নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নক্ষত্রের পতন !!! বিদায় ফুটবল ঈশ্বর । ভালো থেকো ওপারে।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১২



বুয়েনস আইরেসের এক দরিদ্র এলাকায় ৩০ অক্টোবর ১৯৬০ জন্মেছিলেন দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।সেই তিনিই কিন্তু ফুটবল সুপারস্টার হয়ে সেই দারিদ্রের জাল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, যাকে অনেকেই মনে করেন খেলোয়াড় হিসেবে ব্রাজিলের পেলের চাইতেও শ্রেষ্ঠ।এক জরিপে পেলেকে পেছনে ফেলে 'বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার' হয়েছিলেন ম্যারাডোনা। পরে ফিফা ভোটিংএর নিয়ম পাল্টায় যাতে এই দুই তারকাকেই সম্মানিত করা যায়।

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা পৃথিবী ছাড়লেন ২৫ নভেম্বর ২০২০ আর্জেন্টাইন সময় বিকেলে বেলায়।যে পৃথিবীতে গত ৬০ বছর তিনি ছিলেন কোটি মানুষের হৃদয়ে-স্বপ্নে-ভালোবাসায়-উল্লাসে-বেদনায়। পায়ের টোকায় তৈরি করেছেন শিল্পের সৌধ। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন কল্পনার রাজ্যে। সাফল্য পায়ে লুটিয়েছে, আবার ব্যর্থতাও এমন মাত্রা পেয়েছে যে মানুষ ভেবেছে এ তারই হার। এই গ্রহকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখা জাদুকরের এই বিদায় তাই পৃথিবীর জন্য হৃদয় ভাঙার। অদ্ভুত এক বিয়োগব্যথায় বিষণ্ন আফ্রিকা থেকে আমেরিকা। আর্জেন্টিনা থেকে বাংলাদেশ। নিজ বাড়িতে মারা গেছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। আর্জেন্টাইন সময় বিকেলে এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্থানীয় গণমাধ্যম।



"চোখ-ধাঁধানো", "অসাধারণ", "অত্যাশ্চর্য প্রতিভাবান", "বিতর্কিত" - বহু ভাবে বর্ণনা করা যায় দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনাকে।তিনি ছিলেন ফুটবলের এক আইকন,তবে তিনি নিষ্কলংক ছিলেন না।ম্যারাডোনা ছিলেন ফুটবল খেলায় শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবানদের অন্যতম।তার খেলায় যে দক্ষতার প্রদর্শনী, গতি, চমৎকারিত্ব, আর খেলায় কখন কি ঘটতে পারে তা আগে থেকে বুঝে ফেলার ক্ষমতা ছিল - তা ফুটবল ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতো।

তিনি ১৯৮৬র বিশ্বকাপ ফুটবল শিরোপা আর্জেন্টিনার হাতে এনে দিয়েছেন প্রায় একার কৃতিত্বে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলায় "ঈশ্বরের হাত" নামে সেই গোলের জন্য তিনি যেমন নিন্দিত হয়েছিলেন - তেমনি অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে কয়েকজন ইংলিশ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে, গোলকিপার পিটার শিলটনকে বোকা বানিয়ে তার পরের যে গোলটি করেছিলন ম্যারাডোনা- তা এখনো 'সর্বকালের সেরা গোল' বা 'গোল অব দি সেঞ্চুরি' বলে মানেন অনেকে।




সাবেক ইংল্যান্ড ম্যানেজার ববি রবসন বলেছিলেন, "প্রথম গোলটা ছিল সন্দেহজনক, কিন্তু দ্বিতীয়টা ছিল ঐন্দ্রজালিক।"অন্যদিকে মাঠের বাইরে মাদকাসক্তি আর নানা রকম ব্যক্তিগত সংকট তাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে পুরো ফুটবল জীবন ধরেই।

