নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধর্মে কর্মে বর্ণে আমি মানুষ\nতাই মানুষের গান গাই\nনশ্বর পৃথবীতে বর্ণে শব্দে কিছুটা কারন; \nরেখে যাই।

মনির হোসেন মমি

চাই স্বাবাভীক মৃত্যুর গ্যারান্টি

মনির হোসেন মমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীঁরা০২

০৫ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০

ফুলীঁকে ম্যাডামের ঘাড় ধাক্কাটা এতটা জোর ছিল যে ফুলীঁ বাহিরে উপুর হয়ে পড়ে ঠোট কেটে রক্ত বের হয়ে যায়।ম্যাডাম দরজা বন্ধ করে দেয়।ফুলীঁ ধীরে ধীরে উঠে মেইন গেইটের দরজায় সামনে যেতেই প্রকৃতির অত্যাচার বৃষ্টির কবলে পড়ে।সিকুরিটি গেইট হতে ফ্লাটের মেইন গেইটের দু’পাশে ইটে সাজানো বাগানের বাউন্ডারীর উপর বৃষ্টির মাঝেই বসে পড়ে এমন সময় সাহেব প্রাইভেট কারে আসে।সিকুরিটি গেইট খুলে দিতেই প্রাইভেট কারের হেড লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেল ফুলীকেঁ।ফুলীঁ বাগানের হাসনা হেনা ফুলের গাছের সাথে জরোসরো হয়ে বসে ঠান্ডায় কাপছেঁ।সাহেব ফুলীঁর কাছে যেতে ফুলীঁ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সাহেব ফুলীঁকে আদরে সঙ্গে করে ঘরে প্রবেশ করতে অবাক হন।প্রায় ২০/২৫ জন অত্যাধুনিক মহিলারা আনন্দে মাতাল।প্রত্যকের হাতে শুইচকির গ্লাস সাহেব আর ফুলীঁকে দেখে ম্যাডামের রাগ আরো বেড়ে যায়।সাহেব নিঃশব্দে রাগান্নীত চোখে ফুলীঁকে নিয়ে ভিতরে চলে যায় ।ফুলীঁ তার রুমে গিয়ে ভেজাঁ ড্রেস পরিবর্তন করে ভাঙ্গা চকিতে শুয়ে পড়ে।ম্যাডাম পার্টি শেষে বেড রুমে ঢুকে সাহেবকে না পেয়ে খাটে বসে পানো সাপের মত জিদ্দে ফুস ফুস করছে কিছুক্ষনের মধ্যে সাহেব বাথরুম হতে বেড রুমে প্রবেশ করে ড্রেসিং টেবিলে আয়নাতে চুল ঠিক করছে ম্যাডাম এখনও ফুফাচ্ছে।

-তুমি কাজটা কি ঠিক করলে?

-কোন কাজটা?

ম্যাডাম এবার সাহেবের সামনে আসে।

-তুমি কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না?

-অশান্তিতে কোথায় রইলে..দিব্যি শপিং করছ,পার্টিতে যাচ্ছো ঘরের ভিতর পার্টি করছ….কই আমিতো তোমাকে বাধা দেইনি।

ম্যাডাম এবার চেচিয়ে।

-কি আমি খুব শান্তিতে নাহ?হে খুব শান্তি…স্ত্রী হিসাবে কোন কথাটা তুমি আমার রেখেছো?বলো…বলো?আমি যাকে বাহির করলাম তাকে তুমি আবার ফিরিয়ে আনলে…আমার কথার কি দাম দিলে তুমি, বলো…….কি দাম দিলে?মেহমান সবাই তা দেখে ছি! ছি! করল।

সাহেব ধমকের সূরে….

