নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি - mybdtips.com
পবিত্র মাহে রমজান আমাদের দেরগোরায়।জীবনের সব গোনাহ থেকে পরিত্রাণ ও পবিত্র হওয়ার সুবর্ণ সময়। রহমত-বরকতের বারিধারা নিয়ে আবারো হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। গোনাহমুক্ত জীবন অর্জন করে নিজেকে জান্নাত উপযুক্ত করার আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত মাস রমজান। রমজানের রোযা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান (কালেমা), নামাজের পরই রোযার স্থান। এটি ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। রোযার আরবি শব্দ সাওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা।ইসলামী পরিভাষায় সাওম বলা হয়-প্রত্যেক সজ্ঞান, বালেগ মুসলমান নর-নারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোযাভঙ্গকারী সকল কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমযান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ যার অর্থ অবশ্য পালনীয়।সুতরাং রমযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরয।
রোযা সর্ম্পকে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- "হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার"।(সূরা বাকারা,আয়াত - ১৮৩)।এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন," সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে"।(সূরা বাকারা,আয়াত - ১৮৫)
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস এবং এ বিষয়ক অন্যান্য দলীলের আলোকে প্রমাণিত যে, রমযান মাসের রোযা রাখা ফরয, ইসলামের আবশ্যক বিধানরূপে রোযা পালন করা ও বিশ্বাস করাও ফরয।তাছাড়া কোনো শরয়ী ওযর ছাড়া কোন মুসলমান যদি রমযান মাসের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে তাহলে সে বড় পাপী ও জঘন্য অপরাধীরূপে গণ্য হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসেবে পরিগণিত হবে। হাদীস শরীফে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীর জন্য কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
রোযা কাকে বলে - সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমযান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ,যার অর্থ অবশ্য পালনীয়।
রোযার উৎপত্তি - রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে 'বিরত থাকা'। আর আরবিতে এর নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা।
ছবি - rupayon.com
রোযার প্রকারভেদ - রোজা পাঁচ প্রকার।
১। ফরজ রোযা।
২। ওয়াজিব রোযা।
৩। সুন্নত রোযা
৪। মোস্তাহাব রোযা
৫। নফল রোযা
১।ফরজ রোযা - ফরজ রোযা হলো রমজান মাসের পুরো এক মাস রোজা পালন করা।
ফরজ রোজা আবার চার প্রকার -
১.১। রমযান মাসের রোযা - মাহে রমজানে আল্লাহতাআলা অধিক রহমত-বরকত নাজিল করেন এতে বান্দার কৃত গুনাহ ও পাপ জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ নিয়ামতপূর্ণ মোবারকময় মাসে পরম করুণাময়ের অপার রহমতের দরজা তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজান মাস উপস্থিত। এটা অতিশয় রহমত-বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের রোজা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানকে আটক করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে লোক এ রাতের মহাকল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃতই সবকিছু থেকে বঞ্চিত।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রোযা সর্ম্পকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন - "যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং - ১৯০৯ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং - ১০৮০) ।
নবী করিম (সাঃ) মাহে রমজানকে রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরনাধারার মতো আল্লাহর রহমত রোজাদারদের জন্য অলক্ষে তাদের উপর বর্ষিত হতে থাকে। রমজান মাস এমন একটি মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতে পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত। মহানবী (সা.) বলেছেন, "এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে"।
রোযার নিয়ত
"নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম"।
বাংলা অর্থ - হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব, তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
১.২।কাযা রোযা - কোন কারণ বশত রমজানের রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাযা আদায়ে রোজা।প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ। ইচ্ছাকৃত রমজানের রোজা ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ বা জঘন্য পাপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো (গ্রহণযোগ্য) কারণ বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভাঙে, তার ওই রোজার বিপরীতে সারা জীবনের রোজাও রমজানের একটি রোজার সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তার স্থলাভিষিক্ত হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং - ৭২৩)।
