![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এমন রাজনীতি বাংলাদেশ আর কখনো দেখে নি। বাংলাদেশ হরতাল দেখেছে, মিছিল-বিক্ষোভ সমাবেশ দেখেছে। দেখেনি বোমায়-ককটেলে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে। দেখে নি চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারতে। নিরীহ বাস ও সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে। হলিউডে নির্মিত কোনো হরর মুভির দৃশ্য নয় এসব। প্রতিদিনই বাংলাদেশে দৃশ্যায়িত হচ্ছে এরকম হাজারো হরর মুভি---নগরে গ্রামে বন্দরে সর্বত্র। যেন সারা বাংলাদেশই আজ চলে গেছে দেমোক্লিসের তরবারির নিচে।
এর আগে আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে নি কেউ। এবার সেটাই ঘটছে। বাংলাদেশের সুস্থ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের পায়ে কুঠারাঘাত করে খুনে-সহিংসতার পত্তন ঘটিয়েছে উগ্র ধর্মান্ধ দল জামায়াত এবং তাদের সহযোগী ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা একাত্তর সালে যা যা করেছিল এবারও সে-পথেই হাঁটতে শুরু করেছে। তারা মানুষের বাড়িতে-দোকানে হামলা চালাচ্ছে; মানুষকে কুপিয়ে পুড়িয়ে মারছে। সাধারণ মানুষের, প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসত ভিটায় তারা আগুন দিচ্ছে, লুটপাট চালাচ্ছে নির্বিচারে। সারাদেশে নিরীহ সাধারণ মানুষের রক্তে হোলিখেলায় মেতে উঠেছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র-সহিংস বিরোধিতাকারী এই দলটি।
জামায়াত-শিবির আবারও প্রমাণ করেছে সন্ত্রাসই তাদের জন্মকুলজি ও মাতৃভাষা---- আজ এটা দিবালোকের মতো সত্য। চাঁটগা থেকে তেঁতুলিয়া, সাতক্ষীরা থেকে ফেনী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ, রংপুর থেকে ফরিদপুর, বগুড়া থেকে বরিশাল –সবখানে সন্ত্রাসে-তাণ্ডবে, বোমায়-আগুনে, রামদা-সড়কি-বল্লমে এক অন্ধকার মাৎস্যন্যায় কায়েম করেছে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। তারা রেলের বগিতে আগুন দিচ্ছে, রেললাইন উপড়ে ফেলছে, রাস্তা কেটে ফেলছে, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করছে, মানুষের জীবনযাত্রা স্তব্ধ, স্থবির করে দিচ্ছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, যেন এক বিদেশি ভাড়াটে সেনাদল হামলে পড়ছে কোনো শত্রু-জনপদে। জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা গোটা বাংলাদেশকেই যেন সাব্যস্ত করেছে তাদের ‘দুশমনদের দেশ’ বলে। জামায়াত এভাবে একাত্তরের মতোই ভয়াল বিভীষিকাময় মূর্তিতে হাজির। এদের রাজনৈতিক মিত্র উগ্র মোল্লারাই একদা বায়তুল মোকাররমের এক সমাবেশে ঘোষণা করেছিল; ‘...বাংলা হবে আফগান’। কাদের উপর, কিসের ক্ষোভ জামায়াতের? বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর, নাকি সরকারের উপর, নাকি গোটা বাংলাদেশ ও এর আপামর জনগণের উপর? কিন্তু রক্তপাত ও নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে জামায়াত আখেরে পার পাবে না। কারণ তারা জানে না, ছায়ার সাথে কুস্তি লড়ে জয় পাওয়া যায় না কখনো।
এরই মধ্যে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। সারাদেশে পণ্য পরিবহন-বিপণন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাজারে দামের আগুন। বিপন্ন হয়ে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থাও।বাচ্চাদের পড়াশোনা একপ্রকার লাটে উঠেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে পরীক্ষা ব্যবস্থা। মানুষের আয়-রোজগারে টান পড়েছে। মানুষ বড় কষ্টে-আতংকে দিন পার করছে। মানুষ রাস্তায় রের হতে পারছে না। পদে পদে আক্রান্ত হবার ভয়, জীবন হারানোর ভয়। রাস্তায় বের হলে আবার ঘরে ফেরা হবে কিনা কেউ জানে না। কিন্তু কি অপরাধ সাধারণ মানুষের?
