![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
বিকেলের এই ক্লান্ত বিধ্বস্ত শহরটা কনে দেখা আলোয় ভরে আছে। বনানীর রাস্তায় জ্যাম। হর্ণের কর্কস শব্দ, পোড়া ডিজেলের জঘন্য গন্ধ । রাস্তার দিকে তাকিয়ে চোখমুখ কুঁচকে ওঠে সুপ্তির । ওর বিরক্তি চরমে উঠেছে। এই হতশ্রী শহরটা কে অবিলম্বে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হলে ভালো হয় ; কিন্তু নতুন শহরের নির্মাণের পর্যাপ্ত জমিও যে নেই এই অজস্র মানুষের দেশে । সবই ফসলি জমি কিংবা জলাভূমি। সে জমি অধিগ্রহন করতে গেলে বিক্ষোভ আন্দোলনে ফুঁসে ওঠে স্থানীয় জনগন ...
সুপ্তি ওর ইউনিভারসিটির সামনে ফুটপাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে । কাছেই একটা ফুলের দোকান। রজনীগন্ধার আর গাদা ফুলের কড়া গন্ধ বাতাসে ভাসছিল। আলো আর অন্ধকারের মতোই এ শহরের ডিজেলের গন্ধ আর ফুলের গন্ধ পাশাপাশি ভাসে। কী অদ্ভুত! সুপ্তি অস্থির বোধ করে। বাবার গাড়ি নিয়ে আসার কথা।এখনও আসছে না। ঘড়ি দেখল ও । পাঁচটার মতো বাজে। কি হল বাবার? জ্যামে পড়েছে মনে হয়। ক’দিন ধরে বাবা গভীর আনন্দে ডুবে আছে। সম্প্রতি গুলশানে আড়াই কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে, দেড় কোটি টাকায় নতুন মডেলের একটা বিএমডাবলিউ কিনেছে। এই কি বাবার খুশির কারণ? কিংবা সুপ্তির বিয়ের কথাবার্তা চলছে বলে বাবা খুশি? একমাত্র মেয়ের বিয়ে-বাবা তো খুশি হতেই পারে। কিন্তু, সুপ্তি তো এখন বিয়ে করবে না। ও আগে পড়াশোনা শেষ করতে চায়। তাছাড়া মনিরুলের সঙ্গে ভালো লাগার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ওর। মনিরুল ওর ক্লাসমেট। ক্লাস শেষে মনিরুল সঙ্গে ঢাকা শহরের এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায় সুপ্তি। সেই ঘুরে বেড়ানোয় মিশে থাকে তীব্র সুখ আর স্বাধীনতার অপার আনন্দ। তো, এখনই বিয়ে কেন? বিয়ে মানে তো বন্দি জীবন। এত জলদি কেন বন্দিত্ব? তা ছাড়া পাত্রকে ভালো করে চেনে না সুপ্তি ... একেবারে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে বিয়ে হওয়াটা কি ঠিক? অবশ্য মা বলল, আরে, পাত্র অপরিচিত কোথায়-ছেলের নাম ইস্রাফিল হাওলাদার। তোর বাবার মতো ব্যাঙ্কার- শেয়ার কেনার সময় তোর বাবার সঙ্গে শলাপরামর্শ করে। হঠাৎই প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে ইস্রাফিল।
সুপ্তি জিজ্ঞেস করল, তা কি করে লোকটার অত টাকা হল মা?
মা বলল, আল্লাহ যখন মানুষকে ধনসম্পদ দেন, তখন কে তাকে আটকায় বল?