তবে অসুস্থতা বা ইসলামী শরিয়ত অনুমোদিত অন্য কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারলে তার প্রতিবিধান রয়েছে। তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, "তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পাবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে, সে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা চান না"। (সুরা বাকারা, আয়াত - ১৮৫)।
কাজা রোযা আদায়ের বিধান -
রোজা ফরজ এমন ব্যক্তি যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অথবা কোনো অসুস্থতা, সফর ও ঋতুবতী হওয়ার মতো কারণে রোজা ভঙ্গ করে তার জন্য ছুটে যাওয়া রোজার সমপরিমাণ রোজা কাজা করা আবশ্যক। এই ব্যাপারে সব ইমাম একমত। কেননা আল্লাহ পরবর্তীতে সংখ্যা পূরণ করতে বলেছেন।কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট।
এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন, "রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে - তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে।রমজান মাস, যখন নাজিল হয়েছিল কুর’আন —মানুষের জন্য পথনির্দেশ, পরিস্কার বাণী যা পথ দেখায় এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তাই তোমাদের মধ্যে যে সেই মাসটি পাবে, সে যেন রোজা রাখে। আর কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে সে যেন পরে একই সংখ্যক দিন রোজা রেখে পূরণ করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না। তিনি চান তোমরা যেন নির্ধারিত সময় পূরণ করো, তোমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। (সুরা বাক্বারাহ,আয়াত - ১৮৪-১৮৫) ।
এছাড়াও হাদিসে এসেছে, এক নারী আয়েশা (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, ঋতুমতী নারী যখন ঋতু থেকে পবিত্র হয়, তখন কি সে নামাজ কাজা করবে? তিনি বললেন, তুমি কি হারুরি গোত্রের নারী? আমরা তো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে ঋতুমতী হতাম এবং যখন পবিত্র হতাম, তখন আমাদের রোজা কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হতো কিন্তু সালাত কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হতো না।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নং - ২৩১৮)।পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যতটা দ্রুত রমজানের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। বিনা কারণে কাজা আদায়ে বিলম্ব করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়।
১.৩। কাফফারা রোযা - প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান ইচ্ছাকৃত রমজানের রোজা না রাখা মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহের কাজ। শরিয়তের কঠোর নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে কেউ রোজা ভঙ্গ করলে তার অবশ্যই কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব।শরিয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা সহবাসের মাধ্যমে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে তার কাফফারা অর্থাৎ লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে।কাফ্ফারা রোজা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে। ১. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফ্ফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ২. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয় তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা খানা খাওয়াবে। অপর দিকে কেউ অসুস্থতার কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দুই বেলা করে পেটভরে খানা খাওয়াবে। ৩. একজন গোলাম বা দাসী আজাদ করে দিতে হবে।
১.৪।মান্নতের রোযা - কোনো মানত সহিহ হওয়ার জন্য এবং শরিয়তের দৃষ্টিতে তা মানত হিসেবে ধর্তব্য হওয়ার জন্য কয়েকটি অপরিহার্য শর্ত রয়েছে। মানতকৃত বিষয়টি মৌলিক ইবাদত হতে হবে, অন্য কোনো ইবাদতের ভূমিকা বা সহায়ক নয়। যেমন - নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি মৌলিক ইবাদত। রোজার মান্নত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব।কেউ যদি আল্লাহর নামে রোযা রাখার মান্নত করে তাহলে সেই রোযা রাখা ওয়াজিব হয়ে যায়। তবে কোন শর্তের ভিত্তিতে মান্নত মানলে সেই শর্ত পূরণ হওয়ার পূর্বে ওয়াজিব হয় না- শর্ত পূরণ হলেই ওয়াজিব হয়।
২। ওয়াজিব রোযা - নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।
৩। সুন্নত রোযা - শাওয়াল মাসের ছয় রোজা ।এ প্রসংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বলেছেন,"যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর এর পেছনে শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখল সে যেন সারা বছর রোজা রাখল"।(বর্ণনায় মুসলিম )শাওয়ালের ছয় রোজা একসাথেও রাখা যায় আবার ভিন্ন ভিন্ন ভাবেও রাখা যায়।
মহরম মাসের নয় এবং দশ তারিখে রোযা রাখা।আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’(বর্ণনায় তিরমিযী)।
