![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
উনিশ শতকের কলকাতা। শহরটির পশ্চিম প্রান্তে বইছে গঙ্গা নদী। সে নদী কত বিস্ময়কর ঘটনারই না সাক্ষী। ‘১৬৯০ সনের ২৪ আগষ্ট। জোব চার্নক নামলেন গঙ্গাতীরের সুতানুটির ঘাটে। 'বুনো, জংলী, জলাকীর্ণ সুতানুটি।’ (পূর্ণেন্দু পত্রী। পুরনো কলকাতার কথাচিত্র। পৃষ্ঠা,১০৯) জোব চার্নক গঙ্গাতীরে নামার পর থেকেই তো জেগে উঠল কলকাতা। ঠিক সে রকমই গঙ্গাতীরে আরেকটি রূপকথার মতন এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল। যে বিস্ময়কর ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজন বিশিষ্টি বাঙালি সাধক। এদের একজন রামকৃষ্ণ পরমহংদেব, অন্যজন সারদা মা এবং স্বামী বিবেকানন্দ।
সময়টা ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ। এগারো বছরের একটি ছিপছিপে সুশ্রী বালিকা নদীর তীরে জল নিতে এসেছে। অত্যন্ত রূপবতী শাড়ি পরা বালিকাটির দীঘল কালো চুল, চোখ দুটি যেন আয়ত হরিণ চোখ, গায়ের রং তপ্তকাঞ্চনবর্ণা। নদীতে একটি বজরা নৌকা ভেসে চলেছে। বজরায় রাজচন্দ্র নামে এক যুবক বন্ধুদের সঙ্গে তীর্থে যাচ্ছিল। হাস্যজ্জ্বল বন্ধুদের মধ্যে রাজচন্দ্র কে কেমন বিমর্ষ দেখায়। তার কারণ আছে। তার পর পর দুটি স্ত্রী মারা গিয়েছে।তার আর বিবাহ করার ইচ্ছে নেই; রাজচন্দ্র দীর্ঘ এক নিঃসঙ্গ জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে রয়েছে। সহসা রাজচন্দ্রর দৃষ্টি গঙ্গা তীরের সুশ্রী বালিকাটির দিকে পড়ে। সে গভীর বিস্মিত হয়ে পড়ে। রূপমুগ্ধ রাজচন্দ্র তৎক্ষনাৎ বজরা নদীর ঘাটে বাঁধার নির্দেশ দেয়। বন্ধুদের অতি সত্ত্বর বালিকাটি সম্বন্ধে খোঁজখবর করতে পাঠায়।
জানা গেল বালিকার নাম রাসমণি (জন্ম ১৭৯৩ সন)। বাবার নাম হরেকৃষ্ণ দাস, জাতি কৈবর্ত। হরেকৃষ্ণ দাস সব শুনলেন। তবু পাত্র সম্বন্ধে খোঁজখবর করলেন। জানা গেল রাজচন্দ্র বেশ ধনী। লবন ও চিনির ব্যবসা ছাড়াও আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে পাত্রের । তা ছাড়া ইংরেজদের কৃপাদৃষ্টি তো রয়েছেই । সবচে বড় কথা হল- রাজচন্দ্র মাহিষ্য গোত্রীয়- অর্থাৎ পালটি ঘর। ড. অতুল সুর লিখেছেন, ‘বর্তমানে চাষী কৈবর্ত্যরা, তার মানে উচ্চশ্রেণীর কৈবর্ত্যরা ‘মাহিষ্য’ নামে পরিচিত।’ (বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। পৃষ্ঠা ; ৪৯; জিজ্ঞাসা । কলকাতা।)
সুতরাং বিয়ে হয়ে গেল। রাজচন্দ্র টের পেলে তার নবপরিণীতা বধূটি অত্যন্ত তেজস্বিনী, ধর্মপরায়ণা এবং সুলক্ষণা। সুলক্ষণা এই কারণে যে- বিয়ের পর থেকে রাজচন্দ্রের ব্যবসাবানিজ্য যাকে বলে একেবারে ফুলে ফেঁপে উঠতে লাগল।
দেখতে দেখতে রাসমণি চারটি কন্যার জননী হলেন । তিন মেয়ের বিবাহ দিলেন। তৃতীয় কন্যাটি অবশ্য বেঁচে রইল না। সে কন্যার জামাইয়ের নাম মাথুরনাথ বিশ্বাস। ছেলেটি বিনয়ী সৎ এবং ধার্মিক। রাসমণি চতুর্থ কন্যার সঙ্গে মাথুরনাথ- এর বিয়ে দিলেন। এবং মাথুরনাথ কে এসটেটের ম্যানেজার নিযুক্ত করলেন।
