| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাবতেই খুব অবাক লাগে প্রতিদিন প্রায় চার লাখ কপি যে পত্রিকা মুদ্রিত হত, বিশ্বের বিখ্যাত ও প্রভাবশালী সেই The Independent মুদ্রণ বন্ধ করে দিয়েছে। অনলাইন সংস্করণ খুলেছে। আজকাল তো মানুষ আবার অনলাইনকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু কি আর করা! বাস্তবতা তো মেনে নিতেই হবে। প্রযুক্তি যে হারে আগাচ্ছে তাতে মনে হয় অচিরে আমাদের মুদ্রণও বিলুপ্ত হবে। চলুন দেখি কি কারণে বন্ধ করতে হলো ব্রিটিশ The Independent এর মুদ্রণ।
প্রথমত এটি একটি পত্রিকা। পত্রিকার কাজই হলো সংবাদ দেয়া। কিন্তু সময় ফুরালে সংবাদ একটি বস্তা পঁচা জিনিস। সময়ের সাথে খবরের কদর কমতে থাকে। সাংবাদিকতার ভাষায় একে বলে Timeliness । যেমন ধরুন অগ্নিকান্ডের কোন দূর্ঘটনা। যেখানে অনলাইন নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে কিংবা টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করছে সেখানে পত্রিকায় খবর আসবে ২৪ ঘন্টা পর। খেলার কথাই ভাবুন না। একটা উত্তেজনাময় ম্যাচ চলছে। সবাই খেলা দেখছে। হাসি আনন্দ বা কান্নাকাটি সবই শেষ। পত্রিকায় সেই সংবাদ আসবে পরদিন। যা আগেই জানেন তা তো আর পড়ার প্রয়োজন হয় না।
দ্বিতীয়ত, কাভারেজ এর হিসেব। না কিনলে পত্রিকা তো পাওয়া যায় না। আবার একজন পাঠকতো সব পত্রিকা একসাথে কিনে না। সুতরাং মুদ্রিত পত্রিকার পাঠক খুবই কম। মোট জনসংখ্যার ৫-১০% মানুষ নিয়মিত পত্রিকা পড়ে। সে তুলনাই ইন্টারনেট ভিত্তিক পাঠক সংখ্যাই বেশী।
তৃতীয়ত, মুদ্রিত পত্রিকার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এটি কেবল মাত্র টেক্সট বা লেখা এবং স্থির ছবি প্রকাশ করতে পারে। অথচ টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেট ভিত্তিক পোর্টাল সচারচার ভিডিও প্রকাশ করে। এখন দেখা দরকার কোন ভাষাটি বেশী শক্তিশালী এবং আকর্ষনীয়। অবশ্যই ভিডিও মাধ্যম। সে কারনে মুদ্রিত খবরের কদর কমছে।
চতুর্থত, পত্রিকায় স্থান সংকুলানের একটা ব্যাপার থাকে। চাইলেই যেকোনো সংবাদ যত ইচ্ছে লেখা যায় না। অনলাইনে এ বাধা অনেকটাই কম।
পঞ্চমত, মুদ্রনে সরাসরি সম্প্রচার বা প্রকাশ সম্ভব না। জনমত গঠন কিংবা গণযোগাযোগ এর ব্যাপারটি পরোক্ষ। আবার কোন বিষয়ে সরাসরি জনমত দেওয়ার ব্যাপারটা উন্মুক্ত না। অনলাইনে যেখানে প্রতি মুহূর্তেই মন্তব্য আসে।
ষষ্ঠত, সব কথার পিছনের কথা হলো লাভ-ক্ষতির হিসেব। একটি পত্রিকা যে দামে বিক্রি করা হয়, মুদ্রণ খরচ হয় তার চেয়ে বেশী। যেমন কোন পত্রিকা ১০ টাকা বিক্রয় মূল্য হলে ধরে নিলাম হকার কিংবা এজেন্ট এর লাভ বাদ দিয়ে পত্রিকার মালিক পান ৬ টাকা। এখন কথা হলো ৬ টাকায় কি ৩০/৪০ পৃষ্ঠা ছাপানো যায়? এক্ষেত্রে ভূর্তুকি ও দিতে হয়। অবশ্যই ভূর্তুকি পুষে যায় বিজ্ঞাপন এর টাকায়। কিন্তু এখন আর বিজ্ঞাপনের শক্তিশালী মাধ্যম শুধু পত্রিকা নয়। যোগ হয়েছে ইন্টারনেট, টেলিভিশন, ওয়েবসাইট আরো অনেক মাধ্যম।
সপ্তমত, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কোন আয় নেই। অনলাইনে নিজেদের বিজ্ঞাপন ছাড়াও আছে সাইট পরিদর্শন আয়।
এরকম নানা সীমাবদ্ধতা আর প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয় The Independent এর মুদ্রণ। বন্ধ হতে চলেছে আরো অনেক নামীদামি পত্রিকার মুদ্রন। অচিরে এর প্রতিফলন দেখব আমাদের দেশেও।
তবে মুদ্রিত পত্রিকার কিছু সুবিধাও আছে। যেমন একটু গভীর খবর পাওয়া যায়। আবার মুদ্রিত কাগজ পড়ার মজাটাই আলাদা। আর মোবাইল, ট্যাব কিংবা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে পড়া বিরক্তিকর ও বটে। পত্রিকা হাতে পাওয়া যায়, নিজের মত করে পড়া যায়। সবকিছু গুছালো মনে হয়।

©somewhere in net ltd.