নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সরল ভাষায় বিজ্ঞান চাই

বাসার

ব্যাপক অলস তবে আড্ডা দিতে আর ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করি। ডাটা মাইনিং নিয়ে কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পিএইচডি করছি। থাকি অস্ট্রেলিয়ার ব্রিজবেনে। মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে ইচ্ছে করে কিন্তু অলসতার জন্য হয়ে উঠে না। [sb]এই ব্লগে আমার নিজের লেখা যেসব পোস্ট করেছি, তার সর্ব সত্ত্ব সংরক্ষিত। আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো মাধ্যমে পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না। [/sb]

বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিঙ্গবাদ বাঙালীর মজ্জাগত

০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১০:০২



ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি আমার নানা রেগে গেলে প্রায়ই বলেন, ‘মূর্খের সাথে আমি স্বর্গেও যেতে রাজি নই’। শরৎচন্দ্র-বঙ্কিমচন্দ্রের সব উপন্নাস উনার মুখস্ত। এই বয়সেও ঐসব উপন্নাস থেকে কোট করে আমাদের শুনান। উনার ধারণা মানুষ শিক্ষিত হলে মনে বড় হয়। সাধারণ আর দশজন থেকে উন্নত চিন্তা করে। শিক্ষিত মানুষ বর্ণবাদি হতে পারে না, লিঙ্গবাদী হতে পারে না। উনার কাছ থেকে শুনে শুনে আমিও বিশ্বাস করতে শুরু করি, শিক্ষা মানুষকে মনে বড় করে। শিক্ষার প্রতি একটা প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। স্বপ্ন দেখি, বড় হয়ে শিক্ষক হব। মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করব। একসময় শিক্ষকও হই। কিন্তু যত বড় হতে থাকি আমার ধারণা পাল্টাতে থাকে।

আমার আশেপাশে মানুষজনকে দেখে বুঝতে থাকি, শিক্ষা তাদের মনে বড় করতে পারেনি। পারেনি তাদের বর্ণবাদি বা লিঙ্গবাদী হওয়া থেকে পরিত্রাণ দিতে। অনেক শিক্ষিত, এমনকি বড়-বড় বশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়া, মানুষজনের লিঙ্গবাদের মানুষিকতা দেখে, শিক্ষার প্রতি, শিক্ষিতের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা অবশিষ্ট নাই।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা কাউকে যখন দেখি, কন্যা সন্তান হওয়ায় তার স্ত্রীকে অবহেলা করছে, অপমান করছে, তখন মনে হয়, কেন এই শিক্ষা, কেন এই শিক্ষিত হওয়া? এদের সাথে স্বর্গে যেতে কি আমি রাজি আছি? এই যুগে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে কেউ কন্যা সন্তান মানে বোঝা মনে করছে, এবং কন্যা সন্তানের জন্য তার স্ত্রীকে দায়ী করছে। একটা জাতীর জন্য, এর চেয়ে ভয়ংকর আর একটিও দূঃসংবাদ আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

লিঙ্গবাদ বাঙালীর মজ্জাগত। তারা মনে করে মেয়ে মানে নিম্নশ্রেণীর মানুষ যারা কথনোই পুরুষের সমান মানুষ নয়, এবং মানুষ হিসেবে লজ্জার কারণ। কাউকে যদি ছোট করতে হয়, সবচেয় মোক্ষম অস্ত্র হল তাকে মেয়েদের সাথে তুলনা করা। প্রায়ই শোনা যায়, কোন অপদার্থ ছেলেকে কেউ গালীগালাজ করছে এই বলে, ‘তুই কি মাইয়া মানুষ? তুই কি শাড়ীচুড়ী পরিশ?’।

মেয়েদের ছোট করার জন্য ব্যাঙালী প্রতিটি উপলক্ষ ব্যবহার করে। সেদিন এক ভদ্র মহোদয়কে দখেলাম, যিনি অস্টেলিয়াতে পিএইচডি করছেন, সহাস্যে তার এক বাংলাদেশি কলিগকে বলছে ‘আমি পোলার বাপ, পোলা ছাইড়া দিছি। মাইয়ার বাপেদের সাবধানে থাকতে হবে’। যেন মাইয়ার বাপ হওয়াও একটা লজ্জার ব্যাপার। কোন মেয়ে যদি পরীক্ষায় ফাস্ট হয়, এরা বলবে, ‘কেমনে ফাস্ট হইছে আমরা জানি’। যেন মেয়ে হলে কেউ নিজের যোগ্যতায় ফাস্ট হতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে পরিচয় দেয়, চা-দোকানে তাদের আড্ডার, কৌতুকের বিষয়বস্তুও এই মেয়েদের ছোট করে।

লোকে বলে, ‘শিক্ষা মহান ব্রত’ । যে শিক্ষা মানুষকে ছোট করতে শেখায়, সে শিক্ষা কখনো মহান হতে পারে না। শিক্ষাকে মহান করতে হলে, স্কুল শিক্ষার চেয়ে আমাদের বেশি দরকার মানবিক শিক্ষার। কিন্তু দূঃখের বিষয়, স্কুল শিক্ষায় কিছুটা মনোযোগী হলেও, মানবিক শিক্ষায় আমাদের বিন্দুমাত্র মনযোগ নাই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১০:২৪

