নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে কোন অযুহাতে দেশে হানা-হানী সৃষ্টি বা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা তা কতটা গ্রহনযোগ্য এবং এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভংগী বা নির্দেশনা কি ?

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৯

যে কারনে এই পোস্ট লেখার ইচছা - গত কিছুদিন যাবত নানা অযুহাতে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতী তৈরীর প্রেক্ষাপটে এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের শুভবোধের উদয়ের উদ্দেশ্যে -
উৎসর্গ - ব্লগার সাসুম এবং ব্লগার এভো ভাইকে -


ছবি - thedhakatimes.com

মানুষ আল্লাহর প্রিয় ও সেরা সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তিনি মানুষকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।আর তাই মানুষ হত্যাকে তিনি কবিরা গোনাহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। হত্যার অপরাধে হত্যাকারী শেষ বিচারের দিন মহান আল্লাহর আরশের ছায়া থেকে বঞ্চিত হবেন।যে কোন অযুহাতে বা কারনে অবৈধ হত্যাকাণ্ড পৃথিবী ধ্বংসের চেয়েও মারাত্মক এবং তা মহাপাপ (তবে কিছু হত্যা যেমন - যুদ্ধকালীন এবং বিচারের শেষে সেগুলো ভিন্ন ব্যাপার । যুদ্ধ ঘোষনা করার দায়িত্ব শুধুমাত্র রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের বা আইনসম্মত শাসকের এবং বিচারের সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পর আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামীর ব্যাপার বতীত ) । মানুষ হত্যা মানবতা হত্যার শামিল। সে কারণে যখন কোথাও কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, সেখানে আল্লাহর অভিশাপ নাজিল হয়।

যে কোন অযুহাতে দেশের শান্তিময় পরিবেশকে ভীতিকর করে তোলা, জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করা, যেকোনো উপায়ে নিরপরাধ কাউকে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা, অথবা অপরাধী কোনো ব্যক্তিকেও বেআইনিভাবে হত্যা করা বা হত্যাচেষ্টা করা হারাম। অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কোরআনে কারিমে "সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার " নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে," এ কারণেই বনী ইসরাঈলের উপর এ বিধান দিলাম যে, নরহত্যা বা যমীনে ধ্বংসাত্মক কাজ করার কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করল , আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল । আর অবশ্যই তাদের কাছে আমার রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলেন, তারপর এদের অনেকে এর পরও যমীনে অবশ্যই সীমালংঘনকারী"। ( সূরা আল মায়েদা,আয়াত - ৩২ )।


ছবি - ekushey-tv.com

মানুষ হত্যা এবং হত্যাকারীদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভংগী

হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতায় তুলে ধরে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন," যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন" (সুরা নিসা ,আয়াত - ৯৩)।

এ ছাড়াও আল কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, " আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতিত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। তাদের শাস্তি কেয়ামতের দিন দ্বিগুন হবে এবং সেখানে তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৮-৭০)।

উল্লেখিত আয়াতের আলোকে ইসলামে সকল অবৈধ হত্যাকাণ্ড হারাম ও মারাত্মক কবিরা গোনাহ। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে কাউকে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাদের শাস্তির বিষয়টিও উঠে এসেছে কুরআন শরীফে। তাই যে কোনো কারনে যে কোন হত্যাকাণ্ড ঘটানো থেকে সকল মানুষের বিরত থাকা জরুরি। যে কোন অন্যায়ের প্রতিবিধান বা শাস্তি প্রদানের দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের । আর তাই যে কোন অযুহাতেই (ধর্ম অবমাননা কিংবা আস্তিক- নাস্তিক প্রশ্নে) আইন ভংগ করা, না ধর্মে- না দেশের প্রচলিত আইনে গ্রহন ও সমর্থনযোগ্য। ইসলামের বিধানের তোয়াক্কা না করে, মানবতাকে পায়ে দলে, পশুত্বের কোন স্তরে পৌঁছলে এমন কাজ (হত্যাকাণ্ড) মানুষের দ্বারা সম্ভব তা অনুমানযোগ্য নয়।

ইসলামে হত্যার বিচার - বদলা বা কিসাস

এখন আসুন দেখি কিসাস কি ?

সারা বিশ্বে বর্তমানে মানুষে মানুষে হানাহানি, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা এবং এ সংক্রান্ত অন্যায় অপরাধের প্রবণতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জীবিতরাও উৎকন্ঠিত থাকে কখন কী থেকে কি হয় - এই ভেবে। কেউ এখন আর এ থেকে নিজেকে নিরাপরাধ এবং নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সচেতন মহল তাই এর প্রতিরোধের নানা রকম উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এতদসংক্রান্ত অপরাধের প্রতিকার নিয়ে আল-কুরআনের একটি পন্থা হলো " কিসাস "। মূলতঃ মৃত্যুর বিনিময়ে মৃত্যু, কিংবা কোন ধরণের জখমের বিনিময়ে অনুরুপ জখমের পরিভাষা হলো " কিসাস " বা " অনুরুপ প্রতিশোধ "। ইসলামী অপরাধ আইনের গরুত্বপূর্ণ এই পরিভাষাটি সরাসরি কুরআন ও হাদিসে ব্যবহৃত হয়েছে।

অন্যায় ও অবৈধভাবে হত্যা মহাপাপ এবং যে কোন অযুহাতে তা গ্রহনযোগ্য নয়। তা হোক ইচ্ছাকৃত হত্যা কিংবা ভুলবশতঃ হত্যা ।আবার হত্যাকারীও দুপ্রকার ১। ইচ্ছাকৃত, ২। ভুলবশতঃ। সকল প্রকারের হত্যার ব্যাপারে ইসলামের প্রথম পার্থিব বিধান হচ্ছে, কিসাস (রক্ত মূল্য) ওয়াজিব। আর পরকালের বিচার বা পরবর্তী বিচারের ভার স্বয়ং আল্লাহর ।

কিসাস সম্পর্কে (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত - ১৭৮ ) এ বলা হয়েছে," হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায় দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কিছুটা মাফ করে দেয়া হয় তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে। এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব"।

এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট - এই আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম লেখেন যে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগে দু’টি গোত্রের মধ্যে লড়াই হয়েছিল। তাদের উভয় দলের লোকই নিহত হয় কিন্তু কেসাস নেয়ার পূর্বেই উভয় গোত্র মুসলমান হয়ে যায়। তখন তারা প্রতিজ্ঞা করে যে, আমাদের একজন নারী হত্যার করণে আমরা তাদের একজন পুরুষ হত্যা করব এবং একজন গোলামের পরিবর্তে একজন স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করবো তখন এই আয়াত নাজিল হয়।

ইসলামী অপরাধ আইনে তিন ধরণের অপরাধের কথা বলা হয়েছে। যথা -

১। কিসাস (অনুরুপ প্রতিশোধ),
২। হুদুদ (আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি),
৩। তা’যির (ভীতি প্রদর্শন মূলক শাস্তি)।