-আস্তে কথা বলো…নিশু ঘুমাচ্ছে উঠে যাবে…তুমি কাদের মেহমান বলছ যারা স্বামী সংসার রেখে এ ক্লাব ও ক্লাব গুড়ে বেরায়….তাদের?তোমার কাছে ওরা মেহমান হতে পারে আমার কাছে শয়তানের দল।

-কি এত বড়ো কথা….ঠিক আছে….ঠিক আছে আমি…আমি কালই বাপের বাড়ী চলে যাব।

-যেতে হয় যেয়ো…তবে এখন একটু চুপ করো,অনেক রাত হয়েছে… আমি ঘুমাবো।

সাহেব লাইট বন্ধ করে দেয় ঐদিকে ফুলীঁ সাহেব-বিবির ঝগড়ার শবদ শুনে ঘুমোতে পারেনি জেগে জেগে চিন্তা করছে….নাহঃ এ বাসায় আর থাকা যাবে না কালই যে তাকে এখানে দিয়েছে তার সাথে যোগাযোগ করে চলে যাবে।

ফুলীঁর মত আরো যারা আছে এই শহরে তাদের বাসা-বাড়ী কাজে লাগাতে আর এক স্বঘোষিত গোষ্টী কাজ করেন ।এই সব অসহায় কাজের লোকদের কাজে লাগিয়ে বেশ দু’পয়সা কামান।ফুলীঁর সর্দানীর নাম কাঙ্গালী জুলেখা ।কাঙ্গালী জুলেখা ফুলীঁকে এ বাসায় কাজে লাগাতে সাহেবের কাছ হতে পাচঁ হাজার টাকা এনাম নিয়েছিল।কারন গার্মেন্ট শিল্পের প্রসারে বাসা বাড়ীতে কাজের বুয়া পাওয়া খুব মুশকিল হয়ে গেছে তাই এ সব সর্দারদের কাছে ধন্যা দিতে হয়।সে সুযোগে সর্দররা দুপক্ষের কাছ থেকে টাকাতো নেয়ই বরং মাঝে মাঝে কাজের বুয়াদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে আবার কেউ কেউ বুয়াদের বেতন হতেও মাসে একটা অ্যামাউন্ট নিয়ে থাকেন।সে আজ সাহেবদের বাড়ীতে এসেছে ,কেউ আসতে বলেনি হয়তো ফুলীঁর কাছ থেকে নতুবা সাহেব-ম্যাডামের কাছ থেকে কিছু টাকা চাইতে এসেছে।এসেই ফুলীঁকে খুজ করে।ফুলীঁকে পেয়ে সে ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করে।ফুলীঁ তাকে এখান হতে নিয়ে যেতে বলে।

-কেন চলে যাবি?

-এমনি মন বসে না…

-মন বসে না বললেই হলো…জানস তোর পিছনে আমার কত টাকা খরচা হইছে?এখন বলছিস মন বয় না…কত আহলাদের কথা।

এরই মধ্যে ম্যাডাম দুতলা বেড রুম থেকে ড্রইং রুমে আসে।মেডামকে দেখে সর্দানি প্রভু ভক্ত পালা কুকুরের মত নম নম শুরু করে।মেডাম সোফায় বসেন সর্দানি কার্পেটের উপর বসে।

-শুনো জুলেখা তুমি মেয়েটাকে নিয়ে অন্য কাউকে দিবে।এ ব্যাপারে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করবা না আর তোমার খরচ যা লাগে আমার ম্যানাজার তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবে, ঠিক আছে?

-ঠিক আছে মেম।

ফুলীঁর বকেয়া দু মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করে দেয় ম্যাডাম সাহেবের অনুপস্হিতে।ফুলীঁও ম্যাডামের সাথে কথা বলে চলে যায় সর্দানির সাথে সর্দানির ভাড়া করা বাসায়।ফুলীঁ যাবার পথে বার বার বলছে সে বাড়ী চলে যাবে তাকে যেন বাড়ীতে যাবার ব্যাবস্হা করেন কিন্তু সর্দানির চিন্তা ব্যাবসায়িক তাই ফুলীঁকে তার ভাড়া বাসায় থাকতে বলে।দু এক দিনের মধ্যে অন্যত্র কাজে দিবে।ঐ দিকে ফুলীঁর গ্রামের বাড়ীতে মা বাবার কাছে কিছু টাকা পাঠায়।কয় দিন আগে ছোট ভাইটা স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীতে উঠেছে তার জন্যও বই কিনতে হবে তাই প্রাপ্য দুমাসের বেতন হতে কিছু রেখে দিয়েছে বই কিনে সাথে নিয়ে যাবে বাড়ীতে তাই বাড়ীতে যাবার আবদার বার বার করছে।সর্দানি টাকার নেশায় ভূত,ফুলীঁর কথা কানেই নেননা।ফূলীঁর বয়সটা অল্প হলেও শারিরীক গঠন প্রনালী বেশ।ফুলীঁ এ বাসায় এসে অসস্হিবোধ করছে।কেমন যেন বিল্ডিংয়ের গিজগিজে ঘণ বসতীপূর্ণ এরিয়া।চারদিকের ময়লা আর্বজনার অসহনীয় দূর্গন্ধ।লোকগুলোকে যন্ত্র মনে হয়।