গার্মেন্ট শিল্পসহ সব শিল্পেরই আজ ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দেশের অর্থনীতিরও এখন ক্রমশ ভঙ্গুর দশা। আমদানি রপ্তানি বন্ধ, ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য গুদামে ফেলে রেখেছেন। কেনার লোক নেই। রপ্তানি করবার বা পণ্য অন্যত্র পাঠাবার ব্যবস্থা নেই। সবই আজ সহিংস রাজনীতির ছোবলের শিকার।
জামায়াত-শিবিরের এসব ভয়াবহতাকে দেখেও না-দেখার ভান করে চলেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিবিসি, সিএনএন, দ্য ইকোনমিস্ট ও আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়া। তারা উল্টো একপেশে সংবাদ প্রচার করে চলেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ঢেলে অন্যায় লবিং করে মার্কিন সিনেটরসহ মিডিয়াকে নিজেদের পক্ষে টেনেছে জামায়াত। এটা এখন ওপেন সিক্রেট।
বিবিসি-সিএনএন-দ্য ইকোনমিস্টের মতো সংবাদ মাধ্যমও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে কথা না বলেই পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রচার করছে। এক্ষেত্রে তারা সাংবাদিকতার নীতিমালা ও নৈতিকতারও ধার ধারছে না। ক`দিন আগে বিবিসি বাংলা এমনই এক প্রতিবেদন প্রচার করেছে যাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য ছাড়াই একপেশে ঢালাও তথ্য (?) গেলানো হয়েছে।
বিবিসির এমন হঠকারিতা আমরা দেখেছি বছর দশেক আগে। সে সময় আফগান সীমান্তঘেঁষা এক ইরানি পার্বত্য শহরে ভূমিকম্পে ১০ হাজারের মতো মানুষ মারা গিয়েছিল। বিবিসি ইরানে ভূমিকম্পের খবরটি টানা ক`দিন চেপে যায় বা প্রচারের প্রয়োজন মনে করেনি। ইরাকযুদ্ধের (আসলে হবে দখল) সময়ও দেখা গেছে এসব পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা। আর আল জাজিরাও যে ইসলামী উগ্রবাদের পক্ষে, সেটাও আঁচ করা যায়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিডিয়ার এই একপেশে ভূমিকার নিন্দা জানাই।
জামায়াত এভাবেই মৌলবাদের ফাঁপাফোলা অর্থনীতির জোরে, কোটি ডলারের অন্যায় লবিংয়ের জোরে দেশে বিদেশে আস্কারা পাচ্ছে।
প্রশ্ন হলো, এ-কেমন রাজনীতি জামায়াতের? তারা কি গোটা বাংলাদেশকে বানাতে চায় পোড়ামাটির দেশ? তারা কি চায় একাত্তরের বিভীষিকা আবার ফিরিয়ে আনতে? তারা একাত্তরে সাধারণ নিরীহ মানুষকে টার্গেট করেছিল, ধর্ষণ, গণহত্যার তাণ্ডব চালিয়ে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে; তারা নরকের দরজা খুলে দিয়েছিল গোটা বাংলাদেশে। কিন্তু শেষ রক্ষা তো হয় নি জামায়াতের! শেষ রক্ষা হয়নি তাদের দোসর রাজাকার-আল বদর-আল শামসদের। বাঙালির সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে টিক্কা-খান আর ইয়াহিয়া খানদের পাঠানো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে লজ্জায় অধোমুখ হতে হয়েছিল। তারা ও তাদের পাকিস্তানি প্রভুর দল বাঙালির হাতে পেয়েছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উচিত শিক্ষাটি। কিন্তু ইতিহাসের কাছ থেকে শিক্ষা নেয় নি জামায়াত-শিবির---এটাই জামায়াত-শিবিরের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ট্রাজেডি। তারা একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায় নি বা দু:খ প্রকাশ পর্যন্ত করেনি। যেমন ক্ষমা চায় নি তাদের প্রিয়তম পাকিস্তানও। আজ পাকিস্তানের দুর্দশার দিকে তাকিয়েও জামায়াতের বোধেদয় হয়নি। এখনো তারা উগ্র মওদুদীবাদের উদ্ভট উটের পিঠে চড়ে ইতিহাসের উল্টোপথেই হাঁটছে।
