নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোনালি ভোরের পাড়ে ছড়িয়ে আছে বিষণ্ণ রাত্তির

জগৎ সংসারে কত ক্ষয় হলো সুগন্ধি সাবন। ঘ্রান তো মিলিয়ে গেলো নিমিষেই। facebook.com/ba8ulbu

বাবুল হোসেইন

ঘোর লাগা কবিতার পাশে দাঁড়ালে তন্দ্রাহত হই জীবনানন্দীয় সুরে যাচ্ছে চলে নিঃশব্দ ঝরাপাতা দিন কেবলই হারাই দূরে, আরো দূরে © লেখক facebook.com/ba8ulbu

বাবুল হোসেইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে স্মৃতি শিকড়ের, যে স্মৃতি আজন্ম লালিত...প্রিয় দাদাকে স্মরণে

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:৪৫

দাদা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আমাকে হাতে ধরে, যেনো ধরে রাখছেন তাঁর উত্তরসুরি, এমন করে প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে নাকি তার সঙ্গী চাই-ই চাই। দাদী নাকি আমাকে সতীন মনে করে হিংসা করতেন (দাদীর হয়তো তেমন ভালো লাগত না এতটা প্রশ্রয়, দাদীও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন)। মসজিদে যাচ্ছেন সঙ্গে আমি, বাজারে যাচ্ছেন সঙ্গে আমি, এমনকি মাঠেও সঙ্গে আমি। কেন? আমি কেন? আমিতো বড় সন্তান নই আমার বাবা মায়ের। আমার বড় আরো একটা বোন এবং একটা ভাই আছে আমার। তবে? তবে আমি নাকি দাদাকে ভীষণ ভালোবাসতাম, কিংবা আমার হয়তো জন্ম থেকেই রক্তের প্রতি বেশী মাত্রায় টান ছিলো, আর দাদা সেটা টের পেয়েছিলেন, কিংবা আমাকে নিয়ে দাদার যথেষ্ট দুর্বলতা ছিল, হয়তোবা আমি দেখতে খানিকটা দাদার মত ছিলাম, দাদা হয়তো আমাতে তার ছায়া দেখেছিলেন কিছুটা হলেও, কে জানে? কে জানে, কিসে কি হয়? তবে আমি পরে জেনেছিলাম, আমার নাক-মুখ-হাত-পা নাকি দাদার মত, অবিকল দাদার মত।



সারাদিন আমি দাদা দাদা করে বাড়িময় মাথায় তুলি। হুল্লোড় করি। এই অত্যাচারে বাড়ীর সবাই বিরক্ত। আমার বড় ফুফু আমাকে নাকি একারণেই দেখতে পারতেন না , বেশী বিরক্ত করি বলে। কিন্তু বড় ফুফুও আমাকে কম মাতৃস্নেহ দেননি, দাদার মত তিনিও আমাকে স্নেহের পরশে আগলাতেন, কারণ তিনিও বাবার খুব ন্যাওটা ছিলেন এবং গড়নে গঠনে তিনি অনেকটা বাবাময় ছিলেন, অর্থাৎ আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিলো, তিনিও তার বাবার গঠন পেয়েছিলেন। হয়তো দেখতে একই রকম হলে স্নেহের পরিমাণটা বেশী মাত্রায় হয়। জেনেটিক বিদ্যায় হয়তো সেরকম কিছু লেখা আছে, কিংবা না থাকলেও হয়তো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে সেই সব টার্মগুলো। জগতে কত কিছুই তো অনাবিষ্কৃত থেকে যায়, সেরকম। তবে এটা অনেক সত্য আমার জীবনে, সবার জীবনেই হয়তোবা, আমার আপু অবিকল আমার বাবার আদল, শরীরের রঙ, নাক-কান, এমনকি অদ্ভুত রকম হলো তার অঙ্গভঙ্গিগুলো পর্যন্ত বাবার সাথে হুবহু মিলে যায়। আর বাবা ভীষণ ভালোবাসেন আপুকে আমাদের সবার থেকে। আপুও বাবার ন্যাওটা ছোটবেলা থেকে।