ফুলীঁকে বিকাল বেলায় আর এক বাসায় নিয়ে যায়…সেখানে এক এনজিওর উচ্চ পদস্হ কর্মকর্তার বসবাস। সাহেবের একমাত্র বিধবা বড় বোন আর সাহেবের ছয় সাত বছরের ছেলে ছাড়া আর কোন আত্মীস্বজন নেই।সাহেবের ওয়াইফ সন্তানের বয়স যখন চার পাচঁ তখনই পরকীয়া প্রেমের টানে টেক্সি ড্রাইভারের সাথে পালিয়ে যায়।তখন হতেই সাহেব একা আর বিয়ে করেনি।সেখানে শুধু ছেলেকে স্কুলে নিবে এবং আনবে এই হলো ফুলীঁর কাজ।ফুলীঁ তার ব্যাগপত্র তার বরাদ্ধকৃত রুমে রাখে।এ বাসায় ফুলীর থাকার ব্যাবস্হা বেশ ভাল।সাহেবের ব্যাবহারও অনেক ভাল এখানে আসা চার মাসে ফুলীঁ তাই আন্দাজ করতে পেরেছে।শুধু রাতে সাহেব ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।এ বাসায় ভালোয় ভালো কেটে গেল প্রায় মাস ছয়েক।ফুলীঁর আর তর সইছেনা সে গ্রামের বাড়ীতে যাবে অনেক দিন যাবৎ মা বাবাকে দেখেনি মন কেবল ছটফট করে, কবে যাবে।ফুলীঁর বেতনের কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে কিছু বই ক্রয় করে বাসায় রেখে দেয় যে কোন সময় গ্রামে যাবার সুযোগ এলে সে নিয়ে যাবে।আজ রাতে ফুলীঁ মেম সাহেবের ঘরে ঢুকে কাপড় চোপরগুলো গুছাতে আলমারির দরজা খুলতেই চোখে পড়ে ফুলীঁর মেম সাহেবের লাল রংয়ের বিয়ের শাড়ী আর ব্লাউজ তা হাতে নিয়ে সে হারিয়ে যায় কল্পনায় ভালবাসার রঙ্গীন জগতে….আজ যদি সে কোন ধনীর দুলালী হত তাহলে সে একদিন তার মেম সাহেবের মত লাল রংয়ের বিয়ের বেনারশী শাড়ী পড়ে স্বামীর সোহাগী হতে পারত এখন তা আশার গুড়ে বালি মাত্র।সে কাপড় গুলো নামিয়ে একে একে পড়তে থাকে বেশ ভাল লাগছে তাকে সে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বার সে শুধু নিজেকে দেখছে….কত মজাইনা জীবনটা বর আসবে পালকী করে বউ সাজিয়ে তাকে নিয়ে যাবে স্বামীর বাড়ী তারপর বাচ্চা কাচ্চার মধুর ঝামেলায় পড়ে থাকবে সারাক্ষন।কি অসম্ভব মনে শিহরণ জাগা অনুভূতি তাকে ভাবিয়ে তুলে।সে কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে যায় স্বামীর ভালবাসার চার দেয়ালে।হঠাৎ সাহেবের বোনের কন্ঠ চমকে উঠে…

-আইতাছি ফুফী

-ও ঘরে কি করিস?