যিলহজ্বের শুরুতে নয়দিন রোযা রাখা - হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘এই দশদিনের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় আমলের অন্যকোনো দিবস নেই। অর্থাৎ যিলহজ্বের দশদিন। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করে বললেন, ‘এমনকি আল্লাহর পথে জিহাদও না? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন,‘এমনকি আল্লাহর পথে জিহাদও না, কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে বের হয়ে যায় আর কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসে, তবে তার কথা ভিন্ন।’(বর্ণনায় বুখারী) তবে এ দশদিনের মধ্যে, যে ব্যক্তি হজ্বরত অবস্থায় নয়, তার ক্ষেত্রে আরাফা দিবসের রোজা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আরাফা দিবস সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘আরাফা দিবসের রোজা তার একবছর পূর্বের ও পরের গুনাহের কাফফারা বলে আল্লাহর কাছে আশা করি।’ (বর্ণনায় মুসলিম)
৪। মোস্তাহাব রোযা - প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩,১৫ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামুল বিয বলে। এ তিনদিনের রাতগুলো চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত থাকে বলে এ দিনগুলোকে আইয়ামুল বিয বা শুভ্রদিন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখে, প্রতি সাপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে এবং কোন কোন ইমামের মতে শাওয়াল মাসে পৃথক পৃথক প্রতি সপ্তাহে দুটো করে ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে এক সাথে হোক কিংবা পৃথক পৃথক হোক শাওয়ালের ছয়টি রোজা মুস্তাহাব।আবদুল মালিক ইবনে মিনহাল তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে আইয়ামুল বিয এর রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন,‘এটাই হলো বছরব্যাপী রোজা রাখা।’(বর্ণনায় বুখারী)
৫। নফল রোযা - নফল রোজা দুই প্রকার; প্রথম প্রকার হলো নির্ধারিত বা নবী করিম (সা.) কর্তৃক পালনকৃত, এই প্রকার রোজা সুন্নত; দ্বিতীয় প্রকার হলো অনির্ধারিত, এগুলো মুস্তাহাব। এই উভয় প্রকার রোজাকে সাধারণভাবে নফল রোজা বলা হয়ে থাকে। মোস্তাহাব আর নফল খুব কাছাকাছির ইবাদত। সহজ অর্থে নফল হলো যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নয় এমন ইবাদত পূণ্যের নিয়তে করা। রোজার ক্ষেত্রেও তাই। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা -আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল উপস্থাপন করা হয়, অতএব আমি পছন্দ করি যে, আমার আমল এ অবস্থায় উপস্থাপন করা হোক যে আমি রোজাদার।’(বর্ণনায় মুসলিম)তাছাড়া - প্রতি চান্দ্রমাসের ১০, ২০ ও ৩০ তারিখ রোজা রাখলে পূর্ণ মাসের রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে।
রোযা ভংগের কারন সমুহ -
১। ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে।
২। স্ত্রী সহবাস করলে ।
৩। কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙ্গবে না)।
৪। ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে।
৫। নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে ওষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।
৬। জবরদস্তি করে কেহ রোজা ভাঙ্গালে ।
৭। রাত্রি আছে মনে করে সোবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
আর যদি রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী সহবাস অথবা পানাহার করে তবে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। কাফফারার মাসআলা অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জেনে নিবেন।
যেসব কারণে রোযা না রাখার বিধান আছে তবে কাযা আদায় করতে হবে -
১। কোনো অসুখের কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেললে অথবা অসুখ বৃদ্ধির ভয় হলে। তবে পরে তা কাযা করতে হবে।
২। গর্ভবতী স্ত্রী লোকের সন্তান বা নিজের প্রাণ নাশের আশঙ্কা হলে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ তবে কাযা করে আদায় করতে হবে।
৩। যেসব স্ত্রী লোক নিজের বা অপরের সন্তানকে দুধ পান করান রোজা রাখার ফলে যদি দুধ না আসে তবে রোজা না রাখার অনুমতি আছে কিন্তু পরে কাযা আদায় করতে হবে।
৪। শরিয়তসম্মত মুসাফির অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে রাখাই উত্তম।
৫।কোনো রোগীর ক্ষুধা বা পিপাসা এমন পর্যায়ে চলে গেল এবং কোনো দ্বীনদার মুসলিম চিকিৎসকের মতে রোজা ভঙ্গ না করলে তখন মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। তবে রোযা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। পরে তা কাযা করতে হবে।
৬। হায়েজ-নেফাসগ্রস্ত (বিশেষ সময়ে) নারীদের জন্য রোজা রাখা জায়েজ নয়। পরবর্তীতে কাযা করতে হবে।
৭। কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে।
রোযার মাকরুহগুলো -
১। অনাবশ্যক কোনো জিনিস চিবানো বা চাখা ।
২। কোনো দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখা ।
৩। গড়গড় করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া কিন্তু পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।
৪। ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে গলাধঃকরণ করা।
৫। গীবত, গালা-গালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করা। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফাসাদ করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার তোমাকে প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম ।
৬। সাড়া দিন নাপাক অবস্থায় থাকা। এটি অত্যন্ত গুনাহের কাজ ।
