নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"মিথ্যা কখনো চাপা থাকেনা,\nসত্যের জয় হবে নিশ্চয়\"।

আরজে আজিজুর

আসসালামু আলাইকুম: Md. Azizur Rahman who always ready To Die For Islam For ALLAH For Noor Ea Mujassam Profeth Muhammad Mustafa Sallauhu Alaihiwsallam.

আরজে আজিজুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পাকশী ব্রিজ"

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৭

একশ বছর আগে পদ্মা নদী এমন ছিল না। পদ্মাকে বলা হতো প্রমত্তা নদী। প্রশস্ত পদ্মার উত্তাল তরঙ্গ দেখে ভীত হতো সকলেই। সেই পদ্মাকে শাসন করে তার বুক বরাবর পাবনার পাকশীতে নির্মাণ করা হয় এশিয়ার সর্ববৃহৎ রেল সেতু। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দুই বছর পরের কথা সেটি। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের লর্ড হার্ডিঞ্জ একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্রিজ অতিক্রম করে এর শুভ উদ্বোধন করেন। সেই থেকে ব্রিজটির নামকরণ হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’।
এশিয়ার বৃহত্তম এই রেলসেতু শতবর্ষে পদার্পণ করছে। ইতিহাসের সাক্ষী পাবনা জেলার তৎকালীন সাড়া থানার (এখন ঈশ্বরদী থানা) পাকশীতে নির্মিত এই সেতু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও ধারণ করে আছে। ১৯৭১ সালে শেলের আঘাত সহ্য করে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। শত বছর আগে অবিভক্ত ভারতের পূর্ব বাংলার সঙ্গে কলকাতা এবং অন্যান্য স্থানের যোগাযোগের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। সময়ের গতিধারায় ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলেও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য আজও একই রয়ে গেছে। এই ব্রিজের কারণে আগামীতে আরো আঞ্চলিক সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রিটিশ শাসনামলেরও আগে থেকে কলকাতার সঙ্গে পূর্ব বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল মাধ্যম ছিল জলপথ। নৌপথে নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে ঈশ্বরদীর সাড়া ঘাট, রায়টাঘাট হয়ে কলকাতা বন্দরে জাহাজ পৌঁছাতো। পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ মাছ থেকে শুরু করে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য পূর্ব বাংলা থেকে জাহাজে কলকাতা চালান হয়ে যেত। এভাবেই কলকাতার সঙ্গে পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আঞ্চলিক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি লাভ করে। তৎকালীন বেনিয়া ব্রিটিশ সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন তথা অবিভক্ত ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা, আসাম, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতা ও দিল্লীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে ১৮৮৯ সালে পদ্মা নদীর উপর এই সেতু তৈরির প্রস্তাব করে। ঈশ্বরদীর পাকশীতে রেলওয়ের বিভাগীয় দপ্তরের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারের কার্যালয়ে রক্ষিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, ১৯০৮ সালে ব্রিজ নির্মাণের মঞ্জুরী পাওয়ার পর ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধান প্রকৌশলী রবার্ট শুধু ব্রিজের নকশা প্রণয়ন করেন। ব্রিজের প্রথম প্রকল্প প্রণয়ন করেন স্যর এস এম রেলডলস। এই ব্রিজে রয়েছে ১৫টি মূল স্প্যান। যার প্রতিটি বিয়ারিং-এর মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৩৪৫ ফুট এবং উচ্চতা ৫২ ফুট। একেকটি স্প্যানের ওজন ১২৫০ টন। রেল লাইনসহ মোট ওজন ১৩০০ টন। ব্রিজে ১৫টি স্প্যান ছাড়াও দুপাশে রয়েছে ৩টি করে অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান। এ ছাড়াও দুটি বিয়ারিং-এর মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট। অর্থাৎ ব্রিজের মোট দৈর্ঘ্য ৫৮৯৪ ফুট। যা এক মাইলেরও কিছুটা বেশি।
ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিল রেইথ ওয়ালটি অ্যান্ড ক্রিক। এই সময় পদ্মা ছিল ভীষণ প্রমত্তা। ফলে বড় সমস্যা ছিল নদীর গতি নিয়ন্ত্রণ করা। প্রতিষ্ঠানটি এমন দক্ষতার সঙ্গে এই কাজটি করেছিল যে আজও তা ব্রিজ নির্মানের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯১২ সালে ব্রিজের গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৪ থেকে ৫ মাইল উজান হতে ব্রিজের গাইড ব্যাংক বেঁধে আনা হয়। এ বছরই গার্ডার নির্মাণের জন্য ৫টি কূপ খনন করা হয় এবং পরের বছর আরো ৭টি কূপ খনন করা হয়। এরপর লোহা ও সিমেন্টের সাহায্যে নির্মিত হয় বিশাল আকৃতির পায়া। ব্রিজ নির্মাণের জন্য পদ্মায় স্টিমার ও বার্জ আনা হয়। ব্রিজ নির্মাণ ও রক্ষা বাঁধের জন্য ১.৬ কোটি ঘনফুট মাটি এবং নদী শাসনে প্রয়োজন হয় ৩ কোটি ৮৬ লাখ ঘনফুট মাটি। ৩ কোটি ৮ লাখ ঘনফুট পাথর ব্যবহারের পাশাপাশি ২ লাখ ৯৯ হাজার টন ইটের গাঁথুনির কাজ হয়। মোট সিমেন্ট ব্যবহারের পরিমান ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ড্রাম ফিল্ড। সেই সময়ের হিসেব অনুযায়ী মূল স্প্যানের জন্য ব্যয় হয় ১কোটি ৮০ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯৬ টাকা, স্থাপনের জন্য ৫ লাখ ১০ হাজার ৮৪৯ টাকা, নদী শাসনের জন্য ৯৪ লাখ ৮ হাজার ৩৪৬ টাকা এবং দুপাশের রেল লাইনের জন্য ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ১৭৩ টাকা। অর্থাৎ একশ বছর আগেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৩ কোটি ৫১ লাখ ২৯ হাজার ১৬৪ টাকা।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বিশেষত্ব হলো ভিত্তির গভীরতা। ব্রিজ নির্মাণে ২৪,৪০০ শ্রমিক, কর্মচারী ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে। ১৯১৫ সালে ব্রিজের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনী যখন খুলনা ও যশোরে পরাজয়ের পর পিছু হটে ঈশ্বরদীতে সমাবেত হওয়ার উদ্দেশে ট্রেনে আসছিল তখন তাদের কোণঠাসা করার লক্ষ্যে মিত্রবাহিনী বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করলে ব্রিজের ১২ নাম্বার স্প্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর ভারত সরকারের আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় যথারীতি ব্রিজ মেরামত করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়ে আমাদের দেশের কবি-সাহিত্যিকরা বহু রচনা করেছেন। ব্রিজ নির্মাণকালীন বহু কথা প্রচলিত আছে। কীভাবে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কঠিন শীলা এবং লোহা আনা হয় সেটিরও বর্ণনা রয়েছে সেসব রচনায়। পাবনা-কুষ্টিয়ায় এ নিয়ে কিছু চুটকিও প্রচলিত আছে। যেমন- কয়েকজন জেলে ব্রিজ এলাকায় মাছ ধরছে। একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘কত বড় পুল, পুরোটাই নোয়া (লোহা) দিয়া বানাইছে! কত টাকার নোয়া লাগছে?’ শুনে অন্য জেলে বলল, ‘তা তো কমপক্ষে পাঁচশ টাকার নাগছেই।’
হার্ডিঞ্জ সেতুকে কেন্দ্র করেই পাকশী দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয়, ব্রিজটি ইতিমধ্যেই ভূগোল-ইতিহাস-সাধারণ জ্ঞানের পাঠ্য পুস্তকের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। ব্রিজ নির্মাণের পর এই আশ্চর্য কীর্তি দেখার জন্য দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অতীতেও যেমন দর্শকের সমাগম হতো এখনও প্রতিদিনই নতুন প্রজন্মের সমাগম ঘটে। শীত মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে আসে পিকনিক পার্টি। তারা ব্রিজ দেখে মুগ্ধ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সময়ে এই ব্রিজের পাশে আরেকটি সড়কসেতু ‘লালন শাহ সেতু’ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সড়কসেতু নির্মাণ হলেও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের গুরুত্ব কমেনি। বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। দেশীয় পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি রেলপথে ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। যাত্রী পরিবহনে ভারতের সাথে রেল যোগাযোগে ‘মৈত্রি এক্সপ্রেস’ ট্রেন এই ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা জোরদার করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রেলওয়ের মাধ্যমে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রানজিট-ট্রন্সশিপমেন্ট চালু হলে দেশীয় ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ভীত আরও সুদৃঢ় হবে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে না। তবে ঈশ্বরদী এবং পাকশীর তিনটি সংগঠন ( উদীচী, খেলাঘর এবং স্পন্দন ) ৪ মার্চ ব্রিজের সন্নিকটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
সুত্র-নেট

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮

ঢে্উটিন বলেছেন: অনেক দিন ধরেই এই সেতুর ইতিহাস জানার চেষ্টা করছিলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০

আরজে আজিজুর বলেছেন: Thank You

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.