নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ " - বিশ্ব ভূরাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কিংবা পরাশক্তিদের ক্ষমতায় কি কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে ? (৪র্থ পর্ব) ।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:০৪


ছবি - geology.com

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পেছনে রয়েছে নানা পক্ষের রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ। আর এই স্বার্থের জন্য প্রাণ দিতে হচ্ছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষকে আর ভূগতে হচছে সারা বিশ্বকে। এই হামলার ফলে প্রায় গুরুত্ব হারিয়ে বসা সামরিক জোট ন্যাটো আবারো কয়েক বছরের জন্য প্রাণ পেলো বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। নানা কারন,ঘটনা প্রবাহ ও চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলাতে ব্যর্থ হয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছেন এবং একমাসের মাথায় বড় কোন কিছু অর্জন ছাড়াই ইউক্রেন থেকে পিছু হটা শুরু করেছেন।পুতিনের পরাজয় এখন শুধু সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচছে এবং সাথে সাথে পুতিনের সহযোগী (যদিও খুব বেশী দেশ পুতিনের সাথে নেই এবং কেউই সরাসরি তাকে সহযোগীতা কিংবা সমর্থন করেনি) দের ও বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।এর শুরু হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতনের মধ্য দিয়ে।


ছবি - thefinancialexpress.com.bd

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কার্য-কারণ যা-ই থাকুক না কেন, তার জেরে বিশ্ব পরিস্থিতি এখন প্রবল জটিলতার মুখোমুখী হয়ে পড়েছে । আর এই পরিস্থিতির পারদ উঠানামা করছে বিশ্বের তাবত ছোট-বড় রাষ্ট্রে এবং যার যার নিজ নিজ দেশের স্বার্থের ভিত্তিতে। আবার সাধারনতঃ যে জিনিষ আমরা দেখি যে,"শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু" এ নীতিও এখন চলছেনা।এক জটিল অবস্থার মাঝে যাচছে বর্তমান বিশ্ব । রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রাশিয়া হারুক কিংবা জিতুক এ যুদ্ধের ফলে সারা দুনিয়ায় উত্তরোত্তর সেই জটিলতা আরো বাড়ারই আশঙ্কা রয়েছে। একান্ত বাধ্য না হলে সকলেই বোঝেন, স্বার্থ বিনা কেউ কাউকে ভালোবাসেন না, কোনো প্রেম হয়না। যেকোনো সম্পর্কই দেনা-পাওনার পোক্ত হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকে, অন্তত কূটনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে।


ছবি - news.sky.com

এ কথা দিনের আলোর মত সত্যি যে, যুদ্ধের বোমাবর্ষণের মতোই প্রকট ও বিকট হয়ে সবার সামনে ধরা দিচছে ভবিষ্যতের বিশ্ব ভূ-রাজনীতি ওলটপালটের ছবি। যুদ্ধের ঘনঘোের মাঝেও চাপা পড়ছে না পশ্চিম বিশ্বের সাথে রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সেতু ভেঙে পড়ার শব্দ। ইতিমধ্যেই রাশিয়া বিছিন্ন হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব থেকে , পতন হয়েছে রাশিয়ার অন্যতম মিত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের,চীন আছে আমেরিকা-ইউরোপের চোখ রাংগানির উপর। এদিকে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধে জেরবার রাশিয়ার ডলার-ইউরোর পরিবর্তে রুবলে গ্যাস বিক্রির চেষ্টার ফলে রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত সমুদ্র তলদেশ দিয়ে সংযুক্ত দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিমের মধ্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র মনে হয়। এই পাইপলাইনটি শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের অনেক দেশেরই জ্বালানি চাহিদা পূরণের মাধ্যম এবং রাশিয়ার মতে ইউরোপের ওপর প্রভাব খাটানোর হাতিয়ারও বটে। আর তাই, রাশিয়ার সাথে ইউরোপের সংঘাত যত বাড়বে, শক্তিক্ষেত্রেও বিশ্ব-সমীকরণের উলটপালট হওয়ার আশঙ্কাও তার সাথে সাথে বাড়বে। এখানে যে প্রশ্ন আসে, সেই শক্তিক্ষেত্রে বিশ্বে যে উলটপালট হবে তা থেকে চীন-ভারত বা বাকী বিশ্ব কি তার বাইরে থাকতে পারবে নাকি রাশিয়া- আমেরিকা যে কোন একজনের সাথে জড়িয়ে যাবে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনবিষয়ক জরুরি ভিত্তিতে ডাকা জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সাম্প্রতিক ভোটাভুটিতে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, আমেরিকাসহ গোটা পশ্চিমা বিশ্ব একঘরে করে দিয়েছে রাশিয়াকে। কিন্তু সত্যিই কি তা সম্ভব? কারণ রাশিয়ার এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতেও তো তাদের সাথে রয়েছে মহাশক্তিধর চীন এবং নিরব রয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক ও জনবহুল দেশ ভারত।তারপরেও বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন হচছে ও হবে। আসুন দেখি কি হতে পারে সেসব -

