নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" আল কোরআন " সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থ এবং মানব জাতির মুক্তির আলোকবর্তিকা । (আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব -৩)।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১৭


ছবি - shadow.com.bd


পৃথিবী নামক এই গ্রহে মানুষের মুক্তি ও কল্যানের জন্য আল্লাহ তায়ালা একটি গ্রন্থ নাজিল করেছেন। তিনি এ গ্রন্থটির নাম রেখেছেন- "আল-কোরআন"।আল্লাহ তাআলা মানুষের হিদায়াত বা পথনির্দেশনার জন্য যুগে যুগে কিতাব নাজিল করেছেন। মানবসভ্যতার উন্নতিতে আসমানি কিতাবের ভূমিকা অনন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রধান ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ নবী ও রাসুলদের (সাঃ) কাছে পাঠানো বাণী হলো আসমানি কিতাব।

পবিত্র কোরআন ছাড়াও যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে আরো একশ তিনটি আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন আল্লাহতায়ালা। এগুলোর মধ্যে ৪টি কিতাব অর্থাৎ বড় গ্রন্থ ।বড় চারটি কিতাব হলো তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন।এই চার বড় গ্রন্থ নাজিল হয়েছে বিশিষ্ট চারজন নবী ও রাসুলের প্রতি। যেমন -

১। তাওরাত হজরত মুসা (আঃ) এর প্রতি ইবরানি বা হিব্রু ভাষায়।
২। জাবুর হজরত দাউদ (আঃ) এর প্রতি ইউনানি বা আরমাইক ভাষায়।
৩। ইঞ্জিল হজরত ঈসা (আঃ) এর প্রতি সুরিয়ানি ভাষায় ।
৪। কোরআন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়।

এরমধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থ হলো আল কোরআন।

আল কোরআন স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত এক কিতাব, যেখানে মানবজাতীর জন্য রয়েছে সংবিধান ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ বানী মানবজাতীর হেদায়েত স্বরুপ এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুর দিকনির্দেশনা আল কোরআনে রয়েছে।মানুষের এক জীবনে যা দরকার, তার সবই সাজানো রয়েছে কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, আল কোরআনের পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা।


ছবি - sangbadchorcha.com

পবিত্র কোরআনে মানব জীবনের সব দিকনির্দেশনার বর্ণনার পাশাপাশি মানবজাতীর প্রতি উপদেশ স্বরুপ বেশ কিছু আয়াত আছে।আসুন আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানি -


১। অঙ্গীকার পূরণ কর এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কোরো না।

"হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর। তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, যা তোমাদের কাছে বিবৃত হবে তা ব্যতীত। কিন্তু এহরাম বাধাঁ অবস্থায় শিকারকে হালাল মনে করো না! নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা যা ইচ্ছা করেন, নির্দেশ দেন"।(সুরা মায়েদা - আয়াত - ১)

"পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোই সৎকর্ম নয়, কিন্তু সৎকর্ম হলো যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌, শেষ দিবস, ফেরেশ্‌তাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনবে। আর সম্পদ দান করবে তার ভালবাসায় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করবে । অর্থ-সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করবে। তারাই সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী"। (সুরা বাকারা - আয়াত - ১৭৭) ।

২। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করবে না।

"আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ করো না"।(সুরা বাকারা - আয়াত - ১৮৮) ।

৩। সীমা লঙ্ঘন করোনা,যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে শুধু তাদের সংগে লড়াই করো।

"আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ,তোমরাও আল্লাহ্‌র পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর কিন্তু সীমালংঘন করো না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না"। (সুরা বাকারা - আয়াত - ১৯০)।

৪।লড়াইয়ে বিধি মেনে চলো ।

"আর তাদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে এবং যে স্থান থেকে তারা তোমাদেরকে বহিষ্কার করেছে তোমরাও সে স্থান থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করবে। আর ফেত্‌না হত্যার চেয়েও গুরুতর । আর মসজিদুল হারামের কাছে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না যে পর্যন্ত না তারা সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। অতঃপর যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তবে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, এটাই কাফেরদের পরিণাম"।(সুরা বাকারা - আয়াত - ১৯১)।