ম্যারাডোনা ৪৯১টি ম্যাচে ২৫৯টি গোল করেছিলেন। অল্প বয়েসে লোস কাবালিও যুব দলে খেলার সময় তার নৈপুণ্যে ১৩৬ টি ম্যাচে সেই দল অপরাজিত ছিল।মাত্র ১৬ বছর ১২০ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় তার।আর্জেন্টিনা দলের অন্য খেলোয়াড়দের তুলনায় তিনি ছিলেন খর্বকায়, মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা। তার শরীরের গঠনও একজন এ্যাথলেটের মত ছিল না।কিন্তু তার বল কন্ট্রোল, ড্রিবলিং, দক্ষতা এত মসৃণ ছিল, পাস দেবার ক্ষমতা আর দ্রুততা এত বিস্ময়কর ছিল যে তার সেসব অসম্পূর্ণতা তাতে চাপা পড়ে যেতো।আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১টি ম্যাচে খেলে ৩৪টি গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা।১৯৮৬তে বিশ্বকাপ বিজয় ছাড়াও ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালেও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র্স ছেড়ে ম্যারাডোনা যখন ১৯৮২ সালে স্পেনের বার্সেলোনায় যান ৩ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তিতে - তখন তা ছিল এক বিশ্বরেকর্ড। আরেকবার বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন তিনি - যখন তিনি ইতালির ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তিতে।হেলিকপ্টারে করে নাপোলির সার পাওলো স্টেডিয়ামে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে নেমেছিলেন তিনি - এক নতুন নায়ক হিসেবে।



ক্লাব ফুটবলে ম্যারাডোনা তার সেরা খেলাটা ইতালিতেই খেলেছিলেন। নাপোলি ১৯৮৭ ও ১৯৯০ সালে সিরি আ শিরোপা জেতে। আর উয়েফা কাপ জেতে ১৯৮৯ সালে।তবে তাকে নিয়ে ভক্তদের বন্দনা আর উচ্ছ্বাস তার মনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি জড়িয়ে পড়েন অপরাধ চক্রের সাথে, আসক্ত হয়ে পড়েন কোকেনে।একটি সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ডোপ টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ার পর তার ওপর ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।তবে সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে আবার ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝখানেই এফিড্রিন নামের নিষিদ্ধ বস্তু সেবনের দায়ে তাকে আর খেলতে দেয়া হয়নি।শেষ পর্যন্ত ম্যারাডোনা ৩৭তম জন্মদিনে ফুটবল থেকে অবসর নেন। কিন্তু সমস্যা তার পিছু ছাড়েনি।
কজন সাংবাদিককে লক্ষ্য করে এয়ার রাইফেল দিয়ে গুলি ছোঁড়ার এক ঘটনার জন্য তার দু বছর ১০ মাসের স্থগিত কারাদন্ডাদেশ হয়।

কোকেন আর এ্যালকোহলের জন্য তার ওজন বেড়ে ১২৮ কেজিতে উঠেছিল। ২০০৪ সালে একবার হার্ট এ্যাটাক হয় তার। পরে অপারেশন করিয়ে এবং কিউবায় থেকে তিনি ওজন কমান, মাদকাসক্তি কাটিয়ে ওঠেন।২০০৮ সালের বিশ্বকাপে তাকে আর্জেন্টিনা দলের ম্যানেজার নিযুক্ত করা হয়। আর্জেন্টিনা সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেয়।

মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।তবে তার নানা রকম বিচিত্র আচরণ আর বিশৃঙ্খল জীবনযাপন বিভিন্ন সময় খবরের শিরোনাম হয়েছে।একবার তার পোষা কুকুর তাকে কামড়ে দেয়ায় তার ঠোঁট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নতুন করে বানাতে হয়েছিল।
৬০তম জন্মদিনের পর থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। মস্তিষ্কে জমাট বেঁধে থাকা রক্তও (ক্লট) অপসারণ করা হয়েছিল এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির। এরপর ১১ নভেম্বর ফেরেন বাড়িতে। ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করেছিলেন, সেরে উঠবেন দ্রুত। কিন্তু হায়, কে জানত আর মাত্র কয়েকটা দিনই এই পৃথিবীর অতিথি তিনি। বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে ফুটবলের রাজা। হাসপাতালে থাকার সময়ই হাজারো সমর্থক প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন বাইরে। অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর খবরে পাগল হওয়ার দশা তাঁদের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকার প্রয়াণ বিশ্বাসই হচ্ছে না কারো।