এসকল শাস্তির মূল উদ্দেশ্য হলো - (১) অপরাধীকে শোধরানো, (২) ক্ষতিগ্রস্থদের সান্তনা এবং (৩) অন্যান্যদেরকে এ জাতীয় কাজে অনুৎসাহিত করা।

কিসাসের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন," হে ঈমানগারগণ, তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কিসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়ে, তাবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে তার জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। আর হে বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্নগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে জীবন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর"। (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৭৮-১৭৯)

কিসাসের ব্যাপারে আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা আরো বলেন," আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম" (সূরা মায়েদাহ, আয়াত - ৪৫)।

কিসাস মূলতঃ কয়েকটি অপরাধকে অন্তর্ভুক্ত করে -

১। হত্যা (ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত উভয়ই) ।
২। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানবতা বিরোধী অপরাধ যা মৃত্যু কিংবা মৃত্যুর কারণ হতে পারে ।
৩। ভুলকৃত হত্যা ।
৪। ভূলক্রমে মানবতা বিরোধী এমন অপরাধ যা মৃত্যু কিংবা মৃত্যুও কারণ হতে পারে।

উক্ত আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যেমন -

১। ন্যায় বিচার সবার জন্য।
২। ক্ষতিগ্রস্থদের অধিকার আছে বৈধ উপায়ে প্রতিশোধ নেবার ।
৩। সমবস্থার প্রতিশোধের বাইরেও শর্তসাপেক্ষে টাকা ও সম্পদের ক্ষতিপুরুণও চাইতে পারবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি কিংবা তার উত্তরাধিকারীরা।
৪। ন্যায় বিচার অবশ্যই আল্লাহর দেয়া বিধান মোতাবেক হতে হবে।
৫। আল্লাহর দেয়া বিধান উপেক্ষাকারীদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি ।
৬। কিসাসের মধ্যেই অন্যদের জীবনের নিরাপত্তা রয়েছে।


ছবি - daily-bangladesh.com

এখানে কিন্তু কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে বা মনে রাখতে হবে - তা হলো -

১। কিসাসের শাস্তি কিন্তু কোন ব্যক্তি দিতে পারবে না। এটির মূল দায়িত্ব দেশের সরকার বা বিচার ব্যবস্থার উপরে (যে কোন অন্যায়ের শাস্তি এবং বিচারের ভার রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের এবং দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক এবং আইনের সকল বিধি-বিধান অনুসরন পূর্বক - যথা - অপরাধীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, আইনী সাহায্য, পক্ষ-বিপক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন,বিচারে পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং আপিল করার সুযোগ এবং সবশেষে আদালত কর্তৃক প্রদেয় সাজার বিরুদ্ধে আপিল বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাজা মওকুফ বা বহাল রাখা ) পরেই তা কার্যকর।

২। প্রত্যেক অপরাধেরই শাস্তি হতে হবে। এটি এমন না যে, আপনজনেরা শাস্তি পাবে না কিন্তু অন্যরা পাবে। অর্থাৎ কোন বৈষম্য করা যাবে না ।

৩। অনুরুপভাবে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির অধিকার আছে প্রতিশোধ নেবার ।

৪। দিয়্যতের (টাকা বা সম্পদের বিনিময়ে প্রতিশোধ) ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি আগে থেকেই থাকতে হবে ।

৫। অপরাধী যদি ক্ষতিপুরুণ দিতে অসমর্থ হয় তাহলে তার পরিবার এবং পরিবার অসমর্থ হলে সমাজের উপর, এমনকি পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রের উপরেও বর্তাবে ।

৬। যে কোন ক্ষতিপুরুণ অবশ্যই নির্ধারিত নিয়ম-নীতির মাধ্যমে এবং বৈধ উপায়ে আদায় করতে হবে। এটি ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠির সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়ে বরং বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত হবে।


এখানে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে, হত্যাকারীকে হত্যার মধ্যে দিয়ে কিভাবে জীবনকে বাঁচানো যায়? উত্তরে বলা যেতে পারে -

১। যখন কোন অপরাধী ঠিক সমপরিমাণ শাস্তি পাবে তখন সমাজের অন্য কেউ ঐ অপরাধে জড়াতে চাইবে না এটাই মানব প্রকৃতি। সুতরাং একজনের মৃত্যুদন্ডের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের অনেকের জীবনকে নিরাপদ করা সম্ভব হবে।

২।যদি " হাতের বিনিময়ে হাত", " পায়ের বিনিময়ে পা ", " চোখের বিনিময়ে চোখ ", বা অন্য কোন অঙ্গের বিনিময়ে যদি অনুরুপ শাস্তি অপরাধীকে দেয়া যায় তাহলে ঐ অপরাধী সমাজের জন্যে ন্যায় বিচারের একটি জীবন্ত শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে। তখন অন্যান্যরা সেই কাজের ভয়াবহতা সরাসরি অনুভব করবে এবং এই ধরণের কোন অন্যায়ের সাথে কখনও সম্পৃক্ত করতে চাইবে না।

পরিশেষে বলা যায়, সত্যিকার অর্থেই যদি ইসলাম নির্দেশিত মৃত্যু ও এতদসংক্রান্ত কোন অপরাধের জন্যে সমপরিমাণ প্রতিশোধ (কিসাস) অপরাধী থেকে নেয়া যায় তাহলে বিশ্বজিত কিংবা রিফাতের মতো আর কেউ দূর্ঘটনার স্বীকার হবে না এবং সমাজ থেকে মানুষ হত্যার মত জঘন্য কাজ করার আগে সবাই দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে।

এ ব্যাপারে হাদীসের শিক্ষা

হত্যাকাণ্ড মারাত্মক বড় অপরাধ। কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম হত্যাকাণ্ডের বিচার-ফয়সালা করা হবে। হত্যাকাণ্ডের পরিণাম সম্পর্কে হাদিসে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। তাহলো -

১।রাসুল (সাঃ) বলেছেন, " কেয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথমে যে বিষয়ে ফয়সালা হবে; তাহলো রক্তপাত বা হত্যা" (বুখারি শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিশকাত শরীফ)।

২। প্রিয়নবি রাসুল (সাঃ) বলেছেন, " একজন মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে যে পর্যন্ত না সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়"। (বুখারি শরীফ, মিশকাত শরীফ)

৩। রাসুল (সাঃ) বলেছেন," নিরাপরাধ মানুষকে হত্যার অপরাধে আল্লাহ তাআলা সব অপরাধীকে এক সঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন"।

৪। অন্য হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,"একজন মুমিনের রক্তের মূল্য কাবা ঘরের চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদার"

৫। বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সাঃ) মুমিন নিরাপরাধ ব্যক্তির রক্তের মূল্যের ব্যাপারে নসিহত করে বলেছেন, " ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানের সময়, মাস ও স্থান যতবেশি মূল্যবান; আল্লাহর কাছে নিরাপরাধ মুমিন ব্যক্তির রক্ত আরও বেশি মূল্যবান"।