৫।এতিমদের / অনাথদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করো।

"দুনিয়া ও আখেরাতের ব্যাপারে। আর লোকেরা আপনাকে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; বলুন, ‘তাদের জন্য সুব্যাবস্থা করা উত্তম’। তোমরা যদি তাদের সাথে একত্রে থাক তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্‌ জানেন কে উপকারকারী এবং কে অনিষ্টকারী । আর আল্লাহ্‌ ইচ্ছে করলে এ বিষয়ে তোমাদেরকে অবশ্যই কষ্টে ফেলতে পারতেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়"।(সুরা বাকারা - আয়াত - ২২০) ।


ছবি - samakal.com

কোরআন হলো কালামুল্লাহ । কালাম অর্থ শব্দ, বাক্য, কথা। কালামুল্লাহ হলো আল্লাহর বাণী। কোরআন পাঠ করা মানে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা। কিতাব অর্থ লিপি বা লেখা,গ্রন্থ বা গ্রন্থিত বই। রিসালাত অর্থ চিঠি, পত্রপত্রিকা, পুস্তিকা বা ছোট বই। সহিফা অর্থ পাতা, পৃষ্ঠা, মুদ্রিত বা খোদাইকৃত। কোরআন অর্থ পাঠ, পঠিত, পাঠযোগ্য ও যা বারবার পাঠ করা হয় এবং যা আল্লাহর নিকটে নিয়ে যায়। কোরআন স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যম ।

কোরআন সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ এবং হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তির জন্য কোরআনের দর্শন ও নির্দেশনা এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুপম আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে। কিতাব অনুসরণের জন্য চাই নিঃশর্ত বিশ্বাস। হিদায়াত লাভের শর্ত হলো তাকওয়াবান বা মুত্তাকি হওয়া। মুত্তাকি হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে যে পাঁচটি বিষয় মানতে হবে তার অন্যতম হলো কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন করা। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, " আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে , আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী" ।(সুরা বাকারা, আয়াত - ৪)।


আমরা কেন মেনে চলব ,বিশ্বাস করব কোরআন আল্লাহর কালাম? আল কোরআনকে আমরা বিশ্বাস করবো,কারন - কোরআন সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে। আর তাইতো আল্লাহ পাক আল কোরআনে ইরশাদ করেন, "এই কিতাব বিশ্ব পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই "।(সুরা সাজদা, আয়াত - ২)।


আল্লাহ পাক আমাদেরকে আল কোরআন জানার-বুঝার এবং আল কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তওফিক দান করুন

চলবে -

===============================================================

পূর্ববর্তী পোস্ট -

আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ২ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ১ Click This Link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: মোহাম্মদ (স.) কে না পেলে আমরা কোরআন পেতাম না। এমন কি নামাজও পেতাম না।
তাই সবার আগে আমাদের নবীজিকে পেতে হবে।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই,আপনার মন্তব্যের জন্য।

যারা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর (আল কুরআন) অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম ।

আল্লাহ আমাকে-আপনাকে সফলকাম হবার তওফিক দান করুন।

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০২

শোভন শামস বলেছেন: তথ্য বহুল, ধন্যবাদ

০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: শুকরিয়া । আপনাকেও ধন্যবাদ, শোভন শামস ভাই ।

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৮

ওমেরা বলেছেন: আল্লাহ পাক আমাদেরকে আল কোরআন জানার-বুঝার এবং আল কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমীন।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৩২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ওমেরা ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে আল কোরআন জানার-বুঝার এবং আল কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তওফিক দান করুন।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:১০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আল্লাহর ধর্মের লোকেরাই নবীকে নবী হিসাবে মানে না,অন্য ধর্মের লোকদের কথা আলাদা।যেমন ইহুদিরা,খৃষ্টানরা

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৪৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুলইসলা০৬০৪ ভাই ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

পৃথিবীতে আপনি-আমি এসেছি একা ,যাব একা এবং স্রষ্টার কাছে জবাবদিহী ও করতে হবে একা একা ।তার মানে হল আমার কাজের জন্য আমি দায়ী ,অন্য কেউ নয় এবং আমার হয়ে না অন্য কেউ জবাবদিহী করবে, না গ্রহনযোগ্য হবে।আমার ভাল-মন্দের সম্পূর্ণ দায় আমার এবং আমি তাই পাব যা আমি করব।

