![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানব শরীরের একটি অঙ্গে যখন পচন ধরে তখন তার প্রভাব সারা শরীরের পড়ে। তদ্রুপ দেশ যখন বিচারহীনতা, অপশাসন দূর্নীতির থাবা বিস্তার করে তখন তার প্রভাবও শিক্ষক, রাজনীতিক, পুলিশ, সাংবাদিক, সেনাবাহিনী,আমলাসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে বিরাজ করে। দেশের মানুষের আস্তা রাখার মত এখনও কিছু যায়গা আছে। সেনাবাহিনীর উপর এখনও মানুষের আস্তা রয়েছে। সেই আস্তার যায়গাটা রক্ষা করার দায়িত্বও সেনাবাহিনীর। আমি বলছি না কোন সেনা সদস্যই এই অপকর্ম করেছে । যেহেতু সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার হয়েছে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে তাই রহস্য উদঘাটনের দায় তাদের উপর বর্তায়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সোহাগী জাহান তনু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষেল ছাত্রী। ২০ মার্চ সোমবার কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে তনু’র (২০) লাশ উদ্ধার করা হয়। সোহাগী জাহান তনুর বাবা কুমিল্লা সেনানিবাসের আলিপুর বালিকা বিদ্যালয়ের একজন বেসামরিক কর্মচারী। সেই সুবাদে সেনানিবাসে কোয়াটারে তাদের বসবাস।তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সোহাগী জাহান তনু। তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ তুলে তাঁর কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ সারা দেশে বিক্ষোভ করেছে। সোহাগী জাহান তনু লেখাপড়ার পাশাপাশি তাঁর কলেজে নাটকসহ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথেও জড়িত ছিলেন। টানাটানির সংসারে তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতরেই টিউশনি করে নিজের খরচের কিছুটা যোগাতেন। তাঁর বড় ভাই নাজমুল হোসেন বলেছেন, গত রোববার ২০শে মার্চ বিকেলে তাঁর বোন টিউশনি করতে গিয়েছিল। কিন্তু রাত আটটাতেও না ফিরলে যে বাসায় টিউশনি করাতে সে বাসায় খবর নিয়ে জানতে পারেন তনু সন্ধ্যায় ৭টাই চলে গেছে। তাদের মা খুঁজতে রাস্তায় খুঁজতে যান তনুকে । অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। গলাকাটা মৃতদেহ নগ্ন অবস্থায় কালভার্টের পাশে ঝোপঝাড়ের ভেতর পড়েছিলো। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। মোবাইল ফোনটিও পড়েছিল পাশে। প্রথমেই তনুর মা খুঁজে পান মেয়ের ছেড়া চুল, তারপর জুতা, আরেকটু দূরে মোবাইল তারপর তনুর লাশ। বিভিন্ন খবরে জানা গেছে,আগের দিন সাড়ে ১০ টায় লাশ উদ্ধার হলে পরের দিন বিকাল ৫ টা পর্যন্ত পরিবারের কাউকে লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি। মৃতদেহ উদ্ধার করে প্রথমে সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। পরে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, হত্যার বিষয়ে সোহাগীর পরিবার যেন কোনো তথ্য দিতে না পারে, সেজন্য দিনভর তাদের নজরদারীতে রাখা হয়। বন্ধ করে রাখা হয় তাদের মোবাইল ফোনও। এমনকি সোহাগীর সহপাঠীদেরও সেখানে যেতে দেয়া হয়নি। কেন এই লুকোচুরি? সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিভিন্ন আলামত কি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে? সেনাবাহিনী