নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কি আর লিখিব আমি ........শুণ্যর্ও মাঝার

বাউন্ডেলে

বাউন্ডেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

“মানবাধিকার” - মার্কিন ষ্টাইল।

২২ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:২৭


১৯শে জুন, ১৯৫৩........
ছবিতে যারা কোলে বসে রয়েছে তাদের বাবা-মা'কে ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিকভাবে গোপন রাখা হয়েছিল খবরটা৷ ছেলেগুলো জেনেছিল খবরের কাগজ পড়ে৷ সেই খবরের কাগজেই প্রকাশিত হয়েছিল তাদের জন্য লেখা বাবা মায়ের জীবনের শেষ দিনের শেষ চিঠিটাও—
"আমার প্রিয় লক্ষ্মীছেলেরা,
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হচ্ছিল আমরা সবাই একসঙ্গেই আছি। কিন্তু জানি এ মুহূর্তে তা অসম্ভব, কল্পনাতীত। আমরা আজ পর্যন্ত যত কিছু জেনেছি, সব তোমাদের বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তোমাদের কাছে আর বেশি কিছু লেখার সুযোগই নেই।
খুব ছোট করে লিখছি— জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, যা তোমাদের আজীবন শিক্ষা দিয়ে যাবে, ঠিক যেমন আমাদেরকে দিয়েছে। প্রথমে তোমরা হয়তো আমাদের জন্য ভীষণ কষ্ট পাবে, তবে ভেবো না যে, এ কষ্ট তোমরা একাই পাচ্ছো! আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি এবং তোমাদের জন্যও তাই। অবশেষে হয়তো তোমরা একসময় বিশ্বাস করবে যে, জীবনে বেঁচে থাকা কতটা মূল্যবান। তোমরা এখন পর্যন্ত জেনে রাখো, ধীরে ধীরে আমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তি ঘটলেও জানি যে, আমাদের দোষী সাব্যস্ত করায় মূলত ঘাতকদের পরাজয়ই ঘটেছে! তোমরা জীবনের নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থেকে অবশ্যই শিক্ষা পাবে যে, খারাপ কাজের বেড়াজালে ভালো কাজের সমৃদ্ধি অনিশ্চিত। স্বাধীনতা লাভ এবং জীবনকে ঐশ্বর্যময় ও উপভোগ্য করে তোলার পাশাপাশি অনেক কিছুই তুমি কিনে ভোগ করতে পারবে না। জেনে রাখো— আমরা শান্তভাবে ও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি যে, সভ্যতার উৎকর্ষ এখনও সাধিত হয়নি; যেখানে একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অন্য আরেকজনকে জীবন দিতে হচ্ছে এবং পূর্বপুরুষদের দেয়া শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। খুব ইচ্ছে ছিল বাকি জীবনটা তোমাদের সঙ্গে হেসে-খেলে কাটাব, তুষ্টভাবে বেঁচে থাকব। শেষ সময়ে তোমাদের 'বাবা মা' আমরা কয়েক ঘণ্টার জন্য পাশাপাশি হয়েছি, আমরা হৃদয় থেকে তোমাদের জন্য ভালোবাসা জানাচ্ছি। সবসময় মনে রাখবে, আমরা নিষ্পাপ ছিলাম এবং আমাদের বিবেক নির্ভুল ছিল। তোমাদের জন্য বুকে জড়িয়ে ধরে আদর আর রইল অনেক অনেক চুমু।"
ইতি
তোমাদের বাবা ও মা
জুলিয়াস ও এথেল
---------------------------------------------------------------
১৯৫৩ সালের ১৯শে জুন সূর্যাস্তের আগে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে রোজেনবার্গ দম্পতির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সেদিনই ছিল তাদের ১৪তম বিবাহবার্ষিকী।
দুজনের মৃত্যুদন্ড আলাদাভাবে কার্যকর করা হয়েছিলো। প্রথমে চেয়ারে বসানো হয় জুলিয়াস রোজেনবার্গ। প্রথম ইলেকট্রিক শকেই মারা যান তিনি। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যায় ইথেলের বেলায়। প্রথম শকে তিনি মারা যাননি। নিয়ম মোতাবেক তিনবার শক দেয়ার পরও ডাক্তাররা পরীক্ষা করে তার হৃদস্পন্দন খুঁজে পান! তখন বাধ্য হয়ে আরো দু’বার শক দেয়া হয় তাকে। এরপরই মারা যান ইথেল রোজেনবার্গ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, তখন ইথেলের মাথা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গিয়েছিলো!
তাদের অপরাধ- তারা নিজেদের আন্তর্জাতিকতাবাদী বলতেন৷ দুনিয়ায় যেখানেই শোষণ বঞ্চনা, তার প্রতিবাদে মুখর হতেন৷ কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক'এ উপস্থিত থাকতেন৷ নিজের দেশের শাসকের শোষণের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠতেন৷ আমেরিকা সরকার এই কমিউনিস্ট দম্পতিকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছিল৷ পারমানবিক বোমা তৈরীর প্রযুক্তি ভীনদেশে সরবরাহের উছিলায় তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷
আমেরিকার অনেকেই মনে করতেন যে, তারা নির্দোষ। নানা দিক থেকে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছিল৷ ক্রুদ্ধ জা-পল সার্ত্র মন্তব্য করেছিলেন, "এটা আইনের উছিলায় হত্যা। একটা গোটা জাতি গায়ে রক্ত মাখছে।" রোজেনবার্গ দম্পতির প্রাণভিক্ষা করে আইজেনহাওয়ারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন পোপ এবং পাবলো পিকাসো। এমনকি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, হ্যারল্ড উরের মতো নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী এবং সমাজের আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তখন। কিন্তু ১৯৫৩ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি সবার আবেদন নাকচ করে দেন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার৷ এবং মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন৷
আর এভাবেই সমাপ্তি ঘটেছিলো রোজেনবার্গ দম্পতির জীবনের। তাদের কবর দেওয়া হয়েছিলো নিউ ইয়র্কের ওয়েলউড সিমেট্রিতে। সেদিন তাদের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে প্রায় ৫০০ লোক অংশ নিয়েছিলো। আর দাঁড়িয়েছিলো প্রায় ১০,০০০ এর মতো জনতা।
গত ১৯ জুন ছিলো সেই কমিউনিস্ট দম্পতি জুলিয়াস রোজেনবার্গ ও এথেল রোজেনবার্গ'এর শহীদের দিন৷
লেখনীতে -Zaman Feroz