নিরাপরাধ মানুষ হত্যার পরিণাম

নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা বা রক্তপাত করায় ৫টি শাস্তির ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যার শাস্তি যে কত জঘন্য তা প্রমাণেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেছেন। আয়াতের তাফসিরে হত্যার ভয়াবহ শাস্তির কথাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যার একটি শাস্তির কথা উল্লেখ করাই যথেষ্ট ছিল। তাহলো-

> হত্যার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম।

> হত্যাকারী জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবেন।

> আল্লাহ হত্যাকারীর ওপর রাগান্বিত হবেন।

> আল্লাহ হত্যাকারীর প্রতি লানত তথা অভিশাপ দেবেন।

> হত্যাকারীর জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি।


ছবি - mandaldebjyoti.com

হত্যার প্ররোচক কারণ হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে ইসলাম। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,"তোমরা একে অপরের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে পড়ো না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইকে তিনদিনের বেশি ত্যাগ করা হালাল নয়"। (সহিহ বোখারি শরীফ )।


ইসলাম কোন অবস্থায়ই অন্যায় হত্যাকাণ্ডে সমর্থন করেনা । হত্যার মতো জঘন্য কবিরা গোনাহ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখতে হবে। হত্যাকাণ্ডের গোনাহের কথা তুলে ধরতে হবে। হত্যাকাণ্ড যে হারাম বা কবিরা গোনাহ, তা ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার করা মানুষের ঈমানি দায়িত্ব।মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হত্যার মতো জঘন্য কবিরাহ গোনাহ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন এবং কুরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সুরা নিসার ৯৩ আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোন মুসলমানকে হত্যা করলে,এখানে মানুষকে বলা হয় নাই।

হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না।
কুরআন ৫ঃ৫১
মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন।
কুরআন ৩ঃ২৮
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা অধিক ভয়াবহ। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে।
কুরআন ৩ঃ১১৮
তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ্র পথে হিজরত করে চলে আসে। অত:পর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।
কুরআন ৪ঃ৮৯
যারা মুমিনদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান চায়? অথচ যাবতীয় সম্মান আল্লাহর।
কুরআন ৪ঃ১৩৯
হে মুমিনগণ, তোমরা মুমিনগণ ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহর জন্য তোমাদের বিপক্ষে কোন স্পষ্ট দলীল সাব্যস্ত করতে চাও?
কুরআন ৪ঃ১৪৪
হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।
কুরআন ৫ঃ৫৭
আর তুমি পরিত্যাগ কর তাদেরকে, যারা নিজদের দীনকে গ্রহণ করেছে খেল-তামাশা রূপে এবং প্রতারিত করেছে যাদেরকে দুনিয়ার জীবন। আর তুমি কুরআন দ্বারা উপদেশ দাও, যাতে কোন ব্যক্তি তার কৃতকর্মের দরুন ধ্বংসের শিকার না হয়, তার জন্য আল্লাহ ছাড়া নেই কোন অভিভাবক এবং নেই কোন সুপারিশকারী। আর যদি সে সব ধরণের মুক্তিপণও দেয়, তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। এরাই তারা, যারা ধ্বংসের শিকার হয়েছে তাদের কৃতকর্মের দরুন। তাদের জন্য রয়েছে ফুটন্ত পানীয় এবং বেদনাদায়ক আযাব, যেহেতু তারা কুফরী করত।
কুরআন ৬ঃ৭০
মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে।
কুরআন ৬০ঃ১৩

ধর্মদিয়ে না মানবতা দিয়ে প্রতিবাদ করুন।মক্কা বিজয়ের পর পেগানদের একটা অনশনই দেয়া হয়েছে,হয় সত্য ধর্ম গ্রহন কর নয়তো মর আর ইহুদি ও খৃষ্টানদের জন্য দেয়া হয় ,হয় সত্য ধর্ম গ্রহন কর নয়তো করজোড়ে জিজিয়া কর দাও।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:২১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুলইসলাম০৬০৪ ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

বিভিন্ন আয়াত থেকে এটাই বুঝা যায় যে, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি ঐ সময়ই হবে, যখন ব্যক্তির সেখানে ইচ্ছা বা এখতিয়ার থাকবে। কিন্তু যখন ভয়-ভীতি বা সমস্যা থাকবে, তখন তাদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি ইসলাম শর্তসাপেক্ষে দিয়েছে। তা হচ্ছে, যতটুকু করলে তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে।

মুসলিমদের নিজস্ব রাষ্ট্র ও তার বৈশিষ্ট্যপুর্ণ কার্যাবলী সংরক্ষণের স্বার্থে ইসলাম এ নির্দেশও দিয়েছে যে, ইসলামী আইনে অবিশ্বাসী ও বিদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক একটি বিশেষ সীমার বাইরে এগিয়ে নেয়ার অনুমতি মুসলিমদের দেয়া যায় না। কারণ, এতে ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি যুক্তিপুর্ণ, সঙ্গত ও জরুরী ব্যবস্থা। এতে ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই হেফাজত হয়।

যে সব অমুসলিম মুসলিম রাষ্ট্রের বাসিন্দা কিংবা মুসলিমদের সাথে মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ, তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষনের জন্যে জোরদার নির্দেশাবলী ইসলামী আইনের গুরুত্বপুর্ণ অংশ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ " সাবধান! যে ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের প্রতি অত্যাচার করে কিংবা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তার উপর সামর্থ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয় অথবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার কাছ থেকে কোন জিনিস গ্রহণ করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি তার পক্ষ থেকে উকিল হবো "। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং - ৩০৫২)

এসব উদারতার সাথে সাথে মুসলিমদের নিজস্ব সত্তার হেফাযতের স্বার্থে এ নির্দেশও দেয়া হয়েছে যে, ইসলাম ও মুসলিমদের শক্রদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু কিংবা বিশ্বস্ত মুরুব্বীরূপে গ্রহণ করো না।

ইসলাম বিশ্বব্যাপী করুণার ছায়াতলে মুসলিমগণকে অমুসলিমদের সাথে সহানুভুতি, শুভেচ্ছা, মানবতা ও উদারতার অসাধারণ নির্দেশ দিয়েছে। এটা শুধু মৌখিক নির্দেশই নয়; বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ একে কার্যে পরিণত করেও দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মুসলিমদের নিজস্ব রাষ্ট্র ও তার বৈশিষ্ট্যপুর্ণ কার্যাবলী সংরক্ষণের স্বার্থে ইসলাম এ নির্দেশও দিয়েছে যে, ইসলামী আইনে অবিশ্বাসী ও বিদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক একটি বিশেষ সীমার বাইরে (রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বা গোপনীয় ও সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করতে নিষেধ করা হয়েছে ) এগিয়ে নেয়ার অনুমতি মুসলিমদের দেয়া যায় না।তবে সাধারন ভাবে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৭

নতুন বলেছেন: আপনি এই পোস্টে মানুষ হত্যার বিপক্ষে এতো কারন বললেন।

আপনি একটা ঘটনার কথা বলতে পারি যেটার পক্ষে আপনি কথা বলবেন। আপনি বলবেন যে ঐ ৮০০-৯০০ মানুষ হত্যা জায়েজ ছিলো। =p~ =p~ =p~ =p~