রাজচন্দ্র মারা গেলেন । স্বামীর শ্রাদ্ধের সময় দু’হাতে দান করলেন রাসমণি। ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ‘শূলপানির মতে, সম্বোধন পদের দ্বারা আহুত উপস্থিত পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশ্যে হবিত্যাগের নাম শ্রাদ্ধ।রঘুনন্দন বলিয়াছেন যে, বৈদিক প্রয়োগাধীন আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাপূর্বক অন্নাদি দানের নাম শ্রাদ্ধ।’ (বাংলাদেশের ইতিহাস। ২য় খন্ড। মধ্যযুগ। পৃষ্ঠা ২৪৩) তো, শ্রাদ্ধ কয়েক ধরণের হতে পারে। যেমন, দানসাগর নামে এক ধরনের শ্রাদ্ধ আছে। এটি প্রয়াত স্বামীর হিতকামনায় করা হয়ে থাকে। তো, বিধবা রাসমণি সেই দানসাগর শ্রাদ্ধে দুদিন ধরে মুঠো মুঠো ধন ধান করলেন। তারপর করলেন তুলট। ‘বড় একটি দাড়িপাল্লা-শুদ্ধ বস্ত্র পরিহিতা রাসমণি বসলেন একটি পাল্লায়, অন্যটিতে মুদ্রা তোলা হল। রাসমণি দেহের ওজন হল ছয় হাজার সতেরোটি মুদ্রার সমান। পন্ডিত ব্রাহ্মণদের মুদ্রাগুলি দান করা হল।’ (রণজিৎ কর: সনাতনধর্ম : মত ও মতান্তর। পৃষ্ঠা;১২০)
রাজচন্দ্র মৃত্যুর আগে কলকাতার মানুষ রাসমণির নাম জানত না। কারণ রাজচন্দ্রের মতো ধনী কলকাতা শহরে আরও অনেকেই ছিল। ধনীদের বউঝিদের নাম দিয়ে কে মাথা ঘামায়। কিন্তু, কলকাতার মানুষ রাজচন্দ্রের শ্রাদ্ধের পর বলাবলি করতে লাগল: ‘হ্যাঁ, রাণী রাসমণি দয়ালু বটে।’ স্বামীর নাম রাজচন্দ্র হওয়ায় রাসমণির নামের আগে মুখে মুখে ‘রাণী’ যোগ হয়ে গেল। রাণী রাসমণি সত্যিকারের রাণী ছিলেন না বটে, তবে পৃথিবীর অনেক রাণীই তাঁর সমকক্ষ ছিল না। কেননা, রাণী রাসমণি অকাতরে দান করছেন। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিষয়-সম্পত্তি। অতুল বিত্ত বৈভবে মধ্যে থেকেও রাণী রাসমণি অত্যন্ত শুদ্ধাচারিণী। বিশেষ বিশেষ তিথিতে ভূমিশয্যা গ্রহন করেন।
রাণী রাসমণি ছাড়া তৎকালীন কলকাতার ধনীদের মধ্যে আরেকটি ঋষিসম মানুষ বিলাসব্যসন ত্যাগ করেছিলেন । তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।তবে রাণী রাসমণির সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির কিছু দ্বন্দের কথা জানা যায়।দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পিতা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর রাণী রাসমণির স্বামী রাজচন্দ্রের কাছ থেকে দু লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। সেই টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না -পারাতে ঠাকুরদের জমিদারির একটি পরগণা রাণী রাসমণি অধিগ্রহন করেন।দ্বন্দের এই কারণ। আবার সেই অর্থনৈতিক দ্বন্দ ধর্মীয় রূপ নিয়েছিল। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নিরাকার ব্রাহ্ম ধর্মে বিশ্বাসী। অপরদিকে রাণী রাসমণি পুজা করতেন সাকার ঈশ্বরের । এ নিয়ে দুটি বনেদি পরিবারের সূক্ষ্ম রেষারেষি থাকতে পারে। এবং সেজনেই হয়তো রাণী রাসমণি বিশাল একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছিলেন। এবং এই মন্দির প্রতিষ্ঠার সূত্রেই রাণী রাসমণি পরিচিত হবেন রামকৃষ্ণ নামে এক বিদগ্ধ সাধকের সঙ্গে। দেহ ছাড়া যেমন আত্মাকে কল্পনা করা যায় না তেমনি রাণী রাসমণি ছাড়া রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা ভাব অকল্পনীয় ...
