নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতই এই তিতির। মাঝে মাঝে অসাধারণ হতে ইচ্ছে করে খুব। ইচ্ছে করে রহস্যের জট পাকাতে, ভালবাসি জট খুলতেও।স্বপ্ন দেখি হরেক রঙের; লাল স্বপ্ন, নীল স্বপ্ন, আর দেখি মহাবিস্ব ভ্রমণের স্বপ্নও।প্রকৃতি খেলে সৃষ্টি নিয়ে, আর আমি খেলি তাকে নিয়ে। খুব খ

তিতির অয়নিকা

আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতই এই তিতির। মাঝে মাঝে অসাধারণ হতে ইচ্ছে করে খুব। ইচ্ছে করে রহস্যের জট পাকাতে, ভালবাসি জট খুলতেও। স্বপ্ন দেখি হরেক রঙের; লাল স্বপ্ন, নীল স্বপ্ন, আর দেখি মহাবিস্ব ভ্রমণের স্বপ্নও। প্রকৃতি খেলে সৃষ্টি নিয়ে, আর আমি খেলি তাকে নিয়ে। খুব খেলি নিজের মনে। খেলতে খেলতে হঠাৎ হেসে উঠি খিলখিল করে... বই পড়তে ভালবাসি। ছবি আঁকতে ভালবাসি; লেখালেখির প্রবণতাও আছে কিছুটা। ভালবাসি গান শুনতে, আর গাইতেও। মাঝে মাঝে গানের সুরে হারিয়ে যাই অজানা এক রাজ্যে। বাবা, মা, দুই ভাই আর আমাকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। বেঁচে আছি সুখ-দুঃখ আর মান-অভিমান নিয়ে। একটু দুষ্টু, একটু মিষ্টি আর একই সঙ্গে বিপরিতমুখী স্বভাবের এই আমি; এগিয়ে যাচ্ছি অজানা ভবিষ্যতের দিকে।

তিতির অয়নিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমানুষিক ক্ষুধা

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫

১।

শ্রী প্রকাশ কুমার রায় ; সচরাচর রায় বলতেই চোখের সামনে যেমনটা ভেসে ওঠে , তেমন শান-শওকত ওয়ালা লোক তিনি না ।

পুরান ঢাকার মিডফোর্ডে একটা বাসা ডুয়েল ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি । চাকরি করেন এক ব্যাংকের ক্যাশ ম্যানেজার পদে । গোঁড়া ব্রাহ্মণ বলে বিয়ের ফুল _ আর ফোটানো হয়ে উঠেনি তাঁর । বয়স এখন বোধকরি ৫০ বা তাঁর কিছু কম-বেশী হবে । চুলে টাক প্রায় পড়েই গেছে , তবুও টিকির কাছে কিভাবে যে কিছুটা চুল ঘন হয়ে আছে , সে এক রহস্য বটে । ভুঁড়িটা যদিও " ভাঁড় " মশাই ( গোপাল ভাঁড় ) কে স্মরণ করিয়ে দেয় , তিনি কিন্তু পাকা নিরামিষাশী __ পেঁয়াজ-রশুন টুক ছুঁয়ে দেখেননি জীবনে । লোক বলতে তিনি অতি সৎ । আজকাল সৎ এর এমন নজির খুব কম-ই আছে ।

তো , শ্রী প্রকাশ কুমার মশাইয়ের আজ এ কি বিপত্তি দেখা দিল হে ???



২।



আশ্বিন মাস । " মা " কে ঘরে তুলতে হবে । কিন্তু পাশের কামরার শরীফ ভাই ধুপের সুগন্ধ আর ঘণ্টির সুমধুর আওয়াজে বড়ই বিরক্তি প্রকাশ করেন । যাই হোক , ভেজাল চুকিয়ে মা'কে ঘরে তুলতে হবে , পূজা দিতে হবে ; আবার প্রাণী হয়ে জন্মানোর খেসারতে নিজের পেট পূজার ক্ষমাটুকুই বা করবে কে ? ইশ ! একটা গিন্নি থাকলে মন্দ হতনা ...

রাম রাম !! কি ভাবছেন এইসব ? ভাবতে ভাবতে কখন যে ক্যাশের হিসাবে একটা গড়মিল বেধে গেল ...

যাহ , আবার নতুন করে হিসাব সারতে হবে । আজ না চাইতেও দেরিটা ছাড় দিলনা ...

