নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোলা জানালা

কাশবনে একদিন

কাশবনে একদিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইট-পাথরে চাপা পড়া মনুষত্ত্ব

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

আমার প্রবাস জীবনের দ্বিতীয় ছুটি। ঢাকা থেকে একদিন আমরা স্বামী-স্ত্রী দু'জনে বাড়ী যাচ্ছি। ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া-ঢাকা চলাচলকারী তিতাস ট্রেনটিই আমাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ট্রেন তখন পর্যন্ত।

সকাল সকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে চলে গেলাম। টিকিট কেটে প্লাটফর্মে ঢুকে অপেক্ষমান যাত্রীদের জন্য রক্ষিত বেঞ্চে বসলাম। আমরা আপাদমস্তক সুখী একটি ছোট পরিবার। তখনও দু'জনই আছি। বড় কন্যার জন্ম আরো একবছর পর। হাতের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে আমরা বেঞ্চিতে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মগ্ন হলাম। সবকিছু মিলিয়ে কেমন একটা স্বপ্ন স্বপ্ন সময়।

কথাবার্তার একপর্যায়ে গিন্নি বললেন, 'এই দেখ দেখ!' সামনে তাকাতেই আমার শরীরে একটি শীতল ধারা বয়ে গেল মাথা থেকে পা পর্যন্ত। এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য আমার জীবনে দেখিনি আর। একটি ১৪/১৫ বছর বয়সী ছেলে প্লাটফর্মে বসে দৈনিক পত্রিকা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে! আকাশ ছোয়া ইট-পাথরের ইমারতের শহরে আমি এ কী দেখলাম? স্টেশনের বিশালতায় নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হল। হাসিখুশি নিজেকে ছেলেটির তুলনায় তুচ্ছ মনে হল। গিন্নি ততক্ষণে পাথরের মূর্তিসম বনে গেছেনে। বললেন, দেখ কিছু কর ওর জন্য। ধীরপায়ে এগিয়ে গেলাম ছেলেটির কাছে। বললাম, 'এই তুমি কাগজ খাও কেন?' "স্যার, ক্ষিধা লাগছে, তাই" উত্তর এল। নিজেকে বিপন্ন মনে হল। পকেট থেকে বের করে কয়েকটি টাকা তার হাতে তুলে দিয়ে বললাম, কিছু খেয়ে আস যাও। বিস্মিত চোখে আমার দিকে চেয়ে রইল ছেলেটি। তার দৃষ্টি সহ্য করা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য ঠেকল। আবার ধীর পায়ে বেঞ্চিতে ফিরে এলাম। প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা হাসিখুশি দম্পতি কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল।

১৯৭৪ এর দূর্ভিক্ষ আমার দেখা হয়নি। কিন্তু একবিংশ শতাব্দিতে এসে আকাশ ছোয়া অট্রালিকার শহরে একটি কিশোর ছেলে কারো ফেলে দয়ো খবরের কাগজ ছিড়ে ছিড়ে খাবে, ভাবতেই নিজেকে পরাজিত আর অক্ষম মনে হল। এই একই শহরে কেউ কোটি টাকার গাড়ী হাকিয়ে চলে আবার কেউ ছুড়ে ফেলা খবরের কাগজ ছিড়ে খায় ক্ষুধার তাড়নায়?



ইতিমধ্যে আমাদের গাড়ী চলে আসল, আর আমরা আমাদের নির্দিষ্ট কামড়ায় নির্ধারিত আসনে বসলাম। গাড়ী ছেড়ে দিলে জানলা দিয়ে বহুবার দেখা কমলাপুর রেলস্টেশন দেখতে লাগলাম। আশ্চর্য হলাম সেই ছেলেটিকে আবার দেখে। সে আমার জানলার পাশে পাশে দৌড়াচ্ছে আর ডাকছে, 'স্যার স্যার, খাইছি'। এর উত্তরে আমি কী বলতে পারতাম? স্মিত হেসে হাত নাড়লাম শুধু। বিমানবন্দর রেলস্টেশানে ট্রেনেরে নিয়মিত যাত্রা বিরতিতে ছেলেটি আবারও আসল। আবারও একই কথা। স্যার স্যার, খাইছি! এবার আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম।



এরকম ঘটনা হয়ত অনেকেরই চোখে পড়ে বা পড়েছে। বিত্তবানগণ যদি তাদের উপর প্রযোজ্য যাকাতের টাকা ঠিকমত পরিষোধ করে দিতেন তাহলে বাংলাদেশের একজন মানুষও দরিদ্র থাকত কিনা সন্দেহ আছে। সাথে সাথে আমরা বৃহত পরিসরে না হলেও ব্যাক্তি পর্যায়ে সবাই কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারি সমাজ সংসার থেকে অভাব অনটন দূর করতে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে আপনার হাতের ছোট্র দানের টাকা।

অনেককেই দেখা যায়, ভিক্ষুক কিছু চাইলে তাকে দুরদুর করে তাড়িয়ে দেন, অথচ আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়াল সুরা দুহা'য় নিষেধ করেছেন স্পষ্ট ভাষায়, 'আর সাহায্য প্রার্থীকে দূরে সরিযে দিওনা'। অন্যত্র আল্লাহ পাক মানুষকে দান করতে উতসাহিত করেছেন অত্যন্ত সুন্দর ভাষায়। তিনি বলেন, 'কে আছ যে আল্লাহকে উত্তম হৃণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন?' সুরা বাক্বারা - ১৪৫। আল্রাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যায় করা একটি টাকা হতে পারে আপনার পরকালীন জীবনে অনন্ত জান্নাতে যাওয়ার একটি বড় অসীলা। আমরা যদি নিজেদের হাতকে গুটিয়ে রাখি, তাহলে তাতে রয়েছে বড় ক্ষতি। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিজক দিয়েছি তা হতে ব্যায় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবেনা কোন বেচাকেনা, না কোন বন্ধুত্ব এবং না কোন সুপারশি। আর কাফিররাই যালিম। সুরা বাক্বারা - ২৫৪।



আসুন প্রিয় ভাই-বোন ও বন্ধুগণ, আমরা নিজেদের হাতগুলোকে প্রশস্ত করি অভাবীদরে প্রতি। তা হলে, ইন শা আল্লাহ, এই বাংলার বুকে একটি বনু আদম পেটে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে রাত্রি পার করবে না। এটা আমার প্রাণের দাবী, এটা আমাদের ইমানেরও দাবী।



আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.