![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরল সাধারন মানুষ। প্রয়োজনে সোচ্চার।
একে অমাবশ্যা রাত, তার উপরে মেঘের আনাগোনা আকাশে। থেকে থেকে বিজলী চমকাচ্ছে। ঠান্ডা ঝড়ো বাতাস বেশ ভালভাবেই জানান দিয়ে যাচ্ছে যে শীঘ্রই বেশ তীব্র একটা ঝড় উঠবে।ঘড়ির কাটা অবশ্য এগার টা ছেড়ে বেশিদুর এগোয়নি এখোনো। কিন্তু ঘন অন্ধকারে চারিদিক শুনশান।
যতদুর চোখ যাচ্ছে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছেনা মাহমুদ এর। নিস্তব্দ হয়ে আছে হাইওয়ে। ফেরি পারাপার বন্ধ আছে সেটা আগেই শুনেছিল সে। এজন্যই হয়তবা রাস্তায় গাড়ি কম। দুই একটা মালবাহি ট্রাকের আলো অন্ধকার কেটে মাঝে মাঝে এগিয়ে আসছে আবার মিশে যাচ্ছে অন্ধকারে। কোন প্রাইভেট কার বা বাস চোখে পড়েনি এখন ও । তার কারন ও আছে হরতাল ছিল আজকে। তাই হয়ত এই ঝড়ের রাতে কারো বাইরে বের হতে ইচ্ছে করেনি। কার ই বা ইচ্ছে হয়। কাল ভোরেই ডোমেস্টিক ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চিটাগং যেতে হবে তার । সেখান থেকে আবার কক্সবাজার। নইলে সে ও তো এখন অথৈ এর সাথেই থাকত। ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিল। বস এর ইমার্জেন্সি কল আসলো আর তাকে এই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হল। হরতালের জন্য গাড়িও পায়নি সে। তাই বাইক নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিল। অথৈ বারবার করে নিষেধ করতে গিয়েও করেনি। কারন ও জানে, ডাকাবুকো মাহমুদ তার ডাকে আর যাই হোক বৌ এর আচলে থাকবেনা কাজের সময়। আর এটা ও প্রথম নয়। একটু একটু মেঘ ছিল দেখে রেইন কোট নিতে ভোলেনি। কিন্তু ঝড়ের জন্য প্রস্তুত ছিলনা।
বাতাস আড়াল করে ফস করে দেয়াশলাই এর একটা কাঠি জ্বালিয়ে একটা সিগারেট ধরাল সে। এত বাতাসের মধ্যে সিগারেট ঠিক মজা করে টানা যায়না। কিন্তু নিকোটিন তার দরকার এখন। বাতাসে একটু শীত শীত লাগলেও, খারাপ লাগছিল না ফুরফুরে মেজাজে বাইক চালাতে। মাহমুদ আন্দাজ করতে পেরেছিল বস তাকে কেন জরুরি তলব করেছে। বাঁকা একটা হাসি তাই বেশ যত্নেই ঠোটের কোনায় ধরে রেখেছিল মাহমুদ। গত বছর ও এরকম একটা কল সে পেয়েছিল। অসময়ের কল। সেটাই তার জীবন পালটে দিয়েছিল। এই এক বছরে মাহমুদ অনেক কিছু পেয়েছে। তার অফিসের আর কেউ কখনো এত দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছে বলে মাহমুদ এর জানা নেই। তাই বস এর কল যখন আসল সে দেরী করেনি।
সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল যতক্ষন না বাইক টা বিগড়ে গিয়ে তাকে এই বিরান জায়গায় দাড়াতে বাধ্য করল। অথচ বিকেলেই গ্যারেজ থেকে সব পার্টস ধুয়ে মুছে ঠিক ঠাক করে এনে রেখেছিল।মোবাইলের আলো জ্বেলে অনেক খুজেও বের করতে পারলনা সমস্যা ঠিক কোথায়। তাই বিরক্ত হয়ে বাইকে একটা লাথি মেরে এই ঝড়ো বাতাসে নির্জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। লিফট একটা পেয়েছিল অবশ্য। কিন্তু ট্রাকে বাইক ওঠানোর জায়গা ছিলনা তাই ছেড়ে দিতে হল। পরে আর পায়নি।