৭। অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা ।
৮।কয়লা চিবিয়ে অথবা পাউডার, পেস্ট ও মাজন ইত্যাদি দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা।
বছরের যে সব দিনে রোযা রাখা হারাম -
বছরের পাঁচদিন যে কোন ধরণের নফল রোযা রাখা সম্পূর্ণ হারাম। ঐ পাঁচদিন হল -
১। ঈদুল ফিতর (রামাযানের ঈদ) এর দিন।
২। ঈদুল আযহা (কুরবানী) এর দিন।
৩। ঈদুল আযহার পরের তিন দিন। অর্থাৎ, ১১ই, ১২ই, ১৩ই যিলহজ্ব। এই পাঁচ দিন যে কোন রোযা রাখা হারাম।
ছবি - somewhereinblog.net
রোযার ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য হলো -
১ । রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজেই দিবেন এবং বিনা হিসাবে দিবেন - প্রত্যেক নেক আমলের জন্য নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোযার বিষয়ে আছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এক অনন্য ঘোষণা।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন," মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে"।( মুসলিম শরীফ, হাদীস নং - ১১৫১)।
অন্য বর্ণনায় আছে- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে, রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই তার পুরস্কার দিব আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ"।( বুখারী শরীফ, হাদীস নং - ১৮৯৪)।
রোযা বিষয়ে-অন্য বর্ণনায়-আললাহ তাআলা বলেন, ‘‘প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোযা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব"। (সহীহ বুখারী হাদীস-১৯০৪)
এ কথার তাৎপর্য হল, যদিও প্রকৃতপক্ষে সকল ইবাদতই আল্লাহর জন্য, তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। তবুও রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তা হল-অন্যান্য সকল ইবাদতের কাঠামোগত ক্রিয়াকলাপ, আকার-আকৃতি ও নিয়ম পদ্ধতি এমন যে, তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়াও ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ বিদ্যমান থাকে। মুখে প্রকাশ না করলেও অনেক সময় তার অন্তরে রিয়া তথা লোক দেখানো ভাব সৃষ্টি হতে পারে। তার অনুভূতির অন্তরালে এ ধরনের ভাব লুকিয়ে থাকে। তা সে অনুভব করতে না পারলেও তার ভিতরে অবচেতনভাবে বিদ্যমান থাকে। ফলে সেখানে নফসের প্রভাব এসে যায়। পক্ষান্তরে রোযা এমন এক পদ্ধতিগত ইবাদত, তার-আকার-আকৃতি এরূপ যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। রোযাদার ব্যক্তি নিজ মুখে রোযার বিষয়টি প্রকাশ না করলে সাধারণত তা আলেমুল গায়েব আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশিত হওয়ার মত নয়। তাই রোযার ক্ষেত্রে মাওলার সন্তুষ্টির বিষয়টি একনিষ্ঠভাবে প্রতিভাত হয়। একারণেই রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মাঝে এরূপ বিস্তর ব্যবধান।
রোযার এত বড় ফযীলতের কারণ এটাও হতে পারে যে, রোযা ধৈর্য্যের ফলস্বরূপ। আর ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হল-"ধৈর্য্যধারণকারীগণই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে"।(সূরা যুমার ,আয়াত - ১০)।
সব মাখলুকের স্রষ্টা, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, আল্লাহ তাআলা নিজেই যখন এর পুরস্কার দিবেন, তখন কী পরিমাণ দিবেন? ইমাম আওযায়ী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন- আল্লাহ যে রোযাদারকে প্রতিদান দিবেন, তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না অর্থাৎ বিনা হিসাবেই দিবেন।
২ ।আল্লাহ তাআলা রোযাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন
হযরত আবু মুসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, "আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জণ্য গ্রীষ্মকালে (রোযার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন"।(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং - ১০৩৯)।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,"আল্লাহ তাআলা বলেন, রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। কেয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোযাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমন ঘটবে না"।(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং - ৮১১৫)।
ছবি - channelionline.com
৩। রোযা হল জান্নাত লাভের পথ
হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, "আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম। তারপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোযা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো দান-সদকা করে তারপর তার মৃত্যু হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং: ২৩৩২৪)।
হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, "আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আগমন করে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। তিনি বলেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় তার নিকট এসে একই কথা বললাম। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ"।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং - ২২১৪৯ এবং সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং - ২৫৩০)।
