নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি - ittefaq.com.bd
" বজ্র ভাই " - চরম রাগী,বদমেজাজী, বখাটে মস্তান ও সন্ত্রাসী যার আছে সারা দুনিয়াব্যাপী নেটওয়ার্ক এবং তার আরও আছে চমতকার সুন্দরী,স্বাস্থ্যবতী ,সুদন্ত্যা,সুহাসিনী এক বোন। যার নাম " বিজলী " । বিজলী যখন তখন হাসে মনের সুখে,আনন্দে।বিজলী যখন হাসে তখন তার হাসিতে মুক্তো ঝরে । তার সেই মুক্তো ঝরা হাসিতে সারা দুনিয়া আলোকিত হয়ে পড়ে তা সে দিন কিংবা রাত বা আমবস্যা কি পূর্ণিমা যাই হোক না কেন। আর এদিকে যখনই বিজলী কোন কারনে হাসে তখনই তার রাগী,বদমেজাজী ভাই চরম আক্রোশে রাগে-হুংকারে ফেটে পড়ে ।তার সেই চরম আক্রোশের হুংকারে প্রকম্পিত হয়ে উঠে দুনিয়ার আকাশ-বাতাস,মানুষ-গাছপালা,পশু-পাখি। আর " বজ্র ভাই " যখনই রাগে তখনই কেউ না কেউ প্রাণ হারায় তার আক্রোশ তথা রাগের হুংকারের কারনে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গত সোমবার (০৭/০৬/২০২১) একদিনে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। আমাদের দেশেও গত কিছুদিন যাবত প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কেউ বা কয়েকজন মারা যাচছে বজ্রের আঘাতে।বাংলাদেশেও গত রোববার (০৬/০৬/২০২১) একদিনেই বজ্রপাতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।বজ্রপাতের মাত্রা ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে
পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে কয়েক লাখ বজ্রপাত সৃষ্টি হয়। উন্নত দেশগুলোতেও একসময় বজ্রপাতে বহু মানুষের মৃত্যু হতো। কিন্তু তারা বজ্রনিরোধক খুঁটি বা পোল স্থাপন করা, মানুষকে সচেতন করার মধ্য দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে এনেছে। তবে তার আগে বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাভিত্তিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে উন্নত দেশগুলো। এতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোসহ পূর্ব এশিয়ায় বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা বহুলাংশে কমেছে। যদিও বজ্রপাত সম্পর্কে অনেক কল্পকাহিনি প্রচলিত, বিজ্ঞানের কল্যাণে বজ্রপাতের কারণ পরিষ্কার হয়েছে। সহজ ভাষায় বায়ুমণ্ডলে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জের গঠন ও পৃথকীকরণে বজ্রপাত সংঘটিত হয়। সারা বছরের হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত সংঘটিত হয় ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো হ্রদে। অন্যদিকে আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকার অবস্থান দ্বিতীয়।
ছবি - ppbd.news
কীভাবে ও কেন বজ্রপাত হয়
বাংলাদেশের দক্ষিণ থেকে আসা গরম আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে সৃষ্ট অস্থিতিশীল আবহাওয়ায় তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে হয় বজ্রপাত। এ সময় উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায় তাতেই আঘাত করে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ ভৌগলিক অবস্থান। একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে আসছে গরম আর আর্দ্র বাতাস। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। কিছু দূরেই হিমালয় পর্বত। যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসে। এই দুই জায়গা থেকে আসা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।বাংলাদেশে বজ্রপাতের কারণগুলোর মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে প্রথম ও প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
মেঘ থেকে ভূমিতে ধাবিত বজ্রপাত মানুষ ও সম্পদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। মনে রাখা দরকার, বায়ুমণ্ডলে শক্তি বা এনার্জির পুনর্বিন্যাসে ঝড় ও বজ্রপাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এ ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ পৃথিবীর তাপ পরিস্থিতিকে একটি সুষম বা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রাখে। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের ব্যাপ্তি অনেক এলাকাজুড়ে হয়, কিন্তু বজ্রপাত নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ। আবার দিনের সব সময় বজ্রপাত হয় না, অর্থাৎ এটা সংঘটনের স্থান ও কাল জানলে হতাহতের সংখ্যা বহুলাংশে কমানো সম্ভব। উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক ধরন, বিশেষ করে মেঘ থেকে ভূমিতে সংঘটিত বজ্রপাতের বৈশিষ্ট্য পরিষ্কার।
যদি কেউ খালি মাঠে বা পানির পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে সমতল ভূমির তুলনায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির উচ্চতা বেশি হওয়ায় সে সরাসরি বজ্রপাতের শিকার হতে পারে। এমন প্রাণহানিকে সরাসরি আঘাত বলা হয়। অন্যদিকে কেউ যদি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যেমন মুঠোফোনে কথা বলে বা কম্পিউটারে কাজ করে অথবা টিনের ঘরে টিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে থাকে, তবে বজ্রপাত থেকে নির্গত অতিরিক্ত ভোল্টেজের সংস্পর্শে মৃত্যুবরণ করতে পারে সে। শস্য বপন বা আহরণের কাজে মানুষ মূলত দুই পা আড়াআড়ি করে সারিবদ্ধ অবস্থায় জমিতে কাজ করে। তাঁরা স্টেপ ভোল্টেজের কারণে মৃত্যুবরণ করতে পারেন।অথচ একটু সচেতন হলেই বজ্রপাত থেকে মৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে।
বজ্রপাত হলে শরীরে কী হয়?
কোনো ব্যক্তির ওপরে বজ্রপাত হলে তার শরীরের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ বয়ে যায়। ফলে হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়।
রাস্তায় যেসব বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইন থাকে সেগুলো হচ্ছে হাই-ভোল্টেজ তার, আর বজ্রপাত থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সেটি আল্ট্রা হাই-ভোল্টেজ। বজ্রপাত দুই ধরনের হয়। কোনো ব্যক্তির ওপর সরাসরি পড়তে পারে অথবা একটি বড় এলাকাজুড়ে বজ্রপাত হতে পারে।কোনো ব্যক্তির ওপর সরাসরি বজ্রপাত হলে তিনি সাথে সাথে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান। বজ্রপাতে ভোল্টেজ এতো বেশি যে তা ১০ হাজার থেকে মিলিয়ন পর্যন্ত চলে যায়।
যদি কোনো আশপাশের গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, টাওয়ার কিংবা উঁচু ভবনের ওপর বজ্রপাত হয়, তখন সেখান থেকে আল্ট্রা লো-ডিউরেশন বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। আশপাশে যদি কেউ থাকে তখন তার শরীরে অতি দ্রুত বিদ্যুৎ প্রবেশ করে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়।বজ্রপাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই তৎক্ষণাৎ মারা যায়। আহত হয়ে অল্প কিছু মানুষ বেঁচে যায়।
সারাদেশে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু দিনে দিনে বাড়ছেই। সরকারি এক হিসাব অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ১০৭ জন। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। এক দশকের পরিসংখ্যানে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে।
ছবি -prothomalo.com
কোন সময় বজ্রপাত বেশি হয়
পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ৮০ লাখ বজ্রপাত সৃষ্টি হয়। ২০১৯-২০ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাত হয়েছে ৩১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ দুর্যোগ হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬ শতাংশ হয় মে মাসে।
ঋতুভিত্তিক বিন্যাসেও বজ্রপাতের ধরনে পার্থক্য রয়েছে। মার্চ থেকে মে মাসে প্রায় ৫৯ শতাংশ, আর মৌসুমি বায়ু আসার সময়, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ বজ্রপাত হয়। তবে মোট বজ্রপাতের প্রায় ৭০ শতাংশ হয় এপ্রিল থেকে জুনে।
গত ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। গবেষণায় দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টা হিসাবে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ১২ শতাংশ। আর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হার ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
গবেষণা বলছে, ২০১৩-২০২০ (জুন পর্যন্ত) দেশে মোট ১ হাজার ৮৭৮ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। বজ্রপাতে দেশে বছরে প্রাণহানি প্রতি ১০ লাখে ১ দশমিক ৬ জন।
বজ্রপাত থেকে কীভাবে রক্ষা পাবেন
যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতে বিপদাপন্ন পরিমাপের একটা জনপ্রিয় পদ্ধতির নাম ৩০-৩০ বা ‘৩০ সেকেন্ড ৩০ মিনিট’। ৩০ সেকেন্ড : বজ্রপাত দেখা ও শোনার সময় থেকে ৩০ সেকেন্ড গুনতে হবে। যদি দুটির মধ্যকার সময় ৩০ সেকেন্ডের কম হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে। অথবা আপনি যদি বজ্রঝড়ের শব্দ শুনতে পান, তবে নিরাপদ স্থানের সন্ধান করা সবচেয়ে নিরাপদ। কেননা, বজ্রপাত সাধারণত ঝড়ের সময় বা পরপরই হয়ে থাকে। ৩০ মিনিট : বজ্রঝড়ের শেষ শব্দ শোনার পর থেকে ৩০ মিনিট নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে হবে। নয়তো বজ্রপাতে মৃত্যু বা জখমের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তবে বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা বা সতর্কতা অত্যাবশ্যক।
ছবি - naya-digant.com.bd
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয়
১। বজ্রপাতের সময় যদি ঘরের ভেতরে থাকেন, তবে নিম্নোক্ত সতর্কতা জরুরি -
ক. ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকতে হবে।
খ. প্লাম্বিং যেমন বাথটাব, রান্নাঘরের ধাতব পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে।
গ. বজ্রঝড়ের সময় জানালা, দরজা বা যেকোনো প্রবেশদ্বার থেকে দূরে থাকতে হবে।
ঘ. বজ্রপাতের সময় কোনো অবস্থাতেই কংক্রিটের ওপর শোয়া যাবোন না বা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসা যাবেনা।
২। বজ্রপাত বা বজ্রঝড়ের সময় যদি বাইরে থাকেন, তবে ঝুঁকি এড়াতে নিচের বিষয়গুলো পালন করা বাধ্যতামূলক -
ক। উঁচু স্থান অবশ্যই এড়াতে হবে বা নদী, পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদির আশপাশে থাকা যাবে না।
খ। কোনো অবস্থাতেই ভূমিতে শোয়া যাবেনা বা বিচ্ছিন্ন কোনো বড় গাছের নিচে দাঁড়ানো যাবেনা । বজ্রপাতের সময় বড় গাছের নিচে থাকা সবচেয়ে বেশী বিপজ্জনক ।
গ। বৈদ্যুতিক তারের বেড়া, ধাতব পদার্থ বা সংশ্লিষ্ট বস্তু (টাওয়ার) থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা, ধাতব পদার্থের মাধ্যমে বজ্রপাত অনেক দূর পর্যন্ত চলাচল করতে পারে।
ঘ। বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিৎ হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
ঙ। অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে (যেমন খেলার মাঠে) ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে হবে। বজ্রঝড়ের সময় মানুষ জড়ো অবস্থায় থাকলে অনেকজনের একসঙ্গে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে
চ। বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাবেন, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
ছ। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।
জ। বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।
ঝ। বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরণের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
ছবি - ittefaq.com.bd
বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাত নিয়ে নানা ধরনের সতর্কবার্তা প্রচার করছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে।বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
