগ্ধর জ্ঞান ফিরল । সে নিজেকে পেল তার রুমের ইজি চেয়ারে । মাথাটা ভারি হয়ে আছে । হঠাৎ সব মনে পড়তেই মুগ্ধাকে খুঁজল পাগলের মতন ।
মুগ্ধা পাশেই বিছানায় ঘুমুচ্ছিল শিশুর মতন । তার চেহারা দেখে মুগ্ধ আঁতকে উঠল । তার সারা গায়ে কেমন যেন কালো কালো ছোপ পড়ে আছে , যেন পুড়ে ফোস্কা পড়ে গেছিল । কোথায় সে সৌন্দর্য যার জন্য মুগ্ধ পাগল হয়েছিল ?
পাগলের মতন দৌড়ে মুগ্ধাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে চেয়ার থেকে ধুপ পড়ে গেল মুগ্ধ । চিৎকার করে ডাকল সে মুগ্ধাকে ।
মুগ্ধার জ্ঞান ফিরল মুগ্ধর ঘন্টাখানেক পরে । মুগ্ধা দৌড়ে গিয়ে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরল ।
মুগ্ধর পা না দেখে মুগ্ধা ...
তারা কিছুই বুঝতে পারছেনা । টেবিলের উপরে একটা ক্যানভাস আর একটা খাম চোখে পড়ল তাদের । মুগ্ধা খাম টা নিয়ে তা খুলে জোরে জোরে পড়তে শুরু করল ____
মুগ্ধ ও মুগ্ধা ,
তোদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক , এটাই চাই । নতুন এই জীবনের শুরুতে তোদের এমন কিছু একটা উপহার দিতে চাইছিলাম যা তোরা চাইলেও ভুলতে পারবিনা । তারই সুত্র ধরে ঐ দুষ্টুমিটা করতে হল । বলে রাখি , ঐ কাহিনি প্রায় দেড় মাস আগের । এতদিনে তোদের ভালো করে তুলেই আমি নিজের দায়িত্ব শেষ করলাম ।
আমি ছোতবেলা থেকে বাবা-মা'কে খালি ঝগড়াই করতে দেখেছি । মায়ের বিছানায় বাবাকে অন্য মহিলা তুলতে দেখেছি । জানিস , মায়ের মৃত্যুটা কোন দুর্ঘটনা ছিলনা । এক রাতে মাতাল বাবা আমার চোখের সামনে মা'কে জবাই করেছে । তারপর ঐ আমতলায় পুঁতে ফেলে । মা পরকালেও শান্তি পান্নি । মায়ের আত্মা আমার কাছে আসেন আর কাঁদেন । কাউকে বলিনি কেউ বিশ্বাস করবেনা দেখে , কিন্তু সত্যি , মা আমার সাথেই ছিলেন সবসময় ।
বাবাকে আমি শাস্তি দিয়েছি । দেখিস না লোকটা এখন কেমন ?
হা হা হা
যাক_গে । এখন বলি তোদের উপহারের কথা । মুগ্ধ , তোর মুগ্ধা কখনও মা হতে পারবেনা , আর তার বাহ্যিক সৌন্দর্যের পর এখন আর তাকে কেউ নেবেওনা । আর তুইও কখনও হাঁটতে পারবিনা । এইভাবে আমি তোদেরকে সারাজীবনের জন্য একে-অপরের সঙ্গ উপহার দিলাম ।
আমি জানি ,
মুগ্ধাকে দেখে মুগ্ধ মনে-প্রাণে চাইবে তাকে জড়িয়ে ধরতে । কিন্তু একি ? পা কোথায় ???
হা হা হা
আর শোন , তোদের কিছুই কিন্তু হারায়নি । ক্যানভাস্টা খুলে দেখ , ঐ ছবিতে তোর পা , মুগ্ধার বাহ্যিক সৌন্দর্য _ সবই আছে । আমি তোর পরিবার পুর্ণ করে দিয়েছি ঐ ছবিতে । দেখ , তদের কোলে একটা ফুটফুটে মেয়েও আছে । মেয়েটাকে চিনতে পারছিস তো মুগ্ধ ? হুম , অইটা আমি ।
আমি তোদের এত ভালো বন্ধু , আমাকে ছাড়া কি তোদের চলবে বল ?
আমি এখন আর তোদের নাগালের মাঝে নেই রে । আমার রুমে গিয়ে দেখ , কি শান্তির ঘুমটাই না দিয়েছি চিরতরের জন্য ।
আ__হা !!
তবে দেহত্যাগী হলেও তোদের ছাড়ছিনা । ছাড়ার জন্য কি এত গভীর বন্ধুত্ব টা পাতালাম , বল ? তোরাই তো আমাকে তোদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবি , দেখিস ।
ভালো থাক , হ্যাপি ম্যারিড লাইফ ।
ইতি,
তোদের প্রানের বন্ধু ,
মহুয়া
তারা দুইজন অপ্রকৃতস্থের মতন উপহারের দিকে তাকিয়ে রইল ...............
২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৮
তিতির অয়নিকা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
অভ্যাস বলতে কি , শখের বসে লেখা । সবে তো শুরুই । এখনও তো অনেক বাকি .।
আপনাদের উৎসাহ আর সঙ্গ নিয়েই এগিয়ে যাব । আশা করি পাশে থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩
লেখোয়াড় বলেছেন:
আপনার নিকটি খুব মিষ্টি হয়েছে। "তিতির অয়নিকা"
প্রথম লেকা দিয়েই তো মুগ্ধ করলেন। লেখার অভ্যাস আছে নাকি?
ব্লগে স্বাগতম।
শুভ ব্লগিং। ভাল থাকুন।