৪ । রোযাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে
হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,"জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোযাদারগণ? তখন তারা উঠে দাড়াবে। তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোযাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং - ১৮৯৬ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং - ১১৫২)।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,"প্রত্যেক প্রকারের নেক আমলকারীর জন্য জান্নাতে একটি করে বিশেষ দরজা থাকবে, যার যে আমলের প্রতি অধিক অনুরাগ ছিল তাকে সে দরজা দিয়ে আহবান করা হবে। রোযাদারদের জন্যও একটি বিশেষ দরজা থাকবে, যা দিয়ে তাদেরকে ডাকা হবে, তার নাম হবে ‘রাইয়ান’। আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এমন কেউ কি হবেন, যাকে সকল দরজা থেকে আহবান করা হবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি আশা রাখি তুমিও তাদের একজন হবে"।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং - ৯৮০০)।
৫ । রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,"আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন- রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দিব।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং - ১৪৬৬৯)।
উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,"রোযা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের (শত্রুর আঘাত হতে রক্ষাকারী) ঢালের মত।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং - ১৬২৭৮এবং সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং - ১৬৩৯)।
৬. রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-"রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে"।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং - ৬৬২৬)।
৭ । রোযাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে"।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং - ৩৮ এবং সহীহ মুসলিম হাদীস নং -৭৬০)।
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,"আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রমযানের রোযা ফরয করেছেন, আর আমি কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবীহ’র নামাযকে সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম ও কিয়াম আদায় করবে, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্যভূমিষ্ঠ হয়েছিল"।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৬৬০)।
৮ । রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- "সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়"।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং - ১৯০৪)।
৯। রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। এক. যখন সে ইফতার** করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দিবেন, তখন সে আনন্দিত হবে"।( বুখারী শরীফ , হাদীস নং -১৯০৪)।
**ইফতারের দোয়া - আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
বাংলা অর্থ - হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।
১০। রোযাদার পরকালে সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত থাকবে
হযরত আমর ইবনে মুররা আলজুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত,"এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি একথার সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল, আর আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, যাকাত প্রদান করি, রমযান মাসের সিয়াম ও কিয়াম (তারাবীহসহ অন্যান্য নফল) আদায় করি তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব? তিনি বললেন, সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে"।(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ২৫)।
১১। রোযাদারের দুআ কবুল হয়
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-"ইফতারের সময় রোযাদার যখন দুআ করে, তখন তার দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দুআ কবুল হয়)"।(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং - ১৭৫৩)।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,"তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (অর্থাৎ তাদের দুআ কবুল করা হয়) ন্যায়পরায়ন শাসকের দুআ, রোযাদার ব্যক্তির দুআ ইফতারের সময় পর্যন্ত ও মজলুমের দুআ। তাদের দুআ মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এর জন্য সব আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, আমার ইয্যতের কসম! বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব"।(সুনানে তিরমিযী, হাদীসনং - ৩৫৯৮)।
১২। রোযা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়
হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "সবরের মাসের (রমযান মাস) রোযা এবং প্রতি মাসের তিন দিনের (আইয়্যামে বীয) রোযা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়"।(মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং - ১০৫৭)।