হিসাব শেষ করে মা'কে ঘরে আনতে আনতে ৮ টা বেজে গেল । তারপর মুর্তি স্থাপন , পূজা দেওয়া সেরে এবার রান্নার পালা । রান্না করবেন ভাল কথা , সবজি টা হাতে নিয়ে যে-ই সবজি টা বটিতে ছোঁয়াবেন , ওমনি ঘটল ঘটনা ...

কে যেন কাতর কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল ,

=> আমাকে মেরনা !!!

চমকে উঠলেন !

=> যাহ , মনের ভুল ।

আবার যখন কাটতেই যাবেন , কে যেন কেঁদে কেঁদে বলে অনুরোধ করল ,

=> দোহাই লাগে , মেরোনা আমায় !!

=> ক্ক-কেহ ? কে কথা বলে ?

অদৃশ্যে ছুঁড়ে দিলো কথাটি । কিন্তু কে যেন উত্তর দিলো ,

=> আমি ...

=> আমি কে ? সাহস থাকলে সামনে আস ।

=> আমি তো তোমার সামনেই । তোমার হাতের বেগুনটা আমি ...

হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন বেগুনটা । কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা ... তারপর গিয়ে যে-ই বেগুনটা হাতে নেবেন , ওমনি সুড়ুৎ করে সোজা হয়ে গেল _ যেন দাঁড়িয়ে আছে । বেগুনটার যেন হাত-পা গজিয়েছে । যেন সে হাঁটু গেঁড়ে হাত জোড় করে বলছে ,

বেগুন : দয়া কর ভাই !

প্রকাশ : তু-তুত-তুমি কথা বলছ কি করে ?

বেগুন : আমরা পারি , আমাদেরও তো জীবন আছে ...

প্রকাশ : তোমাদের মানে ? আর কে কে ?

বেগুন : জ্বি , আমাদের । আপনার ঘরে উপস্থিত সকল সবজি এবং গোটা সবজি সম্প্রদায় কে বুঝাচ্ছি । দয়া করুন । আমাদের খাবেন না ...

এই আকুতি দেখে কুমার মশাইয়ের ভয় না হয়ে বড় দয়া হল মনে । আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রতিমার দিকে তাকাতেই প্রবল বাতাসে টুপ করে একখানি ফুল পড়ল । মায়ের সন্মতি দেখে তিনি বলেও ফেললেন ,

=> খাবনা ভাই তোমাদের । নিশ্চিন্ত মনে থাক ।

অতঃপর তিনি দু'গ্লাস পানি খেয়েই শুয়ে পড়লেন ।



৩।



এইভাবে খালি দুধ-পানি খেয়ে দিন দুই পার হয়ে গেল । চাল ও দেখি কথা বলে _ খাবে টা কি ? টানা মিঠাই খাওয়ার তর টা এই বুড়ো শরীরে আর শইলনা । ব্লাড সুগারের রোজ রুটিন হয়ে গেল ১৫-১৭ । আর এইদিকে সবজিদের মিলিত ধ্বনি ,

সবজিরা : তুমি ভাই মানুষ । তুমি খাবে মাংশ । এইসব ঘাস-লতা খেতে কি জন্মেছ নাকি ?

প্রকাশ : রাম রাম ! অছুঁত হয়ে মরবার সাধ্যি নেই আমার !!!



অবশেষে ক্ষুধার তর সইতে না পেরে দৌড়ে গেল শরীফ ভাইয়ের কাছে । টোকা পড়ল জনাব শরীফের কামরায় ,

=> দাদা কি জেগে আছ ? জরুরী কথা ছিল একটু ...

শরীফ দরজা খুলে ভিতরে নিল ।

পরদিন পেপারের নিখোঁজ তালিকায় নতুন নাম-ছবি যুক্ত হল ___

" শরীফ খান "



৪।



শরীফ সাহেব নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে নতুন ঝামেলা , প্রতিদিন অফিসের পর থানায় যেতে হয় স্টেটমেন্ট দিতে ।

স্টেটমেন্ট নামের মশার কামড় _ কে জানে কতদিন সইতে হবে ???

কিন্তু কুমার মশাই শরীরের দিক দিয়ে বেশ সেরে উঠেছেন । শরীরটা এখন বেশ ভাল । খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট এখন আর নেই ।

থানা থেকে বাসায় এসে হাতমুখ ধুলেন । ফ্রিজ থেকে একটা পলিথিন বের করলেন । আর তাঁর থেকে ১টা কিডনী আর ২-৩ টা আঙ্গুল বের করে কচকচ করে চাবাতে লাগলেন ।



আর দূর থেকে যেন মায়ের প্রতিমা আর সবজিগুলো তারই দিকে তাকিয়ে হাসছে .........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.