নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মাথায় একটু প্রবলেম আছে| জাতে মাতাল তালে ঠিক টাইপের| আমার মধ্যে কোন গুনও নাই| মাকাল ফলও বলা যায় না-মাকালের চেহারা সুন্দর হয়! আমার মধ্যে ডুয়েল পার্সোনালিটি নাই-এক মুখে দুই কথা কই না| নিজে আতলামি করি কিন্তু আতেল পুলাগো দেখবার পারি না|

বাকি বিল্লাহ

খুব সাধারণ মানুষ আমি। হাসতে ভাল লাগে, হাসাতে ভাল লাগে। কেউ খুব ভাল আছে দেখতে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে।

বাকি বিল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা টু কাশ্মীর (পৃথিবীর ভূস্বর্গ) প্রথম পর্ব

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪১

প্রথমবার ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম ২০১৩ সালে.. তখন সামুর ব্লগ থেকে প্রচুর সহযোগীতা পেয়েছিলাম। জুন আপু, রাজীব নূর, কামাল ভাই এদের কথা না বললেই নয়। ভ্রমণ করতে এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত পোস্ট পড়তে খুব ভাল লাগে।



গল্পটা ২০১৮ সালের জুলাই মাসের। কাশ্মীর নামটা শুনলেই ভয় লাগতো..যুদ্ধের জন্য না, বাজেটের কথা চিন্তা করে। ভাবতাম কাশ্মীর ভ্রমণ মানেই অনেক টাকা খরচ। আসলে কথাটা ভুল। খুব অল্প টাকায় কাশ্মীর ঘুরে আসা যায়। কাশ্মীর যাওয়ার প্ল্যান করছিলাম বহুদিন যাবত কিন্তু ছুটি আর বাজেট মিলিয়ে হয়ে উঠছিল না।

হুট করে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ২বন্ধু কাশ্মীর যাবো। ৪ মাস আগেই ভিসা করে রেখেছিলাম।একদিন রাতে পিসিতে বসে সবগুলা টিকেট অনলাইনে অগ্রীম কেটে নিলাম ঢাকা-কলকাতা-দিল্লী-জম্মু কাশ্মীর হয়ে আবার সেইম রুটে ব্যাক করবো।

৭দিন আগে টিকেট নিয়েছি। যেখানেই যাই আমার আমার চিন্তা থাকে বাজেট ট্যুর দিব। কিন্তু আমার বন্ধু খুব বিলাসবহুল জীবনযাপন করে তাই আমি চাইলেও তার জন্য হয়ে উঠেনা। প্ল্যানটা ছিল ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে দর্শনা হয়ে গেদে দিয়ে কলকাতা। কলকাতায় প্রথমরাত থেকে পরদিন বিকেলে রাজধানীতে করে দিল্লী। দিল্লী থেকে ওইদিনই রাত ৯ টার ট্রেনে করে জম্মু কাশ্মীর।

ট্যুরে যাওয়ার আগের রাতে কেন জানি কোনভাবেই ঘুম হয়না। জুলাই মাসে ১৫ তারিখ। সকালটা খুব সুন্দর, সচরাচর এতো সকালে ভুল করে ঘুম থেকে উঠিনা। ৫ঃ৩০ মিনিট বাসা থেকে রওনা দিলাম এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে।

সূর্য উঁকি দিল বলে...



সুন্দরবনের এক্সপ্রেসের এসি চেয়ারে ঢাকা টু দর্শনা হল্ট টিকেট করা ছিল। ষ্টেশন এসে দেখি ট্রেন ২ ঘন্টা লেইট।



আহারে ট্যুরে বের হলে গাড়ির লেইট হওয়ার কারনে অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয়। ৮ঃ২০ মিনিট ট্রেনে চড়ে বসলাম। ধীরে ধীরে ট্রেন এগিয়ে চলছে।



পথিমধ্যে টুকটাক অনেক কিছু খাওয়া হয়ে গেল। ঈশ্বরদী ট্রেন বিরতি দিল লম্বা সময়।



ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন



চিকেন বিরিয়ানী নামক কিছু একটা নিয়ে নিলাম লাঞ্চের জন্য। খেতে বিস্বাদ।


২ঃ৩০ বেজে গেল দর্শনা হল্ট পৌঁছাতে। স্টেশনে নামার আগেই দেখি প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।


কিন্তু কি কপাল আমাদের, এক ভদ্রলোক দেখি আমাদের জন্য ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু ফুলের মালাটা আনতে মনে হয় ভুলে গেছে। পাশের একটা দোকানের নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞেস করলাম, কে ভাই আপনি?? এতো খাতির কিসের?
ভদ্রলোকের জবাবঃ ভাই আপনারা কাস্টমস যাবেন তো?
কাস্টমস মানে?? আমরা তো দর্শনা বর্ডারে যাবো।
ঐ একই কথা। আমার ভ্যান আছে আপনাদের পৌঁছে দেবো। ৩০ টাকা করে ভাড়া দেবেন।
বাহ, অতি উত্তম। আমরা রাজি হয়ে গেলাম শুধু বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়।

কিছুক্ষন পর বৃষ্টি থামলো, ভ্যানে চড়ে বসলাম। ছুটে চলছি গ্রাম এলাকার মেঠো পথ ধরে। ভালই লাগছে, ঢাকায় তো এভাবে ভ্যানে বসার সুযোগ হয়না। রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটি নদী, দেখতে অনেকটা খালের মত। প্রায় ২৫ মিনিট লাগলো বর্ডারে পৌঁছাতে।

দর্শনা ইমিগ্রেশন..



এখানে দালাল ছাড়া কেউ কাজ করেনা। ৫০/১০০ যা পারে দিয়ে সবাই বসে চা পানি খায় আর দালাল সবা কাজ সেরে দেয় এমনকি ছবিটা পর্যন্ত তুলতে হয়না। আমি ২টা ইমিগ্রেশন ফরম নিয়ে লিখা শুরু করলাম। মোটামুটি আশেপাশের সবাই অবাক। অনেকেই এসে আমাকে কনভেইন্স করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায়না. কারন দালাল দিয়ে কাজ করার পক্ষে আমি না।

ফরম ফিলাপ করে ইমিগ্রেশন করতে লাইনে দাঁড়ালাম। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু লাইন এগুচ্ছে না। আমাদের সাথে আর ৪-৫জন দাঁড়িয়ে তারা সবাই ইন্ডিয়ান। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক কনস্টেবলের সাথে কথা হচ্ছে, তার ব্যাপারে অনেক কিছু জানলাম সেও আমাদের ব্যাপারে জানলো। সে বলতেছে, ঢাকা থেকে এসে কেউ এখানে লাইনে দাঁড়ায় প্রথম দেখলাম। আমি বললাম, জীবনে আরও অনেক কিছুই আছে প্রথম দেখার। প্রায় ১ঘন্টা একজন মানুষও নড়লো না। এর মধ্যে তার সাথে মোটামুটি ভাল ভাব হয়ে গেল। এখন বলতেছে, মনে করেন আপনারা ভেতরে গেলেন। আপনাকে বলা হল, সার্ভার ডাউন কিছু কাজ করছেনা... কি করবেন??
আমি বললাম অপেক্ষা করবো। পরে বলে, অনেক সময় তো অপেক্ষা করলেন এখন আর আপনাকে আমি অপেক্ষা করতে দিচ্ছিনা। টাকা দিলে দেন না দিলে নাই আমি কাওকে দিয়ে আপনাকে কাজ করিয়েই ছাড়বো। আমি বললাম, ঠিক আছে তবে দুজনে ১০০ টাকার বেশি দিব না। বলে, যা ইচ্ছা দিয়েন। পরে উনি একজনের কাছে পাসপোর্ট গুলো দিলেন। উনি ৫ মিনিটে কাজ শেষ করে ফেললেন।

হেটে চললাম, সামনে বিজিবি চেক। চেক শেষ একটু দূরে কিছু ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে ইন্ডিয়ার বর্ডারের কাছে নিয়ে যাবে ৩০ টাকা অথবা ৩০ রুপি দিতে হবে। এই পথটা হেটে যাওয়া যায়.. অনেকেই যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের তাড়া আছে। ওই পারে বিএসএফ চেক করে ছেড়ে দিল।

বিজিবি চেকপোস্ট..



গেদে চেকপোস্ট যাওয়ার রাস্তা..



গেদে চেকপোস্ট...


গেদে ইমিগ্রেশনের পথে.. রেল লাইনের গাঁ ঘেষেই পথ। আর ষ্টেশন হচ্ছে ইমিগ্রেশন।
পথেই লিখা আছে "ভারতে আপনাকে স্বাগতম"



রেল লাইনের পাশ ধরে হেটে চলে আসলাম গেদে ইমিগ্রেশন। এটা একটা রেল ষ্টেশন তার পাশাপাশি ইমিগ্রেশন অফিসটা এখানেই। ইমিগ্রেশন শেষ করে লোকাল ট্রেনে চড়ে চলে যাবো শিয়ালদহ। এখানে এসে দেখি দালালের খুব হুড়াহুড়ি চলছে। নিজেই ফরম লিখে লাইনে দাঁড়ালাম.. ২০ মিনিটে কাজ শেষ। ৪ টা ৪০ মিনিটের ট্রেন। কিছুক্ষন পরেই ট্রেন চলে আসলো।

এই হল গেদে ষ্টেশন..


চড়ে বসলাম শিয়ালদহ উদ্দেশে। ভারতের লোকাল ট্রেনের চড়ার অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনো হয়নি। খুব দ্রুত চলে এবং ষ্টেশন গুলোতে খুব অল্প সময় দাঁড়ায়। এভাবে একের পর ষ্টেশনে অতিক্রম করে চলছি, শরীরে খুব ক্লান্তি ঘুম চলে আসলো। ঘন্টা দেড় পর দেখি সবাই নেমে যাচ্ছে ট্রেন থেকে। বুঝলাম না কি হল। এক বাংলাদেশী ভাই বলতেছে, ভাই নেমে যান রানাঘাট চলে আসছি। এখান থেকে ট্রেন চেঞ্জ করতে হবে। দিলাম ভোঁ দৌড়। অভারব্রিজ পার হয়ে ওইপারে গিয়ে দেখি আরেকটা ট্রেন অপেক্ষা করছে। এটা আমাদেরকে নিয়ে যাবে শিয়ালদহ পর্যন্ত। রাত ৮টা নাগাদ শিয়ালদহ নামলাম।

আমার একমাত্র মোটা বন্ধু পেছনে ভারতীয় লোকাল ট্রেন।



শিয়ালদহ ষ্টেশন..


ষ্টেশনের বাহির..


ষ্টেশন থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হলাম। ধর্মতলার বাস ধরলাম ৮টাকা টিকিট। বাসে উঠার সময় আমার বন্ধুর পিক পকেট হতে গিয়েও বেঁচে গেল। আমাদের সব টাকা/ডলার তখন পর্যন্ত তার ওয়ালেটে ছিল। যাক এ যাত্রায় বাচা গেল।

ধর্মতলা নেমে গুগল ম্যাপ দেখে চলে আসলাম মার্কুইজ স্ট্রীট।





আগে ডলার/টাকা রুপিতে কনভার্ট করে নিলাম। এই এরিয়াতে রোডের পাশে প্রচুর মানি এক্সচেঞ্জ আর ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে।

যে কোন জায়গায় গিয়ে হোটেল খোজার চেয়ে প্যারা আর কিছু নাই। এই গরমের মাঝে অনেক ঘুরে ১২০০ রুপি দিয়ে এসি রুম নিলাম। রাতের খাবার আরাফাত হোটেল সেরে রাতের ঘুম দিলাম।




পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো ১১টায়। ফ্রেশ হয়ে হোটেল চেক আউট করে নিলাম। আরাফাতে নাস্তা সেরে রওয়ানা দিলাম শিয়ালদহ ষ্টেশনের দিকে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য শিয়ালদহ টু দিল্লী "রাজধানী এক্সপ্রেস"। আসলে এই রাজধানী এক্সপ্রেসের অনেক সুনাম শুনেছি তাই ভাবলাম একবার চড়ে দেখা যাক এদের সার্ভিস।

শিয়ালদহ ষ্টেশনের পাশেই রয়েছে বিগবাজার।


ষ্টেশন এসে ট্রেন খুজে পেতে খুব বেগ পেতে হয়েছিল।

এই হচ্ছে রাজধানী এক্সপ্রেস..






যতটুকু জানতাম, এই ট্রেন শিয়ালদহ টু ডিরেক্ট দিল্লী, মাঝপথে কোথাও দাড়াবেনা। এটা ভুল, বেশ কয়েকটা ষ্টেশনে স্টপেজ ছিল। বিকেল ৪টায় শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে পরেরদিন সকাল ১১টার দিকে পৌঁছালাম। রাজধানীর এক্সপ্রেসের অতিথিয়েতায় আমি মুখধ। যদিও ২জন বাঙ্গালীর বকবকানীতে কান ঝালাপালা হয়ে ছিল পুরো সময়টা। ট্রেন থেকে নামার আগে ফুড যারা সার্ফ করেছিল তাদের থেকে শুরু করে ক্লিনার পর্যন্ত সবাই বকশিসের জন্য হাত পেতে বসলো এই ব্যাপারটা ভাল লাগলো না।

পোস্টে ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি একদম গুছিয়ে লিখতে পারিনা।

ফটো ক্রেডিট- কিছু ছবি গুগল থেকে নেয়া আর সব আমার ফোনে তোলা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো ছবি গুলো।
এই ভ্রমন নিয়ে আরো পোষ্ট দিবেন। সাথে অবশ্যই ছবি দিতে ভুলবেন না?

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৪

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: অবশ্যই ভাই.. ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৫

Reza Tanvir বলেছেন: হ্যাভ এ নাইস ট্রাভেল

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: থ্যাংকস.

৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: চমৎকার লাগলো আপনার ভ্রমণ কাহিনী। একটা কথা বলার যে বনগাঁ বা গেদে/রানাঘাট লোকাল ধরে ধর্মতলায় যেতে হলে শিয়ালদাতে না গিয়ে দমদম জংশন থেকে মেট্রোরেলে করে এসপ্লানেড( ধর্মতলায়) যাওয়াটাই সময় ও অর্থ এবং নিরাপত্তা- সবদিকেই সুবিধার। এই পোস্টে আগত সমস্ত ব্লগার বন্ধুদেরও আগামীতে দমদম জং থেকে মেট্রোরেলে এসপ্লানেড যাওয়ার অনুরোধ করবো। যেহেতু পুরানো পোস্ট কাজেই আপনার পরবর্তী অভিজ্ঞতার আলোকের অপেক্ষায় রইলাম।
শুভকামনা জানবেন।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩০

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। পরেরবার অবশ্যই আপনার বলে দেয়া রুট ফলো করবো।

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: "স্টেশন এসে দেখি ট্রেন ২ ঘন্টা লেইট" - এমন একটা সুদীর্ঘ ভ্রমণের শুরুতেই এমন একটি ঘটনা ভ্রমণের উৎসাহ উদ্দীপনাকে ড্যাম্প করে দেয়।
"আমি একদম গুছিয়ে লিখতে পারি না" - তবুও যেটুকু লিখেছেন, আমার কাছে তো বেশ গোছানোই মনে হলো। বিশেষ করে ছবিগুলো বেশ গুছিয়ে সাজিয়েছেন।
পরের পর্ব কোথায়?
পোস্টে দ্বিতীয় ভাল লাগা + +।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.