১৩। আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম
হযরত আবু উমামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, "তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো নেক আমলের কথা বলুন, তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর কোনো সমতুল্য কিছু নেই"।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং - ২২১৪০)।
হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, "আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন কোনো আমলের আদেশ করুন, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাকে উপকৃত করবেন। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা তার তুলনা হয় না"।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং - ২২১৪১)।
ছবি - eshoallahorpothe.wordpress.com
আল্লাহ তাআলার নিকট মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলাম। ইসলাম যে রুকন বা স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত সে সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক। রমযান হল খালেস ইবাদতের মৌসুম। তাই এ মাসের সময়গুলো যতটা সম্ভব শুধু আল্লাহর সাথে কাটানো যায় ততটাই ভালো। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হাদীস অনুযায়ী আমল করার ও উক্ত ফযীলত লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমীন। ইয়া রাববুল আলামীন।
চলবে -
তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া এবং আল কোরআন,হাদীস ।
===============================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
ঈমান ও আমল - ৫ Click This Link
(" নামাজ " ইসলামের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ । যা মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে পার্থক্যকারী সূচক হিসাবে বিবেচিত এবং মুসলমান মাত্রই দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে)।
ঈমান ও আমল - ৪ Click This Link
("ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ" - যার শুরুটা কালেমা বা ঈমানে। যা শুধু মুখে বলা নয়, অন্তরে বিশ্বাস ও কর্মে পরিণত করার বিষয়)।
ঈমান ও আমল - ৩ Click This Link
(তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব )।
ঈমান ও আমল - ২ Click This Link
("শুক্রবার - পবিত্র জুমা"- মুসলমানদের জন্য এক মর্যাদা ও ফজিলত পূর্ণ দিন এবং জুমার দিনের কতিপয় আমল )।
ঈমান ও আমল - ১ Click This Link
(যেসব আমলে মানুষের অভাব দূর হয় ও জীবন সুখের )।
১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৫৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই, আপনার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, "আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত"। (সুরা বাকারা, আয়াত - ১৮৭)।
এ আয়াতে রাতের অন্ধকারকে কালো রেখা এবং ভোরের আলোকে সাদা রেখার সঙ্গে তুলনা করে রোজার শুরু এবং পানাহার হারাম হওয়ার সঠিক সময় তথা রোজার সময় বর্ণনা করা হয়েছে। এখন যেসব দেশে রাতের কালো রেখা এবং ভোরের সাদা পরিদৃষ্ট হয় না সেসব দেশের লোকেরা কিভাবে রোজা রাখবে?
এ প্রসংগে মহানবী (সাঃ) বলেছেন,"তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভঙ্গ করো "(বুখারি ও মুসলিম)। রাসুল (সাঃ) অন্যত্র বলেছেন, "যখন এ দিক (পূর্ব) থেকে রাত আসে এবং এ দিক (পশ্চিম) দিন প্রস্থান করে এবং সূর্য অস্ত যায় তখনই রোজাদার ইফতার করবে"। (বুখারি ও মুসলিম)।
এখন,পৃথিবীর যেসব দেশের দিন বড় ও রাত ছোট যেমন—নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি,আবার যেসব দেশে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত যেমন—উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু। এসব দেশে কিভাবে নামাজ-রোজা পালন করবে? এ ব্যাপারে আলেমরা বিভিন্ন উক্তি করেছেন।
কারো কারো মতে, "নামাজ-রোজা পালনের জন্য ওয়াক্ত শর্ত। এসব দেশে যেহেতু ওয়াক্ত নির্ণয় করা সম্ভব নয়, তাই ইবাদত পালন করতে হবে না। তবে বেশির ভাগ আলেমের মতে, সেসব দেশের বাসিন্দারা তিনটি বিষয়ের যেকোনো একটি অবলম্বন করে নামাজ-রোজা পালন করবে"।
১. নিজেরা সময় ঠিক করে নামাজ-রোজা পালন করবে।
২. মক্কা ও মদিনার সময় অনুযায়ী তারা নামাজ রোজা পালন করবে।
৩. তাদের পাশের দেশে যেখানে দিন-রাতের হিসাব সঠিকভাবে করা যায়, তাদের মতো করে তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজানের রোজা, ঈদের নামাজ, ইফতার, সাহরি, তারাবির নামাজ ইত্যাদি পালন করবে।
বিজ্ঞ আলেমদের মতে, চাঁদের দেশ ও মঙ্গল গ্রহেও সময় হিসাব করে নামাজ-রোজা পালন করবে। কোনো অবস্থায়ই নামাজ-রোজা ছাড়া যাবে না।
আর ,ছোটদের রোজা রাখা এবং ভাংগা নিয়ে আমাদের সবারই অনেক রকম স্মৃতি আছে। বড়রা আসলে ছোটদের রোজা না রাখতে দিতে চেয়ে "দিন'ডা খেয়ে তিনটা রোজা" এরকম নানা বিষয়ের অবতারনা করে ছোটদের খাইয়ে দেওয়ার নজীর বহু।
মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে রমজানের সকল রহমত-বরকত-মাগফেরাত নসীব করুন।
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৫২
মেরুভাল্লুক বলেছেন: জনাব আপনার মন্তব্যের উত্তরে মেরূর বাসিন্দাদের রোজা রাখার সিস্টেম টা ঠিক বোধগম্য হলোনা।
সবরকম কথাই তো বললেন। আলটিমেট উত্তর টা কি??