-কিছু না,,,কাপড়গুলো গুছিয়ে এলাম।

-ঠিক আছে,,,তোর সাহেব তো এখনও এলোনা…মনে হয় আরো রাত হবে খাবারগুলো টেবিলে দিয়ে ওখানেই বসে থাক..আমি ঘুমাতে গেলাম।

সাহেব প্রায় প্রায় অনেক রাত করে বাসায় ফিরে আজও এর ব্যাতিক্রম হয় না রাত প্রায় বারোটা বেজে গেল এখনও আসছে না।ফুলীঁর চোখে ঘুম এসে যায়।খাবার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।কিছুক্ষন পর সাহেব বাসায় ফিরে সাথে দু’জন মেহমান সাহেবের কোন অফিসের লোক হবে অথবা ব্যাবসায়ীক পার্টির লোক।ফুলিঁ কলিং বেল্টের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় ফুলীঁ দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে শর্তকতার ছিদ্র দিয়ে প্রথমে দেখে নেয় তার পর দরজা খুলে।ভিতরে ঢুকে সাহেব ব্রিফকেসটা ফুলির হাতে দেয় সাহেবের সাথে আসা লোক দুটো ফুলীঁর উপর চোখ পড়ে।সাহেব ফুলীঁকে খাবার খেয়ে এসেছে বলে লোক দুটোকে নিয়ে উপরে তার রুমে নিয়ে যায়।ফুলীঁ টেবিলের খাবারগুলো গুছিয়েঁ তার শোবার ঘরে যেতেই উপর থেকে সাহেবের ডাক পড়ে।ফুলীঁ উপরে সাহেবের রুমে গিয়ে হতভম্ম একি সাহেব এবং সাহেবের বন্ধুরা হুইচকির পশরা সাজিয়ে বসে আছে আইস লাগবে তাই ফুলীকে ডাকা হয়।

-শোন ফুলীঁ নীচের ফ্রিজ থেকে কিছু বরফ নিয়ে আসো।

ফুলীঁ মাথা নাড়িয়ে নীচে চলে আসে।এ দিকে ফুলীঁ উপরে আসার আগেই তারা ফুলীঁর ব্যাপারে কথাবার্তা বলাবলী করেছে।

-মেয়েটি কে?আপনার কোন আত্ত্বীয় স্বজন?

-না..কাজের মেয়ে….

বন্ধু দুজনে কি যেন ইশারায় বলাবলি করে…সাহেবকে জানায় সাহেব তাতে রাজি হয়।ফুলীঁ আইস নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে সাহেবকে না দেখতে পেয়ে ফুলীঁ তাদের প্রশ্ন করে।

-আর কিছু লাগবে?

-লাগবেতো কত কিছুই…তুমি এখানে বসো।

-না… আমি বইতে পারুম না আমার ঘুম আইছে….সকালে উঠে আবার মেলা কাজ।

দু’জনে হুইচকির রঙ্গীন পানিতে রঙ্গীন হয়ে আছেন ভাল মন্দ কি বুঝার জ্ঞান নেই…গ্লাগে মুখে রঙ্গীন পানি ঢালে আর চোখেঁ তাকায় ফুলীঁর দিকে।বেশ সুন্দর মেয়েটি যদি কোন বড় লোকের ঘরে জম্মাতো তবে সে নিশচয় সুন্দরী খেতাব পেতো।ফুলীঁর মনে সবে মাত্র যৌবনের জোয়ার আসতে শুরু করেছে তাই তাহার শাখাঁ প্রশাখায়ঁ কৃঞ্চচূড়া ফুলের লাল টকটকে রংয়ের বাহার লোক দুটির মনে কামনার তৃঞ্চায় যেন বহুকালের শুষ্ক মরুভুমির প্লট ভেজানোঁর অপেক্ষায়।ফুলীঁ দরজার খুলতে গিয়ে চমকে যায়! নরপশুদের পশুত্ত্বের থাবায় ফুলীঁর কুমারিত্ত্বে আঘাত এসে ফুলীঁকে করে নিঃস্ব পৃথিবীকে করে পর।

