নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি - ekushey-tv.com
যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন বা স্তম্ভ।ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হল সালাত ও যাকাত।কুরআন মজীদের বহু স্থানে সালাত ও যাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ ছওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।আল কোরআনে নামাজের নির্দেশ যেমন ৮২ বার রয়েছে, অনুরূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের নির্দেশনাও ৮২ বার রয়েছে। "যাকাত" শব্দ দ্বারা ৩০ বার, "ইনফাক" শব্দ দ্বারা ৪৩ বার এবং "সদাকাত " শব্দ দ্বারা ৯ বার এই নির্দেশনা রয়েছে। এর দ্বারা যাকাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, "‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন"। (সূরা বাকারা,আয়াত - ১১০)।অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে,"‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার"। (সূরা-নূর, আয়াত - ৫৬)।অন্য এক আয়াতে যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,"তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ "। (সূরা তাওবা,আয়াত - ১০৩ )।
যাকাত কি - যাকাত আরবি শব্দ যার অর্থ "পরিশুদ্ধকরণ, পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া, বরকত হওয়া" ইত্যাদি।যাকাত এর আভিধানিক অর্থ নিজ অর্জিত ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও ফরজ কৃত অংশ দান করা বা অন্যকে দিয়ে দেওয়া।যাকাত সামর্থবানদের জন্য একটি ফরয হুকুম। যাদের বছরান্তে নিসাব পরিমান সম্পদ থাকে তাদের উপর যাকাতের হিসাব বর্তায়। ইসলামের শিক্ষায় যাকাতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
ছবি - kalerbiborton.com
যাকাত হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক করা হয়েছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৮২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
যাকাত হিসাবের নিয়ম - ধর্মীয়ভাবে প্রতিজন মুসলমানকে তার যাবতীয় আয়-ব্যয়-সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়। হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ভিত্তি একটি মৌলিক ধারণা। অর্থাৎ বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন থেকে পরবর্তি বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত যাবতীয় আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখতে হয়। এই 'দিন' বাছাই করার ক্ষেত্রে ধর্মে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোন দিন মাসে তা নির্ধারণ করা যায়। তবে সাধারণত কেউ কেউ হিসাব সংরক্ষণের সুবিধার্থে হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের কোনো দিন কিংবা অধিক পূণ্যের আশায় রমজান মাসের কোনো দিন বাছাই করে থাকেন। এই হিসাব সংরক্ষণ হতে হবে যথেষ্ট সূক্ষ্মতার সাথে। সংরক্ষিত হিসাবের প্রেক্ষিতে ইসলাম ধর্মের নিয়মানুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে তবেই উক্ত ব্যক্তির উপর যাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক (ফরয) হয়, অন্যথায় যাকাত দিতে হয় না।
ছবি - manobkantha.com.bd
যাকাতের শর্তসমূহ - স্বাধীন,পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন -
১। সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা -
সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ, মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার থাকা। যেসকল সম্পদের মালিকানা সুসস্পষ্ট নয়, সেসকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই, যেমন - সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ। অনুরূপভাবে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়াকফকৃত সম্পদের উপরেও যাকাত ধার্য হবে না। তবে ওয়াক্ফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয়, তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।
২। সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া -
যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন- গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মালামাল বর্ধনশীল। যেসকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়, সেসবের উপর যাকাত ধার্য হবে না।যেমন - ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, চলাচলের বাহন ইত্যাদি।
৩। নিসাব পরিমাণ সম্পদ
