নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৈকন্ঠ

বৈকন্ঠ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসম্পূর্ণ আর বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরা ইসির ওয়েবসাইট

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১

বাতিল আর অসম্পূর্ণ তথ্য নিয়েই চলছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইট। সাইটটির বিভিন্ন অংশ ভরে আছে নানা ভুল তথ্যে। দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ না করায় সাইট এখন ঠেঁসে আছে পুরনো তথ্যে। এতে করে বিভ্রান্তিতে পড়ছে সাধারণ ভিজিটররা।



প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বর্তমানে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যখন রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে তখন ইসির ওয়েবসাইটের (http://www.ecs.gov.bd) এমন দশা দেখে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সাইটটিকে গুরুত্ব দিয়ে হালনাগাদ না করার পেছনে কর্তৃপক্ষের অমনযোগিতাকেই দায়ী করছেন অনেকে। আর সাইট থেকে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়ায় মানুষও ইসির প্রতি আস্থা হারাতে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।



ইসির ওয়েবসাইটটি বাংলা ও ইংরেজি এ দু’টি ভাষায় দেখার সুযোগ রয়েছে। দু’টি সংস্করণেই একইরকম তথ্য বিভ্রাট রয়েছে। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টে গেলেও সেগুলো হালনাগাদ করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে তথ্য খুঁজতে গিয়ে সেকেল বাতিল তথ্যই ভেসে থাকতে দেখা গেছে এ সাইটে।



সাইটে দেয়া বিভিন্ন তথ্য আর নোটিশ দেখে জানা যায়, এটি সর্বশেষ আপডেট করা হয় ২০০৮ সালে। তখনকার সচিব হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত দু’টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি এখনও ঝুলে আছে। অথচ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও জাতীয় পার্টি (জেপি) এ দল দু’টি নিবন্ধন পেয়েছে অনেক আগেই। তারপরেও তাদের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ঝুলে থাকতে দেখে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।



ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হিসেবে এখনও মুফতি ফজলুল হক আমিনী ও মহাসচিব হিসেবে মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর নাম রয়েছে। অথচ ইসলামী ঐক্যজোট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বরে মুফতি আমিনী মারা যান। পরে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি এক কনভেনশনের মধ্যমে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন মুফতি ফয়জুল্লাহ।



একই চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশ খেলাফত মসলিজের তথ্যের ক্ষেত্রে। এ দলটির চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক অনেক আগেই মারা গেছেন। অথচ সাইটে তিনি এখনও স্বপদে বহাল! এরপরে নতুন নেতৃত্ব এলেও সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই ইসির সাইটে।



জানা গেছে, ২০০৮ সালে ইসির ওয়েবসাইটে রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কিত তথ্য হালনাগাদ করার পরে আর কেউ এতে হাত দেয়নি। মাঝে মাঝে কিছু সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তুলে দেয়া ছাড়া এ ওয়েবসাইটে তেমন কোনো পরিবর্তন আনেনি কমিশন।



ইসির মতো গুরুত্ব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের এ হাল অনেকের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করলেও এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা সঙ্কট প্রবল হওয়ার আশঙ্কা আরো বাড়তে পারে এ কথা স্বীকার করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু জনবল সঙ্কটের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করছেন তারা। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক সিনিয়র সহকারি সচিব রোববার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আসলে দলগুলো তাদের হালনাগাদ প্রতিবেদন আমাদেরকে জানায় না। সেজন্য আমরাও নতুন করে হালনাগাদ করতে পারি না।’



তিনি আরও বলেন, ‘ওয়েবসাইট হালনাগাদ করার জন্য ইসিতে স্পেশাল কোনো টিম নেই। জনবলের প্রবল সঙ্কট রয়েছে। সেজন্যও অনেক নতুন তথ্য দেয়া সম্ভব হয় না।’



এ ব্যর্থতার দায় অবশ্য স্বীকার করেছেন ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক। বাংলামেইলকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমারও চোখে পড়েছে। আইটি বিভাগকে মুখে অনেকবার বলেছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আইটি বিভাগকে চিঠিও দিয়েছি। আমরা শিগগিরই এগুলো সংশোধন করে নিবো। আজকের (রোববার) মিটিংয়েও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।’



এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক ও কলাম লেখক এবিএম মূসার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ইসির প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে ভুল তথ্যে ইসির কী আসে যায়? ইসি তো নামকাওয়াস্তে আছে। তাদের স্বাধীন সত্তা বলতে কিছু নেই। সরকারের অন্যান্য শাখাগুলোর মতোই ইসির বেহাল দশা।’



এজন্য ইসির ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এবিএম মূসা বলেন, ‘যাদের মূর্তিই নেই তাদের আবার ভাব কী? নির্বাচন আদৌ হবে কি না যেখানে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে ওয়েবসাইট নিয়ে ইসি আর কী করবে?’



ওয়েবসাইটের প্রতি এমন অমনোযোগিতা এবং সময় মতো হালনাগাদ না করার কারণে ইসির প্রতি মানুষের আস্থা চলে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, ‘এমনটি হলে ইসির প্রতি মানুষের আস্থা চলে যাবে। এমনিতেই এই কমিশনের প্রতি এখন অনেকেরই আস্থা নেই। তারপর আবার যদি এতো তথ্যবিভ্রাট থাকে, তাহলে সেটা মারাত্মক অন্যায়। ভুল তথ্য একটা জাতিকে অন্যদিকে প্রভাবিত করে। এজন্য তথ্য অধিকার আইনে আটকে যাবে ইসি। এ বিষয়ে ইসিকে আরও মনোযোগী হওয়া উচিৎ।’



সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়াটি কমিশনের সেক্রেটারিয়েটের কাজ। এজন্য একটা আইটি সেকশন করা হয়েছে। আমিও মাঝে মাঝে ওয়েবসাইট খুলে পুরনো তথ্যই দেখতে পাই। আমি মনে করি, ইসি সচিবালয়ের বেখেয়ালিপনা আছে। এতে করে ইসির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’



এ ব্যাপারে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.