চলবে…

বেলা যে গেল বয়ে তবুও ফুলীঁর কোন সাড়া শব্দ নেই।রাতের অন্ধকারে বিষাক্ত সাপের ছোবলেঁ ফুলীঁ শুয়ে আছে সাহেবের রুমের মেঝেতে।সাহেবের বিধবা বোন আর সাহেবের ছেলে তাকে খুজেঁ হয়রান।কোথাও নেই।সাহেবের বিধবা বোন উপরে সাহেবের রুমে তাকিয়ে অবাক হন,দরজাটি মৃদু খোলা ছিল সেই খোলা স্হান দিয়েই সাহেবের বোনের চোখে পড়ে ফুলীঁর অসাড় দেহখানী।কেমন যেন চোলগুলো এলোমেলো,ফ্রকের ডানার অংশে ছিড়ে যাওয়া নরপশুদের ক্ষতের চিহৃ ।সাহেবের বোন রুমের ভিতরে ঢুকে ফুলীঁকে এক বার দুই বার তিন বার ডাক দিলে সে ধীরে ধীরে চোখ খুলে সাহেবের বোনকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

-ফুপি..গো এখন আমি কি করব?ওরা আমাকে মরার আগেই মেরে ফেলেছে।

ফুপি ফুলীকে জড়িয়ে ধরে।চোখে অশ্রু এসে যায় ফুপির।সেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।ফুলীঁকে সাওয়ার শেষে নাস্তা করান ফুপীঁ।তারপর ফুলীঁকে নিয়ে ফুপি চলে যায় নিকস্হ থানায়।থানার বড় কর্তা আজ সকাল সকাল অফিসে এসেছেন।সে ফুলীঁ আর ফুপিকে বসতে বলে তাদের সমস্ত অভিযোগ শুনেন মন দিয়ে কেইস লিখতে গিয়ে ফুপির কাছে আসামীর নাম শুনে থমকে যান।

-বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী,সমাজ সেবক জি,রহমান এবং কাইউম চৌধুরীর !

থেমে যায় থানা অফিসারের কলম দু,আঙ্গুলের মাঝে কলমটিকে নাড়াচ্ছেন।ফুপি অবাক হন।

-কি ব্যাপার অফিসার আপনি লিখছেন না কেনো?

-ও..হ্যা তারপর, কোন প্রমান আছে যে ওনারাই রেফ করেছেন?

-প্রমানতো আপনার সামনেই বসে আছে…..নিরীহ এই কাজের মেয়েটির জীবনকে ধ্বংস করেছে ঐ নরপশুরা আর কি প্রমান লাগবে?

-দেখুন,আমরা প্রমানের উপর নির্ভরশীল,প্রমান ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না আমি কেইসটা লিখছি আর মেয়েটিকে ডাক্তারী পরিক্ষা করাতে হবে তবেই আমরা কেইসটি আমলে নিতে পারব।

-কেনো?ডাক্তারী পরিক্ষা কেনো?একটি মেয়ে কখন..কখন তার সতীত্ত্ব হারিয়েছে বলবে? যখন তার সব শেষ হয়ে যায়,এটাকে কি আপনি মিথ্যে বলছেন? নিজের সতীত্ত্ব হারানোর কথা নিজেই বলছে তাপরও আবার কিসের প্রমান লাগবে।সোজা কথা বলুন আপনি কেইসটি নিবেন কি না নতুবা আমি অন্য ব্যাবস্হা নিব।

-রাগ করেন কেনো ম্যাডাম কেইসটি নেবনা আমি বলিনিতো,,,আসলে ব্যাপারটা আপনি বুঝতে পাছেন না।

-আমার মাথার চুল,চোখের আলো এমনিই কমেনি আমি বুঝি সব বুঝি….আপনাদের মত খচ্চেররা একদিকে ফুলীঁদের মত অসহায়দের জীবন ধ্বংস করবেন আর আপনার মত অফিসার আরো একবার ফুলীঁদের প্রকাশ্যে মেডিক্যাল রিপোর্টের নামে উলঙ্গ করে দুনিয়াকে লাইভ দেখাবেন….ছি! আপনাদের বিচার ব্যাবস্হা।চল ফুলীঁ চল এই সব নোংরা সমাজে তোরা আর বাচতে পারবিনা।বলে ফুপি ফুলীঁকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।ফুপী বাসায় ঢুকে একটি ফোন রিসিভ করেন।ফোনটা করেছিল সাহেব তার ভাই।

-হেলো….কে?