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:২১

মৌরি হক দোলা বলেছেন: মর্মান্তিক!

২২ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৯

বাউন্ডেলে বলেছেন: রেড ইন্ডিয়ানদের বিলুপ্ত করার ইতিহাস আরো মর্মান্তিক !!

২| ২৩ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

রিফাত হোসেন বলেছেন: পড়লাম।
রেড ইন্ডিয়ান শব্দটি তুচ্ছার্থে সদৃশ। নেটিভ আমেরিকান বলাটাই শ্রেয়। এটা একটি সময় আমিও জানতাম না।

২৩ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:০৯

বাউন্ডেলে বলেছেন: রাইট । নেটিভ বা লোকাল আমেরিকান ।

৩| ২৩ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

শাহিন-৯৯ বলেছেন:


আলবেনিয়ার আনোয়ার হোজার শাসন আমল পড়তেছিলাম অনলাইনে কিছু লেখা থেকে- বিবিসি প্রতিবেদন বলছে- তখন সেখানে শিক্ষার মান ছিল নিম্নমুখী, দারিদ্রতা ছিল, বাক-স্বাধীনতা তো ছিলই না আবার আর এক লেখায় দেখলাম- তখন শিক্ষায় বেশ উন্নতি করেছিল- খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল ইত্যাদি মানে পজিটিভ!!

২৩ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৪০

বাউন্ডেলে বলেছেন: দুটোই সত্য। তবে নৈতিকতা ভিন্ন জিনিষ । এটার সাথে সম্পদ ও শিক্ষার সম্পর্ক খুবই ক্ষীন। চেংগিস খানের রাজত্বে তার জাতি ছিলো অত্যান্ত সমৃদ্ধ। বাইরে লুটপাট-ভিতরে সদরঘাট। বর্তমানে মার্কিন-ই্উরোরাও মধ্যযুগ থেকেই এই ষ্টাইলে চলছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.