৬ মাস দিন ছয়মাস রাতের যায়গায় রোজারাখার বিধান কি??
১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:১০
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: মেরে পেয়ারী মেরুভাল্লুক ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য এবং আপনার ঘুম ভাংগল দেখে ভাল লাগল(অনেক দিন পর দেখলাম ভাই,তাই )।
উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু,যেখানে দিন-রাত্রি আলাদা করা যায়না বা ছয় মাস দিন ছয় মাস রাত, এসব দেশে কিভাবে নামাজ-রোজা পালন করবে? এ ব্যাপারে আলেমরা মাঝে নানারকম মতভেদ থাকলেও একটা বিষয়ে সকলে একমত যে কোনো অবস্থায়ই নামাজ-রোজা ছাড়া যাবে না সে গুলি পালন করতে হবে। তবে পালনীয় বিষয়গুলি নিয়ে তাদের মাঝে মতের অমিল আছে।
এর জবাব ১ নং মন্তব্যে দেয়া হয়েছে। তারপরেও -
যে সব দেশে যেখানে দিন-রাতের হিসাব সঠিকভাবে করা যায় না, তাদের মতো করে তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজানের রোজা, ঈদের নামাজ, ইফতার, সাহরি, তারাবির নামাজ ইত্যাদি পালন করবে। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেছেন, " উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর লোকজন মক্কা-মদিনা অথবা পার্শ্ববর্তী দেশ অনুযায়ী নামাজ-রোজা পালন করবে, ঈদের নামাজ পড়বে এবং অন্য ইবাদত করবে"। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) ও এ অভিমত পোষণ করেছেন।
মহানবী (সাঃ) বলেন, "দাজ্জালের সময়কাল হবে ৪০ দিন। এ ৪০ দিনের প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হবে এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান, অবশিষ্ট ৩৭ দিন হবে আমাদের দিনের মতো। তখন হিসাব করে নামাজ-রোজা পালন করবে।"
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:০০
রাজীব নুর বলেছেন: আমি রোযা রাখি না। কারন আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। তবে আমি সেহেরি ও ইফতারিটা সময় মতো খাই।
১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: রাজিব ভাই, আপনাকে আমি এখন ধন্যবাদ দিলাম না। কারন, আপনি না একজন সুস্থ মানুষের মত কথা বলেছেন না একজন মুসলমান এর মন্তব্য করেছেন। আপনি দুনিয়ার সব কিছু করতে পারছেন,দুটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জনক হয়েছেন, কিছু দিন পর আপনিই সিনিয়র সিটিজেন হয়ে যাবেন। সেই,আপনার ক্ষুধা সহ্য হয়না,এটা কেমন যেন হলনা ভাইজান। রোজা শুধু ক্ষুধার্ত থাকার নামই নয় রোজা সংযম ও সাধনার ও নাম। আল্লাহ আপনাকে আমাকে রোজাগুলি পালন করার তাওফিক দান করুন। আর একটা কথা, আপনি চাইলেই পারবেন ভাই,ইনশাআল্লাহ। please,Try to this. If you wants,you can.আল্লাহ আপনাকে আমাকে সহায়তা প্রদান করুন।
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৩২
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: #রাজীব নুর এত নিলর্জ্জ ক্যান ছি
আল্লাহ আমাদের সিয়াম পালনের তৌফিক দান করুন। সবাই যেন সুস্থ ও সুন্দর থাকেন এবং করোনামুক্ত যেন করেন আল্লাহ। আল্লাহর কাছে চাইবো
জাজাকাল্লাহ খাইরান
১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৫৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন কাজী ফাতেমা ছবি , আপনার মন্তব্যের জন্য।
রাজিব ভাই আসলে কখন কি বলে বা কোথায় কি বলতে হবে তা অনেকটা ভূলে যায় ।এমন ও হতে পারে ভাই সহজ সরল আবার এমন ও হতে পারে ভাই আতেল(অতি বুদ্ধিমান ) ।