-আমি….শোন আমি বাসায় আসতে পারছি না জরুরী কাজে আমাকে এখনই থাইল্যান্ড যেতে হচ্ছে।

ফোনটা রেখে ফুপি পাশের চেয়ারে বসে পড়ে।মেয়েটিকে নিয়ে এখন সে খুব চিন্তায় আছেন।সারাদিন মূখ মলিন করে জড়োসরো হয়ে বসে থাকে খাবার দাবারের প্রতিও তেমন কোন রুচি নেই।

ফুলীঁর চোখের কোণে সর্বক্ষন জমে থাকে সভ্য সমাজের অসভ্য মানুষ নামক পশুদের ঘৃণা ভরা জল কণা অসহায়ের মত চেয়ে থাকে নতুন কাউকে দেখলেই।আর পুরুষ মানুষের প্রতি দৃষ্টি পড়তেই পাগলের মত ছুটে পালিয়ে বেড়ায় সে এখন এক প্রকার পাগল উম্মাদ প্রায়।ফুলীঁকে আজ খুব যত্ন করে ফুপী রাতের খাবারটি খায়িয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেন।ফুলীঁ ঘুমে বিভোর রাতের আকাশেঁ তারাগুলো মিট মিট জ্বলছে।রাত বাড়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ছে মানব জাতি।কঠিন পাথুড়ে শহরে গভীর রাতে মাঝে মাঝে রিক্সার টুং টাং বেইলের শব্দ।ফুলীঁর ডানে বায়ে উপরে নীচে এবং ঘরের বাহিরে অসংখ্য অচেনা মানুষাকৃতি অজানা জীব ক্ষুধার্থের তৃঞ্চা মেটাবার জন্য ফুলীঁর দিকে ক্রমশতঃ এগিয়ে আসছে।ফুলীঁ ছটফট করছে কি যেন বলার চেষ্টা করেও কেবল বোবা ধরার মত হাউ মাউ করছে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়।কিছুক্ষন নীরবতা এর পর এক পা দু’পা করে ঘর হতে বাহির হওয়া,দূরে এক মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফযরের আযানের ধ্বনি…সকাল হয়ে গেছে মুমিনগণ মসজিদের দিকে এসো.. মোয়াজ্জিনের এ আহবান যেন ফুলীঁর কানেই যাচ্ছে না সে আনমনে হাটছে।মাঝে মাঝে চলন্ত গাড়ীর হর্ণকে উপেক্ষা চলছে হঠাৎ এক প্রাইভেট কারে হালকা ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে রাস্তার পাশে।

প্রাইভেট কারের ভিতরে ছিল তিনজন ইয়াং মেয়ে।বেশ সাজগোজ ছিল, তাদের সর্বাংঙ্গে ছিল অলংকারের বাহার ঠোটে ছিল রঙ্গীন লিপষ্টিক,চোখে রঙ্গীন চশমা।মেয়েগুলো গাড়ী থামিয়ে ফুলীঁকে ধরাধরি করে প্রাইভেট কারে তুলে একটি হাসপাতালে ভর্তি করায়।হাসপাতালে ফুলীঁকে তিন দিন থাকতে হয়েছিল।হাসপাতালের সমস্হ ব্যায় বহন করে মেয়েগুলো।জ্ঞান ফেরার পর হাসপাতালেই মেয়েটির পরিচয় জানতে চাইলে মেয়েটি তার গ্রামের পরিচয় জানতে পেরে মেয়েগুলোর মাঝে একজনের গ্রামের বাড়ীর পাশের গ্রামের ফুলীঁ।মেয়েটির নাম জরিনা।সেও এই ঢাকা শহরে প্রথমে বাসা বাড়ীর কাজে এসে ভাগ্যের চক্রাকারে জীবনের দামে সে এখন ঢাকা শহরের কয়েকটি ফ্লাটের মালিক এবং আছে বিভিন্ন উচুতলার ব্যাবসা।ফুলীঁর প্রতি তার মায়া এসে যায়।ফুলীঁর জীবনের নিঃসঙ্গতার বর্বরতার ঘটনা তার মনে আচ লেগে যায় তখন সে মহিলা শাষিত সমাজের পুরুষ নামক কাপুরুষদের ঘৃণা ভৎসনা করে….ছি!পুরুষ নামের হায়নার দল।

-কোথায় যাবি?

-কোথায় আর যাব আফা,দেশে যাবো কি মূখ নিয়ে।

-বুঝেছি….চল তুই এখন থেকে আমাদের সাথে থাকবি।

ফুলীঁকে নিয়ে জরিনা তার ফ্লাটে উঠে।যাবার সময় জরিনার জন্যে কিছু কাপড় চোপড় আর কিছু ঘরের সরঞ্জাম কিনে নিয়ে যায়।ফুলীঁকে রুম দেখিয়ে দেয় জরিনা।

-এই রুমে তুই থাকবি।রুম ভাড়া আর খাবার দাবার নিয়ে তোকে আর চিন্তা করতে হবে না।সব আমিই করব।ঠিক আছে তুই তোর রুম গুছিয়ে নে আমি তোর জন্য খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

জরিনা চলে যায়।ফুলীঁ একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম গোছাচ্ছে।মনে মনে জরিনার প্রসংশা করছে…দুনিয়াতে এখনও ভাল মানুষ আছে বলেই দুনিয়া টিকে আছে।ঘর গোছাতে গোছাতে জানালার পর্দা লাগাতে জানালার সামনে গিয়ে ফুলীঁ থ”খেয়ে যায়।জানালা দিয়ে ফুলীঁ পাশাপাশি রুমের প্রত্যাকটি জানালায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ছেলে মেয়ের কিছু অনৈতিক কাজ যা ফুলীঁকে ফুলীঁর জীবনটাকে উলোট পালট করেছে সেই একই কাজ এখানের প্রায় প্রতিটি রুমেই ঘটছে তবে তা স্বাভাবিক কোন বিশৃংখলা নেই।ফুলীঁ ঘর হতে দু পা বাহিরে দিয়ে একটু এগিয়ে চোখের দৃষ্টি পড়ে একটি ঘটনায়।

দু’ধারে এক তলা বিশিষ্ট সারিবদ্ধ ভাবে বিল্ডিংয়ের কারনে মাঝখানে একটি সরু রাস্তা তৈরী হয়।সরু রাস্তার দু পাশের বিল্ডিংয়ের দরজা গুলোর দরজা পাশাপাশি।বিল্ডিংয়ের দু পাশের দু দেয়াল ঘেষে খদ্দেরের আশায় সাড়িবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে আছে কিছু সমাজ দ্বারা কলংকিত কিছু মেয়ে দেহ ব্যাবসায়ী।এক খদ্দেরের সাথে এক মেয়ের বিভিন্ন রঙ্গ রসে দর কসাকসী চলছে।কয়েক জন খদ্দেরের সাথে ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা একজন মাস্তান টাইপের ছেলে সরু পথটি দিয়ে ভিতরে যাবার পথে একটি মেয়ে রসিকতার ছলে মাস্তানটির বুক উদোম করা শার্টের কলার ধরে টান দেয় ছেলেটি চলন্ত পথে হঠাৎ থেমে যায় সাথে ওর বন্ধুরাও।

-কি লো তুই এত দিন কোথায় ছলি?