রাণী রাসমণি একবার কাশী গিয়ে তীর্থ করবেন বলে মনস্থ করলেন। কাশী অনেক দূরের পথ। এবং সে পথ নিরাপদ নয়। কাজেই বজরায় অস্ত্রধারী প্রহরী এবং ছয় মাসের জন্য দরকারি খাদ্যদ্রব্য তোলা হল ।গঙ্গায় পঁচিশটি বজরা ভাসল । সে যা হোক। বজরা ভেসে চলেছে। এক রাতে রাণী রাসমণি স্বপ্ন দেখলেন। স্বয়ং মা কালী তাকে বলছেন, ‘গঙ্গাতীরে মন্দির প্রতিষ্ঠা কর। আমি তোর হাতের পুজা গ্রহন করব।’ তারপর ঘুম ভাঙল বটে কিন্তু রাণী রাসমণির ঘোর কাটে না। স্বপ্নকে একেবারে সত্যি মনে হল।
পরদিনই রাণী রাসমণি বজরা থামানোর নির্দেশ দিলেন। সমস্ত জিনিসপত্র স্থানীয় দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে কলকাতার জানবাজারের বাড়িতে ফিরে এলেন । ম্যানেজার (মেয়েজামাই) মথুরবাবুকে ডেকে রাণী রাসমণি বললেন গঙ্গার তীরে জমি দেখতে।
গঙ্গার পূর্বতীরে দক্ষিণেশ্বর গ্রামে সাড়ে চুয়ান্ন বিঘা জমি পাওয়া গেল বটে তবে দাম হাঁকা হল সাড়ে বিয়াল্লিশ হাজার টাকা। রাণী রাসমণি কিনে নিলেন চুয়ান্ন বিঘা জমি এবং অবিলম্বে মন্দিরের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিলেন । শ্রমিকরা গঙ্গার তীর বাঁধিয়ে ফেলল। তৈরি হল বিরাট স্নানের ঘাট; নির্মিত হল দ্বাদশ শিবমন্দির, বিষ্ণুমন্দির, নবরতত্ন চূড়াযুক্ত কালী মন্দির ও নাট মন্দির। শ্রীম কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত বইতে এসব মন্দিরের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণরা বলল, জানবাজারের জমিদার পত্নী রাণী রাসমণি জাতে শূদ্র। তিনি মন্দির নির্মাণ করলে তা হবে অশাস্ত্রীয়। রাণী রাসমণি হতাশ হলেন। এদেরই স্বামীর শ্রাদ্ধে নিদের দেহের ওজনের সমান ছয় হাজার সতেরোটি মুদ্রার সমান ধনরত্ন দিয়েছিলেন।রাণী রাসমণি হতাশ হলেন তবে ভেঙে পড়লেন না । তিনি আরও মুদ্রা ব্যয় করে ব্রাহ্মণদের মুখ বন্ধ করলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণরা এবার বললেন, মন্দিরের যাবতীয় সম্পদ কোনও ব্রাহ্মণকে দান করতে হবে।তারপর সেই ব্রাহ্মণ যদি মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন আর অন্নভোগের ব্যবস্থা করেন তবেই মন্দির প্রতিষ্ঠা শ্রাস্ত্রসম্মত হবে । নৈলে নয়।
তো, সেরকম একজন ব্রাহ্মণ পন্ডিতে খোঁজ করা হল। এবং পাওয়াও গেল। তো সেই ব্রাহ্মণের নাম রামকুমার ভট্টাচার্য। রাণী রাসমণি দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরটি রামকুমার ভট্টাচার্যকে উৎসর্গ করলেন। রামকুমারের বাড়ি যদিও হুগলীর কামারপুকুরের জয়রামবাটি গ্রামে। তবে তিনি কলকাতাতেই থাকেন। কলকাতার ঝামাপুকুরে একটি টোল খুলেছেন তিনি । গ্রাম থেকে সতেরো বছর বয়েসি ছোট ভাই কে নিয়ে এসেছেন। ভাইয়ের নাম গদাধর। চমৎকার গান করে গদাধর। যাত্রাপালার গান একবার শুনলেই মনে রাখতে পারে। তো, গদাধর সর্ম্পকে আরও কিছু কথা বলে নেওয়া দরকার । কারণ গদাধরই ভবিষ্যতের রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।