তবে যাই হোক , মহান আল্লাহপাক ভাইকে সহ আমাদের সকলকে রমজানের সবগুলি রোজা রাখার তওফিক দান করুন এবং আমাদের সকলকে রমজানের রহমত-বরকত-মাগফেরাত নসীব করুন।
৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:২২
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: উপবাস মনে হয় বিভিন্ন ভাবে সকল ধর্মেই আছে।একটু এদিক সেদিক।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৫৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুলইসলা০৬০৪ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য।
আমাদের ইসলামে যা সাওম বা রোজা অন্য অনেক ধর্মে তা উপবাস । আর সকল ধর্মেই তা আত্মশুদ্ধির পথ হিসাবে দেখা হয়।
৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৩৪
জিকোব্লগ বলেছেন:
রাজীব নুরতো ইসলাম ধর্মই বিশ্বাস করেন না। নামাজ রোজা তো পরের কথা।
এই লোক পারে একটাই, ইসলাম নিয়ে হাসি তামসা আর মজা ঠাট্টা করতে ।
@রাজীব নুর, কালেমায়ে তাইয়্যেবা: লা ইলাহা ইল্লাল্লহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লহ্।
বাংলা অনুবাদ: আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ(সঃ) তার
প্রেরিত রসূল; বিশ্বাস করেন? আশা করি, মজা না করে সঠিক উত্তর দিবেন।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জিকোব্লগ ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য।
যদিও তা আপনি রাজিব ভাইকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছেন তারপরেও আমার মনে হয়, রাজিব ভাই ধর্ম মেনে চলতে কিছুটা হলেও চেষ্টা করেন তবে মাঝে মাঝে রাজিব ভাই আসলে কখন কি বলে বা কোথায় কি বলতে হবে তা অনেকটা ভূলে যায় ।এমন ও হতে পারে ভাই সহজ সরল আবার এমন ও হতে পারে ভাই আতেল(অতি বুদ্ধিমান ) ।
তবে ,আমরা যে যেই ধর্মের ই অনুসারী হইনা কেন ধর্মের বেসিক তথা প্রাথমিক পালনীয় বিষয়গুলি সম্পর্কে কারোরই উদাসীন হওয়া ঠিক নয়।আমাদের সকলেরই সেগুলি সম্পর্কে যথাযথ জানা এবং সেগুলি পালন করার চেষ্টা করা উচিত।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:০৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: যে সব দেশে ৬ মাস দিন ৬ মাস রাত্রি, সেই দেশের লোকেরা রোজা কিভাবে রাখবে?
ভুলে কিছু খেলে রোজা ভাঙ্গে না। বুখারি শরীফের হাদিসে আছে যে - রসুল (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি ভুলে যায় যে সে রোজা আছে এবং কিছু খায় বা পান করে তাকে রোজার বাকি সময় পূর্ণ করতে দাও। কারণ আল্লাহ স্বয়ং তাকে খাইয়েছে বা পান করিয়েছে। (বুখারি ৬৬৬৯)
এই হাদিস জানলে আমার ফুফুকে চ্যালেঞ্জ করতাম এবং ছোট বেলার একটা রোজা আমি ভাংতাম না। ক্লাস সিক্সে যখন পড়ি তখন রোজা রেখে দুপুরের দিকে ক্রিকেট খেলতে যাই। খেলা শেষে প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণা পায়। আমি পাশের মসজিদের অজু করার কল থেকে পেট ভরে পানি খেয়ে বাসায় আসি। বাসায় আসার পর খেয়াল হয় যে আমি তো রোজা আছি। বাসায় যারা ছিল সবাইকে ঘটনাটা বললাম। আমি তখনও ভাসাভাসা জানতাম যে ভুলে কিছু খেলে রোজা ভাঙ্গে না। কিন্তু আমার ছোট ফুফু কিছুতেই মানবে না। সে জোর করে আমার রোজা ভাঙ্গালো। আমার খুব কষ্ট লেগেছিল। এই হাদিস তখন জানলে আমি কখনও রোজা ভাঙ্গতে রাজি হতাম না।
যে ব্যক্তি রোজার মাস পেল কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না সেই ব্যক্তিকে রসুল (সা) কঠিনভাবে লানত করেছেন।