কাজেই কে কি করল এ বিচারের ভার বা দায়িত্ব আমার আপনার নয়।আর স্রষ্টাও আপনাকে আমাকে তাকে মানার জন্য কোন জোর করছেনা। সে শুধু তার প্রতিনিধির (রাসুল সঃ) মাধ্যমে এ দুনিয়ায় মানুষের করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে বলেছে। মেনে চলা বা মেনে না চলা সে মানুষের বিবেকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। স্রষ্টা আল কোরআনে বলেছে - মেনে চললে কি হবে আর মেনে না চললে কি হবে।আর আগে যদি স্রষ্টা মানুষকে না বলত এবং সতর্ক না করত তখন মানুষ বলত যে ,তুমি আমাদেরকে যে বিষয়ে বলনি বা আমরা যে বিষয়ে জানিনা সে বিষয়ের জন্য তুমি আমাদেরকে শাস্তি দিতে পারনা বা আমাদের বিচার করতে পারনা।

স্রষ্টা , (রাসুল সঃ) এবং আল কোরআনের মাধ্যমে গাইডলাইন এবং সিলেবাস দিয়েছে জীবনের জন্য। মেনে চললে আমরা পাস করব আর মেনে না চললে ফেইল করব।আর দুনিয়াতেও যে ছাত্র বা শিক্ষার্থী গাইডলাইন ফলো করে সে সাফল্যের রংগে রংগীন হয় তথা সাফল্য তাকে ধরা দেয় ।আর যে মানেনা বা সঠিক কাজ করেনা সে ফেল করে এবং সাফল্য তার অধরা থেকে যায়। পার্থক্য এতটুকুই।

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার কাছে প্রশ্ন-
আইনস্টাই এর সুত্র কি কোরআনে আছে?

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৪৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই,আপনার মন্তব্যের জন্য।

রাজিব ভাই,আইনস্টাইনকে নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। ওগুলো আসলে সবই সত্য, নাকি সবই শুধু কৌতুক, তা বলা মুশকিল।
আমার মনে হয় আপনি আইনস্টাইনের "আপেক্ষিকতার তত্ত্বের" কথা বুঝাতে চেয়েছেন।তাইকি? যা ছিল - E = mc 2 এই সুত্র বা ফর্মুলাটাই কি!

"আপেক্ষিকতার সূত্র" - অনুযায়ী আলোর গতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো বস্তু বা কণা এই গতির চেয়ে বেশি গতিতে কখনো চলতে পারে না। কিন্তু কেন না, সেটাই প্রশ্ন।

আপেক্ষিকতার সূত্র অনুযায়ী আলোর চেয়ে বেশি গতি অসম্ভব। কিন্তু আসলে এটা অন্যভাবে বুঝতে হবে। ঘটনা হলো, কোনো বস্তুর গতি আলোর গতির যত কাছাকাছি যাবে, ততই মনে হবে সেটা যেন ভারী হয়ে যাচ্ছে। যদি সেই বস্তু আলোর গতির একদম কাছাকাছি চলে যায়, তাহলে সেটা অসীম ভরসম্পন্ন বস্তুর মতোই ভারী হয়ে যাবে। তখন এর চেয়ে আরও বেশি গতি অর্জন করতে হলে অসীম পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে, যা অসম্ভব। তাই তাত্ত্বিকভাবেই বলা যায়, কোনো বস্তুর পক্ষে আলোর গতির সমান বা তার চেয়ে বেশি গতি অর্জন সম্ভব নয়।কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন বস্তুকণা থাকতে পারে। তবে এর কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। যদি সে রকম কোনো বস্তুকণার অস্তিত্ব থাকে, তাহলে আমরা মহাশূন্যের যেকোনো প্রান্তে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারব।

রাজিব ভাই,আপনার মন্তব্যের জবাব দেয়ার আল কোরআন জানা বড় বড় আলেমদের কাছে যাওয়া উচিত যার ধারে কাছে যাওয়ার কোনো যোগ্যতা আমার নাই। তবে একটা জিনিষ আমি বুঝি - যেখানে দুনিয়ার সময় মহাজগতিক সময়ের চেয়ে দ্রুততর সেখানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তো মিলে যায়। আর যেখানে মহাজাগতিক সময় দুনিয়ার সময়ের চেয়ে দ্রুততর সেখানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাথে সংঘর্ষ তৈরি হয়।