বিশ্বমঞ্চে ন্যাটো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে -

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ন্যাটো তার গুরুত্ব হারায়। ন্যাটো ছিল ওয়ারশ জোটের বিপরীত সামরিক জোট। সেই ওয়ারশ জোট আর নেই আর তাই বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধও নেই।ওয়ারশ জোটের বিলুপ্তির পর তাই ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তাও ছিল না, আমেরিকা-পশ্চিমারা শুধু তাদের ক্ষমতা দেখানোর জন্য এটাকে ধরে রেখেছিলেন। এখন রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার মধ্য দিয়ে ন্যাটো আবার চাঙা হবে এবং কয়েক বছর এ হামলাকে অযুহাত হিসাবে দাড় করিয়ে আমেরিকা-ইউরোপ তাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে যা মৃতপ্রায় ন্যাটোকে পুনর্জন্ম দান ও শক্তিশালী করবে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে যায় তখন কথাই ছিল ন্যাটো পূর্বদিকে আর বাড়বে না কিন্তু সেটা মানা হয়নি। রাশিয়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরও ন্যাটোর পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজন ছিলো কিনা এটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ন্যাটো-ওয়ারশ এর সময়ও কিন্তু ওই এলাকায় নিরপেক্ষ দেশ ছিল।ওইসব দেশকেও শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষতা রাখতে দেয়া হয়নি। তারা নিরপেক্ষ থাকলে হয়তো রাশিয়া এতটা আগ্রাসী হতো না যতটা এখন হয়েছে। রাশিয়ার মতো একটি দেশ কেন ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে তা সহ্য করবে? এটা তো এক অর্থে রাশিয়ার বর্ডার নয় যেখানে ইউক্রেন অনেকখানি রাশিয়ার ভেতরে। রাশিয়া সীমান্তের কাছে ন্যাটো জোট সম্প্রসারণের চেষ্টা হলে সেখানে ছোট নয় বরং বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক ।


ছবি - globaltimes.cn

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের মুদ্রা ও তার আধিপত্য বৃদ্ধি পাবে -

চীন গত কয়েক বছর যাবত ডলারের বিকল্প হিসেবে চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে দাঁড় করাতে চাইছে বিশ্ব দরবারে। তারা সেটা শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই এবং ২০১৫ সাল থেকে রাশিয়াকে সাথে নিয়ে শুরু হয়েছে চীনের মহা পরিকল্পনা। আর ২০১৫ সাল থেকে এ জন্য যে, ওই বছরই আইএমএফ ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কারণ চীনা ইউয়ান আইএমএফের সব শর্তই তখন পূরণ করেছিল। ফলে অন্য চারটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা - ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েনের সাথে পঞ্চম সমতুল্য মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু এখন রাশিয়াকে সাথে নিয়ে ইউয়ানের সেই ধীরগতি ও বিকাশকেই চীন ত্বরান্বিত করতে চাইছে মাত্র। তখনই বলা হয়েছিল যে, চীন সৌদি আরব থেকে তেল কিনে তা ইউয়ানে পরিশোধ করতে পারলেই ইউয়ান অনেক আগেই বিশ্বাস ও আস্থাযোগ্য প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা হয়ে যেতে পারে। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৌদি আরব ইউয়ানে তেল বিক্রিতে রাজী হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের মুদ্রার গ্রহনযোগ্যতা ও আধিপত্য বৃদ্ধি পাবে নিঃসন্দেহে।


