নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখা হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার

বাসুদেব খাস্তগীর

অতি সাধারণ অসাম্প্রদায়িক মানুষ

বাসুদেব খাস্তগীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ-গ্রার্মীণ রাজনীতি সমাচার

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৭

রাজনীতির অর্থ বড়ই ব্যাপক, একটি দেশের আভ্যন্তরীন পরিমন্ডলে দেশের সামগ্রীক জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহিত জড়িত বিভিন্ন দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে পারেন। অধ্যাপক এ্যালমন্ড ও কোলম্যান মতে, ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থা হচ্ছে সমাজের বৈধ শৃংখলা রক্ষাকারী বা পরিবর্তন আনয়ন কারী ব্যবস্থা ’। এ লক্ষে গঠিত হয় রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে। রাজনীতিকে যদি আমরা আরও ক্ষুদ্র পরিসরে বিশ্লেষন করি তাহলে আরও এক রাজনীতির ধারা প্রর্বতন করতে পারি সেটা হচ্ছে গ্রামীণ রাজনীতি বা ভিলেজ পলিট্রিক্স সবচেয়ে বড় সত্য কথা দেশীয় বা জাতীয় রাজনীতির সহিত এর কোনও সম্পর্ক নেই। এটি তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠিত। যেখানে গ্রামের সহজ সরল মানুষের জীবন জীবিকা, সমাজ ব্যবস্থা, সামাজিক মারপ্যাচ গভীরভাবে সম্পর্কিত। সাধারণভাবে গ্রামের মানুষ এটাকে ভিলেজ পলিট্রিক্স বা গ্রামীণ রাজনীতি বলেই ভাবতে ভালোবাসেন। যদিও এর সাথে রাজনীতির সংজ্ঞার কোন সম্পর্ক নেই। এটাকে গ্রামীণ চাটুকারিতা বলাই শ্রেয়।

মানুষ সমাজ বদ্ধ জীব। সমাজ বদ্ধ জীব হিসাবে বাস করাই তার সহজাত ধর্ম। এ্ররিষ্টটল বলেছেন, “মানুষ স্বভাবতই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব এবং যে ব্যক্তি সমাজের সভ্য নহে, সে হয় দেবতা , না হয় পশু”। কিন্তু এ সমাজে মানুষরূপী পশুর অভাব নেই। আবার মানুষ, এ সমাজ ব্যবস্থার সবচাইতে বড়ো সম্পদ। মানুষ বিহীন সকল সম্পদই অর্থহীন।মানুষ হিসাবে সমাজে বসবাস করতে হলে প্রত্যেকের পারস্পরিক সহযোগিতা অপরিহার্য দেশ হিসাবে পৃথিবীর কোন দেশই যেমন সবক্ষেত্রে স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়- তেমনি মানুষ হিসাবে এককভাবে কেউ স্বয়ং সম্পূর্ণ নয় সুতরাং এ সত্য ব্যক্তি হিসাবে একজনের বেলায় যেমনি সত্যি , দেশের হিসাবেও সত্যি। এ ধরণের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছে সমাজ ব্যবস্থার । যেহেতু মানুষ ব্যক্তি হিসাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, সেহেতু সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস সেই আদিকাল থেকেই। কালের বিবর্তনে এই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে ব্যাপকভাবে।

সুক্ষèভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতির ভারসাম্যহীনতার সুযোগে যেমন দেশের রাজনীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতি আবর্তিত হয়, তেমনি গ্রামের সহজ সরল মানুষের শিক্ষা, অর্থনৈতিক অবস্থা, জীবন ব্যবস্থা, জীবনবোধ ইত্যাদির সুযোগ নিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয় তথাকথিত গ্রামীন রাজনীতি ।এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন গ্রামের তথাকথিত মাতবর ও চাটুকারের দল।