দাদা আমাকে নিয়ে আঙ্গুলের ডগায় ধরে ধরে এ জায়গা ও জায়গা ঘুরে বেড়াতেন। হয়তো গল্প করতেন তাঁর ছেলেবেলাকার দিনের কিংবা হয়তো যাপিত জীবনের সকল গ্লানি আমাকে দেখে মুছে যেত তাঁর, তাই এমন স্ব-স্নেহ প্রশ্রয় ছিলো আমাতে। আমি সে প্রশ্রয়ে প্রশ্রয়ে দাদার ন্যাওটা হয়ে উঠেছিলাম ক্রমশ। আমাদের কোন খেতের আইল দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে দাদা আমাকে শুনাতেন কি করে এই খেতের মালিক তাঁরা হয়েছিলেন। অথবা আমাকে বুঝাতেন হয়তো অদূর ভবিষ্যত, যা তিনি দিব্য চোখে দেখতে পেতেন। আমরা যে কেবল দূরতম দ্বীপের বাসিন্দা হচ্ছি, সেসব। দাদা বুঝাতেন আমাদের শিকড় এক। শিকড়ে বাঁধা মাটিও এক। আমরা যেন সারাটা জীবন পরস্পরের স্পর্শের কাছাকাছি থাকি, ভালোবাসা নিয়ে থাকি...



আমি তখন নিতান্ত বালক। আমার স্মৃতিতে দাদাকে নিয়ে কিছুই মনে নেই। চেহারা, গঠন এমনকি কাঠামোটা পর্যন্ত। এমনকি কল্পনা করেও দাদার কোন অবয়ব দাঁড় করাতে পারিনি, এ কষ্ট বড় কষ্টের! দাদা আমাকে ভীষন ভালোবাসতেন, ভীষণ আদর করতেন। এসব যখন শুনি, তখন দাদাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে হত। কিন্তু কে দেখাবে, দাদাতো সেই কবে হারিয়ে গিয়েছেন আকাশের দূরতম তারাটির সাথে, একা একা, চুপি চুপি। (আমি ভাবতাম দাদা বুঝি খুব স্বার্থপর ছিলেন, আমাকে রেখে একা চলে গেলেন।) আর আমার কল্পনাশক্তিও এত নীচু মানের ছিলো যে, একটা কাল্পনিক দাদার অবকাঠামো দাঁড় করাতে নিতান্ত অপরাগ ছিলাম। কিংবা এটাও বলা যায়, একটা কাল্পনিক দাদাতে আমার পোষাবে না বলে আমার সারা জীবনের আফসোস, হাহাকার বড় বেশী দাদাময় হয়ে রবে। আমি আজও দাদাকে মিস করি। না দেখা মানুষ এত প্রিয় হয় কি করে জানিনা, আর না দেখাই বা বলি কিভাবে? আমিতো দেখেছিলাম দাদাকে, সেই বয়সের স্মৃতিগুলো হয়তো নিষ্প্রাণ। কিন্তু অবচেতনে সেটা প্রাণবান আর তাজা হয়ে আছে আমার মাঝে। এখানেও চলে আসে ডাক্তারী বিদ্যার কথা। মস্তিষ্কের সেলে হয়তো আমি দাদাকে মডেল করে, আদর্শ করে রোজ পুজো দেই, আর আমার চেতনায় সেটা নিতান্তই অধরা থেকে যায়। আর হবেই বা না কেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমি নাকি দাদার মত আদর্শে বিশ্বাস করি, এবং সেটা অতিমাত্রায়। এবং কখনো সেটা বিরক্তকর পর্যায়ে চলে যায় (মা-বাবা-আপু-ভাইয়া বলে)। তখন ভীষণ মিস করি দাদাকে। দাদা তুমি কোথায় আছো এখন? আকাশের কোন দূরতম তারাটি তুমি? কোনখানে তুমি থাকো একা একা নিভৃতে? তুমি কি দেখো তোমার স্নেহের দাদুভাই এখন কত বড় হয়েছে? জগৎ সংসার বুঝতে শিখেছে, দেখতে শিখেছে, চিনতে শিখেছে। দাদা, একবার তোমাকে দেখতে চাই, অন্তত একবার। স্বপ্নে হলেও আমাকে দেখিয়ে যেয়ো তোমার নূরানী চেহারা-সুরত। কতজনকে স্বপ্নে দেখি রোজ, তোমাকে দেখি না। নাকি স্বপ্নেরও সেই ক্ষমতা নেই আমাকে মিছে শান্তনা দেবে একগাল! নাকি স্বপ্নও নিছক একটা কল্পনা বলে, তুমি হতে চাওনা আমার কল্পনার কেউ। বাস্তবের মানুষ হয়ে থাকতে চাও সারা জীবন আমার রক্ত বিন্দুয়?