এরকম পরিস্থিতিতে যতটা বিরক্ত হওয়ার কথা তার থেকেও বেশি বিরক্ত সে। কিন্তু অভিব্যাক্তিতে কোন প্রকাশ নেই।ঠান্ডা মাথায় ভাবছে সে কি করা যায়। সিগারেট শেষ করে আরেক দফা হাত চালাবে সে বাইকের কোনায় কোনায় । যদি ঠিক হয়। না হলে বিপদেই পড়ে যাবে । একে তো বেশ বেগে বইতে শুরু করেছে বাতাস, তার উপরে ছিটেফোটা বৃষ্টি বাড়তে বাড়তে এখন বেশ ভালোই বেগ পেয়েছে। এই আবহাওয়ায় এখানে টিকে থাকা দুসাধ্য হবে।কায়দা করে হাতের মুঠোয় লুকিয়ে বৃষ্টি থেকে বাচিয়ে সিগারেট এ আরেকটা টান দিল মাহমুদ।ফিল্টার ফেলতে যাবে, তখনি তার নজরে পড়ল একজোড়া হেডলাইট। প্রাইভেট কার । সন্দেহ নেই।
মাহমুদ দ্রুত রাস্তার মাঝখানে এসে হাত নাড়তে লাগল। এই লিফট টা তার চাই ই। নইলে আজ রাতে বেচে থাকা কষ্ট হবে। গাড়িটি মাহমুদ এর কাছে এসে থেমে গেল। তীব্র আলো থেকে চোখ আড়াল করে রেখেছিল মাহমুদ। গাড়ি দাড়াতেই দ্রুত পাশে চলে গেল সে। গাড়ির ভেতরে অন্ধকার। সে জানালার কাঁচে টোকা দিল।
কাঁচ নামানোর পরে দেখল ড্রাইভার একজন মেয়ে। শাড়ি পরা, জানালার এপাশ টা চুলে ঢাকা তাই চেহারা বোঝা গেলনা। এই রাতে মহিলা ড্রাইভার দেখে একটু অবাকই হল মাহমুদ। সে হাসিমুখে কেবল বলতে যাবে সাহায্যের কথা, তখনই তাকাল মহিলা তার দিকে। কাছে কোথাও বিকট শব্দে বাজ পড়েছে তখন। কিন্তু মাহমুদের তীব্র ভয় মেশানো রক্তশুন্য বোবা মুখে তার কোন প্রভাব ই পড়লনা । কারন সে যাকে দেখেছে তাকে এই জীবনে আর দেখবে বলে আশা করে নি। তীব্র আর্তনাদ দিয়ে দু পা পেছনে সরে গেল সে কিন্তু মুখ দিয়ে একফোটা আওয়াজ বের হোলনা তার।
(এক বছর আগে)
- মাহমুদ, আমরা বিয়ে করব কবে?
- করব তো, কিছুদিন সময় দাও। আরেকটু গুছিয়ে নেই আমরা। বস কাল দেখা করতে বলেছে। দেখি কি বলে। তোমাকেও যেতে হবে।
- পি এ হিসেবে আমার তো সেটাই দায়িত্ব। কালকে একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য। মিটিং এর পর বলব।
- কালকে তোমাকে আমিও একটা সারপ্রাইজ দেব আরশী।
এর পরের দিন এর খবর তার পরেরদিন এর কাগজে বের হয়। ঢাকা চিটাগং হাইওয়ে তে এক অজ্ঞাত যুবতীর লাশ উদ্ধার। পোস্টমর্টেম এ পাওয়া যায়, হত্যা করার আগে সে কমপক্ষে পাঁচজনের লালশার শিকার হয় এবং সে ৩ মাসের অন্তসত্ত্বা ও ছিল।
(বর্তমান সময়)
- আরুশা, আজকের পেপার দেখছিস মা?
- না তো বাবা। কেন বলো তো?
- মাহমুদ কে মনে আছে তোর? আরশী যাকে বিয়ে করবে বলে জেদ করেছিল, ও নাকি মারা গেছে হার্ট এটাক এ। আর ওর বস কে কারা যেন তার নিজ বাড়িতেই খুন করে গেছে। পুলিশ দুইটি ঘটনার মধ্যে মিল আছে কিনা খুজছে।কি হচ্ছে এসব? আমার মেয়েটা ও ওদের অফিস থেকে হারাল। আরশী তোর থেকে মাত্র দুই মিনিটের বড় ছিল জানিস?
চোখের কোন বেয়ে পড়তে থাকা দুই ফোটা পানি মুছতে মুছতে চাপা স্বরে আরুশা উত্তর দিল, “জানি, বাবা” ।
©somewhere in net ltd.