সুপ্তি বলল, সে তো বুঝলাম, তবে কেবল আল্লাহ্ তো আর আকাশ থেকে ধনদৌলত ফেলেন না, একটা উপায় লাগে।
মা বলল, ব্যাঙ্কের চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে হয়ত।
সুপ্তি তীক্ষ্ম কন্ঠে বলল, ব্যবসা করলেই অত টাকা হয়? অত সহজ? আমি বিবিএ পড়ি মা, আমাকে ভোলানো অত সহজ না, নিশ্চয়ই এর মধ্যে অন্য কোনও ব্যাপার আছে।
আসলে এসবই বিয়ে ভেস্তে দেবার ফন্দি। আর মনিরুলকে হাইলাইট করার গোপন ইচ্ছে। তবে মনিরুলকে হাইলাইট করা যাচ্ছে না। কেননা, মনিরুল এখন কেবলই ছাত্র।
সুপ্তির মোবাইল ফোনটা তিরতির করে বাজল। বাবা। হ্যাঁ, বাবা বল।
জরুরি একটা কাজে আটকে গেছি মা। আমাকে এখনই একবার হোটেল র্যাডিসনে যেতে হচ্ছে। তুই এক কাজ কর মা। একটা সিএনজি নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যা।
ঠিক আছে বাবা, আমি যাচ্ছি, তুমি ভেবো না।
সুপ্তি খুশি হয়ে ওঠে। একা একা সিএনজি করে বাড়ি ফেরার অল্প একটু স্বাধীনতা-এও অনেক। ও কনে দেখা আলোর ভিতরে হাঁটতে থাকে। ফুটপাতে ভিড়। এ দিকটায় ফুল আর ফাস্ট ফুডের দোকান। হাঁটতে হাঁটতে উদ্বেগ বোধ করছিল সুপ্তি। কাল বিকেলে ই¯্রাফিল হাওলাদার তার মাকে নিয়ে আংটি পরাতে আসবে। কী যে হয়। বাড়ি ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে সুপ্তির। না, সেটা ও করবে না। বরং আজ রাতে বাবার সঙ্গে কথা বলবে ...তার আগে মনিরুলের সঙ্গে কথা বলা দরকার। দু’দিন ধরে মনিরুলের ফোন বন্ধ। মনিরুল ঢাকায় এক বিধবা ফুপুর সঙ্গে থাকে। ফুপুর বাড়ি পুরনো ঢাকায়। সে বাড়ির ঠিকানা সুপ্তি জানে না। ঠিকানা জানলে ওখানে একবার যেত। তবে ওখানে যাওয়া কি ঠিক হত? মনিরুলের ফুপু কি মনে করতেন? মনিরুলের দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল। গত সপ্তাহে মনিরুল একবার টাঙ্গাইল গিয়েছিল। ও কি এখনও ফেরেনি? সি এন জি-র খোঁজে সুপ্তি চারপাশে তাকায় । ইস্, এখন যদি একবার মনিরুলের সঙ্গে দেখা হত।
ঠিক তখনই মনিরুলকে দেখতে পেল সুপ্তি ...
ওর বুকটা ধক করে উঠল। মনিরুলের হাঁটার ভঙ্গিটা কেমন করুন। কি হয়েছে ওর?
মনিরুল কাছে আসে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কালো প্যান্ট আর নীল সোয়েটার পরেছে। সোয়েটারটা ময়লা। সুপ্তিকে দেখে থমকে দাঁড়াল। সুপ্তি জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার? তোমার ফোন বন্ধ কেন?
মনিরুল খসখসে কন্ঠে বলল, আমার খবর ভালো না সুপ্তি?
কেন? কি হয়েছে? বলে মনিরুলের হাত ধরে ফুটপাতের একপাশে নিয়ে আসে সুপ্তি।
মনিরুল বলে, আমি শেয়ার বাজারে কয়েক লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। এখন সর্বশ্রান্ত হয়ে হয়ে গেছি।
কয়েক লাখ টাকা! অত টাকা পেলে কোথায়? সুপ্তি ওর বুকের ভিতরে ভীষণ তোলপাড় টের পায়।
গ্রামের জমি বিক্রি করেছি। কথাটা বলার সময় স্বর আটকে যায় মনিরুলের।
ওহ্ । সুপ্তি জানে মনিরুলের বাবা নেই, মা আর দুই বোন। সামান্য জমিজমা আছে। সেটুকুও শেষ হয়ে গেল। এখন কি হবে?
মনিরুল ক্লান্ত ভঙিতে বলল, জমি বিক্রির টাকা শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করে সর্বশ্রান্ত হয়ে হয়ে গেছি আমি।
অত ইনভেস্ট করতে গেলে কেন?
লাভ হচ্ছিল। তাছাড়া বন্ধুরা জোর করল।
ওহ্ ।
এখন কি ভাবে যে মা কে মুখ দেখাব? বলে মনিরুল মুখ ঢাকে। গোঙ্গায়। ওর গোঙ্গানির শব্দ এই বিধস্ত শহরের বিকেলের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
সুপ্তি ধীরে ধীরে সব টের পায়। বাবার খুশির কারণ ... গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নতুন মডেলের বিএমডাবলিউ গাড়ি। মনিরুলের মতো অজস্র তরুণকে পথে বসিয়ে যে খুশির জন্ম; সুপ্তি ক্রোধ টের পায়। কানের কাছে উষ্ণতা টের পায়। বাবার পছন্দের পাত্র-সেই ইস্রাফিল হাওলাদারও খুনি। এরা সব নীরব ঘাতক। এদের ব্যাঙ্কে এখন হাজার কোটি টাকা। কালো টাকা। কাল খুনিরা আসবে ... সুপ্তি কে কালো টাকা দিয়ে কেনা হীরের আংটি পরাতে ...