যাকাত ফরয হওয়ার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা। সাধারণ ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়টি মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হয়।
৪। মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা -
সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে। এখানে অতিরিক্ত বলতে পরিবারের ব্যয় বহনের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে বুঝায়। স্ত্রী, পুত্র, পরিজন, ও পিতামাতা এবং নিকটাত্মীয়দের ভরণ-পোষণও মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।
৫।ঋণমুক্ততা -
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ততা, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যা, নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার উপর যাকাত ফরয হবে না। ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়। তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মতটি হলো: যে ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় সে ঋণের ক্ষেত্রে যেবছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সেবছর সে পরিমাণ ঋণ বাদ দিয়ে বাকিটুকুর উপর যাকাত দিতে হয়। কিন্তু ঋণ বাবদ যাকাত অব্যাহতি নেয়ার পর অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সে সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।
৬।সম্পদ এক বছর আয়ত্তাধীন থাকা -
নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ ১ বছর নিজ আয়ত্তাধীন থাকা যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত। তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত (উশর) প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও কোম্পানীর ক্ষেত্রে বছর শেষে উদ্বৃতপত্রে (Balance Sheet) বর্ণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
বিশেষ ক্ষেত্রে যাকাত
অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পাগলের যাকাত - সম্পদের মালিক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা পাগল হলে, তার যাকাত তার আইনানুগ অভিভাবককে আদায় করতে হবে।
যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তির যাকাত - কোনো সম্পদে যৌথ মালিকানা থাকলে সম্পদের প্রত্যেক অংশীদার তার স্ব স্ব অংশের উপরে যাকাত দিবেন, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় বা তার অতিরিক্ত হয়। অর্থাৎ সম্পদের স্বীয় অংশের মূল্য অন্যান্য সম্পদের সাথে যোগ করে হিসাব করে যদি দেখা যায় তা নিসাব পরিমাণ হয়েছে বা অতিক্রম করেছে, তবে যাকাত দিতে হবে।
নির্ধারিত যাকাত - যাকাত নির্ধারিত হওয়াসত্ত্বেও পরিশোধের আগেই সম্পদের মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারগণ অথবা তার তত্ত্বাবধায়ক তার সম্পত্তি থেকে প্রথমে যাকাত বাবদ পাওনা ও কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করবেন। এরপর অবশিষ্ট সম্পত্তি, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হবে।
তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ন্যস্ত সম্পদের যাকাত - মালিকের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত আইনানুগ তত্ত্বাবধায়কের কাছে সম্পত্তি ন্যস্ত থাকলে মালিকের পক্ষে উক্ত তত্ত্বাবধায়ক সে যাকাত পরিশোধ করবেন।
বিদেশস্থ সম্পদের যাকাত - যাকাত ওয়াজিব হবার জন্য সম্পত্তি নিজ দেশে থাকা শর্ত নয়। বরং সম্পত্তি অন্য দেশে থাকলেও তার উপর যাকাত দিতে হবে। তবে উক্ত দেশ ইসলামী রাষ্ট্র হলে এবং দেশের সরকার যাবতীয় সম্পদের উপর যাকাত দিলে তা আর আলাদা করে দিতে হবে না।
ছবি - primenewsbd.com
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ -
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, " সদকা তো শুধু ফকীর, মিসকীন ও সদাকা আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য , যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য , দাসমুক্তিতে , ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য , আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান।আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়"। (সুরা তাওবা - আয়াত - ৬০)।
পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবার ৬০ নাম্বার আয়াতে যাকাত বণ্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন । এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দ্দিষ্ট, এবং যেহেতু তা আল্লাহ'র নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত, ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না ।খাতগুলো হল -
১। ফকির (যার কিছুই নেই).
২। মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই) ।
৩। যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই) ।
৪। নওমুসলিমদের (আর্থিক সংকটে থাকলে)।
৫। ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)।
৬। ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি।
৭। আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি।
৮। মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)।
ছবি - ekushey-tv.com
যাকাতমুক্ত সম্পদ - যাকাতমুক্ত সম্পদ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের বাণীবাহক মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাচা তরিতরকারিসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে যাকাত নেই।হাদিসের আলোকে যেসকল সম্পদসমূহকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো - জমি ও বাড়িঘর - মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যারহাউজ বা গুদাম ইত্যাদি - দোকান - এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু - ব্যবহার্য যাবতীয় পোশাক - বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী - গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প - অফিসের যাবতীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও নথি - গৃহপালিত সকলপ্রকার মুরগী ও পাখি - কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধনসামগ্রী - চলাচলের যন্তু ও গাড়ি - যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম - ক্ষণস্থায়ী বা পঁচনশীল যাবতীয় কৃষিপণ্য - বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ - যাকাতবর্ষের মধ্যে পেয়ে সেবছরই ব্যয়িত সম্পদ - দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনস্বার্থে নিয়োজিত - সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ। যে ঋণ, ফেরত পাবার আশা নেই (স্থায়ী কুঋণ), তার উপর যাকাত ধার্য হবে না।
যাকাত আদায়ের উপকারিতা -
১. গরীবের প্রয়োজন পূর্ণ করা, অভিশপ্ত পুঁজিতন্ত্রের মূলোৎপাটন করা, সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসিকতাকে শেষ করে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করা।
২. মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করা, দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩. চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ সব রকম অভাবজনিত অপরাধের মূলোৎপাটন করা। গরীব-ধনীর মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করা।
৪. সম্পদের বরকত ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি। এ প্রসংগে নবীজী (সঃ) বলেন, "যাকাতের সম্পদ কমে না"। (মুসলিম শরীফ - হাদীস -৬৭৫৭, তিরমিযী শরীফ - ২০২৯) অর্থাৎ, দৃশ্যতঃ সম্পদের পরিমাণ কমবে বলে মনে হলেও, আল্লাহ তাআলা এই স্বল্প সম্পদের মাঝেই বেশী সম্পদের কার্যকরী ক্ষমতা দিয়ে দিবেন।
৫. সম্পদের পরিধি বৃদ্ধি করা। কেননা সম্পদ যখন যাকাতের মাধ্যমে অভাবীদের মাঝে বণ্টিত হয়, তখন এর উপকারিতার পরিধি বিস্তৃত হয়। আর যখন তা ধনীর পকেটে কুক্ষিগত থাকে, তখন এর উপকারিতার পরিধিও সঙ্কীর্ণ হয়।
৬. যাকাত প্রদানকারীর দান ও দয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া। অন্তরে অভাবীর প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হওয়া।
৭. কৃপণতার ন্যায় অসৎ গুণ থেকে নিজেকে পবিত্র করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,"তুমি তাদের ধন-সম্পদ হতে সাদাকাহ গ্রহণ কর, যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে দেবে। আর তাদের জন্য দুআ কর, নিঃসন্দেহে তোমার দুআ হচ্ছে তাদের জন্য শান্তির কারণ। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা" । (সুরা আত -তাওবা ,আয়াত - ১০৩)।
৮. সর্বোপরি আল্লাহর বিধান পালন করার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করা।
ছবি- bn.mtnews24.com
যাকাত ও ফিতরা'র মধ্যে পার্থক্য -
ফিতরা - ইসলামী শরিয়তের হুকুম মোতাবেক এটি একটি ওয়াজিব আমল। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশকীয় সামগ্রী ছাড়া নিসাব পরিমাণ বা অন্য কোনো পরিমাণ সম্পদের মালিকদের পক্ষ থেকে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি অর্থ প্রদান করার বিশেষ আয়োজনকে সাদকাতুল ফিতর বলা হয়। ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি আধা সা অর্থাৎ এক সের চৌদ্দ ছটাক বা পৌনে দুই সের গম বা সমপরিমাণ গমের মূল্য ফিতরা হিসেবে প্রদান করতে হয়।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্নিত, "তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতর - রোযাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাযের পূর্বে দান করে তা কবুল হওয়া যাকাত হিসাবে গণ্য। আর যে ব্যক্তি তা নামাযের পরে পরিশোধ করে তা অন্যান্য সাধারণ দান-খয়রাতের অনুরূপ হিসাবে গণ্য"।(আবু দাউদ শরীফ,হাদীস - ১৬০৯এবং ইবনে মাজাহ, হাদীসস - ১৮২৭) ।
সাদকাতুল ফিতর শুধু মাত্র রমজান মাসে রোজাদরদের ভুল-ত্রটি ইত্যাদি’র কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হয়। আর যাকাত অর্জিত সম্পদের বাৎসরিক হিসাবের উপর নির্ধারিত হয়।
আল্লাহ তাআলার নিকট মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলাম। ইসলাম যে রুকন বা স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত সে সব গুলি সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ধর্মের সকল হুকুম-আহকাম মেনে চলার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
চলবে -
তথ্যসূত্র - আল কোরআন , হাদীস এবং উইকিপিডিয়া ।
===============================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
ঈমান ও আমল - ৬ Click This Link
("রোযা" ইসলামের তৃতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ । যার বিনিময় বা প্রতিদান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন নিজেই দিবেন)।
ঈমান ও আমল - ৫ Click This Link
(" নামাজ " ইসলামের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ । যা মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে পার্থক্যকারী সূচক হিসাবে বিবেচিত এবং মুসলমান মাত্রই দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে)।
ঈমান ও আমল - ৪ Click This Link
("ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ" - যার শুরুটা কালেমা বা ঈমানে। যা শুধু মুখে বলা নয়, অন্তরে বিশ্বাস ও কর্মে পরিণত করার বিষয়)।
ঈমান ও আমল - ৩ Click This Link
(তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব )।
ঈমান ও আমল - ২ Click This Link
("শুক্রবার - পবিত্র জুমা"- মুসলমানদের জন্য এক মর্যাদা ও ফজিলত পূর্ণ দিন এবং জুমার দিনের কতিপয় আমল )।
ঈমান ও আমল - ১ Click This Link
(যেসব আমলে মানুষের অভাব দূর হয় ও জীবন সুখের )।
০৪ ঠা মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন শেহজাদী১৯, আপনার মন্তব্যের জন্য।
আসলে বোন, প্রতিটি ধর্মের অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলির পিছনেই স্রষ্টা কিছুনা কিছু মংগল মানুষের জন্য নিহিত রেখেছেন।আর ইসলাম ধর্মের প্রধান ৫টি স্তম্ভের মাঝে মুসলমানদের জন্য শিক্ষা-পালন-কল্যাণ সবগুলিই আল্লাহ রেখেছেন। যদি আমরা একটু খেয়াল করে দেখি তাহলে দেখতে পাব যে এসব বিষয় গুলি পালন শুধু নিজের জন্যই মংগল ও কল্যাণজনক নয় বরং এসবগুলি বিষয়ের পালনের মাঝে নিজের পাশাপাশী সমাজ-পরিবার-পরিজন তথা আরও অনেক কিছুর কল্যাণ নিহিত থাকে।তাই আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ধর্মের বিধিবিধানগুলি মেনে চলার চেষ্টা করা উচিত।
২| ০৪ ঠা মে, ২০২১ বিকাল ৪:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমার মা প্রতিবছর ঈদের সময় দরিদ্রদের টাকা দিয়ে দেয়। কত মানুষ যে মায়ের কাছে আসে। মা কাউকে ফিরিয়ে দেয় না।
০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।
দান-সাদকা দেয়ার জন্য দুটি জিনিষের প্রয়োজন হয়।এক - সামর্থ্য ,দুই - মানষিকতা। আল্লাহ আপনার মাকে আরও বেশী বেশী দান-সাদকা করার তওফিক দান করুন এবং সাথে সাথে আপনাকেও সেই তওফিক দিন।
৩| ০৪ ঠা মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
যাকাত, মাকাতের কথা ভুলে যান, মানুষের দরকার চাকুরী।
০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।
ভূলে যান সবকিছু,যদি আপনার কাছে এর থেকে ভাল অপশন থাকে।
দান-সাদকা-যাকাত এগুলো ত পাওয়ার হক তাদের , যাদের চাকুরী পাওয়ার নুন্যতম যোগ্যতা নেই বা সমাজের সেই সব পিছিয়ে পড়া বা অবহেলিত মানুষ যাদের যোগ্যতা অনেকের থেকে কম এবং যারা নূন্যতম মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ ।এখন একজন অসহায়-অশিক্ষিত মানুষত আর চাকুরী পাবেন না। তাহলে তারা কিভাবে চলবে? তাদের প্রতি কি সমাজের - সামর্থ্যবানদের কোন দায় নেই?