যদি জানতে চান তবে্ব লতে পারি ;)

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৩১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নতুন ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

সঠিক তথ্য জানতে চাচছি । দয়া করে শেয়ার করুন ।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: আমাকে জেনারেল করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে যেন আমাকে আর জেনারেল না করা হয় তাই ধর্মীয় পোষ্ট গুলো থেকে দূরে থাকব।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:২৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

আপনাকে জেনারেল করা হয়েছে জেনে খারাপ লাগল। আশা করি খুব শীঘ্রই আপনার বাঁধা অপসারিত হবে।

আর শুধু ধর্মীয় পোষ্ট নয় ভাই, যে কোন বিষয়ে বিতর্ক এড়িয়ে চলা এবং আমাদের সতর্কতার সাথে মন্তব্য করা উচিত।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:০০

বিটপি বলেছেন: সূরা আলে ইমরানের ১১৮ আরবী আয়াতঃ
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡا بِطَانَۃً مِّنۡ دُوۡنِکُمۡ لَا یَاۡلُوۡنَکُمۡ خَبَالًا ؕ وَدُّوۡا مَا عَنِتُّمۡ ۚ قَدۡ بَدَتِ الۡبَغۡضَآءُ مِنۡ اَفۡوَاهِهِمۡ ۚۖ وَ مَا تُخۡفِیۡ صُدُوۡرُهُمۡ اَکۡبَرُ ؕ قَدۡ بَیَّنَّا لَکُمُ الۡاٰیٰتِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۱۱۸﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা অধিক ভয়াবহ। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে। আল-বায়ান
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদের লোক ছেড়ে অন্য কাউকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, কারণ তারা তোমাদেরকে নষ্ট করতে ত্রুটি করবে না, তারা কেবল তোমাদের দুর্ভোগ কামনা করে, বস্তুতঃ তাদের মুখেও শত্রুতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রাখে তা আরও ভয়ঙ্কর, আমি তোমাদের কাছে তাদের লক্ষণগুলো স্পষ্ট করে দিলাম, যদি তোমরা অনুধাবন কর। তাইসিরুল
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা নিজেদের সম্প্রদায় ব্যতিরেকে অন্য কেহকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করনা, তারা তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সংকুচিত হবেনা; এবং তোমরা যাতে বিপন্ন হও তারা তা’ই কামনা করে; বস্তুতঃ তাদের মুখ হতেই শত্রুতা প্রকাশিত হয়, এবং তাদের অন্তর যা গোপন করে তা আরও গুরুতর; নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করছি, যেন তোমরা বুঝতে পার। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, do not take as intimates those other than yourselves, for they will not spare you [any] ruin. They wish you would have hardship. Hatred has already appeared from their mouths, and what their breasts conceal is greater. We have certainly made clear to you the signs, if you will use reason. Sahih International

নুরূল ইসলা টাইপের বুড়া ছাগলেরা এ ধরণের বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী অনুবাদ কোথায় পায়? এদের কাছে কারা কুরআনের ফেব্রিকেটেড আয়াত সরবরাহ করে, জানা দরকার।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বিটপি , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

বিভিন্ন আয়াত থেকে এটাই বুঝা যায় যে, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি ঐ সময়ই হবে, যখন ব্যক্তির সেখানে ইচ্ছা বা এখতিয়ার থাকবে। কিন্তু যখন ভয়-ভীতি বা সমস্যা থাকবে, তখন তাদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি ইসলাম শর্তসাপেক্ষে দিয়েছে। তা হচ্ছে, যতটুকু করলে তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে।

মুসলিমদের নিজস্ব রাষ্ট্র ও তার বৈশিষ্ট্যপুর্ণ কার্যাবলী সংরক্ষণের স্বার্থে ইসলাম এ নির্দেশও দিয়েছে যে, ইসলামী আইনে অবিশ্বাসী ও বিদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক একটি বিশেষ সীমার বাইরে এগিয়ে নেয়ার অনুমতি মুসলিমদের দেয়া যায় না। কারণ, এতে ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি যুক্তিপুর্ণ, সঙ্গত ও জরুরী ব্যবস্থা। এতে ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই হেফাজত হয়।

যে সব অমুসলিম মুসলিম রাষ্ট্রের বাসিন্দা কিংবা মুসলিমদের সাথে মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ, তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষনের জন্যে জোরদার নির্দেশাবলী ইসলামী আইনের গুরুত্বপুর্ণ অংশ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ " সাবধান! যে ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের প্রতি অত্যাচার করে কিংবা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তার উপর সামর্থ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয় অথবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার কাছ থেকে কোন জিনিস গ্রহণ করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি তার পক্ষ থেকে উকিল হবো "। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং - ৩০৫২)

এসব উদারতার সাথে সাথে মুসলিমদের নিজস্ব সত্তার হেফাযতের স্বার্থে এ নির্দেশও দেয়া হয়েছে যে, ইসলাম ও মুসলিমদের শক্রদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু কিংবা বিশ্বস্ত মুরুব্বীরূপে গ্রহণ করো না।

ইসলাম বিশ্বব্যাপী করুণার ছায়াতলে মুসলিমগণকে অমুসলিমদের সাথে সহানুভুতি, শুভেচ্ছা, মানবতা ও উদারতার অসাধারণ নির্দেশ দিয়েছে। এটা শুধু মৌখিক নির্দেশই নয়; বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ একে কার্যে পরিণত করেও দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মুসলিমদের নিজস্ব রাষ্ট্র ও তার বৈশিষ্ট্যপুর্ণ কার্যাবলী সংরক্ষণের স্বার্থে ইসলাম এ নির্দেশও দিয়েছে যে, ইসলামী আইনে অবিশ্বাসী ও বিদ্রোহীদের সাথে সম্পর্ক একটি বিশেষ সীমার বাইরে (রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বা গোপনীয় ও সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করতে নিষেধ করা হয়েছে ) এগিয়ে নেয়ার অনুমতি মুসলিমদের দেয়া যায় না।তবে সাধারন ভাবে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৯

জুল ভার্ন বলেছেন: এই শান্তির দেশে গত পনেরো বছরে যতগুলো অঘটন ঘটেছে তার সবগুলোই পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয়েছে, যার পিছনে আছে ক্ষমতার রাজনীতি। আর কিছু বলার নাই।

আপনার লেখাটা ভালো হয়েছে।

ধন্যবাদ।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জুল ভার্ন ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

আপনার নিকট লেখা ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল।

ভাই, আমরা সবাই দেখি-জানি ধর্মকে সারা দুনিয়াতে কিছু মানুষ ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হিসাবে। আর এসব ব্যাপারে ধর্মকে ব্যবহারের ফলে ধর্মের ই দোষ হয় আর প্রকৃত অপরাধী আড়ালেই থেকে যায়।এসব নিয়ে কিছু বলা থেকে না বলাই নিরাপদ।