সুপ্তি শ্বাস টানে।
বিধস্ত এই শহরজুড়ে ডিজেল পোড়া গন্ধ ...সেই সঙ্গে রজনীগন্ধা আর গাদা ফুলের কড়া গন্ধ ... তখনও কনে দেখা আলো মুছে যায়নি।
সুপ্তি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। বলে, চল আমরা বিয়ে করে ফেলি।
মনিরুল যেন অন্ধকারে ভূত দেখেছে। ভীষণ চমকে ওঠে সে। কি বলছ তুমি!
যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি। সুপ্তির কন্ঠস্বর শান্ত হলেও দৃঢ়তা টের পাওয়া যায়। বাবারা মিলে যে অবৈধ কাঠামো তৈরি করেছে-সেটি ও ভেঙে ফেলতে না পারলেও একবার প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিতে চায়।
মনিরুল বিরবির করে বলে, ভাবছি, মা কীভাবে নেবে? একে তো ওদের পথে বসালাম, তার ওপর এখন বিয়ের কথা শুনলে-
সুপ্তি শ্বাস টানে। বলে, আমাকে তোমার মায়ের কাছে নিয়ে চল। আমি তোমার মাকে সব বুঝিয়ে বলব।
তুমি টাঙ্গাইল যাবে? মনিরুলের বিস্ময় যেন শেষ হয় না।
যাব। এ শহর থেকে যত দ্রুত সম্ভব পালানো দরকার ... বেশি দিন এ শহরে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব।
মনিরুল শ্বাস টানে। কনে দেখা আলোয় সুপ্তির স্নিগ্ধ কঠোর মুখখানি ভালো করে দেখে। তারপর প্রচন্ড আত্ববিশ্বাসের সঙ্গে সুপ্তির হাত ধরে। বলে, চল।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:২১
ইমন জুবায়ের বলেছেন:
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:২১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মন যা কর ত্বরায় কর এই ভবে!
এমন মানব জনম কি আর হবে?
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:২২
ইমন জুবায়ের বলেছেন:
৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩২
তিমাসু বলেছেন: ফিকির ভাই অস্বাধারণ বড় লোকি আখ্যান...দারুণ...
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৫৯
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৪৮
অগ্নিলা বলেছেন: আপনার লেখায় টাইপো দেখে অবাক হলাম।
লেখনী বরবরের মতই আমাকে মুগ্ধ করেছে
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:০০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: টাইপো রয়েই যায়।
অনেক ধন্যবাদ।
৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৭
ডাসট ইন দা উইনড বলেছেন: ভালো লাগলো
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৪
দূর্যোধন বলেছেন: বরাবরের মতই সুন্দর ও সাবলীল
তবে একটা জায়গায় খটকা লাগলো, ......যে লোক বিএমডব্লিউ কিনতে পারে,তার নিশ্চয়ই অন্ততঃ আরেকটা গাড়ি থাকবেই..... কিন্তু সিএনজি -তে করে তার মেয়ে কে আসতে বলা কেন ??
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন
গল্প ভালো লাগলো ইমনদা
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ... যে লোক বিএমডব্লিউ কিনতে পারে,তার নিশ্চয়ই অন্ততঃ আরেকটা গাড়ি থাকবেই..... কিন্তু সিএনজি -তে করে তার মেয়ে কে আসতে বলা কেন ??
ঠিক।
ভুলটা আমারই। অন্য ভাবে লেখা উচিত ছিল।
অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগার জন্য
৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৯
কবির চৌধুরী বলেছেন: ভাল লাগলো
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৮| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৪
বিনবি বলেছেন:
শহরের ধড়াচূড়া ছেড়ে
চাষীর মাথাল মাথায়
মন চল গ্রামের ঠিকানায়।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: বাহ্ ।
কবি বিনবি
৯| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫২
সাকিন উল আলম ইভান বলেছেন: bastobotai ta ki somvob,amar mone hoi na,lekha valo hoyeche vhaiya.
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আমিও জানি যে অনেক ক্ষেত্রেই এমনটা বাস্তবে সম্ভব না। তবে এটা গল্প ...যে গল্পে লেখা হয় মানুষের চিরন্তন স্বপ্নের কথা ...
অনেক ধন্যবাদ।
১০| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:০৮
সজীব আকিব বলেছেন:
কিন্তু এই সুপ্তিরা তো শুধু কল্পনায়ই থাকে।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ।
তবে কল্পনাও তো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
১১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২১
নীল ভোমরা বলেছেন:
বর্তমান সময়কে প্রেমপাক্ষানে ভালই ব্লেন্ড করেছেন! ভাল লাগলো!
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৭:১২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৮:৩৬
সামী মিয়াদাদ বলেছেন: সুন্দর....মানবিক
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৮:৪০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৫৬
নাআমি বলেছেন: একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে গেলাম.......
কি চমৎকার লেখেন আপনি.......মনটা জুড়িয়ে গেল......।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৩৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:১৮
এম চৌধুরী বলেছেন: জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/
জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন।