নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কি বলিব আর/বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার: শাহ্ আবদুল করিম- এর অনিবার্য আর্তনাদ

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৩০

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম তাঁর স্ত্রী আপ্তাবুন্নেসাকে আদর করে সরলা বলে ডাকতেন। তবুও আমি কি বলিব আর/বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার- বাউল সম্রাটের এই সুরেলা আর্তনাদ সরলা-বিরহে নয়। এ আর্তনাদের মর্ম অতি গূঢ় ও গভীর । এই বিচ্ছেদ বাউল সম্রাটের মনের মানুষের সঙ্গে, যিনি সর্বদা মনের মাঝে বিরাজ করেন । তথাপি দেখা দেন না। লালন এই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এভাবে:



কে কথা কয় রে দেখা দেয় না

নড়েচড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম- ভর মেলে না।





যিনি লালন কিংবা শাহ আবদুল করিমের মনের মানুষ, তিনিই রবীন্দ্রনাথ-এর নাথ । তারই বিচ্ছেদে রবীন্দ্রনাথের আর্তনাদ যেন আরও মর্মান্তিক:



কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে

অন্ধজনে নয়ন দিয়ে অন্ধকারে ফেলিলে

বিরহে তব কাটে দিনরাত হে।





রবীন্দ্রবাউল-এর এই প্রকাশ যেন বিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। উন্নত চেতনার অধিকারী মানুষ বিবর্তনের ধারায় দৃষ্টিশক্তি লাভ করল । এর আগে সে দৃষ্টিহীন ছিল- অন্ধ ছিল বলেই । কিন্তু দৃষ্টিশক্তি পেয়ে কী লাভ হল। বিবর্তনের যে কর্তা, তাকেই তো ‘চোখের আলোয়’ দেখা গেল না। যে কারণে বাউল রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপ করছেন: অন্ধজনে নয়ন দিয়ে অন্ধকারে ফেলিলে ! এই আক্ষেপই শাহ আবদুল করিমের গানে ‘অঙ্গার’ রূপে বর্ণিত হয়েছে।

আর শ্রীহট্টের বৈষ্ণব-বাউল রাধারমন দত্তও সে অঙ্গারের অসহনীয় তাপদাহে জীবনভর পুড়েছিলেন কৃষ্ণশূন্য রাধাসম । তাঁর একটি গানে আমরা সে তিলতিল যন্ত্রণা টের পাই যেন:



আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়





লালন জানতেন অন্তরের বন্ধুর দর্শন সহজ নয়। যে কারণেই গাইলেন দীর্ঘশ্বাসময় এক গান :



পাবে সামান্যে কি তার দেখা

বেদে নাই যার রূপরেখা ।





(কি অসামান্য বিবৃতি! বেদে নাকি ঈশ্বরের রূপরেখা নেই! কেবল লালনের পক্ষেই এমন ভাবনা সম্ভব। যিনি (নদীর) মোহনাকে শুকনো কল্পনা করতে পারেন। অমাবশ্যায় পূর্ণিমা দেখেন ... )





শ্রীহট্টের মরমী হাছন রাজাও জীবনভর একটি প্রশ্নে তাড়িত হয়েছেন।



বাউলা কে বানাইল রে

হাছন রাজারে বাউল কে বানাইল রে।





যিনি লালনের মনের মানুষ, তিনিই হাছন রাজার কানাই। কানাই-এর লীলখেলা যেন হাছন বুঝতে পারছেন:



কানাই তুমি খের খেলাও কেনে

রঙ্গে রঙিলা কানাই

কানাই তুমি খের খেলাও কেনে

এই কথাটা হাছন রাজার উঠে মনে মনে।





কিন্তু, কে কানাই? কি তার স্বরূপ? হাছন রাজা বিশ্বাস করতেন যে কানাই স্বর্গে থেকে এ জগতে এসেছেন।



স্বর্গপুরী ছাইড়া কানাই আইলা এই ভূবনে।

হাছন রাজায় জিগ্যাস করুইন

আইলা কোন কারণে?





কানাই-এর সঙ্গে হাছন রাজার নিগূঢ় সর্ম্পকের একটা ব্যাখাও দিয়েছেন হাছন রাজা ।



হাছন জিগ্যাস করুইন কানাই কোন জন?

ভাবনা চিন্তা কইরা দেখি কানাই যে হাছন!





এবার যেন বোঝা গেল কেন হাছন নিজেকে বাউলা বলেন। এই কানাই আবার হাছন রাজার মওলা। ( এবং এটি বৈষ্ণব/মারেফাত সমন্বয়ের উৎকৃষ্ট এক উদাহরণ) হাছন রাজা প্রশ্ন করেছিলেন: বাউলা কে বানাইল রে হাছন রাজারে বাউল কে বানাইল রে। উত্তরটি হাছন রাজা নিজেই দিয়েছেন:



বানাইল বানাইল বাউলা তার নাম হয় যে মওলা।

দেখিয়া তার রূপের চটক হাছন রাজা হইল আউলা।





বাউল দর্শনের গোড়ার কথাটা তো আমাদের জানা আছে। মানুষের মধ্যে মওলা বাস করেন। যে মওলা- মায়া লাগায়, পিরিতি শিখায় দেওয়ানা বানায় ...এই ভাবনাটি শাহ আবদুল করিম-এর একটি গানে প্রকাশ পেয়েছে এভাবে



(বন্ধে=বন্ধু) মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে দিউয়ানা বানাইছে

কি যাদু করিয়া বন্ধে মায়া লাগাইছে ...





মানবঅন্তরে বাস করে মানবেরে যিনি মায়া লাগান তিনিই তো রবীন্দ্রনাথের প্রাণের মানুষ। জীবনভর এই প্রাণের মানুষের সন্ধান রবীন্দ্রনাথকে বাউল করেছে। সেই প্রাণের মানুষ সম্বন্ধে রবীন্দ্রবাউল একতারা হাতে নেচে নেচে গাইছেন:



আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে

তাই হেরি তাই সকল খানে ...





যে রবীন্দ্রনাথের প্রাণের মানুষ সেই আবার মারাফাতপন্থীদের দয়াল-মাওলা। তিনিই আবার ‘আয়নার কারিগর’। সেই আয়নার কারিগর দয়াল-মাওলার উদ্দেশ্যে এক মারফতি বাউলার আর্তনাদ:



দয়াল আমার ভাঙা তরী

অকূলে দিয়েছি পারি ...





বাংলার ভাব জগতে যা মনের মানুষ, প্রাণের মানুষ, কানাই কিংবা দয়াল মাওলা, ইউরোপীয় দর্শনের পরিভাষায় তাই Ultimate Reality. আসলে কি এই Ultimate Reality কে জানা যায়? কিংবা জানা সম্ভব? না, নাকি এ কেবলি অনুভবের বিষয়? যে অনুভূতি অলীক কিংবা ছলনাও তো হতে পারে। এ সমস্ত ভেবে ভেবে শাহ্ আবদুল করিম- এর অনিবার্য আর্তনাদ কেবল কানে ভাসে-



আমি কি বলিব আর

বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার ...

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৪১

তানভীরসজিব বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট....দারুন বরা্বরের মতোই ।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:১৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৪৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: লেখক বলেছেন-
আসলে কি এই Ultimate Reality কে জানা যায়? কিংবা জানা সম্ভব? না, নাকি এ কেবলি অনুভবের বিষয়? যে অনুভূতি অলীক কিংবা ছলনাও তো হতে পারে। "-

কেন ভায়া! এই শংকা! একি মিষ্টি মূখে দিতে ভয় থেকেই- যদি মিঠা না লাগে???
খৈয়েই দেখূন না ;)

না এ ছলনা নয়। এ ধ্রুব সত্য। তবে এ সত্যে পৌছানোর আত্মায়না পরিস্কারের যে পথ সেটা একটু কঠিন বলেই মানুষ পিছিয়ে যায় বারবার- আর শংকা মনে ভাবে কি জানি বাপু!!! :)
তবে যে পৌছে গেছৈ, সে লাভ করেছে। সে শুধু আপন কল্প জগতে নয় বাস্তবেও সেই স্বরুপ সন্ধানে সপল হলে পরের যে আল্টিমেট ভুবন- যেখানে যাওয়া থেকে কারও নিস্তার নেই সেখানের সাফল্যময় ভ্রমনের জীবন যাপনের সু-বন্দোবস্ত করে যাচ্ছে।
আর এ যেন মহা বিজ্ঞানময় এক শাস্ত্র। যেখানে নিত্য সত্য নিত্যই নব নব রুপে নতুন জ্ঞানে পূর্ণ থেকে পূর্ণতর রুপ লাভ করে।