তবে আমাদের সকলকে সবসময় ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে প্রার্থক্য বুঝার এবং অন্যায় বর্জন ও ন্যায়ের পথে থাকার চেষ্টা করা উচিত।

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৩০

নগরবালক বলেছেন: বৃক্ষ তোমার নাম কি , ফলে পরিচয়। ধর্ম যদি ভালই হতো তাহলে তার ফল ও ভাল হতো, ধর্মের একটা ভাল দিক দেখান। ধ্ররম আবিস্কারের পর থেকে শুধু মারামারি আর হানাহানিই দেখেছি। মধ্যযুগের ক্রুসেড , জিহাদ , এখনকার হেফাজত, তালেবান, সিরিয়া আফগানিস্তান । ধর্ম শুধু ভয় দেখায়, যে এই করো ওই করো নাহলে পরকালে দোজখে যাবা , এখন না খেয়ে থাকো জিহাদ করো তাহলে পরকালে ৭২ হূর পাবা।
যে ধর্ম সম্পর্কে জানি তার উদাহরন দিলাম। আরো অনেক গুলো ধর্ম আছে সেগুলো তেও ভাল কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। ধর্ম আমাদের কম্পিউটার দেয় নি, গাড়ি দেয় নি, বাজারে পন্য দেয় নি , টাকা দেয় নি, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ দেয় নি , শুধু দিয়েছে ভয়, জুজুর ভয়। তাই সংখ্যলঘুদের উপরে হামলা হলে এই যে আপনারা ইনিয়েবিনিয়ে ধর্মের সৌন্দর্য দেখান, যে কিতাবে এই লিখা আছে ওই লিখা আছে বাস্তবে পেপার পত্রিকায় তো তার ফলাফল দেখি না। কোনটা বিশ্বাস করবো যা কিনা কিতাবে লিখা আছে নাকি যা বাস্তবে হয়ে যাচ্ছে ।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৫২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নগরবালক ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

ভাই, ধর্ম মানুষকে মানবিক হতে বলে। চলতে বলে ন্যায়ের পথে , পরিত্যাগ করতে বলে অন্যায়কে । ধর্ম মানুষকে সতর্ক করে খারাপ কাজের পরিণাম সম্পর্কে আর অবহিত করে ভাল কাজের পুরস্কার সম্পর্কে ।ধর্ম মানুষকে বিদিবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনের যাপনের কথা বলে যেখানে নিজের অধিকার ভোগের সাথে সাথে কর্তব্য কর্ম সম্পর্কেও তাকে বলা হয়ে থাকে । ধর্মে অপর মানুষকে সম্মান করতে এবং দেশের প্রচলিত আইন কানুন মেনে চলতে বলে।

এখন আপনি যদি সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া,ইরাকের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন সেখানে সমস্যার শুরু বা সমস্যা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বাহির থেকে এবং যার জন্য তারা ধর্মকে অযুহাত হিসাবে ব্যবহার করেছে। এর দায় ধর্মের নয় ,এর দায় ব্যক্তির ।

ধর্ম মানুষকে বলেছে, জানতে-বুঝতে-চেষ্টা করতে । আর মানুষের এই জানা বুঝার চেষ্টার পরিণতিই বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার।ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক সাংঘর্ষিক নয় পরিপূরক।

এখন বাস্তবে যা হচ্ছে তা আমাদের মানুষের দায় ধর্মের নয় ।কারন মানুষ ধর্মের অপব্যবহার করে ।

আর ভাই, ইসলামের (কোরআন ও হাদীসে ) কোথাও বলা নেই কাউকে পরকালে ৭০ টি হুর দয়া হবে । এও একটা প্রচারনা মাত্র।

৭| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৪১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দর বলেছেন। গোয়াল নষ্ট করার জন্য ১টি দুষ্টু গরুই যথেষ্ট। ধর্মে যাদের চুলকানী তারা এর ভাল দিক খুজে পারে কি করে ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৫৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

সমস্যা ত ভাই এখানেই । আমরা সবাই ধর্মকে ব্যবহার করতে চাই নিজেদের স্বার্থে এবং কোরআন - হাদীসের ব্যাখ্যা করি
অসম্পূর্ণ ভাবে বা ততটুকু যেটাতে আমাদের ফায়দা হতে পারে। অথচ যেকোন কিছুর অংশবিশেষ বা অসম্পূর্ণ অবস্থা পূর্ণ ও সঠিক তথ্য দিতে পারেনা।

কোরআন - হাদীসের ব্যাখ্যায় আগের পরের আয়াত-হাদীস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা অনেকেই আগে-পরের আয়াতকে বিবেচনায় না নিয়ে অংশবিশেষ নিয়ে সমালোচনায় মেতে উঠি যা প্রকৃত বিষয়কে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয় । সমস্যা এটাই।

৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৫৬

নতুন বলেছেন: বানু কুরাইজার ৭০০-৮০০ মানুষ হত্যা করা হয়েছিলো।

যদিও রাসুল সা: এই রায় দিন নি। কিন্তু উনি সমর্থন করেছিলো।

তাদের অপরাধ ছিলো চুক্তি ভঙ্গ এবং ষড়যন্ত্র। কিন্তু একটা গোত্রের সবাই তাতে যুক্ত থাকতে পারেনা। তাদের বালেক পুরুষকে হত্যা, নারী শিশু এবং তাদের সম্পত্তি ভাগ করে নেওয়া কতটুকু ঠিক এটা আপনি হাদিস এবং কোরানের আলোকে আমাদের বোঝাতে পারেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Invasion_of_Banu_Qurayza

Quran
According to the 14th century commentator Ibn Kathir, the event is referenced in the Quran:

And those of the People of the Book who aided them - Allah did take them down from their strongholds and cast terror into their hearts. (So that) some ye slew, and some ye made prisoners.[Quran 33:26]

Ibn Kathir's commentary of the verse in his Tafsir is as follows:

Then the Messenger of Allah commanded that ditches should be dug, so they were dug in the earth, and they were brought tied by their shoulders, and were beheaded. There were between seven hundred and eight hundred of them. The children who had not yet reached adolescence and the women were taken prisoner, and their wealth was seized.[2]
[Ibn Kathir, on Quran 33:26]

According to Ibn Kathir, Quran 33:09 and 33:10 is also related to the Banu Qurayza.[25]

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:১০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ নতুন ভাই, আপনার প্রতিমন্তব্যের ও শেয়ারের জন্য ।

আপনি বলেছেন, " বানু কুরাইজার ৭০০-৮০০ মানুষ হত্যা করা হয়েছিলো।যদিও রাসুল (সাঃ )এই রায় দিন নি। কিন্তু উনি সমর্থন করেছিলো। বা “নিরপরাধ বানু কুরাইযা ইহুদী গোত্রের সব পুরুষদের বিনা কারণে কেবল ইহুদী-বিদ্বেষীতার কারণে মুহাম্মাদ (সাঃ) হত্যা করেন।” এটা আপনার এবং ইসলাম বিরোধী অনেকেরই অভিযোগ । আসুন দেখি, আসলে কি এবং কেন ঘটেছিল সেই ঘটনা -

- মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ আন্তর্জালিক সূত্র, যেমন উইকি’র Timeline of anti-Semitism ও History of anti-Semitism, কিংবা ADL (Anti Defamation League) এর An Abridged History of Anti-Semitism এর তালিকাতে ইহুদীদের বিরূদ্ধে ঘটে যাওয়া হাজার বছরের ইতিহাসে’র নথিতেও নেই বানু কুরাইযা’র ঘটনা।এই তালিকাগুলোতে বানু কুরাইযার ঘটনা কেন নেই? তার কারণ অনুমান করতে তেমন আয়াস পেতে হয়না। কারণটা এই যে, বানু কুরাইযার ঘটনা নির্বিচার গণহত্যা নয়, বরং যুদ্ধ-প্রাক্কালে ঘটা বিশ্বাসঘাতকতার স্বাভাবিক পরিণতি।

আবার তথাকথিত সুশীল গোষ্ঠীর ও মানবতার বুলি আওড়ানোদের কাছে মুসলিমরা চক্ষুশূল হলেও, তাদের অন্তর্জ্বালার মূল কারণ রাসুল (সাঃ)। তারা চলনে-বলনে, শ্বাসে-প্রশ্বাসে, অহর্নিশ একনিষ্ঠ ও একাগ্র চিত্তে নিয়োজিত আছেন ইসলাম ও বিশেষত এর নবীকে (সাঃ) হেয় প্রতিপন্ন করায় অভিপ্রায়ে বানু কুরাইযার ঘটনাকে লাইম লাইটে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন ।

আসুন দেখি বানু কুরাইযার সংক্ষিপ্ত ঘটনা -

রাসুল (সাঃ) মদিনাতে আসার পরে মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের নিয়ে এক অভিনব সাধারণতন্ত্র গড়ে তোলেন। বিপরীত চিন্তা, রুচি ও ধর্মাভাব সম্পন্ন মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের দেশের সাধারণ স্বার্থরক্ষা ও মঙ্গলের জন্যে একটি রাজনৈতিক জাতিতে পরিণত করার জন্যে তিনি একটি সনদ তৈরী করেন যা মদিনা সনদ নামে পরিচত। সনদে তিন পক্ষই স্বাক্ষর করেন। এই অভিনব ও অশ্রুতপূর্ব চুক্তি বা সনদের কিছু ধারা নীচে দেয়া হলো-

১। ইহুদী ও মুসলিমরা এক জাতি (একই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বসবাসকারী জাতি)।
২। এই সনদের অন্তর্ভূক্ত কোন গোত্র শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবার সমবেত শক্তি নিয়ে তা প্রতিহত করতে হবে।
৩। কেউ কোরাইশদের সাথে কোনো রকমের গুপ্ত সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হবে না ও তাদের সঙ্কল্পকে সাহায্য করবে না।
৪। মদিনা আক্রান্ত হলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সবাই মিলে যুদ্ধ করবে এবং সম্প্রদায়গুলো নিজেদের যুদ্ধব্যয় নিজেরা বহন করবে।
৫। ইহুদী-মুসলিম সহ চুক্তিবদ্ধ সকল সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম পালন করবে, কেউ কারুর ধর্ম-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না।

মদিনার সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে চুক্তি/সন্ধি অনুসারে কুরাইযা সহ সব ইহুদী গোত্র প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল যে তারা মুসলিমদের কোন শত্রুকে কোনরকম সাহায্য করবেনা। কোন বহিঃশত্রু মদিনা আক্রমণ করলে তারাও মুসলিমদের মতো স্বদেশ রক্ষার্থে নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করবে। কিন্তু সন্ধির শর্ত ও স্বদেশের স্বাধীনতা ও সম্মানকে উপেক্ষা করে কুরাইযা সহ বাকী ইহুদী গোত্র একাধিকবার শত্রুপক্ষের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বানু কুরাইজার ইহুদীদের এই অপরাধ আগে অন্তত একবার ক্ষমা করে দেয়া হয়। ভেঙ্গে ফেলা প্রতিজ্ঞাপত্র উহুদ যুদ্ধের পরে কুরাইযা গোত্র পুনর্বহাল করে এই শর্তে যে, এরপরে আর কখনোই তারা মুসলিমদের শত্রুদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ ও সাহায্য করবেনা। ফলে তখন তাদের বিনাদণ্ডে ও বিনা ক্ষতিপূরণে মাফ করে দেয়া হয়। কিন্তু খন্দকের যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রথম সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা এই সন্ধিপত্র ছিঁড়ে ফেলে শত্রুদলে যোগদান করে। কুরাইযা গোত্রের এই বিদ্রোহের খবর পাওয়া মাত্র আওস ও খাযরায গোত্রের প্রধান সাদ বিন উবাদা (রাঃ) ও সাদ বিন মুয়াদ (রাঃ) সহ আর কিছু সাহাবীকে মুহাম্মাদ (সাঃ) খন্দকের প্রান্ত থেকে কুরাইযা পল্লীতে পাঠান। তাঁরা কুরাইযা পল্লীতে উপস্থিত হয়ে আগের পৌণঃপুনিক চুক্তি ভাঙ্গার কথা তুলে ধরেন ও তাদেরকে এই বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু আহযাবে মুসলিমদের পরাজয় সুনিশ্চিত ও খায়বার থেকেও ইহুদী দল মদিনা আক্রমণে আসছে – এই দুই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তারা উল্টা মুসলিমদের গালাগালি করা শুরু করে দেয়। তাদের দলপতি কাব বিন আসাদ বলে ওঠে, “মোহাম্মদ কে? আমরা তাকে চিনি না। আমরা কোনো সন্ধিপত্রের ধার ধারি না। তোমরা চলে যাও।”
এরপরে তারা খন্দকের যুদ্ধে যোগদান করে। আর কুরাইযা বাহিনীর হাত থেকে মদিনার নারী ও শিশুদের রক্ষা করার জন্যে একদল মুসলিমকে মদিনার দক্ষিণ দিকে নিয়োজিত করা হয়েছিল।

বানু নাদির গোত্রের হোয়াই-বিন-আখতাব মদিনা থেকে বিতাড়িত হবার পরে খাইবারে আসন গেড়ে বসে। সে কুরাইযা গোত্র প্রধান কাব-বিন-আসাদকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে আরবের সকল পৌত্তলিক এখন একত্রিত। গাতাফান আর নজদের পৌত্তলিকরাও সাথে যোগ দিয়েছে। আর ঐদিকে খাইবার থেকে ইহুদীদের কয়েক হাজার সদস্যের বাহিনী খুব তাড়াতাড়ি এসে যোগ দিতে যাচ্ছে আহযাবে। সুতরাং এটাই মুসলিমদের সমূলে উৎপাটন করার সুবর্ণ সুযোগ। কাব প্রথমে নিমরাজী থাকলেও শেষে খন্দকে আহযাব পক্ষে যোগ দিতে রাজী হয়।