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: এটা বাঙ্গালীর না, সম্ভবত দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের বিশেষ সমস্যা। এইদেশে যেটা সমস্যা তা হচ্ছে নারীদের শারীরিক বিশুদ্ধতার ট্যাবু। একজন পুরুষের সাহে তার সম্পর্ক হলো মানেই সে অন্য পুরুষের জন্য আর আকর্ষনীয় রইলো না। কিংবা পরিশ্মারমের কাজ করতে পারবেনা তেমন, তাই তার অবস্থান পুরুষের চেয়ে কম। মানসিকতার সমস্যা। একেবারে ভিতরে ঢুকে গেছে। একজন নারী আর একজন পুরুষ নিজ বৈশিষ্টে আলাদা। নারী যদি নারী আর পুরুশ পুরুষের মত না হয় তবে মানব্জাতিই টিকতো না। একের উপরে অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। প্রতিযোগিতারও কিছু নেই। আমি যার সাথে সংসার করবো, তার সাথে আমার প্রতিযোগিতা কিসের? তারা তাদের মত করে আর আমরা আমাদের অত করেই অনন্য, একে অপরের দুর্বলতাগুলো পুষিয়ে দেই, একে অপরের পরিপুরক, এর বাইরে কিছুই না।

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫

বাসার বলেছেন: "একের উপরে অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। প্রতিযোগিতারও কিছু নেই। আমি যার সাথে সংসার করবো, তার সাথে আমার প্রতিযোগিতা কিসের?", সহমত। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১০:২৬

লক্ষ্মীছেলে বলেছেন: মানবিক শিক্ষার চেয়ে বড় শিক্ষা আর কিছু হতে পারেনা। জান বাঁচানো ফরজ, মান বাঁচানো নয় কবি।। শুভ কামনা রইলো

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩২

বাসার বলেছেন: "জান বাঁচানো ফরজ, মান বাঁচানো নয়", ভাল বলেছেন। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১০:২৯

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: "স্কুল শিক্ষার চেয়ে আমাদের বেশি দরকার মানবিক শিক্ষার। কিন্তু দূঃখের বিষয়, স্কুল শিক্ষায় কিছুটা মনোযোগী হলেও, মানবিক শিক্ষায় আমাদের বিন্দুমাত্র মনযোগ নাই।" - মনযোগ দিলেই তো লোকসান। ক্ষমতা এবং আধিপত্য যে তাতে হারিয়ে যেতে পারে। আমদের মহাশিক্ষিত জাতীয় বুদ্ধিজীবীগণও বাকচাতুরীর মাধ্যমে অন্যের ওপরে যেকোনোভাবে আধিপত্য করতে পারলেই খুশি। তা নারী-পুরুষ, আওয়ামী লীগ-বিএনপি, জামাতি-জঙ্গি যেই হোক না কেন। আপনি বোধ হয় নারীদেরকে অবলা ভাবছেন। নারীরাও কিন্তু সুযোগ পেলে ছাড়ে না। দুই মহানেত্রীর দিকে দেখুন। মানবিক শিক্ষার অভাব সর্বস্তরে। আপনি যা বুঝিয়েছেন, আপনার কথাটা তার চেয়েও অনেক বেশি সত্য।

ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩১

বাসার বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৪| ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩৫

ফাহিমোসিস ফয়সালোসিস বলেছেন: আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কাঠামোটা এমন নয় যে মানুষজন সেখান থেকে এগুলো শিখবে । নীতি , নৈতিকতা এগুলো দিনশেষে সমাজ থেকেই শিখতে হয় । কিন্তু তীব্র পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজ নীতি ,নৈতিকতার বেসিক পাঠ টা দিলেও নারীকে সমমর্যাদা দানের বিষয়টা আর শেখায় না । দায়িত্বটা তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাঠামোকেই নিতে হবে এবং সেটা যত দ্রুত সম্ভব ।

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৭

বাসার বলেছেন: "দায়িত্বটা তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাঠামোকেই নিতে হবে এবং সেটা যত দ্রুত সম্ভব", সহমত। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৫| ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪২

মহসিন ৩১ বলেছেন: বিতর্কের খাতিরেও নারী পুরুষের সম্পর্কের ভেদ এখনও বিষয় হিসেবে অনেকটাই ঘরোয়া ; অতীতের মত। তবে লেখাটা বুধিমত্ত হয়েছে বলতে দ্বিধা নাই। আমি সমাজের সকলস্তরেই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাচেতনাটাকেই ঘৃণা করি। তাই এর ভেদ মুল কোন সমাজে কিরকম সেই প্রাসঙ্গিকতাকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৬

বাসার বলেছেন: "তাই এর ভেদ মুল কোন সমাজে কিরকম সেই প্রাসঙ্গিকতাকেই গুরুত্ব দিতে হবে", সহমত। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.