এখন আপনার উন্নত দেশ তথা ইসালেমের বাইরে যা চ্যারিটি হিসাবে পরিচিত এবং তা যার যার ব্যক্তি ইচছাধীন সেখানে ইসলামে তা সামর্থ্যবানদের জন্য বাধ্যতামুলক ,এই যা।এর সাথে চাকুরী বা অন্য প্রতিযোগীতামুলক কিছুর সম্পর্ক নেই।
৪| ০৪ ঠা মে, ২০২১ রাত ৮:০৯
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
রাজীব নুর বলেছেন: আমার মা প্রতিবছর ঈদের সময় দরিদ্রদের টাকা দিয়ে দেয়। কত মানুষ যে মায়ের কাছে আসে। মা কাউকে ফিরিয়ে দেয় না।
কেউ যদি আপনাকে দান করে তাহলে আপনি কি তা গ্রহণ করবেন?
আমি করবো না। আমি কাজ চাইবো। কাজ করাটা আমার কাছে অনেক সম্মানের।
দান মানেই অপমান।
আমি কাজ করে বেঁচে থাকতে চাই।
০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:০৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।
- কেউ যদি আপনাকে দান করে তাহলে আপনি কি তা গ্রহণ করবেন?
ভাই , আমি-আপনি কিংবা রাজিব ভাই দান-সাদকা-যাকাত এগুলো ত পাওয়ার হকদার না । দান-সাদকা-যাকাত এগুলো
পাওয়ার হকদার তারা , যাদের কাজ-চাকুরী পাওয়ার নুন্যতম যোগ্যতা নেই বা সমাজের সেই সব পিছিয়ে পড়া বা অবহেলিত মানুষ যাদের যোগ্যতা অনেকের থেকে কম এবং যারা নূন্যতম মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ ।কাজ তারাই পাবে বা কাজ দেয়ার যার সামর্থ্য আছে তিনি তাকেই কাজ দিবেন যারা কাজের জন্য / কাজ করার জন্য যে যোগ্যতা দরকার তা যাদের আছে।আছে এখন একজন সম্পদহীন বৃদ্ধ-পংগু-অসহায়-অশিক্ষিত মানুষত আর চাকুরী পাবেন না। তাহলে তারা কিভাবে চলবে? তাদের প্রতি কি সমাজের - সামর্থ্যবানদের কোন দায় নেই?
উন্নত দেশে তথা ইসালেমের বাইরে যা চ্যারিটি হিসাবে পরিচিত এবং তা যার যার ব্যক্তি ইচছাধীন সেখানে ইসলামে তা সামর্থ্যবানদের জন্য বাধ্যতামুলক ,এই যা।এর সাথে চাকুরী বা অন্য প্রতিযোগীতামুলক কিছুর সম্পর্ক নেই।
- দান মানেই অপমান।
দান সম্পর্কে এটা মনে হয় আপনার সঠিক ধারনা নয়।দান আমার-আপনার জন্য নয়।যাদের কাজ করার সামর্থ্য আছে তারা কাজ করেই জীবন ধারন করবে আর যাদের কাজ করার সামর্থ্য বা যোগ্যতা নেই তাদের জন্যই দানের বিধান।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মে, ২০২১ দুপুর ২:২৪
শেহজাদী১৯ বলেছেন: মানুষ মানুষের প্রতি দয়াশীল হোক এবং যার যা সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করুক। এই হোক চাওয়া। যাকাত ফিতরা একটি সুন্দর নিয়ম। এই নিয়মগুলি নিয়ে লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।