![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একের ভিতর তিন। আমার নামই আমার পরিচয়!!!!!
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কখনো অস্ত যায় না, এ কথার প্রচলন হয়েছিল রানী ভিক্টোরিয়ার সময়ে। ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত রানীদের একজন তিনি। তার সময়েই ব্রিটেনে শিল্পায়নসহ নানা ক্ষেত্রে নাটকীয় সব পরিবর্তন এসেছিল। গণতন্ত্রের হাওয়ায় রাজতন্ত্র যখন বিলুপ্তির হুমকিতে তখন রানী ভিক্টোরিয়া রাজতন্ত্রকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। ব্রিটেনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উপনিবেশ ভারতেরও সম্রাজ্ঞী হয়েছিলেন তিনি।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৮৩৭ সালের ২৮ জুন ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেছিলেন তিনি। এত অল্পবয়সী রানীর সিংহাসনে আরোহণের এ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে চার লাখের মত মানুষ হাজির হয়েছিল। অল্প বয়সী একটি মেয়ে ব্রিটিশ সিংহাসনে বসতে চলেছে এটি অনেকের কাছেই আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। ১৯০১ সালে মৃত্যুর পূর্ব ৬৩ বছর ধরে পর্যন্ত সাম্রাজ্য শাসন করে গেছেন তিনি। এটি ছিল তখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কোন রাজা বা রানীর ব্রিটেন শাসন করার ঘটনা। অবশ্য ব্রিটেনের বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সে রেকর্ড অতিক্রম করে ফেলেছেন।
রানী ভিক্টোরিয়া এমন একটি সময়ে ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহণ করেন যখন ব্রিটিশ রাজনীতিতে বাকিংহাম প্যালেসের (ব্রিটেনের রাজ প্রাসাদ) ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে নানা সংশয় তৈরি হয়েছিল। তার চাচারা ব্রিটিশ সিংহাসনে বসে অর্থের অপচয়ের জন্য বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন।এমনকি ব্রিটেনে রাজতন্ত্র টিকবে কিনা না সেটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু রানী ভিক্টোরিয়া শক্ত হাতে হাল ধরে জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে রাজ পরিবারের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনেন। তার হাতেই ব্রিটিশ রাজনীতিতে রাজ পরিবারের ভূমিকা নতুন করে নির্ধারিত হয়েছিল। ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার রানী ছিলেন পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্তম্ভের মত। তিনি তার স্বামী অ্যালবার্ট এবং নয় ছেলেমেয়ে হয়ে ওঠেন নতুন যুগের প্রতীক। তার আমলেই ব্রিটেনে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ সমাজে রানী ভিক্টোরিয়ার প্রভাবের কারণেই ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হয়।
রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলটি ইতিহাসে ভিক্টোরীয় যুগ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। তার সময়েই ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে নাটকীয় সব পরিবর্তন আসে। তার সময়কার আসবাব, পোশাক, দালানকোঠা সবকিছুর ক্ষেত্রেই ‘ভিক্টোরীয়’ বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। ভিক্টোরিয়ান পোশাক অর্থ এই নয় রানী ভিক্টোরিয়া তা পরেছেন। রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের ফ্যাশনই ভিক্টোরীয় পোশাক হিসেবে পরিচিত।
রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি বিস্তৃতি ঘটেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায় না- এ কথার প্রচলন তখনই হয়েছিল। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পায়ন, বাষ্পীয় ইঞ্জিন এবং রেলের প্রসার, ব্রিটেনের পাতাল রেল এসব কিছুই ঘটেছিল রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে।
ভিক্টোরিয়ার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সন্তান আর মা ছিলেন জার্মান রাজ পরিবারের সন্তান। রানীর নয় ছেলেমেয়ের সবাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজকুমার ও রাজকুমারীদের বিয়ে করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি রাজ পরিবারে রানী ভিক্টোরিয়ার নাতি-নাতনী কিংবা পুতি রয়েছে। ইউরোপের রাজপরিবারগুলোর সাথে আত্মীয়তার এ সম্পর্ককে কূটনৈতিকভাবেও ব্যবহার করেছিলেন তিনি। ফলে তার শাসনকালে যুদ্ধ এড়িয়ে অনেকটা স্থিতিশীল সময় কাটিয়েছে ব্রিটেন।
১৮১৯ সালের ২৪ মে লন্ডনের কেনসিংটন (Kensington) প্রাসাদে তার জন্ম হয়। পুরো নাম আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া, মা ডাকতেন দ্রিনা বলে। তিনি ছিলেন ডিউক অব কেন্ট এডওয়ার্ডের একমাত্র সন্তান। এই এডওয়ার্ড ছিলেন রাজা তৃতীয় জর্জের চতুর্থ পুত্র। ১৮২০ সালে ভিক্টোরিয়ার বয়স যখন একবছরও পূর্ণ হয়নি তখন বাবা এডওয়ার্ড মারা যান। এরপর মা একাই তাকে বড় করে তোলেন। ভিক্টোরিয়া কখনো স্কুলে যাননি। তার জন্য একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়েছিল। ছোট থেকেই জার্মান এবং ইংরেজি দু’ভাষাতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। ভিক্টোরিয়াকে কখনোই একা থাকতে হয়নি। কিন্তু তবু তিনি ছিলেন একা, সমবয়সী কারো সাথে মেশার সুযোগ তার কখনো হয়নি। প্রাসাদে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বেড়ে ওঠা রানীর একান্ত সময় বলে কিছু ছিল না। রাজকর্মকর্তা জন কনরি ভিক্টোরিয়ার শৈশবকে দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন। রানীর মুকুট মাথায় দেয়ার পর ভিক্টোরিয়ার প্রথম নির্দেশ ছিল এক ঘণ্টা একা থাকতে দাও। মা’কে দূরের একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করেন আর জন কনরিকে নিষিদ্ধ করেন।
ভিক্টোরিয়ার ১৭ তম জন্মদিনে জার্মানি থেকে তার আত্মীয়রা বেড়াতে আসে। তাদের মধ্য ছিলেন তার খালাতো ও মামাতো ভাই-বোনেরা। এদের মধ্যে অ্যালবার্টকে খুব পছন্দ করেছিলেন ভিক্টোরিয়া। এই অ্যালবার্টকে রানী হওয়ার পর ভিক্টোরিয়া বিয়ে করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছ প্রথা ভেঙে রানীই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ কারো পক্ষে ব্রিটেনের রানীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া সম্ভব ছিল না। অ্যালবার্ট কখনোই ব্রিটেনের রাজা হননি। ভিক্টোরিয়া তাকে পছন্দ করলেও অ্যালবার্ট কখনো ব্রিটেনে জনপ্রিয় হতে পারেননি। তিনি মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ১৮৬১ সালে ৪২ বছর বয়সে মারা যান। ভিক্টোরিয়া ভীষণ ভেঙে পড়েন। তিনি মানুষের সাথে সাক্ষাত বন্ধ করে দেন। সে সময় ব্রিটেনের লোকেরা শোকের প্রতীক হিসেবে কিছুদিন কালো পোশাক পরত। কিন্তু রানী ভিক্টোরিয়া বাকি জীবনের পুরো সময় কালো পোশাক পরে কাটিয়েছেন এবং অ্যালবার্টের কক্ষ তার জীবিতাবস্থায় যেভাবে ছিল সেভাবেই রেখে দিয়েছিলেন।
©somewhere in net ltd.