খন্দক থেকে ফিরে এসে রাসুল (সাঃ) মদিনায় ফিরে যখন গোসল সারলেন তখন জীব্রাঈল (আঃ) এসে বানু কুরাইযা গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতার কথা রাসুল (সাঃ)-কে স্মরণ করিয়ে দেন, ও তার পরপরই মুসলিম বাহিনী কুরাইযা অভিমুখে রওয়ানা হয়। মুসলিম বাহিনী কুরাইযার দূর্গের সামনে এসে পৌঁছলে তারা দূর্গ-তোরণ থেকে রাসুল (সাঃ) ও তাঁর সহধর্মীনিদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকে। তাদের ধারণা ছিল খায়বার থেকে খুব তাড়াতাড়ি ইহুদী বাহিনী এসে পড়বে, আর তারপরে দুই ইহুদী বাহিনীর যৌথ আক্রমণে মুসলিমদের বিধ্বস্ত করে ফেলবে। মক্কার কোরাঈশরা যুদ্ধ ছেড়ে চলে গেছে বলে তারা বরং খুশীই ছিল, কেননা মদিনা প্রদেশের বিশাল সাম্রাজ্য এখন কেবল ইহুদীদের হয়ে যাবে।

এরপরে যথারীতি অনেকদিন দূর্গের মধ্যে অবরূদ্ধ থেকে যখন তারা দেখলো যে খায়বার থেকে ইহুদী বাহীনির আসার কোনোই সম্ভবনা নেই তখন তারা আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে রাসুল (সাঃ) এর কাছে আত্মসমর্পন না করে তারা তাদের পুরোনো মিত্র সাদ-বিন-মুয়াদের (রাঃ) কাছে নিজেদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেয়। সাদ (রাঃ) সিদ্ধান্ত দেন, " বানু কুরাইযা গোত্রের সকল যোদ্ধাদের প্রাণদণ্ড দেয়া হোক আর মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হোক "।

এখানে কয়েকটি বিষয় দেখেন,

" ১। কুরাইযা গোত্রের নিজেদের নির্বাচিত বিচারক ও প্রাক্তণ বন্ধুগোত্র প্রধান, সাদ বিন মুয়াদ (রাঃ) কুরাইযা গোত্রের কেবল যোদ্ধাদের কতলের নির্দেশ দেন নবী (সাঃ) নন।
২। কে কে যোদ্ধা তা ঠিক করার জন্যে সমবেত কুরাইযা গোত্রের লোকদের প্রতি আহবান জানানো হলে কিছু লোক তাঁর কাছে এসে তাদের যুদ্ধের বিরোধিতার কথা ব্যক্ত করলে রাসুল (সাঃ) তাঁদের ক্ষমা করে দেন ও পরে তারা ইসলাম গ্রহণ করেন।
৩। আহ্বানে সাড়া না দেয়া বাকী পুরুষরা যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হন ও তাদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গুপ্তাঙ্গে কেশ দেখে ছেড়ে দেয়া হয়।"

এছাড়াও ইতিহাস ও হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে বানু কুরাইযা গোত্রের প্রায় তিনশ লোককে যুদ্ধ করার অপরাধে হত্যা করার পরে বাকী অনেককে মদিনা ত্যাগ করার শর্তে ছেড়েও দেয়া হয় এবং সেই সংখ্যা কোনভাবেই ৭০০-৮০০-৯০০ নয়।

৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৩

নতুন বলেছেন: যাই হউক আপনি ৩০০ এর পযন্ত হত্যা জায়েজ বলে মানছেন। কিন্তু ইবনে কাথীরের হিসেবে ৭০০-৮০০

Ibn Kathir's commentary of the verse in his Tafsir is as follows:

Then the Messenger of Allah commanded that ditches should be dug, so they were dug in the earth, and they were brought tied by their shoulders, and were beheaded. There were between seven hundred and eight hundred of them. The children who had not yet reached adolescence and the women were taken prisoner, and their wealth was seized.[2]
[Ibn Kathir, on Quran 33:26]

সাজা রাসুল সা: দেন নি কিন্তু গর্ত খোদার কথা তিনি বলেছেন। তিনি অবশ্যই এই হত্যার জন্য কোন কিছুই করেন নাই।

ঐ যুদ্ধে কোন মুসলমানকে তারা হত্যা করেনাই। কিন্তু ফলাফল কি হয়েছিলো?

পুরা গোত্রের পুরুষ হত্যা করা হয়েছিলো। নারী শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিলো। তাদের সম্পত্তি ভাগ করে নিয়ে ছিলো।

তার মানে হইলো ঐ গোত্রকে পুরাই নিচিন্হ করা কয়েছিলো। তবে সেটার জন্য রাসুল সা: দায়ী করা ঠিক না। তিনি শুধু গর্ত করতে বলেছেন।

ভাই তখন মুসলামানদের ক্ষমতা দেখানোর দরকার ছিলো তাই এই রাজনিতিক হত্যা হয়েছিলো।

দরকার হলে অযুহাতের অভাব হয় না। B-))

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: নতুন ভাই, বিচারকের রায়ে যে বিচার হয়েছিল (বানু কুরাইজা কর্তৃকই তাদের পছন্দের বিচারক নির্ধারন করা হয়েছিল ) সে বিচারের রায়ই বাস্তবায়ন করা হয়েছিল । বিচারের রায়ে কোন সময়ই দু পক্ষকে খুশি বা সন্তুষ্ঠ করতে পারেনা । আর এটা কোনভাবেই রাজনৈতিক বা ধর্মীয় হত্যাকান্ড নয়। এটা বিচারিক রায় এবং চুক্তি ভংগ বা বিশ্বাসঘাতকতার সাজা, যা বিচারক কর্তৃক প্রদেয় এবং যারা এ ধরনের কাজে জড়িত ছিলনা তাদের কোন সাজা দেওয়া হয়নি ও যারা ভূল স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে তাদেরকেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।

সবসময় এবং আধুনিক যুগেও দু/তিন পক্ষের মাঝে কোন চুক্তি হলে সেই চুক্তি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা সবার থাকে এবং যে কোন পক্ষ সেই চুক্তি ভংগ করলে আইন অনুযায়ী তাদের সাজা দেওয়া হয়। এটা দুনিয়ার চলমান একটা প্রক্রিয়া।

১০| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৩৮

নতুন বলেছেন: যে কোন অযুহাতে দেশে হানা-হানী সৃষ্টি বা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা তা কতটা গ্রহনযোগ্য এবং এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভংগী বা নির্দেশনা কি ?

আপনি শিরোনাম দিয়েছেন যে কোন অযুহাতে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা কতটা গ্রহনযোগ্য???

আপনার কথাই বুঝতে পেরেছেন যে কিভাবে মানুষ হত্যা গ্রহনযোগ্য হয়?

উপরে ইবনে কাথিরের তফসিরটু পড়েছেন কি? ঐখানে রাসুল সা: গর্ত করতে বলেছেন।

তিনি রায় দেননি কিন্তু যেহেতু চুপ থেকেছেন সেটাই তার সমর্থন আছে।

তাফরিসে বলাহয়েছে যারা বালেগ হয়েছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। আপনি যেই ভাবে বলেছেন যে যারা জড়িত ছিলো না তাদের সাজা দেওয়া হয় নি তাতে মনে হচ্ছে পুরা ইনভেস্টিগেসন করে রায় দিয়েছিলো বিচারক।

আপনার চোখের সামনে ৭০০-৮০০ মানুষের হত্যার রায় দিলো আর আপনি বললেন যে সেটা আল্লাহের পছন্দের রায়ই হয়েছে তবে তাতে আপনার সমর্থন রয়েছে নয় কি?

