![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সভ্যসমাজের অনেক মিথ্যা, অসভ্যতা, নোংরামি, ভণ্ডামি প্রভৃতি গতানুগতিকতার বাইরে প্রতিটি পাগল তাদের মনের মধ্যে স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে এক-একটি জগত তৈরি করেছে যা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়।
রাই বাবু:
Solar calendar ও Lunar Calender সম্পর্কে জানতে হলে প্রাথমিকভাবে চাঁদ-পৃথিবী-সূর্য প্রভৃতির পরিক্রমণকালসহ আরও কিছু বিষয় জানতে হবে। আমি বিষয়গুলো ধাপে ধাপে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
চাঁদ-পৃথিবী-সূর্য’র পরিক্রমণ কাল:
চাঁদ নিজ অক্ষ বরাবর ২৭ দিন, ৭ ঘন্টা, ৪৩ মিনিট এবং ১১ সেকেন্ড সময়ে পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করে। কিন্তু পৃথিবীর চলমান আবর্তনের ফলে পর্যবেক্ষকরা পরিক্রমকাল প্রায় ২৯ দিন ১২ ঘন্টা গণনা করে। পৃথিবী নিজ অক্ষ বরাবর ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময়ে সূর্যকে একবার পরিক্রমণ করে এবং নিজ অক্ষের উপর ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড সময়ে একবার আবর্তন করে। সূর্য নিজ অক্ষ বরাবর ২০ কোটি বছরে আপন গ্যালাক্সিকে একবার পরিক্রমণ করে এবং নিজ অক্ষে প্রায় ২৫ দিনে একবার আবর্তন করে।
বিষুব রেখা বা নিরক্ষরেখা ও বিষুব:
বিষুব রেখা বা নিরক্ষরেখা হলো এমন একটি কাল্পনিক রেখা যা পৃথিবীর মাঝ বরাবর এবং উত্তর ও দক্ষিণ মেরু থেকে সমান দূরত্বে কল্পনা করা হয় এবং যা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে ভাগ করে। এই রেখাটির মান ০ ডিগ্রি। বিষুব হলো বছরের এমন একটি সময়, যখন দিন-রাত্রি’র দৈর্ঘ্য সমান থাকে। বছরের দুইটি দিনে এরকম হয়। এই দুই দিন সূর্য বিষুব রেখা বরাবর অবস্থান করে। দিন দুইটি হলো - ২৩ সেপ্টেম্বর (জলবিষুব / শারদীয় বিষুব) এবং মার্চ ২০ (মহাবিষুব / বসন্ত বিষুব)।
সৌর বছর (Solar Year):
পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যে সময় লাগে সেই সময়কালকেই এক একটি সৌর বছর (Solar Year) বলা হয়। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে কক্ষপথ ধরে পরিক্রমকালকে ভিত্তি করে প্রতিটি সৌর বছরকে গণনার পাশাপাশি যখন দিন-মাস-ঋতু’র হিসাব রাখা হয়, তখন তাকে সৌর বর্ষপঞ্জি (Solar Calendar) বলে। আবার এই ঋতু পরিবর্তন যখন নিরক্ষীয় অঞ্চলকে ভিত্তি করে পৃথিবীর কক্ষপথের চ্যুতি-বিচ্যুতি নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে এক একটি সৌর বছর গণনা করা হয় তখন এটাকে নিরক্ষীয় সৌর বর্ষপঞ্জি (Tropical Solar Calendar) বলা হয়। যেমন- গ্রেগোরিয় ক্যালেন্ডার (Gregorian calendar), ইরানিয়ান ক্যালেন্ডার (Iranian calendar), জুলিয়ান ক্যালেন্ডার (Julian calendar) প্রভৃতি ট্রপিকাল সোলার ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত।
অধি বর্ষ (Leap Year):
পৃথিবী নিজ অক্ষ বরাবর ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময়ে সূর্যকে একবার পরিক্রমণ করে। কিন্তু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরা হয়, যা এক সৌর বছর অপেক্ষা ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড কম। ফলে চতুর্থ বছরে পূর্বের বাতিল-কৃত মোট সময় (৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড× ৪= ২৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট ০৮ সেকেন্ড) তথা প্রায় ০১ দিন বাদ পরে যায়। তাই সৌর বছরের সাথে সমন্বয় করতে প্রতিটি সৌর বর্ষপঞ্জিতে চতুর্থ বছরে অতিরিক্ত এক দিন যোগ করে ৩৬৬ দিনে এক বছর ধরা হয়। এটাকে Leap Year (অধি বর্ষ) বলে। তাই অধি বর্ষের ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে হয়। যেমন- ২০১২ সাল ছিলো Leap Year। তাই ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিন ছিলো।
চন্দ্র মাস (Lunar Month):
পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ নিজ অক্ষ বরাবর আবর্তনের ফলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকরা পরিক্রমকাল প্রায় ২৯ দিন ১২ ঘন্টা গণনা করে। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদের এই পরিক্রমকাল-ই এক একটি চন্দ্র মাস (Lunar Month)। চন্দ্র মাস গণনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে খালি চোখে অথবা খালি চোখানুগ যন্ত্রপাতির (যেমন: দূরবীন, সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র) সহায়তায় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। তাই চন্দ্র মাসগুলো ২৯ অথবা ৩০ দিনের হয়। যে মাসে চাঁদের প্রাথমিক চন্দ্রকলা থেকে শুরু করে পূর্ণিমা এবং পূর্ণিমা থেকে শুরু করে পরবর্তী চন্দ্রকলা নিঃশেষ হয়ে ২৯তম দিনের শেষে সান্ধ্য আকাশে যদি নতুন চন্দ্র কলা দেখা যায় তাহলে সেই মাস ২৯ দিনেই শেষ হয়ে যায়। আর যদি না দেখা যায় সেক্ষেত্রে ৩০ দিনে মাস শেষ হয় এবং পরদিন থেকে নতুন মাসের গণনা শুরু হয়।
