নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতই এই তিতির। মাঝে মাঝে অসাধারণ হতে ইচ্ছে করে খুব। ইচ্ছে করে রহস্যের জট পাকাতে, ভালবাসি জট খুলতেও।স্বপ্ন দেখি হরেক রঙের; লাল স্বপ্ন, নীল স্বপ্ন, আর দেখি মহাবিস্ব ভ্রমণের স্বপ্নও।প্রকৃতি খেলে সৃষ্টি নিয়ে, আর আমি খেলি তাকে নিয়ে। খুব খ

তিতির অয়নিকা

আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতই এই তিতির। মাঝে মাঝে অসাধারণ হতে ইচ্ছে করে খুব। ইচ্ছে করে রহস্যের জট পাকাতে, ভালবাসি জট খুলতেও। স্বপ্ন দেখি হরেক রঙের; লাল স্বপ্ন, নীল স্বপ্ন, আর দেখি মহাবিস্ব ভ্রমণের স্বপ্নও। প্রকৃতি খেলে সৃষ্টি নিয়ে, আর আমি খেলি তাকে নিয়ে। খুব খেলি নিজের মনে। খেলতে খেলতে হঠাৎ হেসে উঠি খিলখিল করে... বই পড়তে ভালবাসি। ছবি আঁকতে ভালবাসি; লেখালেখির প্রবণতাও আছে কিছুটা। ভালবাসি গান শুনতে, আর গাইতেও। মাঝে মাঝে গানের সুরে হারিয়ে যাই অজানা এক রাজ্যে। বাবা, মা, দুই ভাই আর আমাকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। বেঁচে আছি সুখ-দুঃখ আর মান-অভিমান নিয়ে। একটু দুষ্টু, একটু মিষ্টি আর একই সঙ্গে বিপরিতমুখী স্বভাবের এই আমি; এগিয়ে যাচ্ছি অজানা ভবিষ্যতের দিকে।

তিতির অয়নিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবীর তোর জন্যে ....

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২৫

ফযরের আজান দেয়নি এখনও , দেরি আছে ঘন্টা খানেক । মা-বাবা সেহরি শেষ করেছেন সবে । একটু আগে আগেই খেয়ে নিয়েছেন _ এখন কাজ শেষ করবেন । রোজার মাস না এখন , আগামীকাল একটা বিশেষ দিন । তাই বাবা-মা রোজা রাখবেন । এখন আব্বা পান খাবেন ; আম্মা বাসন ধুতে যাবেন ঘাঁটে । হাঁক ছেড়ে ডাক দিলেন আম্মা ,

মা : আয় আমার সাথে । কাজে হাত ।

সে : আম্মা ...

গলা কেমন যেন মিইয়ে গেল মায়ের সামনে । বাধ্য মেয়ের মতন মায়ের সঙ্গে যেতে হল । থালা-বাটি ধুতে ধুতে মায়ের মন যে-ই একটু ফিরল , অয় সুযোগেই ভো-দৌড় ! জলদি যেয়ে হবে । নাহলে বকুল ফুল সব শেষ হয়ে যাবে । সবাই কুড়িয়ে নিয়ে যাবে । কিন্তু আজ যে কাউকে ফুল নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবেনা । আজ যে ফুলগুলো তার-ই নিতে হবে ...

প্রথমে তো আস্তেই হাঁটছিল , কিন্তু মায়ের গলা পেয়ে জরে দৌড় । আর মায়ের ডেকেও কাজ নেই । আজ তাকে যে কেউ আটকাতে পারবেনা । আজ যে একটা বিশেষ দিন ...

যেতে হবে অনেক দূর । বাড়ির রাস্তা পার হয়ে রেইল-লাইন । স্টেশানের ছাউনির পাশে বকুল গাছটা । ওখান থেকে ফুল কুড়াতে হবে । তারপর নদী পার হতে হবে । নদীর ওই পারেই তো আবীর আছে ...

এখন বোধকরি সাড়ে তিনটা বাজে । আজ একটা বিশেষ দিন । আর এই বিশেষ দিনের উদ্দেশ্যেই এই যাত্রা । লাল চুল উড়িয়ে লাল ফ্রক পরে যাত্রা । বিশেষ দিনের বিশেষ ফুলের জন্য যাত্রা ...