এই পুরুষ গুলি, নারী শিশু গুলি কি পরে ইসলাম গ্রহন করতো না? তারা কি ভালো কাজ করতো না? অবশ্যই করতো।

এখন রায় যেহেতু রাসুল সা: দেন নি তিনি সরাসরি দোষী না।

কিন্তু ভাই আপনিও হাসবেন যদি আমি বলি শেখ হাসিনার সামনে বসে আবদুল কাদের ৭০০-৮০০ মানুষের ফাসির হুকুম দিলো আর হাসিনার কিছুই জানেন না। B-))

২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: নতুন ভাই, এ বিষয়ে :( কোন মন্তব্য নেই।

কারন কি ?

কারন,এখানে কিছু মানুষ (নবী সাঃ - সরকার প্রধান) - বিষয় (আল্লাহ-ফেরেশতা-ধর্ম) জড়িত,যাদের যে কোন একটি বা একজনের কাজ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা / তাদের কাজের বিচার করা বা তাদের ব্যাপারে ন্যায়-কিংবা অন্যায় বলার অধিকার এবং সুযোগ কোনটাই আমার নেই।

১১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩২

নতুন বলেছেন: ভাই কবি এখানেই নিরব :|

ধর্মভীরুতা ধর্মান্ধতা মানুষকে প্রশ্ন করতে অক্ষম করে তোলে।

আপনার মতন মানুষের যদি এই অবস্থা হয়। তবে যারা মূর্খ তাদের কি অবস্থা হতে পারে তাই চিন্তা করুন।

তাদের সামনে হক মাউলা বলে কিছু বললেই তারা সহজেই হামলার এমনকি হত্যার মতন কাজে যুক্ত হতে পারে।

এটাই ধর্মের অনেক বড় একটা সমস্যা।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:১০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: নতুন ভাই, ধর্মভীরুতা এক জিনিষ আর ধর্মান্ধতা আরেক জিনিষ।

"তাকওয়া" এ আরবী শব্দটির অর্থ আল্লাহ ভীতি বা আল্লাহ ভীরুতা ।

আল্লাহ ভীতি অর্থ এই নয় যে অপরাধীরা যেভাবে বিচারককে ভয় পায় সেভাবে শুধুমাত্র শাস্তির ভয়ে আল্লাহকে ভয় করা। তাকওয়ার মূল ভাব হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ও তার রাসুলের প্রতি ভালবাসা। আর এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। অর্থাৎ মনের ঐকান্তিক ইচ্ছায় আল্লাহ ও তার রাসুলের যাবতীয় আদেশ-নিষেধকে মেনে চলার বা যা থেকে আল্লাহ বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকা। আল্লাহ ও রাসলের প্রতি এই ভালবাসাই হচ্ছে সকল কিছুর মূল চালিকাশক্তি।

তাকওয়াকে এভাবে প্রকাশ করা যায় -

১। আল্লাহকে ভয় করতে হবে ভালবেসে।
২। আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা থেকে দূরে থাকতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর আইন না ভাঙ্গা, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে না যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আল্লাহ বারে বারে বলেছেন - মিথ্যা কথা না বলতে, সত্যি কথা বলতে, অন্যকে না ঠকাতে, ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে ইত্যাদি মেনে চলাই হচ্ছে আল্লাহরআইন মেনে চলা। আল্লাহকে ভালবেসে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, আল্লাহর অনুগ্রহের আশায় আমাদের জিহবা (অর্থাৎ কথা বা ভাষা), হাত (অর্থাৎ কাজ, সমাজ ও সংসারের প্রতি),মন ও মেধাকে সংযত করতে হবে। অর্থাৎ নিজেকে কথায়, কাজে, সমস্ত অন্যায় ও অসত্য থেকে শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য সংযত রাখতে হবে।
৩। অন্যায়, অসত্য ইত্যাদি থেকে নিজেকে সর্বদা বিরত রাখার ফলে ব্যক্তির চরিত্রে সৎগুণের জন্মলাভ করে, এই গুণাবলীই হচ্ছে ধর্মপরায়ণতার ভিত্তি। এরূপ ব্যক্তি সর্বান্তকরণে অসৎ ও অন্যায় পথ পরিহার করবে এবং নিজের জীবনে ন্যায়, সত্য ও কর্তব্যনিষ্ঠা, ধৈর্য্য প্রভৃতি গুণের প্রতিফলন ঘটাবে।

আবার, ঈমান বা আল্লাহতে (ধর্ম বিশ্বাস ) বিশ্বাস শুধুমাত্র একটি মৌখিক স্বীকারোক্তি মাত্র নয়। এটি এমন এক বিশ্বাস যা উৎসারিত হয় গভীর বোধ, অবিচল আস্থা, সেই আস্থা ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা থেকে-যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সর্বশক্তিমান আল্লাহর আদেশ-নির্দেশের প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনের বাস্তব চর্চা এবং নিঃস্বার্থ মানবসেবার মাধ্যমে। অর্থাৎ বান্দা আল্লাহর হুকুম বা আল্লাহর আইন মেনে চলবে (যথা-সত্য কথা বলে, ন্যায়ের জন্য জিহাদ করে, মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করা ইত্যাদি) কোন রকম প্রশ্ন ছাড়া।

সত্য কথা বলার অভ্যাস করা আল্লাহর হুকুম। আমাদের রাসূল (সাঃ) জীবনে কোনওদিন এমনকি নবুয়তের পূর্বেও একটিও মিথ্যা কথা বলেন নাই। এটাই হচ্ছে আমাদের সর্বপ্রথম এবং প্রধান সুন্নত এবং ফরজ। সত্যবাদীতা এক ধরণের অভ্যাস। এর থেকে যে চারিত্রিক গুণাবলীর জন্ম নেয় তা হচ্ছে সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি। আবার মিথ্যা বলাও একধরণের অভ্যাস। এর থেকে চরিত্রে যে সব দোষের সৃষ্টি হয়-তা হচ্ছে দূর্নীতিপরায়ণতা, অবিশ্বস্ততা, স্বার্থপরতা, অন্যকে ঠকানোর প্রবণতা ইত্যাদি। আত্মার উন্নতি লাভই হচ্ছে আধ্যাত্মিক সফলতার মূল কথা। সুতরাং যারা আল্লাহর কেতাবে বিশ্বাসী এবং তার রাসুলে বিশ্বাসী ও যারা সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করেন আল্লাহ্‌ তাদের আত্মিক উন্নতি দান করেন। কাজেই যে কোন ব্যাপারে নবী-রাসুল (সাঃ) এবং আল্লাহ যা বলেছেন তাই চূড়ান্ত এবং মুসলমানমাত্রই (ঈমান আনার পর ) তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কোন রকম প্রশ্ন ছাড়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.