মাস্তান ছেলেটি অবাক যদিও সে এখানে এই পল্লীতে আসে মাঝে মাঝে কিন্তু মেয়েটির কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে যায় আর সেই অবস্হায় সেখানে যত বড় শক্তিশালী পুরুষই হউক যেন মেয়েদের কাছে কলা পাতার মতন।ছেলেটিও মেয়েটিকে এক জারি মেরে হাটা দেয়।ছেলেটির বন্ধুরা যে যার কাজে ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ে শুধু মাস্তান ছেলেটি রুমের বাহিরে সরু পথের এক পাশে মোড়াতে বসে আছে ফুলীঁ তা লক্ষ্য করে।ফুলীর আশ্রয়দাতা ফুলীঁকে একটি পেপসির বোতল হাতে দিয়ে হুকুম করে ঐ ছেলেটিকে দিতে।ফুলীঁ প্রথমে ইতস্তঃ করলেও অবশেষে ছেলেটির সামনে পেপসির বোতল নিয়ে ছেলেটিকে পান করতে বলে।ছেলেটি ফুলীঁর দিকে তাকায় ফুলীঁ মাথা নত করে দাড়িয়ে থাকে।

-তোমার নাম কি?

-জী…ফুলীঁ।

-তুমি এখানে নতুন?

-জি..জি না আমি বাহিরে কাজ করি এখানে জরিনা আপু আমাকে থাকতে দিয়েছে।

ছেলেটি মুচকি হাসে যেন ফুলীঁকে জানিয়ে দেয় এক সময় এটাই হবে তোমার আসল ঠিকানা।বন্ধুরা সবাই যার কাজ সেরে চলে আসে।ছেলেটি বন্ধুদের নিয়ে চলে যাবার সময় জরিনার সাথে কি যে বলে ফুলীঁ তা আচ করতে পারল না কিন্তু ফুলীঁ কেনো এমন পরিবেশ ভাল লাগে না।সে জরিনাকে প্রশ্ন করে।

-আফা..ঐ ছেলেটি কে?

-ও…. হচ্ছে আমাদের এই পল্লীর রক্ষনাবেক্ষক।নাম তার ছোটন রাজা।তাকে যতটা ঠান্ডা মনে হয় সে ততটা ঠান্ডা নয়।তবে ও মানুষ ভাল।

ফুলীঁ খুব চিন্তায় পড়ে যায় তার এ নিশিদ্ধ পল্লীতে তার কাজটা কি হবে।সে তো এ পরিবেশে নিজেকে খাপ খায়িয়ে নিতে পারবেনা।তাহলে সে কি করবে?

আজ ফুলীঁ খুব সকাল সকাল উঠে বাহিরে বের হলেন চাকরী খোজাঁর ধান্দায়।মেয়েদের চাকরী সাধারনতঃ এখন তেমন কোন সমস্যা না।গার্মেন্টস শিল্পের প্রসারে তা এখন সকাল সন্ধ্যা মাত্র।প্রথমে সে চেষ্টা করে একটি স্হানীয় গার্মেন্টস ফেক্টরীতে।প্রথম চেষ্টাতেই কাজ হয়ে যায় কিন্তু বেতন জীবন ধারনের জন্য তুলনামুলক হারে অনেক কম তবুও সে সেখানেই যোগ দেন।শুরু হয় ফুলীর কর্ম জীবন।এখানে প্রায় ছয় সাত মাস যাবৎ কাজ করছে একদিন হঠাৎ জুট সন্ত্রাসীদের ঝগড়ার মাঝে পড়ে যায় ফুলীঁ।

দুপুরে লাঞ্চের এক ঘন্টা বিরতী।ফুলীঁ বাসা থেকে আনা খাবার টিফিন বাটি দিয়ে এনে নিদিষ্ট খাবারের কোন রুম না থাকায় সে সিড়ির এক পাশে বসে লাঞ্চ করছে এমন সময় হঠাৎ দু’জন লোক তার থালার উপর পা দিয়ে দৌড়ে পালালো ভাত গুলো ছিটকে সারা সিড়িতে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক সেই মুহুর্তে পিস্তল হাতে সেই অপরাধ জগতের ছোটন রাজা ছড়ানো ছিটানো ভাতের উপর পা দিয়ে যেতে বিবেকে বাধে সে স্টিল সেখানে দাড়িয়ে যায় চোখঁ পড়ে ফুলীঁর দিকে।ফুলীঁও তাকে চিনে ফেলে।পিস্তলের দিকে তাকিয়ে ফুলীঁ ভয়ে ঝড়োসরো মৃদু কম্পনের সহিত দাড়িয়ে থাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.