যারা ছোটবেলা থেকে গ্রামীণ পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছেন তারা এ বিষয়টি খুব ভালোভাবে বোঝেন। গ্রামীণ রাজনীতির ঘুর্ণি আবর্তে অনেক সময় সমাজের খুব ভালো নামের মানুষেরাও জড়িয়ে পড়েন কারণে অকারণে। গ্রাম দেশের উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র। গ্রামীণ সমাজ ব্যাবস্থায় পূর্বেকার জমিদারী প্রথা আজ বিলুপ্ত। এ দেশে আছে সেই জমিদারী শ্রেণী কর্তৃক প্রজাদের শোষণ করার অনেক জঘন্য ইতিহাস। কালের বিবর্তনে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা ও এর থেকে পিছিয়ে নেই। তখনকার সমাজ কাঠামো টা এমনি ছিল যে, জমিদারী প্রথা বা জমিদার শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার চিন্তাভাবনা করাও ছিল দুঃসাহসিক ব্যাপার। তবুও শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রাম সেই আদিকাল থেকে। হয়তো সংগ্রামের ধারা পাল্টাচ্ছে, প্রক্রিয়া পদ্ধতি পাল্টাচ্ছে যুগের পরিবর্তনে। তখনকার সমাজ ব্যবস্থা ছিল অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুপমুন্ডকতা ও কুসংস্কারে ভরা। সেই সমাজ ব্যবস্থার ঘৃন্য শোষনের বিরুদ্ধে তখনকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কখন ও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসাবে গড়ে উঠতে পারেনি। ধীরে ধীরে গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার আলো বাড়ছে- যদিও এর গতি অত্যন্ত শ্লথ। মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তা চেতনার উদ্ভব হচ্ছে। এখন আর সেই জমিদারী প্রথা দিয়ে সমাজ ব্যবস্থাকে শাসন করা যায় না। যুগের পরিবর্তনে যেহেতু সবকিছু পাল্টাতে হয় সেহেতু জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয়ে মানুষকে নুতন বা আধুনিক উপায়ে শোষণ করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে এ সমাজে এক ধরণের আধুনিক চাটুকারী মাতবর এরা খুবই ধুর্ত। এরা কখনও কখনও সমাজ সেবার নামে সমাজে এমন কিছু করতে চান, যা দেখে সমাজের সাধারণ লোকেরা বিরাট জনদরদী বলে ভাবতে থাকেন। সমাজ সেবার নামে এরা অনেক সময় মেজবান দান খয়রাত, হাওলাত দিয়ে নানা প্রকার বদান্যতা প্রদর্শন করেন। এ ধরনের বদান্যতা রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও দেখা যায়।

যেমন শিল্পপতি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ঘটা করে দান করেন। টিভিতে ছবি দেখানো হয়। এর অনেকটাই নিছক লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এধরণের অবস্থা আমাদের ক্ষুদ্র সমাজ ব্যবস্থায়ও দেখা যায়। কিন্তু এ সমাজ জানছে না গরীবের ঘাম থেকেই ধনীর এই ঘি।

এদের আসল চরিত্র এই শিক্ষিত সমাজে সকলের অজানা তা বলা যায় না। সমাজে নিন্দার ভয়ে কিংবা সৌজন্য রক্ষার্থে অনেকে জেনেও কিছু বলতে চান না। এ সমাজে ভালো মানুষ নেই বললে কিন্তু ভুল বলা হবে। ভালো আছে বলে পৃথিবী আছে, সমাজ আছে ভালো আছে বলেই খারাপের মুখ উন্মোচিত হচ্ছে । একজন খারাপ মানুষ সমাজের দশজন ভালো মানুষের চাইতে শক্তিশালী, কিন্তু তা ক্ষনস্থায়ী। খারাপরা যা কিছু করতে পারে, ভালোরা কিন্তু অত সহজে পারে না। আর ভালোরা যা করে খারাপরা কিন্তু লোক দেখানোর জন্য সমাজে ভালো মানুষের খুব ভালো অভিনয় করতে পারে। ভালো মানুষেরা এ সমাজে একজন পিস্তলধারী সন্ত্রাসীর নিকট দশজন ভালো মানুষের মত অসহায়। নবতর উপায়ে এ সমাজকে শোষন করার জন্য কালের বিবর্তনে যে ধরণের ধারা সৃষ্টির দরকার তথাকথিত মাতবররা তাই করছে। অশিক্ষা কিংবা দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে এরা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সকল ক্লাব, সভা, সমিতি প্রভৃতিতে এরা দাওয়াত না পেলে বড়ই নাখোশ হয়। সব কিছুতেই এরা মুরুব্বিয়ানা প্রদর্শন করতে তৎপর থাকে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামীণ সমাজে এটি বাস্তব। যারা শহীদুল্লাহ কায়সারের কালজয়ী ‘সংশপ্তক’ উপন্যাস পড়েছেন কিংবা নাট্যরূপ দেখেছেন তারা জানেন , এদেশের কালের বিবর্তনে জমিদার ফেলুমিয়ার অবসান হলেও চাটুকার রমজানের অভাব নেই। কিংবা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের তথাকথিত সমাজসেবী হোসনমিয়ার অভাব নেই এ সমাজে।

গ্রামীণ রাজনীতর সহিত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোন ইতিবাচক স্বার্থ জড়িত থাকে না। এখানে কে কাকে হেয় করতে পারল, কার সমাজে দাপট বেশী, সামাজিক সংকটকে গভীরভাবে উপলব্দি করার চেয়ে বাইরের চাকচিক্যটাই এখানে মুখ্য বিষয়। এখানে দু:খী নিপীড়িত শোষিত মানুষের দুর্নাম বাতাসের আগে ছড়ায়। অনর্থক দুর্নাম রটিয়ে সমাজের ছোট করার প্রবনতা এ সমাজে বড্ড বেশী। সমাজ রাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় কাঠামো যে ভাবে সমাজকে শোষণ করছে, সেটার ছায়া পড়েছে এই গ্রামীণ ক্ষুদ্র সমাজগুলোতে। গ্রামীণ চাটুকারেরা এ সমাজকে সর্প হইয়া দর্শন করে, আবার ওঝা হইয়া ঝাড়ে। এরা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে ভারী অভ্যস্ত। এদের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচেছ শোষিত শ্রেণী।

শ্রেণী সচেতন লেখক অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমেদ তাঁর “উজান স্রোতে জীবনের ভেলা” গ্রন্থে কবিয়াল রমেশশীলসম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য থাকাকালীন কবিয়াল রমেশ শীল এর জন্য সাহিত্য ভাতা মঞ্জুরীর ব্যাপারে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে কেন সুপারিশ করেছিলেন তার দুটি কারণের একটি কারণে বলেছেন “ এদেশে যোগ্য ব্যক্তির ন্যায্য দাবী আদায় করতে হলেও কিছু তদবির করতে হয়, তদবিরের কাজটিকে আমি খুবই গৃণ্য করি। সবকিছু ন্যায় নীতি ভিত্তিক হবে। তদবিরের কি প্রয়োজন? কিন্তু জনাব, আমাদের সমাজব্যবস্থা তো ন্যায় নীতি ভিত্তিক নয়,কাজেই যোগ্যের জন্য যদি আপনি তদবীর না করেন তাহলে আরেক অযোগ্য অন্যায়ভাবে তদবিরের ছোটে যোগ্যের দাবীকে বানচাল করে ফেলবে। এদেশে তাই চলছে। যে দেশে প্রতিটি নাগরিকের সুষ্ঠুভাবে বাঁচার অধিকারের রাষ্ট্রিয় গ্যারান্টি নেই সেই দেশে তদবিরই যেন তকদির। ” অধ্যাপক আসহাব উদ্দিনের এই কথা সেই ১৯৫৪-৫৮ সালের কথা। সমাজ ব্যবস্থা সেকাল থেকে একালেও তেমন পাল্টায়নি। তাঁর বক্তব্যে বৃহত্তর সমাজের বাস্তব অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। এ সমাজে মাতবর ও চাটুকারদের কাছে তদবিরই যেন সমাজের লোকের তকদির। । কবির সেই উক্তি-“আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন, মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন।” হ্যাঁ, এদেশের গ্রামগুলোর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শিল্পীর তুলির পরশে আঁকা যায়। এখানে ছড়ানো রয়েছে সোনালী ফসল বা সোনালী রতন। কিন্তু এ রতন নিয়ে চলছে শোষক শোষিতের সযতনে রড়াই। সমাজে শোষক মাতবর শ্রেণী বড় হচ্ছে দিনের পর দিন। সমাজের সহজ সরল সৎ লোকেরা আজ বড়ো অসহায়। নিন্দায় নিন্দায় ছেয়ে যাচ্ছে এ সমাজ। এ সমাজ কি অপেক্ষা করবে শেখ শাদীর সেই বিখ্যাত উক্তিকে বুকে ধারণ করে ? ‘ যে সৎ হয, নিন্দা তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না, এটাই কি বৃহত্তর শোষিত শ্রেণীর সাত্ননা? এই সমাজের বাস্তবতা থেকে রচিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত আরো অনেক আধুনিক ‘সংশপ্তক’ এর ইতিহাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.