তোমাকে ভীষন মিস করি দাদা, ভীষণ। কতটুকু মিস করলে তোমাকে ভেবে ভেবে আকুল হই, ব্যাকুল হই, ততটুকু। কিংবা আরো বেশী, যেটা বোধের বাইরে কিংবা অপরিমেয়। কিংবা ধরো আমার রক্ত কণিকার মুহূর্ত উঠা নামার শব্দ-পতনের মত। কিংবা ততটুকু, যতটুকু মনে পড়লে আমি ফিরে যাই আমার দেখা-অদেখা নানা স্মৃতির তুমিময় দিনগুলোতে। একবার দেখতে চাই দাদা। শুধুই একবার। একবার হতে চাই তোমার ক্ষয়িঞ্চু আঙ্গুলে ধরা হেঁটে বেড়ানো দুরন্ত বালক!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:২৯

ছন্দ্বহীন বলেছেন: তোমাকে ভীষন মিস করি দাদা, ভীষণ। কতটুকু মিস করলে তোমাকে ভেবে ভেবে আকুল হই, ব্যাকুল হই, ততটুকু। কিংবা আরো বেশী, যেটা বোধের বাইরে কিংবা অপরিমেয়। কিংবা ধরো আমার রক্ত কণিকার মুহূর্ত উঠা নামার শব্দ-পতনের মত। কিংবা ততটুকু, যতটুকু মনে পড়লে আমি ফিরে যাই আমার দেখা-অদেখা নানা স্মৃতির তুমিময় দিনগুলোতে। একবার দেখতে চাই দাদা। শুধুই একবার। একবার হতে চাই তোমার ক্ষয়িঞ্চু আঙ্গুলে ধরা হেঁটে বেড়ানো দুরন্ত বালক!

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৮

বাবুল হোসেইন বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫৪

আরফার বলেছেন: দাদাকে নিয়ে লেখা চিঠি ভালো লাগলো।

আমার দাদার কথাও মনে পড়ে গেল। আমার ক্ষেত্রে ঘটনা যেটা সেটা হলো, আমি হলাম আমাদের বংশের বড় ছেলে আর সেই সূত্রে প্রথম সন্তান হিসেবে আদর একটু হয়তো বা বেশীই পেতাম। আর দাদা তো আমি আমি বলতে অজ্ঞান ছিলেন। আমার নামটা (আরফার রাজী) পর্যন্ত আমার দাদার দেয়া। খুব ভালোবাসতেন উনি আমাকে। তবে যখন বাইরের দুনিয়ার মায়াটাকে বুঝতে শিখি, তখনই উনি চলে যান আমাদের ছেড়ে। আমিও উনার কাঠামো টাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতাম, পারি নি।

ভালো লাগলো লেখাটা।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩০

বাবুল হোসেইন বলেছেন: সরি প্রিয় দেরি করে মন্তব্য দেয়ার জন্য।


৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৫

মাহিন তুষার বলেছেন: আকাশের কোন দূরতম তারাটি তুমি? কোনখানে তুমি থাকো একা একা নিভৃতে? তুমি কি দেখো তোমার স্নেহের দাদুভাই এখন কত বড় হয়েছে? জগৎ সংসার বুঝতে শিখেছে, দেখতে শিখেছে, চিনতে শিখেছে। দাদা, একবার তোমাকে দেখতে চাই, অন্তত একবার। স্বপ্নে হলেও আমাকে দেখিয়ে যেয়ো তোমার নূরানী চেহারা-সুরত। কতজনকে স্বপ্নে দেখি রোজ, তোমাকে দেখি না। নাকি স্বপ্নেরও সেই ক্ষমতা নেই

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০০

ইসতিয়াক আহমদ আদনান বলেছেন: ভাল লাগল আপনার লেখাটা।

৫| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০৪

ইলিয়াস সাগর বলেছেন: +++

৬| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:১৩

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: +++
অসাধারণ লেখা। হারিয়ে যাওয়া সেই স্নেহময় মানুষগুলো খুব টানে। নিজের একটা লেখা শেয়ার করে গেলাম।

Click This Link

৭| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:২২

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: লেখাটি অন্য ব্লগে পড়ছিলাম -

পোষ্টটি দেখবেন প্লিজ


৮| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

সাগর রহমান বলেছেন: একবার হতে চাই তোমার ক্ষয়িঞ্চু আঙ্গুলে ধরা হেঁটে বেড়ানো দুরন্ত বালক! ......

আমূলে স্পর্শ করা গল্পকথা। চলুক এমন শব্দযজ্ঞের অভিযান। ভাল থাকুন বাবুল ভাই নিত্য।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.