বজ্রপাতে আহত হলেও কিছু কিছু মানুষের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক মারা যায়। আবার কারো কারো হৃদপিণ্ড বা হার্ট একটু বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়।যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড সচল থাকে তাহলে তাকে সাথে সাথে সিপিআর দিতে হবে। এজন্য সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। সিপিআর দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হবে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে। তাদের যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন হয়তো আমরা কাউকে কাউকে রক্ষা করতে পারি। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না।
ছবি - jagonews24.com
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বিশ্বনবি যে দোয়া পড়তেন -
বর্ষা মৌসুমে প্রায় দিনই প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে তেড়ে আসে বজ্রপাত। এ বজ্রপাতে প্রতিবছরই অনেক মানুষ মারা যায়।বজ্রপাত হচ্ছে আসমানি দুর্যোগ। মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখার সতর্কবার্তা। এ বজ্রপাত আল্লাহ তাআলার শক্তিমত্তার এক মহা নিদর্শন। তিনি ইচ্ছা করলেই যে কাউকেই এ বজ্রপাতের মাধ্যমে শাস্তি দিতে পারেন। আবার মানুষও এ বজ্রপাত থেকে সর্বোত্তম শিক্ষা নিতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বজ্রপাত নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করেন। পবিত্র কুরআনে বজ্রপাত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, " তিনিই তোমাদের বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্য এবং আশার জন্য এবং উপেক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা। তাঁর (তাহমিদ) প্রশংসা কর। বজ্র এবং ফেরেশতারাও তার ভয়ে (তাসবিহরত)। তিনি বজ্রপাত করেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি তা (বজ্রপাত) দ্বারা আঘাত করেন। এরপরও তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে অথচ তিনি মহাশক্তিশালী "। (সুরা রাদ,আয়াত ১২-১৩)।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে আসমানি দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে বেঁচে থাকতে শিখিয়েছেন দোয়া। যারা এ দোয়া পড়বে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বজ্রপাতের ক্ষতি থেকে হেফাজত করবেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন বা বিদ্যুতের চমক দেখতেন তখন সঙ্গে সঙ্গে বলতেন - " আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা"। (তিরমিজি শরীফ)।
বাংলা অর্থ -"হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করো "।
মুসান্নেফে আবি শায়বায় বজ্রের আক্রমণে মৃত্যু থেকে বাঁচতে ছোট্ট একটি তাসবিহ পড়ার কথা বলা হয়েছে। " সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি" ,যে ব্যক্তি এ তাসবিহ পড়বে সে বজ্রপাতের আঘাত থেকে মুক্ত থাকবে।
ছবি - ittefaq.com.bd
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে বজ্রপাত সম্পর্কিত গবেষণা বলছে, বিশ্বের সর্বত্র বজ্রপাত সমহারে বাড়ছে না। সম্প্রতি স্যাটেলাইট উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় আঞ্চলিক ক্ষেত্রে বজ্রপাতের ওপর জলবায়ু উষ্ণায়নের প্রভাব সুস্পষ্ট, অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী না বাড়লে ও দক্ষিণ এশিয়া বা ক্রান্তীয় অঞ্চলের অনেক দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। দেশে এখন বজ্রপাতের মৌসুম চলছে। এমতাবস্থায় গণসচেতনতা বাড়ানো ছাড়া বায়ুমণ্ডলীয় এ দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করার পথ সামান্য।যদিও বজ্রপাত সংঘটন ঠেকানোর কোনো উপায় আমাদের জানা নেই। কেননা, এর মূল কারণ দৈনন্দিন আবহাওয়া।উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য প্রমাণিত কৌশল, যা ব্যক্তির এবং পরিবেশের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হতে পারে। বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে ৩০-৩০ পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ। তবে উল্লিখিত কৌশলগুলো মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে অতিরিক্ত বজ্রপাতপ্রবণ জেলাগুলোতে ছড়িয়ে দিতে পারলে প্রাণহানি বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব।বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে সরকারের পাশাপাশি সচেতন হতে হবে জনগণকেও। ঝড়-বৃষ্টির সময় বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি বজ্রপাত প্রতিরোধের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। আর বেশি করে তালগাছসহ বিভিন্ন গাছপালা লাগাতে হবে। তাহলে অনেকাংশে কমে আসবে বজ্রপাতে মৃত্যু।
মহান আমাদের সকলকে আসমানি দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে মুক্ত থাকতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়া এবং তাসবিহ পড়ে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের সকলকে হেফাজত করুন বজ্রপাত থেকে।
তথ্যসুত্র - আল কোরআন,সংবাদপত্র (ইত্তেফাক,নয়া দিগন্ত) এবং আবহাওয়া বিষয়ক বিজ্ঞান জার্নাল।
০৯ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৭
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।
২| ০৯ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বাংলাদেশে গ্রাআঞ্চলে বজ্রপাতে অনেক কৃষক মারা যায়।
কিছুদিন আগে দেখলাম খুব সামান্য কিছু ব্যবস্থা নিলেই বজ্রপাতের হাত থেকে রেহায় পাওয়া যায়।
০৯ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মরুভূমির জলদস্যু ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।
গত কয়েক বছর যাবত বজ্রপাতে আমাদের উপমহাদেশ সহ আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ মারা যাচছে।ঝড়-বৃষ্টি যদিও আমাদের নিত্যসংগী তারপরেও ঝড়-বৃষ্টির সময় নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করে বা সমান্য কিছু সময় ধৈর্য্য ধারণ করলে এবং সামান্য কিছু নিয়ম অনুসরন করলেই অনেক মূল্যবান প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।
৩| ০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:২৯
শাহ আজিজ বলেছেন: সীমানা পিলার বজ্রপাত ধারন করত । এটা উঠিয়ে নেয়া এক ধরনের চরম অপরাধ । সরকার রাতারাতি এই বজ্রপাত নিরোধক স্তম্ভ সারা দেশ জুড়ে বসিয়ে দিতে পারেন ।
১০ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:৫০
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ শাহ আজিজ ভাই, আপনার চরম সত্য এই মন্তব্যের জন্য ।
সীমানা পিলার !!! প্রথমেই বলি,শৈশবে আমি দেখেছি আমাদের এলাকার জমির মৌজা নির্ধারণের জন্য এক রকম পিলার যা মাটির অনেক গভীর থেকে মাটির উপরেও এক ফুটের মত।যখনই এলাকার কোন জমিন মাপ হত তখন সেই পিলার থেকেই চেইন টানা শুরু হত ।বড় হওয়ার পর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ঐ পিলার নিখোজ ,সে জায়গাগুলিতে বিশাল বিশাল গর্ত এবং জমিনের মাপ তথা সীমানা নির্ধারনের সময় নানা জটিলতা।
এটা গেল জমিনের জটিলতা ।তার পর শুনি ঐ পিলারগুলির ম্যাগনেটিক ক্ষমতা ছিল এবং তা আমাদেরকে জমির সীমানা নির্ধারনের পাশাপাশী আমাদেরকে বজ্রপাতের হাত থেকেও রক্ষা করত। তবে এখন আর শুনে বা বলে কিছু লাভ নেই ,।কিছু মানুষের লোভের বলি হয়ে সীমানা পিলার নিখোজ আর আমরা সবাই ভুক্তভোগী এখন ।
আসলে মানুষ হিসাবে আমরা এতটা নীচে নেমে গেছি এবং জাতি হিসাবে আমাদের এতটা অধঃপতিত হয়েছি যে তা আর বলার মত নয়।আর সরকারের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। আমাদের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন না হলে এবং তার সাথে সাথে আমরা সবাই সচেতন না হলে আমাদের বাঁচার সুযোগ সীমিত।
৪| ০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:৫০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ২০ বা ৩০ বছর আগে এতো মানুষ বজ্রপাতে মারা যেত না। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়াতে এরকম হচ্ছে।
১০ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:৫৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।