ছবি - nytimes.com

চীন-রাশিয়া কৌশলগত সম্পর্ক আরো মজবুত ও সুদৃঢ় হবে -

বিগত কয়েক বছড় যাবতই চীনের সাথে রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক বেড়েই চলছে এবং এ কাজে উভয়েই উভয়কে সাহায্য করছে। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেংগে যায় তখন ন্যাটো-আমেরিকা বলেছিল তারা পূর্বদিকে (রাশিয়ার কাছাকাছি) আর বাড়বে না এবং সাবেক ওয়ারশ জোটের কোন দেশকে তাদের সদস্য করবে না। তবে তারা তাদের সেই ওয়াদা ভংগ করে আরো অনেকের সাথে সাথে পোল্যান্ড ও রোমানিয়াকে সদস্য কর নেয়। এই পোল্যান্ড ও রোমানিয়া - এরা এখন ন্যাটোর সদস্য যারা আগে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বাফার রাষ্ট্র। মানে পশ্চিম ইউরোপ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য মাঝের বাফার রাষ্ট্র। এখন যেটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, ২০১৪ সালের পরপরই সাবেক ওয়ারশ জোটের অনেক দেশ ন্যাটোর সদস্য হয়ে গেছে অথচ তখন রাশিয়া কিছু বলেনি, তাহলে এখন কেন পুতিন ইউক্রেনের বেলায় এত আপত্তি করছেন? এর জবাবটা খুবই সহজ। তখনই কেউ কারো কোন কাজে বাধা দেন যখন তার সামর্থ্য-মুরোদ থাকে বাধা দেয়ার মত। যেমন - ২০১৪ সাল রাশিয়ার জন্য ছিল আমেরিকার দিক থেকে কঠোর অবরোধ আরোপের বছর আর সেই সালই আবার চীনের সাথে নয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক শুরুর বছর। গত ২০২১ সালে চীন-ইরানের ২৫ বছর তেল-গ্যাস সরবরাহের বিনিময়ে চীনের বিনিয়োগ পাওয়ার যে চুক্তি হয়েছিল সেটা আসলে সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল চীন ও রাশিয়ার মধ্যে। আর তাই রাশিয়া ডলারশূন্য হয়েও বা ডলার থেকে বের করে দিলেও রাশিয়া পরে টিকে গিয়েছিল চীনের সাথে ওই অর্থনৈতিক চুক্তির কারণে। সোজা কথায়, ২০১৪ আর ২০২২ সালের রাশিয়া একই অর্থনৈতিক অবস্থায় নেই। এ কারণেই ২০১৪ সালে পোল্যান্ড-রোমানিয়াকে কিছু বলতে না পারলেও এখন ইউক্রেনের বেলায় পুতিন সোচ্চার।


ছবি -istockphoto.com

বর্তমান রাশিয়া-চায়না পরিস্থিতি

বিগত কয়েক বছর যাবত ই রাশিয়া-চীন সম্পর্কের পারস্পরিক স্বার্থ-সহযোগীতার ভিত্তিতে মজবুত থেকে মজবুততর হয়েছে। আর এই যুদ্ধের ফলে অদূর ভবিষ্যতে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক এতটাই সুদৃঢ় এবং শক্তিশালী হয়ে উঠতে চলেছে, যা আগে কখনো দেখেনি আন্তর্জাতিক বিশ্ব।মস্কোর পররাষ্ট্রনীতি(এবং ভারতনীতিও) এর পর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বেইজিং। পশ্চিমের এবং আমেরিকার রুদ্ররোষ থেকে বাঁচতে, রাশিয়ারও অনেক ক্ষেত্রে চীনের মতের বাইরে যাওয়া বা তার বলয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় দেখা যাচ্ছে না। এদিকে যদিও পাকিস্তান-রাশিয়া-চীন সম্পর্ক বরাবরই ভাল তারপরও এই যুদ্ধের ফলে তাদের আন্তঃরাজ্য সম্পর্ক আরো মজবুত হবে এবং তখন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করা সংক্রান্ত ভারতের অনুরোধ নাও রাখতে পারে মস্কো। আবার এই বিষয়টিও হয়তো কাকতালীয় নয় যে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের দিনই মস্কোতে হাজির ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খান। বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে যা তাদের উষ্ণ সম্পর্ককেই নির্দেশ করে ।

ইউরোপের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক নতুন করে (নড়বড়ে কিংবা মজবুত) গড়ে উঠবে -