সেই ভূবনে আপনার সাফল্য কামনা করছি।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:১৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: সাফল্য কামনার জন্য ধন্যবাদ।
তবে এত কথার পরও কিন্তু সংশয় কিছু থেকে গেল :)

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৫১

শব্দহীন জোছনা বলেছেন:
শাহ্ আবদুল করিম- এর অনিবার্য আর্তনাদ কেবল কানে ভাসে-

আমি কি বলিব আর বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার ...

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:২২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: পাগল আবদুল করিম গায়-ভুলিতে পারিনা আমার মনে যারে চায়
কূলনাশা পিরিতির নেশায় কূলমান গেছে
দেওয়ানা বানাইছে/ কি যাদু করিয়া বন্ধে মায়া লাগাইছে ...

৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৫৭

তাশফী বলেছেন: বাংলার বাউল রাজা শাহ্ আবদুল করিম, তাকে জানাই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা, তার গান আজো আমাদের প্রাণে যোগায় প্রাণশক্তি

আমি কি বলিব আর বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার ...

আমি কি বলিব আর বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার ...

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:২২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:২২

গানচিল বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষন।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:২৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: সম্ভব হলে দয়াল-বাবা কেবলা-কাবা আয়নার কারিগর এই গানটির গীতিকার সুরকার সম্পর্কে কোনও তথ্য থাকলে আমাকে জানাবেন।
অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৫২

শিরীষ বলেছেন:
"আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে,
তাই হেরি তায় সকল খানে।।
আছে সে নয়নতারায় আলোক-ধারায়, তাই না হারায়–
ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
তাকাই আমি যে দিক-পানে।।
আমি তার মুখের কথা শুনব ব’লে গেলাম কোথা,
শোনা হল না, হল না–
আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি
শুনি তাহার বাণী আপন গানে।।
কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল বেশে দ্বারে দ্বারে,
দেখা মেলে না, মেলে না–
তোরা আয় রে ধেয়ে, দেখ্‌ রে চেয়ে আমার বুকে–
ওরে দেখ্‌ রে আমার দুই নয়ানে।।"

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৩০

ইমন জুবায়ের বলেছেন:

ডাকব না, ডাকব না অমন করে বাইরে থেকে।
পারি যদি অন্তরে তার ডাক পাঠাব, আনব ডেকে॥
দেবার ব্যথা বাজে আমার বুকের তলে,
নেবার মানুষ জানি নে তো কোথায় চলে--
এই দেওয়া-নেওয়ার মিলন আমার ঘটাবে কে॥
মিলবে না কি মোর বেদনা তার বেদনাতে--
গঙ্গাধারা মিশবে নাকি কালো যমুনাতে গো।
আপনি কী সুর উঠল বেজে
আপনা হতে এসেছে যে--
গেল যখন আশার বচন গেছে রেখে॥

৭| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৪৪

আধাঁরি অপ্সরা বলেছেন: আমি কি বলিব আর বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার ...

চমৎকার পোস্ট! :)

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৩০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৮| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৩৬

মুনসী১৬১২ বলেছেন: আমি নাগরিক কবিয়াল করি নগরের ধর্ম পালন-------------

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৫৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধর্ম তো আছে ...

৯| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৭

শশী হিমু বলেছেন: দারুন ১ টা পোস্ট!

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৫

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

১০| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:১৩

সানজিদা হোসেন বলেছেন: সুন্দর

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:১৫

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)

১১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:০৪

কামরুল হাসান শািহ বলেছেন: দারুন দারুন দারুন



প্রিয়তে

১০ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:৪০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: !:#P !:#P !:#P !:#P

১২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:১৮

রেজোওয়ানা বলেছেন: লেখা তো যাথারিতী চমৎকারই সেই সাথে বিদ্রোহী ভৃগুর মন্তব্যটিও ভাল লাগলো....

১০ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৩১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)

১৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৪২

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: দারুন...................!

২১ শে অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:৫০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.