এখন আমার এখানে সময় সকাল ৯ টা ৯ মিনিট, এ কথাটা যতুটুকু সত্য আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র ততটা সত্য। এটি আমাদের পর্যবেক্ষণ নিরীক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত।আবার আপনি যদি বলেন আপনার ঘড়িতে ১২ টা ৯ মিনিট তাও সত্যি। যেখানে দুনিয়ার সময় ঊর্ধ্বলোক যথা মহাজাগতিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ধীরগতির, সেইখানে একটা বৈপরীত্য এসে যায়। এর সমাধান কী ?

"আপেক্ষিক তত্ত্বে " - কোথাও নেই ঊর্ধ্বজগতে সময় দ্রুত বা ধীর হওয়ার কথা। এটা স্থানের সাথে সম্পর্কিত নয়। এই তত্ত্ব অনুসারে কোনো কিছু গতিশীল হলে তা স্থির অবস্থার তুলনায় তার time dilation বা সময়ের সম্প্রসারণ হয়। আমাদের জগতে যে সকল গতি আমরা দেখতে পাই তাতে এ বিষয়টি ধরা পরে না। কিন্তু কোনো কিছুর গতি যদি আলোর বেগের কাছাকাছি হয় তাহলে তা ইন্দ্রিয়গাহ্য হিসেবে ধরা পরবে। শুধুমাত্র পারমাণবিক জগতেই ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ও অন্যান্য অতি ক্ষুদ্র কণিকার ক্ষেত্রে এর বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনা পৃথিবীতে বা পৃথিবীর বাইরে সকল ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। অপরপক্ষে কোরআনের যে সকল আয়াতে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সেখানে সময় আস্তে বা দ্রুত হওয়ার কোনো আলোচনাই নেই। কোরআনের মোট দুই জায়গায় সূরা হাজ্জ আর সূরা সাজদাতে আল্লাহর কাছে একদিন হাজার বছরের সমান বলা হয়েছে তা আগের পরের প্রেক্ষাপটসহ পড়লে প্রতীয়মান হয় যে এই কথা বলার উদ্দেশ্য আল্লাহ কোনো কাজ করার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করেন না। অবিশ্বাসীরা অনবরত চ্যালেঞ্জ দিয়ে যাচ্ছিল যদি আমরা ভুল হই তাহলে আমাদের ওপরে শাস্তি নেমে আসছে না কেন? এরই জবাবে বলা হয়েছে আল্লাহ কোনো কিছুতে তাড়াহুড়া করেন না। এমনকি এক হাজার বছরও তার কাছে যেন এক দিনের বেশি কিছু নয়। তিনি মানুষকে অবকাশ আর সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা করতে থাকেন আর ধৈর্যের পরিচয় দেন।

ইসলাম তো সায়েন্স ফিকশন বা সিনেমা নয়, আর ‘রিলেটিভিটি কোরআন-হাদীসে আছে’সেটারও সঠিকতা হয়ত প্রমাণিত না ,তবে -
যেমন,আল কোরআনে বলা হয়েছে,"আল্লাহ বলবেন, তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করলে বছরের গণনায়?তারা বলবে, আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন।আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা তাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরা জানতে?(সূরা মুমিনুন - আয়াত - ১১২-১১৪)।

আল কোরআনে আরো বলা হয়েছে, "আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বলল, তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বলল, একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বলল,তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর,সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য।সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।(সূরা কাহাফ - আয়াত - ১৯)।

আল কোরআনে আরো বলা হয়েছে, "যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন, এবং তোমরা তার প্রশংসার সাথে তার ডাকে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে "।( সূরা বনী ইসরাঈল - আয়াত ৫২)।এখানে ডাকবেন এর অর্থ, কবর থেকে জীবিত করে তাঁর সমীপে উপস্থিত করবেন।সেখানে দুনিয়ার এই জীবন-কাল অতি অল্প মনে হবে। ‘‘যেদিন তারা কিয়ামত দেখবে, সেদিন মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছিল।’’ (সূরা নাযিআত,আয়াত - ৪৬) ।