এই জামায়াতকেই দোসর করেছে বিএনপি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগও মিত্রতা পাতিয়েছিল এই জামায়াতেরই সাথে। তাতে নাকে খত তো আর দিতে হয়নি আ. লীগকে! সে ভুল আ. লীগ বুঝতে পারলেও জামায়াতের সাথে সখ্য গড়ার বদনাম এখনও তাকে তাড়া করে ফিরছে। এতোকিছু দেখেও সেই দলটিকেই রাজনৈতিক মিত্র বানিয়ে বৈতরণী পারি দিতে চাইছে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দল’ বলে দাবিদার বিএনপি। জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে শুধু নয়, জামায়াতের সব কাজকেই নির্বিচার বৈধতা দিয়ে চলেছে খালেদা জিয়ার বিএনপি। জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও-খুন-তাণ্ডব-–কোনো কিছুতেই আর অন্যায়ের ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল বিএনপি। অথচ জামায়াত কি করছে কি বলছে তা গোটা দেশের মানুষ দেখছে শুনছে। সারাদেশে প্রকাশ্য রাস্তায়, বাজারে, হাটে-বাটে স্টেশনে টার্মিনালে কী নৃশংস তাণ্ডব আর রক্তপাত চালাচ্ছে জামায়াত-----প্রযুক্তির কল্যাণে সবই স্পষ্ট আজ টিভি ফুটেজে, মানুষের মোবাইল ফোনে ধৃত ছবিতে। সবই ঘটছে প্রকাশ্যে। সবাই দেখছে; দেখছে না শুধু বিএনপি।
edit-6আর বিএনপির রাজনীতির চেহারাও একটু একটু করে যাচ্ছে বদলে---বিএনপির জামায়াতিকরণই বলা যেতে পারে একে। তা নাহলে `‘শুধু একটা দুটো গাড়ি পোড়ালে আন্দোলন হয় না’`--এমন ভয়ানক কথা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রেসক্লাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কী করে বলতে পারেন? কী করে পারেন? তখন আর আমাদের বুঝতে দেরি থাকে না যে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দল’ বলে দাবিদার বিএনপি, এখন নিজের চেহারা দেখতে শুরু করেছে জামায়াত-শিবিরের ঘোলা আয়নায়। এটা ভালো লক্ষণ নয়।
গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি জামায়াত-শিবিরের মতো সহিংসতার দিকে হাঁটলে তার রাজনৈতিক আত্মহননের পথই বরং প্রশস্ত হবে। এটা বিএনপির জন্য যেমন বিপর্যয়কর তেমনি তা গোটা দেশের জন্যও।বিএনপির মুক্তমনা প্রগতিমনস্ক প্রাগ্রসর গণতন্ত্রমনা অসংখ্য নেতাকর্মী-সমর্থকের জন্য তা হবে বেদনার, গ্লানির।
বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, জামায়াতপ্রীতিজনিত সাময়িক রাজনৈতিক ফায়দার জন্য সে যেন তার গণতান্ত্রিক চরিত্রকে জলাঞ্জলি না দেয়। বিএনপিতে কতো বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা---এই গৌরবকে ম্লান করে জামায়াতের হিংসার ছাই দিয়ে নিজের চেহারাকে আবিল করলে একদিন অস্তিত্বের হুমকির মুখে পড়তে হবে। জোটের সবচে বড় শরিক হিসেবে বিএনপির এখনই জামায়াতকে বলা উচিত : `জনগণের বিরুদ্ধে এই হিংস্রতা বন্ধ করো। অনেক হয়েছে। আর নয়!!
সেই সঙ্গে নিজেদের দলের একটি উগ্র অংশও যে জামায়াতি স্টাইলে নৈরাজ্যে নেমেছে, তাদেরও এবার থামতে বলা উচিত। নইলে তা সবার জন্য বিষময় ফলই বয়ে আনবে। বিএনপি ও জামায়াতকে আমরাও বলতে চাই: ‘অনেক হয়েছে—এনাফ ইজ এনাফ।’ আর নয় হিংসা রক্তপাত। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মানুষের। মানুষ এভাবে দিনের পর দিন বসে বসে মার খেয়েই যাবে এমনটা না-ও হতে পারে। মানুষ রুখে দাঁড়াবেই -----আজ না হয় কাল, নাহয় পরশু। শান্ত পর্বতের নিচেই ঘুমিয়ে থাকে আগ্নেয়গিরি। সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের চেহারাও বিসুভিয়াসের রুদ্র ক্ষমাহীন জ্বালামুখের চেয়েও ভয়ানক হয়ে ওঠে কখনো কখনো।
সরকারও মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আহতদের পাশে সেভাবে দাঁড়াচ্ছে না সরকার। নিহতদের পরিবারগুলোর পাশেও দাঁড়াতে দেখছি না আমরা সরকারকে। শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দিলেই বড় বড় বুলি আওড়ালেই সরকারের দায়িত্ব কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না।
অতএব আর নয়, জামায়াত-বিএনপির ব্যাক গিয়ারহীন ক্ষ্যাপা লরিকে থামানোর এখনই সময়। দেশটা আমাদের। এই শুভবোধ জাগ্রত হোক সবার। আর সাধারণ মানুষেরও সময় এসেছে সহিংসতার বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলবার, রুখে দাঁড়াবার। গ্রামেগঞ্জে পাড়ায় মহল্লায় একযোগে নৈরাজ্য মোকাবেলা করার সময় এসেছে। সূত্র View this link View this link
©somewhere in net ltd.