রেইল-লাইনে খেলতে খেলতে আগাচ্ছিল । তার আর আবীরের প্রিয় খেলাটা ; রেইল লাইনের যে কাঠের ধাপ থাকে , এক লাফে এক ধাপ দ্রুত পার করার সেই খেলাটা । কিন্তু ভেজাল এক্টাই , দূরত্ব সব জায়গায় সমান না । হঠাৎ কোন এক ধাপের দূরত্ব কম-বেশী থাকলে খেই হারিয়ে পড়ে ভীষণ ব্যাথা পাওয়া যায় ।

চলে এসেছে প্রায় । সামনেই বাঁক । হঠাৎ করে ট্রেনের সাইরেনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে পা ফসকে গেলো । তবুও কোনমতে উঠেই দৌড় । কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ট্রেন যাওয়া দেখল । যাওয়ার সময় ট্রেনকে ভেঙচি কাটল । কপাল দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তটুকু ঘাম মুছার মতন করে মুছে নিয়ে ফুল কুড়াতে লেগে গেলো ...

অনেক ফুল নেওয়া হয়েছে । কোছা ভরে গেছে । হাঁটতে হাঁটতে নদীর ঘাঁটে যাচ্ছিল । যাওয়ার পথে একটা শিমুল গাছের লাল লাল ফুল দেখে থেমে গেলো । আবীরের কি পছন্দই না ছিল লাল রং । কি যে ইচ্ছা করছিল ফুলগুলো নিতে ! কিন্তু ফুল নিতে গেলে সাধের লাল জামা নষ্ট হয়ে যাবে বলে এই চিন্তা বাদ দিলো । নদীর ঘাঁটে বসে আবীরের জন্য মালা গাঁথা শুরু করল । মালা গাঁথা শেষ হওয়ার পরে উঁচু করে ধরে তার মাঝে দিয়ে তাকিয়ে বলল ,

=> নাহ ! মানায়নি তোর গলায় ।

মালাটা হাতে নিয়ে তা ছিঁড়ে ফুলগুলো আবার জড়ো করে রাখলো । উঠে শিমুল গাছের সামনে গিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকল । তারপর ফ্রকটা গুঁটিয়ে নিয়ে উঠে পড়ল গাছে । গায়ে খুব ব্যাথা লাগছিল , তবে ফুল নেওয়ার জেদ চেপে বসেছে । গাছের একটা ডাল ছিঁড়তে গিয়ে অদৃশ্যে বক্তব্য রাখল ,

=> নিলাম ফুল , রাগ করিসনা ।

ফুল , ছিঁড়া জামা আর রক্তে ভিজা গা নিয়ে গাছ থেকে নেমে আবার মালা গাঁথতে বসল । কয়েকটা সাদা বকুলের পর একটা করে টুকটুকে লাল শিমুল ফুল দিয়ে মালা সাজিয়ে নিজেই আপন মনে বলে উঠল ,

=> কি সুন্দর !



নদীতে হাথ-মুখ ধুয়ে দুই টাকা দিয়ে নদী পার হল সে । নদীর পানির দিকে তাকিয়ে ভাবছিল , কিভাবে চার বছর আগে আবীর বাঁচিয়েছিল তাকে এই পানিতে ডুবে মরার হাত থেকে । তখনও ছিল ভরা বর্ষা । দুই ভাই-বোন নদীতে গোসল করছিল । হঠাৎ খেই হারিয়ে স্রোতের মুখে পড়ে গিয়েছিলো সে । তখন তার বয়স ছিল ছয় , আর আবীরের বয়স তখন দশ । ওইটুকুনু আবীর বোনকে টেনে বাঁচিয়ে নিয়েছিল ঠিকই , তবে স্রোতের খেলনা হয়ে গিয়েছিলো নিজেই ; যাকে নিয়ে স্রোত কিছুক্ষন খেলে আছড়ে ফেলেছিল তীরে । কিন্তু ...





নৌকা থেকে নেমে সে ভাইয়ের কবরের কাছে গেলো । হুম্ম , নদীর তীব্র স্রোতের বেগ শুধু আবীরের দেহটুকুই ফেরত দিয়েছিল । একটা ঠান্ডা _ নীল মাংসপিণ্ড !

ভাইয়ের পাশে বসে আস্তে করে বলল ,

=> * শুভ জন্মদিন আবীর * । তোর জন্য একটা উপহার এনেছি । এই দেখ ,,,

মালাটা এগিয়ে দিলো সে ভাইয়ের কবরের দিকে । জোরে বাতাস এসে যেন বরন করে নিল বোনের উপহার ।





আবীরের কবরের পেছন থেকে শান্ত নদীর পানির ঘরের দরজা খুলে সুর্য বের হয়ে এল । ১৪-ই জুলাইয়ের এই সুর্য _ পাখির গান আর নিজের কিরণ দিয়ে তাকে আর আবীর কে বরণ করে নিল .........



[ এই গল্প টা আবীরের(আমার ছোটদা) জন্মদিনে তার জন্য আমার তরফ থেকে অতি তুচ্ছ একটা উপহার ...]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.