আমরা আসলে ভুলে যাই, প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই সমানা এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে ।আমরা সাময়িক ভাবে নিজের লাভের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশের অনেক ক্ষতি করছি আর পরিবেশও সময় সুযোগে তা আমাদের ফেরত দিচছে না দূর্যোগের মাধ্যমে।
রাসায়নিক সার-কীটনাশকের যথেচছা ব্যবহার,অপরিকল্পিত মোবাইল টাওয়ার, বায়ুতে কার্বন - ডাই - অক্সাইডের বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং আমাদের আরো অনেক কাজ-কর্ম দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং ভারসাম্য নষ্ট করছে প্রকৃতির ।আর এর ফলেই মানুষ দিন দিন সন্মুখীন হচছে নতুন নতুন প্রাকৃতিক দূর্যোগের।
৫| ১০ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
নতুন বলেছেন: সিমানা পিলারের জন্য এমনটা হয়েছে বলে মনে হয় না।
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ২০ বা ৩০ বছর আগে এতো মানুষ বজ্রপাতে মারা যেত না। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়াতে এরকম হচ্ছে।
১০ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:০২
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নতুন ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।
শুধু সীমানা পিলারের জন্য তা হচছে এমন নয় তবে তা একটি কারন অবশ্যই।তবে সীমানা পিলার চুরি বা নিখোজ হওয়ার কিছু সমস্যা তৈরী হয়েছে তা ঠিক।
আমরা মানুষ নানা ভাবেই পরিবেশের অনেক ক্ষতি করছি আর পরিবেশও সময় সুযোগে তা আমাদের ফেরত দিচছে না দূর্যোগের মাধ্যমে।আমাদের অনেক কাজ-কর্ম দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ক্ষতি করছে এবং ভারসাম্য নষ্ট করছে প্রকৃতির ।আর এর ফলেই মানুষ দিন দিন সন্মুখীন হচছে নতুন নতুন প্রাকৃতিক দূর্যোগের তথা করোনা,বজ্রপাত ইত্যাদির।
৬| ১৯ শে জুন, ২০২১ রাত ৮:৪১
জুন বলেছেন: বজ্রপাতের পরিমান এবং মৃত্যুর পরিমান দুটোই বেড়েছে বিশ্বজুড়ে ।
কাল নাকি পরশু একটা আর্টিকেল পড়লাম কোন গাছের উপর সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় ?
আমিতো প্রিয় তালগাছটা ধরে পড়েই যাচ্ছি---- তারপর দেখলাম লিখেছে সেই গাছটা নাকি ওক গাছ
প্রচুর তথ্য সম্বলিত লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানা হলো ।
+
২০ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১২:০১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন জুন, আপনার মন্তব্যের জন্য ।
বর্তমানে মানুষ নিজ নিজ লাভের জন্য পরিবেশের অপরিমেয় ক্ষতি করছে এবং এর ফলে ভারসাম্য নষ্ট করছে প্রকৃতির ।আর এর ফলেই প্রকৃতিতে নতুন নতুন প্রাকৃতিক দূর্যোগের উৎপত্তি হচছে ।
তালগাছটা / তালগাছগুলি অনেকটাই নিসংগ অবস্থায় একপায়ে মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকে।আর এক একটা তালগাছ পরিণত হইতে ১/২ প্রজন্ম লেগে যায়।আপনার প্রিয় তালগাছটা বেচে থাকুক জনম জনম ধরে।
৭| ২১ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:৫৫
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা নিতে খুব বেশী খরচ না। বাড়িঘরে এটি নিজ নিজ খরচে নেওয়া উচিত আর সড়ক মহা সড়ক সহ ফসলি জমিতে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ধন্যবাদ খুব প্রয়োজনীয় পোস্ট দিয়েছেন।
২২ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৯
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার , আপনার মন্তব্যের জন্য ।
শুধু সরকারের একার পক্ষে বা প্রচেষ্টায় এ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব না তবে সরকার জনগনকে সচেতন করার চেষ্টার পাশাপাশী কিছু কমন কাজ করতে পারে ।আর তার পর আমজনতা জানা জিনিষকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে ।
তবে এ যে খুব খরছের ব্যাপার তা নয় - এটা আপনি একদম সঠিক বলেছেন। শুধু দরকার সবার একটুখানি সচেতনতা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর একটা পোস্ট দিয়েছেন।