ট্রাম্প আমলে আমেরিকার সাথে ইউরোপের সম্পর্ক তলানীতে গিয়ে ঠেকেছিল যেটা থেকে বেড়িয়ে আসতে চাচছেন বাইডেন। আর তাই ইউরোপকে সাথে নিয়ে , ইউরোপের পাশে থেকে রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে চাচ্ছেন বাইডেন । এদিকে, ইউরোপ-আমেরিকা একসাথে থাকার পরও রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর অবরোধ মেনে নিতে পারছেনা। ইউরোপ আমেরিকার দেয়া রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর অবরোধ কোন ভাবেই মানতে পারবেনা তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই। কারন, হঠাত করে রাশিয়ার তেল-গ্যাস নেয়া বন্ধ করে দিলে যে পরিস্থিতির তৈরী হবে তা যেমন ইউরোপের অনেক দেশই সামাল দিতে পারবেনা ঠিক তেমনি এর বিকল্পও পাওয়া যাবেনা অন্তত আগামী কয়েক বছর। বিকল্প পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময় রাশিয়ার তেল-গ্যাস না কিনে ইউরোপের হাতে আর কোন অপশন নেই। ফলে আমেরিকার অবরোধের পরও তারা রাশিয়ান গ্যাস কিনবে বলে অন্তত তিনটি দেশ - ফ্রান্স, জর্মানি ও নেদারল্যান্ডসের প্রকাশ্য জানিয়েছে এবং এ প্রশ্নে বাইডেনের সর্বশেষ অবস্থান দেখা যাচ্ছে ইউরোপের সম্পূর্ণ বিপরীত ।

আর তাই , বাইডেন দেখাতে চাচ্ছেন যদিও তাদের মাঝে অনেক বিষয়েই অমিল আছে তারপরও আমেরিকা-ইউরোপ এক । আর তাদের সেই একতা দেখাতেই বাইডেন গিয়েছেন ইউরোপ সফরে এবং বৃহস্পতিবার (২৪/০৩/২০২২) ইইউ হেড কোয়ার্টার ব্রাসেলসে বসে বাইডেন বৈঠক করেছেন যার মূল বিষয় ইইউ সদস্যদের রাশিয়ান গ্যাসের বিকল্পের সন্ধান দেয়া শুধু নয়, একেবারে ব্যবস্থা করে দেয়া। আর তাই ইউরোপীয়ানদের ত্রাতা বাইডেন যা করতে চাইছেন তা যেন উচ্ছ্বাস দেখিয়েই হাজির করতে বিবিসি শিরোনাম করেছিল, "রাশিয়াকে হটাতে ইউরোপে গ্যাস দেবে যুক্তরাষ্ট্র" ।

এখন প্রশ্ন হলো,"যুক্তরাষ্ট্র কি ইউরোপের চাহিদা মেটাতে পারবে"?

এক কথায় না । যদিও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি বড় চুক্তির ঘোষণা করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ ব্যাপক বাড়ালেও, ইইউভুক্ত ২৭টি রাষ্ট্রের জন্য এটি সামান্য মাত্র।রাশিয়ার তেল-গ্যাস নিয়ে যতই আমেরিকা বিকল্প আছে বলে এটা-সেটা দেখাক না কেন,বাইডেনের কথার মধ্যে বড় ফাঁক আছে।তারপরও ইউরোপের সাথে আমেরিকা যে ঐক্যবদ্ধ আছে এবং দেখাতেই বাইডেনের এত সব প্রচেষ্টা। তবে তার এত সব প্রচেষ্টার পরও ইউরোপ-আমরিকার ঐক্য থেকে অনৈক্যই বেশী প্রকাশিত হচছে প্রতিনিয়ত। আর তাইতো অনেক ইইউ নেতারা বিশেষত জার্মানির সোজা কথা - অন্তত ২০২৭ সালের আগে রাশিয়ার ওপর থেকে জ্বালানি-নির্ভরতা কমানোর সুযোগ নেই। জার্মানি ও ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের আপত্তির মুখে, রুশ তেল ও গ্যাস এখনো আমরিকার নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। কারণ রুশ জ্বালানির ওপর, বিশেষ করে গ্যাসের ওপর, তাদের নির্ভরতা । জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বুধবারও বলেছেন,"রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ইউরোপ অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়বে"। (যদিও রুবলে গ্যাস বেঁচা-কেনা নিয়ে নতুন করে সমস্যা তৈরী হতে পারে রাশিয়ার সাথে ইউরোপের )।

কাজেই দেখা যাচছে বাইডেন যতই ইউরোপ-আমেরিকার নতুন সম্পর্ক কিংবা ঐক্যের কথা বলুক তা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে । আবার এটাও হতে পারে যে, যদি রাশিয়া আমেরিকার এত অবরোধের পরে টিকে থাকে এবং যুদ্ধে জিতে যায় - তাহলে ইউরোপের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ঐক্যের পরিবর্তে আরো নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।