সর্বশেষ আর্জেন্টাইন ক্লাব জিমনাসিয়ার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। ৬০তম জন্মদিনে সর্বশেষ এসেছিলেন তাঁর দল জিমনাসিয়ার ম্যাচ দেখতে। অসুস্থতার কারণে ৩০ মিনিট পরই ছাড়েন মাঠ। অসুস্থ বাবাকে চলে যেতে দেখে তাঁর মেয়ে জিয়ান্নিনা জানিয়েছিলেন, ‘বাবাকে এভাবে দেখে হৃদয় ভেঙে গেছে।’ গতকাল তো হৃদয় ভাঙল পুরো ফুটবল বিশ্বের। ম্যারাডোনা নেই, এ-ও বিশ্বাস করতে হবে?

পেলে, না ম্যারাডোনা—এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ফুটবল বিশ্ব। তিক্ততা, শত্রুতা সব ভুলে ম্যারাডোনার মৃত্যুতে সেই পেলের শোক, "আমরা একদিন স্বর্গে ফুটবল খেলব" - এমন আশার কথা বলতে পেরে পেলের হৃদয়ও নিশ্চয়ই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। ম্যারাডোনা শুধু দেহটা ত্যাগ করছেন এ দুনিয়া থেকে কিন্তু এ দুনিয়াতে তার অমরত্ব তিনি নিশ্চিত করে গেছেন অনেক আগেই।


ছবি -গুগল ও তথ্য সূত্র - বিবিসি নিউজ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২২

ফয়সাল রকি বলেছেন: ম্যারােডানা একটি ভালোবাসার নাম।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ফয়সাল রকি ভাই ।আপনার প্রথম মন্তব্যের জন্য।

ঠিক তাই ।ম্যারােডানা একটি ভালোবাসার নাম । এই দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী ভালবাসা পাওয়া ও সবচেয়ে বেশী পরিচিত ব্যক্তির নাম ও ম্যারােডানা ।আমার মনে হয় অরাজনৈতিক মানুষদের মধ্যে ম্যারােডানা ই একমাত্র মানুষ যে পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণ অর্থ্যাৎ সারা দুনিয়াতে সমান জনপ্রিয়।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: কিংবদন্তি অমরত্ব পেলেন।
কোটি কোটি মানুষের মনে থাকবেন অনেকদিন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজিব ভাই ।আপনার মন্তব্যের জন্য।

এটাই।ম্যারােডানা বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি মানুষের মনে তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে। সে খেলার মাধ্যমে এ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মনে যে আনন্দ যুগিয়েছেন তার জন্য মানুষ তাকে মনে রাখবে যুগ যুগ

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩১

অধীতি বলেছেন: কিংবদন্তী। তার নামে ফুটবলকে চিনেছি।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ অধীতি ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

আসলেই ম্যারােডানা কিংবদন্তী। আমার মনে হয় আর্জিণ্টিনা সারা দুনিয়াতে ম্যারােডানার দ্বারাই পরিচিতি পেয়েছে ।আর সে যতটা পরিচিত সারা দুনিয়ায় ততটা খুব কম মানুষই পরিচিত আছে সারা দুনিয়ায়।

আর ফুটবল!! শৈশবের ফুটবল ,দেশের ফুটবল ও ফুটবল জাসরি এবং আর্জিণ্টিনার পতাকা সব ম্যারােডানার কল্যানেই শুরু।

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: খেলা জাদুকর ম্যারাডোনা

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নেওয়াজ আলি ভাই । আপনার মন্তব্যের জন্য।

ঠিক তাই । যাদুকর!!! আসলেই যাদুকর । যাদুকর যেমন তার যাদু দেখিয়ে মানুষকে মোহিত করে ঠিক তেমনি ফুটবল যাদুকর তার পায়ের যাদু দেখিয়ে পুরো বিশ্বকে মোহিত করে রেখেছিল ।

৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:



কোটী কোটী মানুষের মনে থাকবেন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদস্যার আপনার মন্তব্যের জন্য।

সঠিক।ম্যারােডানা বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি মানুষের মনে তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে। সে খেলার মাধ্যমে এ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মনে যে আনন্দ যুগিয়েছেন তার জন্য মানুষ তাকে মনে রাখবে যুগ যুগ ধরে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.