লুনার ক্যালেন্ডার (Lunar Calendar):
১২ টি চন্দ্র মাস (Lunar Month)-কে একত্র করলে একটি চন্দ্র বছর (Lunar Year) হয়। প্রতিটি চন্দ্র বছর ৩৫৪/৩৫৫ দিনে শেষ হয়। এভাবে চন্দ্র বছর গণনা পদ্ধতিকেই চন্দ্র বর্ষপঞ্জি বা Lunar Calendar বলে। প্রকৃত লুনার ক্যালেন্ডারের উদাহরণ হলো- ইসলামিক ক্যালেন্ডার বা হিজরি ক্যালেন্ডার (Hijri calendar)। সবচেয়ে প্রাচীন লুনার ক্যালেন্ডারের সন্ধান পাওয়া যায় স্কটল্যান্ডে। লুনার ক্যালেন্ডারের হিসাব চন্দ্র নির্ভর বলে সোলার ক্যালেন্ডারের প্রতি এক বছরের হিসাবের সাথে ১১/১২ দিন কম হয়। ফলে প্রতিটি চন্দ্র বছরের বিভিন্ন মাসের সাথে ঋতুর তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তাই যুগে যুগে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনা, কৃষি কাজ, বৈরি আবহাওয়ার প্রতি পূর্ব-সতর্কতা প্রভৃতির হিসাব রাখা Lunar Calendar- এ সম্ভব হতো না। ফলে লুনার মাস গণনার পাশাপাশি ঋতু বৈচিত্র্যের হিসাব রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন চন্দ্র মাস ও সৌর বছরের হিসাবের সমন্বয়ে বছর গণনার প্রয়োজন পরে। বছর গণনার এই চন্দ্র মাস ও সৌর বছরের সমন্বয় পদ্ধতিকে Lunisolar calendar বলা হয়। তাই Lunisolar calendar পদ্ধতিতে প্রতি দুই বছর পরপর অর্থাৎ তৃতীয় বছরে ১২ টি চন্দ্র মাসের সাথে অতিরিক্ত আরও একটি চন্দ্র মাস যোগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ তৃতীয় বছরটি ১৩ টি চন্দ্র মাসে বছর ধরা হয়।
গ্রেগোরিয় ক্যালেন্ডার (Gregorian calendar):
Gregorian calendar মূলত Julian Calendar-এর একটি সংস্করণ। Julian Calendar মূলত খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ এ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং গোটা খ্রিস্টান বিশ্বে এই বর্ষপঞ্জিই ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব Easter উৎযাপনের প্রয়োজনে Pop Gregory XIII এই বর্ষপঞ্জির প্রচলন ঘটান। Easter হচ্ছে খ্রিস্টানদের একটি উৎসব এবং ছুটির দিন। যীশুর খ্রিস্টের পুনরুথ্থনের দিন হিসেবে এটি পালন করা হয়। দিনের হিসেবে Easter হচ্ছে একটি পরিবর্তনশীল উৎসব অর্থাৎ সাধারণ ব্যবহৃত ক্যালেন্ডারের সাথে এর কোন স্থায়ী যোগাযোগ নেই। First Council of Nicaea (325 AD) ইস্টারকে প্রতিষ্ঠিত করে প্রতি বছরের মার্চের প্রথম পূর্ণিমার পরের রবিবার। এই পূর্ণিমার জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী কোন সুনির্ধারিত দিন নেই। ইস্টারের দিনটি সাধারণত ১২ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে হয়ে থাকে । পূর্ববর্তী Julian Calendar গণনা অনুসারে একটি মহাবিষুব থেকে আরেকটি মহাবিষুব পর্যন্ত সময়কাল ধরা হয়েছিল ৩৬৫.২৫ দিন, যা প্রকৃত সময়কাল থেকে প্রায় ১১ মিনিট কম। এই ১১ মিনিটের পার্থক্যের ফলে প্রতি ৪০০ বছর অন্তর মূল ঋতু থেকে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর প্রায় তিন দিনের ব্যবধান ঘটত। পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির সময়ে এই ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১০ দিনের এবং ফলস্বরূপ মহাবিষুব ২১ মার্চের পরিবর্তে ১১ মার্চ পড়েছিল। যেহেতু খ্রিস্টীয় উৎসব Easter দিন নির্ণয়ের সাথে মহাবিষুব জড়িত সেহেতু মহাবিষুবের সাথে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর এই ব্যবধান রোমান ক্যাথলিক গির্জার কাছে অনভিপ্রেত ছিল। গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জীর সংস্কার দু'টি ভাগে বিভক্ত ছিল: পূর্ববর্তী জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর সংস্কার এবং ইস্টারের তারিখ নির্ণয়ের জন্য গির্জায় ব্যবহৃত চান্দ্র পঞ্জিকার সংস্কার। জনৈক চিকিৎসক অ্যালয়সিয়াস লিলিয়াস কর্তৃক দেয় প্রস্তাবের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে এই সংস্কার করা হয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে এই বর্ষপঞ্জির সংস্কার হয়। প্রাথমিকভাবে কিছু মুষ্টিমেয় Roman Catholic গ্রেগোরিয় ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে এবং পরবর্তীকালে ক্রমশ অন্যান্য দেশসমূহেও এটি গৃহীত হয়। পাশ্চাত্য বর্ষপঞ্জী এবং খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জী হিসেবে পরিচিত হলেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় সর্বত্র স্বীকৃত বর্ষপঞ্জীই Gregorian calendar ।
©somewhere in net ltd.