ছবি - istockphoto.com

হতে পারে বিশ্বে নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মেরুকরণ -

আমেরিকার সারা বিশ্বে একচেটিয়া আধিপত্যের অন্যতম কারন পেট্রোডলার (শুধু ডলারে তেল বেচা-কিনা / প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও বাদশাহ ফয়সল যখন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে ক্ষমতায় ছিলেন তখন দু’দেশের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে, আমেরিকার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সৌদি আরব আর জ্বালানি তেল বিক্রি করা হবে কেবল মার্কিন ডলারে। এর বিনিময়ে আমেরিকা সৌদি রাষ্ট্র ও রাজপরিবারের ক্ষমতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে)। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বকেই আচ্ছন্ন করে ফেলেছে এবং তার প্রকাশ ঘটে চলেছে নানাভাবে। তার মধ্যে জ্বালানি সঙ্কট, দেশে দেশে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহে ঘাটতি, সরবরাহে বাধা, আমদানি ও রফতানি কর্টেল, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিকভাবে মেরুকরণ করার এক সুদূরপ্রসারী লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। আর সবচাইতে অবিশ্বাস্য যে ব্যাপার হয়েছে তা হলো , সৌদি আরব চীনের কাছে তেল বিক্রি করতে উৎসাহী যা তারা চীনা মুদ্রা ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করবে। গত ৭০ বছরের মধ্যে এটি একটি চমকপ্রদ সিদ্ধান্তই বলতে হবে। এখন প্রশ্ন কেন সৌদি আরব ডলারে তেল বিক্রি না করে ইউয়ানে বিক্রি করতে উৎসাহ দেখাচ্ছে ? তার কারণ হলো, সৌদিরা আমেরিকার যে নিরাপত্তার বিনিময়ে ডলারে তেল বিক্রিতে রাজি হয়েছিল, যাকে আমরা পেট্রোডলার বলে চিনি, সেই আমেরিকার ওপর এখন আর ভরসা রাখতে পারছেনা, তাদের সন্দেহ করছে সৌদি আরব। সৌদি আরব আর মার্কিনি ভরসায় থাকতে পারছে না। রাশিয়া তার রিজার্ভের ১৩ শতাংশ রেখেছে ইউয়ানে, চীনের জিম্মায়। এর বিকল্প ব্যবস্থার আলোচনা যে বহুদিন ধরেই চলছিল, তার সুবিধা এখন দেখা দিয়েছে। যদি মধ্যপ্রাচ্যের ধনী মুসলিম দেশগুলোও তাদের রিজার্ভ মানির স্থান পরিবর্তন করে কিংবা তেল বিক্রি করে ইউয়ানে, ইয়েনে, তাহলে আরেকটি নতুন বিশ্ব অর্থব্যবস্থা জারি হতে সময় নেবে বলে মনে হয় না। ইরান তো একপায়ে খাড়া, মার্কিনিদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে। অনেকদিন থেকেই চীনকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বে নতুন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় রাশিয়া। যেখানে এখনকার মতো পশ্চিমা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য থাকবে না। মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদক দেশ, চীন-রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ যদি একাট্টা হয়ে নতুন অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলে, তাহলে বিশ্বে নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মেরুকরণ হতে দেরি হবে না। চীন ও রাশিয়ার যৌথ পরিকল্পনায় এ আলামত দেখা দিতে শুরু করেছে। আর এর সর্বশেষ সংযোজন হলো রাশিয়ার শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সাথে আন্তঃবাণিজ্য ডলারের পরিবর্তে রুবলে মূল্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নের চেষ্টা । যদিও ইতিপূর্বে ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রায় তেল-গ্যাস বেচার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এবং লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মোয়াম্মার আল গাদ্দাফি । তাদের এ পরিণতি সফলতা লাভ করেনি এবং এ ধরনের প্রচেষ্টার কারনে আমেরিকার রুদ্ররোষে পড়ে তারা হারিয়েছেন ক্ষমতা-জীবন ও দেশকে করেছেন আমেরিকার গিনপিগ। তবে এটাও ঠিক যে রাশিয়ার পুতিন-সৌদি যুবরাজ সালমান ইরাক কিংবা চীন আর ইরাক-লিবিয়া এক নয়।

আর তাই , পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রকাশ্য মার্কিন বিরোধিতা আলাদা কোন ঘটনা নয় ( ইতিমধ্যেই পশ্চিমা কুটকৌশলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতন হয়ে গেছে যা মূলতঃ আমেরিকার বিরোধীতা ও রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বের কারনেই হয়েছে বলে মনে করা হয় )। এ চীন-রাশিয়া-পাকিস্তানের মজবুত সম্পর্কের কারন। আবার এই যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার সম্পর্ক চীনের বাইরে শুধু পাকিস্তানের সাথে মজবুত হবে এমন নয়, চীন-রাশিয়ার শক্তিশালী জোট, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য রাষ্ট্রগুলোর উন্নয়নশালী প্রকল্প এবং শক্তি চাহিদাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে একটি পরমাণু বিদ্যুত কারখানা বসাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করছে রাশিয়া। যে মডেলটি এই অঞ্চলে চীন তৈরি করেছে অনেকটা সেই পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ বাংলাদেশকে সহজ সুদে ঋণ দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাশিয়া । এর পর হয়ত যে জ্বালানি রাশিয়া ইউরোপকে দিচ্ছিল, তার একটা বড় অংশ চলে আসবে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে। সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব আরো বাড়তে পারে।


