নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কয়েছ আহমদ বকুলের চিন্তারা

কয়েছ আহমদ বকুল

কেবল এই সত্যটুকু জেনো, মানুষ হয়ে জন্ম আমাদের ধর্ম করেছে বন্য

কয়েছ আহমদ বকুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রদ্ধেয় হেডস্যার, আপনার এই অধম ছাত্রের অন্তিম শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৩




১১ জুলাই প্যারিস সময় বিকাল ৭ টা ৬মিনিট। গ্রীষ্মর ছুটিতে থাকা মেঝ ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় একটি মার্কেটে কেনাকাটার জন্য আমি। মোবাইল ফোনটা হাতেই। ফাঁকে ফাঁকে চোখ বুলাচ্ছি মোবাইলে। আমাকে ট্যাগ করে একটি পোস্ট দিয়েছে বন্ধু এম জুবের আহমদ। আমাদের স্যার মারা গেছেন, আমাদের হেডস্যার আর নেই। মুহূর্তের জন্য পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেল। বিমর্ষ বিপন্ন হয়ে গেল আমার চেহারা। ছেলে মনেহয় ভয় পেল, ভেজা চোখ দেখে উৎকন্ঠিত হয়ে আমার একটি হাত ধরলো সে। বললাম তাকে, আমাদের হেডস্যার মারা গেছেন। শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আছদ্দর আলী স্যার মারা গেছেন।

স্যারের বয়স হয়েছে। কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। কয়েকদিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন তিনদিন আগে। স্যারের পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন সহ হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী ও গুণগ্রাহীর মানসিকভাবে একটা প্রস্তুতি ছিল যেকোন সময় একটা অঘটন হয়ে যেতে পারে। তবুও স্যারের মৃত্যু সংবাদ এক অচম্বিত অন্ধকার হয়ে আমাকে আড়ষ্ট করে দিল। স্যারের হাজার হাজার ছাত্রের মতোই আমি এক সাধারণ ছাত্র মাত্র উনার। সরাসরি ক্লাসে পেয়েছি ক্লাস টেনের ইংরেজি সাবজেক্টে কিছু দিন। কিন্তু কেন জানি আমার জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি স্তরে আমি উনার উপস্থিতি অনুভব করি। গত কয়েক বৎসর ধরে উনার জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালন হয় শাহবাজপুরে। আমি সেই অনুষ্টানে উপস্থিত না থাকার যন্ত্রনা সহ্য করতে পারিনা। স্যারকে আমি অন্তর থেকে এতো চাই এতো ভালোবাসি কেন, প্রশ্নটি আমি নিজেও নিজেকে করেছি বারবার। তারপর নিজেই নিজেকে জবাব দিয়েছি, আসলে স্যারের প্রতি এই শ্রদ্ধা এই অপরিসীম ভালোবাসা এই আন্তরিক আকর্ষণ মূলত শাহবাজপুরকে ভালোবাসা শাহবাজপুরের প্রত্যেক গুণীজনকে শ্রদ্ধা করা শাহবাজপুরের প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা। আজকের আলোকিত শাহবাজপুরের একমাত্র কারিগর আমাদের হেডস্যার। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে অনেক অপমান, বদনামকে উপেক্ষা করে একাগ্রচিত্তে একটি বৃহৎ অঞ্চলের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্যার। বৎসরের পর বৎসর এই প্রতিষ্টান থেকে পাস্ করে বেরিয়ে যাওয়া ছাত্ররা স্ব স্ব জীবনে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বড় পুলিশ অফিসার সহ দেশের বাহিরে ভালো ভালো অবস্থান সৃষ্টি করে নিজেদের পরিবার সহ আমাদের এলাকাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির দিকে নিয়ে গেছেন। স্যারের ছাত্ররা সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনের মাধ্যমে এবং মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক হিসাবে কাজ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। আমাদের বাতিঘর, আমাদের আনন্দ ও উদযাপনের একমাত্র উৎস আমাদের হেডস্যার মারা গেছেন।

আমাদের হেডস্যার মারার গেছেন। নিয়তির চিরন্তন সত্যকে মেনে নিয়ে আমাদের থেকে লৌকিক অন্তরালে চলে গেছেন আমাদের স্যার। কিন্তু শাহবাজপুর নামের এই উদ্ভিন্ন যৌবনা শহরের প্রতিটি পরতে পরতে রয়ে গেছে আমাদের হেডস্যারের স্পর্শচিহ্ন। একটি আলোর নহর, ১৯৪৮ সালে শাহবাজপুরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলকে আমাদের হেডস্যারের হাতে তুলে দেয়া হয় ১৯৬৩ সালে। সেই সময়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি পাস্ করা স্যারের সামনে এক অন্যরকম উন্নত জীবনের হাতছানি ছিল। শাহবাজপুরকে ভালোবেসে, শাহবাজপুরকে আলোকিত করার ইবাদত মানসিকতা থেকে স্যার ব্যক্তিগত জীবনের সকল সম্ভাবনাকে ভুলুন্টিত করে শাহবাজপুর থেকে যান। আজ আমাদের হেডস্যারের বিন্দু বিন্দু ঘাম আর অতল পরিশ্রমের ফসল শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোয় আলোকিত আমাদের শাহবাজপুর। আমাদের সেই আলোর কারিগর আজ আর আমাদের মাঝে নেই, আমাদের হেডস্যার মারা গেছেন।


আমি বারবারই বলি আমার ব্যক্তিগত অর্জন উপার্জন বলতে তেমন কিছু নেই।
একজন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান আমি, সেটা আমার জন্যে সম্মানের। ঠিক সেরকমই আমি অহংকার করে বলতে পারি আমি সর্বজন সমাদৃত শিক্ষাবিদ, আলোকিত শাহবাজপুর তথা উত্তর বড়লেখার বাতিঘর খ্যাত জনাব মোঃ আছদ্দর আলী স্যারের সরাসরি ছাত্র। স্যারের ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় আমি ঋদ্ধ, মুগ্ধ। স্যারের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া ভালোবাসার অনেক গল্প স্যারের জীবদ্দশায় প্রকাশিত আপন আলোয় আছদ্দর আলী গ্রন্থে আমি লিখেছি। হয়তো ভবিষ্যতে বিশদভাবে লেখার সুযোগ তৈরী করে আরো লিখব। আজ আমাদের কান্নার দিন, আজ স্যারের অনন্ত বিদায়ে কেবল আক্ষেপ করে বলতে পারি জীবনের শেষ সময়ে এসে কি স্যারকে আমরা কিছু কষ্ট দিয়ে দিয়েছি?

গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে পুঁজি করে একদল অপরিণামদর্শী তরুণ, যুবক শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মরহুম আব্দুর নূর সাহেবের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ব ভেঙে দিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের হেডস্যার জনাব মোঃ আছদ্দর আলীর নাম মুছে দিয়েছে একটি ভবন থেকে। আমার আজ খুব উদ্বেগের সঙ্গে ভাবতে ইচ্ছা করে আমাদের সেই দুঃখের যন্ত্রণার ও ব্যর্থতার গল্পটিকি আমাদের স্যার জেনেছিলেন। স্যার বিষয়টা জেনে থাকলে সত্যিই মানুষ হিসাবে আমাদের জন্য সেটা বড় লজ্জার। তবে আসার কথা, উচ্ছসিত হবার বিষয় হলো কয়েকটি দুস্কৃতিকারীর সেই অন্যায়ের প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে শাহবাজপুরের সর্বস্থরের মানুষ অনলাইন এবং অফলাইনে সোচ্চার হয়েছিলেন। সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষ স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রতিবাদী হয়ে জানান দিয়েছিলেন আমাদের শাহবাজপুরের সর্বকালের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী আমাদের হেডস্যার।


এই লেখাটা যখন প্রকাশ হবে এর কয়েকঘন্টা পরই, আজ ১৩ জুলাই বিকাল ৬ ঘটিকার সময়, স্যারের নিজের হাতে তৈরী বিদ্যাপীঠ শাহবাজপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্টিত হবে স্যারের নামাজে জানাজা। আমি চোখ বন্ধ করে সেই ১৯৯৩/৯৪ সালের শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়কে দেখতে পারছি। আমি স্যারের অফিস থেকে তাকালে শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের কতটুকু দেখা যায় সেটা অনুভব করার চেষ্টা করছি। স্যারের উপস্থিতিতে উনার অফিসে আমার ডাক পড়েছিল বহুবার। কি একটা ত্রুটি ছিল আমার মধ্যে। স্যার কিভাবে কিভাবে যেন আমার সকল অপরাধের খবর জেনে যেতেন। কখনো শাস্তি পেয়েছি, কখনো ভর্ৎসনা। কিন্তু সব সময়ই পেয়েছি স্কুলের নিয়মানুবর্তিতাকে সমুন্নত রাখার নির্দেশ। আমি স্বশরীরে আমার শ্রদ্ধেয় হেডস্যারের জানাজায় শরিক হবার সুযোগ নেই। কিন্তু আমি চোখ বন্ধ করে আমার হেডস্যারের টেবিলের সামনে নতমুখে স্যারের পায়ের দিকে তাকানো আমাকে অনুভব করছি। আমাদের পুরোটা শাহবাজপুর আজ শাহবাজপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এসে জড়ো হবে। আমরা হতভাগ্য প্রবাসী যারা আজ স্যারের জানাজায় সরাসরি শরিক হতে পারবো না আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের চোখভেজা মোনাজাত কবুল করে আমাদের স্যারের মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে সহজ ও আলোময় করে দিবেন। স্যার, আপনার সবচেয়ে অশিষ্ট অধম এই ছাত্রের অন্তিম শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন।



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: স্যারের জন্য শ্রদ্ধা।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৬

ূৃপৃ ীহৃ্র বলেছেন: I’ll walk you through why HCTRA is a game-changer for Houston commuters https://www.hctra.com.co

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: একজন সম্মানীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রধান শিক্ষকের প্রয়াণে হৃদয় স্পর্শ করা শ্রদ্ধঞ্জলি। তার চেহারায় তার ব্যক্তিত্ব প্রতিভাত। তাঁর একজন গুণমুগ্ধ ছাত্র হিসেবে আপনি দায়িত্বটুকু কিছুটা পালন করে গেলেন, সেজন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
জনাব মোহাম্মদ আছদ্দর আলী সাহেবের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন তাঁকে শান্তিময় ক্ববর দান করুন এবং তাঁকে জান্নাত নসীব করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.