সময় আপেক্ষিক – এ নিয়ে তো কোনো বিতর্ক নাই।"আপনার পালনকর্তার কাছে একদিন আমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান"।উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে আমি যতটুকু বুঝি, পৃথিবীর এক হাজার বছর আল্লাহর কাছে ১ দিন। অর্থাৎ, বহির্জগতের ১ দিন পৃথিবীর জন্য ১০০০ বছর। আবার এভাবেও বলা যায়, “বহির্জগতের কয়েক ঘণ্টা পৃথিবীর জন্য কয়েক দশকও হতে পারে।”

এখন কেউ এ প্রশ্নটাও করতে পারে, আল্লাহর কাছে ১ দিন কেন হবে? এক মুহূর্তও বা কেন হবে? তিনি তো সময় এর ঊর্ধ্বে। সেজন্য আল্লাহর কাছে একদিন আর মানুষের কাছে এক হাজার বছর, এ কথাটা এক দিক থেকে দেখলে যুক্তিবিরোধী । যদি কথাটার অন্য কোনো প্রতীকী ব্যাখ্যা করা না হয়।কোরআনের আয়াতগুলোতে কোথাও ১ দিন = ৫০,০০০ বছর বলা হয়েছে, কোথায় ১ দিন = ১,০০০ বছর বলা হয়েছে। আবার, কোথাও দিনের অর্ধেক বলা হয়েছে। সুতরাং, সময়কে মানুষের দিক থেকে দেখলে, এবং মানুষকে বুঝাতে হলে এটাকে একটা একক ধরে নিতেই হচ্ছে।কোর’আনে প্রতীকী অর্থে যদি বলা না হতো তাহলে ১ দিন = কোথাও ১ হাজার অথবা কোথাও ৫০ হাজার বলা হতো না।

সমাজ বা পদার্থ মানে, পার্থিব জগতের বিজ্ঞানে মানুষ যত বেশি অগ্রসর হবে, তত নানান রকম অর্থ মানুষ খুঁজে পাবে। তাই এ পথটা খোলা রাখতে হবে। আর মুসলিমদের ক্ষেত্রে, একত্ববাদে বিশ্বাস রেখে আপাত একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নেবে যার জন্য যেটা দরকার। এমনকি শুধু জ্ঞান বা তথ্যের কমবেশির কারণে একই সময় ১০০ ধরনের বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে মানুষ কনভিন্স হয়ে কেউ আস্তিক কেউবা নাস্তিক হয়ে থাকবে/থাকছে। কাজেই আমরা যে ব্যাখ্যা দাঁড় করাই, সবটাই হচ্ছে বা হতে থাকবে আপেক্ষিক। সত্যটা মহান রবই জানেন এবং জানবেন। তবে মানুষ তার নিজেকে এবং অন্যকে কনভিন্স করার জন্য যৌক্তিক একটা অবস্থান খুঁজে ফিরতে থাকে এবং থাকবে। এটা মানুষের অন্তর্নিহিত যে বৈশিষ্ট্য, সে কারণেই দরকার হবে।

যে সত্য সর্বদা বিদ্যমান, তা উপলব্ধি করা মানবের পক্ষে দুষ্কর। এর একটি উদাহরণ হলো– বাতাস আমাদের উপর প্রচণ্ড চাপ দেয়, কিন্তু সেই চাপ ভূমিতে সর্বদা সমান এবং উপস্থিত বলে আমরা তা উপলদ্ধি করতে পারি না। মহাবিশ্বের সর্বত্র যদি একই রঙের, একই তীব্রতার আলো থাকতো, তাইলে আমরা সেই আলো দেখার মতো ইন্দ্রিয় আমাদের তৈরি হতো না (কারণ, এর মধ্যে কোনো তথ্য নেই)।সৃষ্টিকর্তার ধারণা এমনই হওয়া উচিত ।

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে,আমি যা জানি এবং বুঝি তাই আপনার সাথে শেয়ার করলাম।জানিনা তাতে আপনার প্রশ্নের জবাব মিলবে কিনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.