ছবি - carnegie-mec.org

সৌদি আরব ও এর যুবরাজ সালমান আমেরিকার বিরুদ্ধে শক্তিশালী-কুশলী খেলোয়ার হিসাবে আর্বিভূত হতে পারেন

আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে জনবিদ্রোহ দেখা দেয় তার পেছনে আমেরিকার ইন্ধন সক্রিয় ছিল বলে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলোর ধারণা ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ও মুহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হিসেবে উত্থান ঘটে। বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই ক্রাউন প্রিন্সের কর্তৃত্বকে মেনে নিতে চাইছেন বলে মনে হয় না। এতে করে সৌদি-দুবাইয়ের সাথে সৃষ্ট হয় নতুন চ্যালেঞ্জ বাইডেনের । বাইডেন সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিন সালমান ও বিন জায়েদ দু’জনই বিকল্প বৈশ্বিক শক্তি চীন-রাশিয়ার সাথে তৈরি করেন বিশেষ সমীকরণ। সৌদি আরব আমেরিকার বিকল্প তেলের বাজার হিসেবে চীনকে ব্যবহার করে আর সেই সাথে সৌদি আরব নতুন নির্মাণাধীন কৌশলগত নিওম নগরীসহ নানা ক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে। রাশিয়ার কাছ থেকে সমরাস্ত্র কিনে রাশিয়ার সাথেও একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে রিয়াদ। একই পথে হাঁটছে আমিরাত মিসরসহ আরো কিছু মিত্র দেশ।

ইউক্রেন সঙ্ঘাতে আমেরিকার সাথে মধ্যপ্রাচ্যের এই রাজতান্ত্রিক শাসকদের দূরত্ব তীব্রভাবে প্রকাশ হয়। রাশিয়ার ওপর তেল গ্যাসে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বাজার ঠিক রাখতে জো বাইডেন তেল উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ জানানোর জন্য দুই ক্রাউন প্রিন্সকে টেলিফোন করেছিলেন। বলা হচ্ছে, তাদের দু’জনের কেউই সেই ফোনে সাড়া দেননি বরং এরপরই মুহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেন, সৌদি আরব এখন এককভাবে মার্কিন ডলারে তেল বিক্রির নীতি থেকে সরে আসবে এবং চীনকে তার জাতীয় মুদ্রা ইউয়ানে তেল সরবরাহ করবে। এর প্রভাব যে মার্কিন ডলারে কতটা পড়বে তা বোঝা যায় তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের রিপাবলিকান গার্ডের ওপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার ঘোষণায়। এ ছাড়াও ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহাল এবং দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন নিতে যাচ্ছে বলে আভাস দেয়া হচ্ছে। এর অর্থ হলো বৈশ্বিক সংঘাতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তার মিত্ররা চীন রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার সাথে সাথে বাইডেন প্রশাসন ইরানকে ব্যবহার করে এর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির এবং পরিস্থিতি যে কোন সময় ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারন, মধ্যপ্রাচ্যের আরও অন্যতম দুই খেলোয়ার তুরস্ক ও ইসরাইলেরও এই সমীকরণে প্রভাবশালী ভূমিকা থাকবে যা এখনো প্রকাশ পায়নি।


ছবি - thewire.in

ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি বা ভারত কি সমস্যার বাইরে কিংবা নিরপেক্ষ থাকতে পারবে এ সমস্যা থেকে -