এলাকা একটি সংরক্ষিত এলাকা । এখানের প্রতিটি স্থানে কর্তৃপক্ষের নজরদারি আছে। এ এলাকায় বসবাসরত প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনানিবাস কর্তৃপক্ষের। সেনানিবাস এলাকায় কারা থাকে? নতুন কোন লোক প্রবেশ করলেও সেই তথ্য কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেন। পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতা ভুক্ত। তার পরেও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কেন কোন ক্লু পাচ্ছে না। সোহাগী জাহান তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার এক খালাতো বোনের কাছ থেকে শুনেছি, ক্যান্টনমেন্টের এক সৈনিক ওকে (সোহাগী জাহান তনু) বিরক্ত করত।’ সোহাগী জাহান তনুর মোবাইল ফোন, ব্যবহৃত পোশাক কি ঠিক মত সংরক্ষন করা হয়েছে? এই ন্যাক্কার জনক ঘটনা তো কোন এলিয়েন এসে করে যায়নি। যে করেছে সে সেনানিবাসেরই কেউ একজন। কে সে? তাকে খুঁজে বের করা খুব কষ্টসাধ্য নয়। দুর্বৃত্তদের হাতের ছাপ থাকার কথা তনুর ব্যবহৃত মোবাইল কিংবা পোশাকে অথবা তনুর শরীরে? চিকিৎসকরা বলেছে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এদিকে সেনানিবাসের এই ঘটনায় সেনাবাহিনী থেকেও এখন পর্যন্ত কোন তদন্ত করেছে বলে জানা যায় না। সেনানিবাস কর্তৃপক্ষও তাদের অবস্থান পরিস্কার করেনি। একাত্তরে সেনাবাহিনীর গৌরব গাথা এখনও মানুষের মুখে মুখে। এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গৌরব উজ্জল ভুমিকা রাখছে। সেই সেনাবাহিনীতে হয়ত দু একটা কুলঙ্গার থাকতে পারে তার জন্য সেনাবাহিনীর পুরো দায়ভার কেন নেবে? তনু যদি চতুর্থ শ্রেনির একজন কর্মচারির মেয়ে না হয়ে কোন অফিসারের মেয়ে হতো তাহলে কি সেনা কর্তৃপক্ষ নিরব থাকতে পারতো? ধর্ষকের পরিচয় সে ধর্ষক। তার কাছে মা-বোন, মালিক-কর্মচারী, উপরস্ত-অধিনস্ত কেউ নিরাপদ নয়। আজকে যদি ওই ধর্ষক পার পেয়ে যায় আগামীতে ওদের মত আরো কুলাঙ্গার জন্মাবে। আমি বলছিনা সেনাবাহিনীর কোন সদস্যই জড়িত। তবে যেহেতু ঘটনাটি সেনানিবাসে ঘটেছে তাই এর রহস্য উদঘাটনের দায় সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। সেনানিবাস একটি সুরক্ষিত এলাকা এখানে বাইরের কেউ প্রবেশ করে খুনে মত ঘটনা ঘটিয়ে আবার চুরিসারে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হয় তাহলে কি সেনানিবাস অরক্ষিত? নাকি ধর্ষক বসবাস করে সেনানিবাসে? আর যদি সেনানিবাস অরক্ষিত না হয় তাহলে ধর্ষক ওখানকারই একজন? কে সে? তনুর ব্যবহৃত মোবাইল, পোশাক, শরীরের কার হাতের ছাপ আছে ? সেনানিবাসে বসবাসরত সবার হাতের ছাপসহ প্রয়োজনীয় ফরেনসি পরীক্ষা করলেই পাওয়া যাবে সেই খুনিকে। এটা কোন কষ্ট সাধ্য কাজ নয়। শুধু সেনাকর্তৃপক্ষের ইচ্ছা উপর নির্ভর করছে তনু হত্যার খুনিদের খুঁজে বের করা। সেনা কর্তৃপক্ষ কি তনুকে আপনার বোন, সন্তান ভেবে তার খুনিকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে পারেন না? খুনিকে খুঁজে বের করতে না পারলে আপনাদের প্রতি জনগনের আস্তা কমে যাবে। সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে আপনারা কি জনগনের আস্তা হারাবেন নাকি খুনিকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনবেন?
©somewhere in net ltd.