রাশিয়া - ইউক্রেন সংকটে যদিও ভারত এখন পর্যন্ত কোন পক্ষেই তার সমর্থন জানায়নি তথা নিরপেক্ষ থাকতে চাইছে (না রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলেছে, না আমেরিকা-ইউরোপের পক্ষে কিছু বলেছে) তবে ভারত বেশী দিন মনে হয়না এই সংকটের বাইরে থাকতে পারবে আজকের বিশ্বে। আর তাই মোদী মুখে না বললেও ভারতের উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের ভারসাম্যের কূটনীতি এখনো পর্যন্ত মস্কো ছাড়া কাউকে খুশি করেনি,পশ্চিমকে তো নয়ই। রাশিয়াকে খুশি করলেও সেই খুশি এতটা নয় যে, এর ফলে রাশিয়া ভারতের কথায় উঠবে-বসবে এবং ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের ইশারায় রাশিয়ার চীন-নীতি নিয়ন্ত্রিত হবে। কারন,পশ্চিমের সাথে যুদ্ধপথে চীনকে সাথে রাখা ছাড়া রাশিয়ার এক পা-ও এগোনো সম্ভব নয়। এই যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার চীনের ওপর নির্ভরশীলতা আসলে যে অনেক গুণ বেড়ে গেছে, এই বিষয়টা ভারত সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। এ কথা মনে রাখতে হবে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের বার্তা যখন শোনা গিয়েছিল, ঠিক সেই সময়ই এক মহা বৈঠকে বসেছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে উভয়েই বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, দু’-দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের কোনো সীমারেখা নেই, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা কিনা সহযোগিতার জন্য নিষিদ্ধ। চীন এবং রাশিয়ার নতুন এই সম্পর্ক নাকি ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে যেকোনো সামরিক এবং রাজনৈতিক জোটের চেয়ে ঢের বেশি উন্নত। আর এটা যুদ্ধের প্রাক্কালে নতুন চীন-রাশিয়া সম্পর্কের ছবিই প্রমাণ করে দুনিয়াবাসীর সামনে।

তবে ভবিষ্যতে ভারতকে দুটি পক্ষের মধ্য থেকে যেকোনো একটি পক্ষকে বেছে নিতে হতে পারে।যেমন -

১। কারো নাম না করে ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা এবং সহিংসতার নিন্দা করা। সেই সাথে রাশিয়াকে কূটনীতির রাস্তায় ফেরার আবেদন করে যাওয়া। অবশ্য এটি ভারত এখনো করেই চলছে।
২। আমেরিকা এবং পশ্চিমের পক্ষ নিয়ে খোলাখুলি রাশিয়ার এই আগ্রাসন নীতির প্রবল সমালোচনা করা, জাতিসঙ্ঘের ভোটাভুটিতে নির্দিষ্ট পক্ষ নেওয়া এবং তথাকথিত এই ভারসাম্যের নীতি থেকে সরে আসা। আমেরিকা, ফ্রান্স ও ইউক্রেন যা করার জন্য বার বার ভারতকে আবেদন করেছে।

এখন পর্যন্ত ভারতকে এই রাশিয়া-বিরোধিতার রাস্তায় না চলার জন্য যদিও কোনো দণ্ড দিতে হয়নি বা চতুর্দেশীয় অক্ষ বা কোয়াড, তথা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগিতা মঞ্চে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিতে কোয়াডের বৈঠক ডেকে আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের শীর্ষনেতারা সমুদ্রপথের সহযোগিতা (চীন-বিরোধিতা) নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, কোয়াডে চিড় ধরে গেছে। ভবিষ্যতে তা বড় ফাটলে পরিণত হতে পারে। আবার ভারতের জন্য রাশিয়া বিরোধীতা শুধু কঠিনই নয় মহাকঠিন। কারন, ভারত তার জ্বালানী এবং অস্ত্রের জন্য আমরিকা-ইউরোপ থেকে অনেক গুণ বেশী রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল।এদিকে, আমেরিকা-ইউরোপের সাথেও তার সম্পর্ক খুবই জরুরী চীনকে মোকাবিলা করার জন্য। আবার চীন হলো রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সহযোগী। আর তাই ভারতের জন্য যে কোন একপক্ষকে বেছে নেয়া শুধু কঠিন ই নয় তার জীবন-মরণের প্রশ্ন।


ছবি - acet-global.com

পরিশেষ -

ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন সর্বাত্মক যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ উত্তেজনা, দক্ষিণ এশিয়ায় ধূমায়িত উত্তেজনা, বৈশ্বিক পরিসরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও কর্তৃত্ব পরিবর্তনের লড়াই, এসব কিছু একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে চলছে বলে মনে হয়। এর সাথে তাইওয়ান উত্তেজনা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে কিউবা বা অন্য কোনো দেশে নতুন কোনো উত্তাপ তৈরি হলে পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে এক উত্তপ্ত গ্রহ। এর পথ ধরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো কোনো ঘটনা ঘটা অসম্ভব কিছু বলে মনে করছেন না অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। আর পুতিন ল্যাভরভ বা বাইডেন - ব্লিঙ্কেনের কথা অনুযায়ী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরমাণু যুদ্ধে রূপ নিলে তা বিশ্বে মনুষ্যসৃষ্ট এক মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। জটিল এই বিশ্ব পরিস্থিতিতে কে যে কার মন পাবে, কে যে কার বলয়ে যাবে, কার সাথে কার সম্পর্ক শীতল থেকে শীতলতর হবে আর কার সাথে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে তা বলা মুশকিল। সেই সাথে সাথে বদলে যেতে পারে বিশ্ব ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থা,এ এক বড়ই জটিল চক্র। পরম করুণাময় যেন পৃথিবীবাসীকে মনুষ্যসৃষ্ট মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন।

তথ্যসূত্র - সিএনএন,আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স।

=====================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -

"রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ" - (৩ য় পর্ব) Click This Link
"রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ" - (২ য় পর্ব) Click This Link
"রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ" - (১ ম পর্ব) Click This Link
এবং
" ইউক্রেন সংকট " - (শেষ পর্ব) - Click This Link
" ইউক্রেন সংকট " - ২ য় পর্বের লিংক - Click This Link
" ইউক্রেন সংকট " - ১ ম পর্বের লিংক - Click This Link

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৩৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ‌এত্তো বড় লেখা কিভাবে তৈরি করেন?

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ দস্যু ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য।

এত্তো বড় লেখা কিভাবে তৈরি করেন?

- জোড়া-তালি দিতে দিতে কেমনে কেমনে হয়ে যায় ভাই, এত্তো বড় লেখা (রচনা), বুঝতেই পারিনা । তারপরও মনে হয় বাকী রয়ে গেছে অনেক কিছু (তথ্য)।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: রমজানে শুভেচ্ছা ভাইসাহেব।

রাশিয়া ইউক্রেন নিয়ে চিন্তা বাদ দেন। আগে নিজের দেশের কথা ভাবুন। দেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কথা ভাবুন। তাদের জন্য কিছু করুণ। তাহলেই আল্লাহপাক খুশি হবেন।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:৫০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য।


রমজানে শুভেচ্ছা ভাইসাহেব।

আপনাকেও রমজানের শুভেচ্ছা রাজিব ভাই। ভাবী-পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালভাবে রমজানের রোজাগুলো যাতে রাখতে পারেন তার জন্য রইলো দোয়া দয়াময়ের নিকট।

রাশিয়া ইউক্রেন নিয়ে চিন্তা বাদ দেন। আগে নিজের দেশের কথা ভাবুন।

- কথায় আছে , " বিশ্ব জোড়া পাঠশালা ভাই , সবাই আমরা ছাত্র " আর সংস্কৃতে একটা কথা আছে, "ছাত্রনং অধ্যয়ণং তপঃ" । কাজেই সময় পেলেই এই আকামে সময়টা ব্যয় করা হয় । যদিও এর থেকে ভাল কোন ফলাফল আশা করার নেই। কারন, আমরা জেনেই বা কি করব? যাদের সামর্থ্য আচে, তারা তাই করবে যা তাদের মন চায় ।

আর নিজের দেশ নিয়ে কি ভাববেন ভাইজান? দেশ নিয়ে ভাবার জন্য দেশে মানুষের অভাব নেই। আপনি-আমি (সাধারন মানুষ) দেশ নিয়ে ভাবতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

দেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কথা ভাবুন। তাদের জন্য কিছু করুণ। তাহলেই আল্লাহপাক খুশি হবেন।

- এটা আপনি ঠিক বলেছেন। সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের কথা ভাবা ও তাদের জন্য কিছু করা আমাদের সবারই উচিত।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:২৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আপনাকেও আবারো ধন্যবাদ ভাই, আপনার আবারো আসার জন্য।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:২৯

ইমরান আশফাক বলেছেন: ভারতের অবস্হান ভালমন্দ যাই হোক একটা কিছু হবে। :#) কিন্তু আমাদের দেশের অবস্হা কি হবে? মার্কিনীরা তো আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলাচ্ছে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে?

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৫৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ইমরান আশফাক ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য।

আসলে , আমরা সকলেই অন্যদের দিকটা দেখতেই ভালবাসি :P , আর তাই নিজের দিকে তেমন একটা নজর দিতে চাইনা।

আবার, এখন কেউই দেশের কোন ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনা বা করতে ভয় পায়। কারন, কোন কথার যে কোন মানে হবে আর তার ফলে নেমে আসবে জীবনে দূর্ভোগ । কাজেই দেশের ব্যাপারে কিছু না বলাই ভাল । কারন, দেশ এখন সঠিক লোকের হাতে সঠিক পথে আছে। নো টেনশন ভাইজান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.