গদাধরের পুরো নাম গদাধর চট্টোপাধ্যায় । ওই হুগলীর কামারপুকুর জয়রামবাটি গ্রামেই জন্ম ১৮৩৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। বাবার নাম ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়, মায়ের নাম চন্দ্রমনি দেবী। পরিবারটি অতিশয় দরিদ্র। বালক গদাধরকে পাঠশালায় পাঠানো হয়েছিল ; সে অংকে ভালো ছিল। তুখোর উপস্থিত বুদ্ধি। নতুন নতুন ধাঁধাঁ তৈরি করার বিরল প্রতিভা ছিল। তবে ওই দারিদ্রের কারণেই লেখাপড়া বেশিদূর এগুলো না। পারিবারিক পেশা মূর্তিগড়া। বালক তাই করতে লাগল। তারপর তো বড়ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতায় চলে এল।
রাণী রাসমণি দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরটি রামকুমার ভট্টাচার্যকে উৎসর্গ করলেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন ধার্য করা হল জ্যৈষ্ঠ পৌর্ণমাসী তিথিযোগে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার দিন (৩১ মে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ)। এক লক্ষ অতিথিকে নিমন্ত্রণ করা হল। সেই সঙ্গে আর ও অনেক মানুষ যোগ দিয়েছিল সে উৎসবে। রাণী রাসমণির নির্দেশ ... কেউ যেন না খেয়ে যায়, দান গ্রহন না করে যায়। একজন ধর্মপরায়ণা ও দানশীলা নারী হিসেবে রাণী রাসমণির নাম এরই মধ্যে কলকাতা ছাড়িয়ে গয়া-কাশী-মথুরা বৃন্দাবন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।
দক্ষিণেশ্বর রানী রাসমনির মন্দিরের ওপর ব্লগার রাজীব দে সরকারের একটি পোস্ট
রামকুমার ভট্টাচার্যই নিযুক্ত হলেন দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরের প্রথম পূজারী। কিন্তু মন্দিরের প্রতিদিনের পুজা এবং অন্যান্য কাজ তিনি একা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তিনি গ্রাম থেকে মেজভাই রামেশ্বরকেও ডেকে আনলেন। সেই সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই গদাধরকে মাসিক ৫ টাকা বেতনে মন্দিরের সেবায়েত নিযুক্ত করা হল। গদাধর ছিলেন সহজ সরল এবং সৎ। সবাই তঁাঁকে সমীহ করত। এমন কী রাণী রাসমণির জামাতা /ম্যানেজার মথুরবাবুও। গদাধর রাণী রাসমণির দৃষ্টি আকর্ষন করলেন। রাণী রাসমণি গদাধরকে স্নেহ করতেন। হয়তো গদাধরের চোখে নির্মল ধ্যানী দৃষ্টি দেখে বিস্মিত হয়ে যেতেন। পরে রাণী রাসমণির স্নেহ পর্যবেশিত হল শ্রদ্ধায় ।
১৮৫৯ সন। গদাধরের বয়স ২২ কি ২৩। বিয়ে করলেন সারদাদেবীকে। সারদাদেবীর বয়স তখন মাত্র ৬। ছেলেপুলে হয়নি। সারদাদেবী বাঙালির কাছে সারদা মা নামে পরিচিত। সারদা মা পরম প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। বলেছিলেন, “সন্তোষের সমান ধন নেই, আর সহ্যের সমান গুণ নেই।" এ পোস্টের শুরুতে বলেছিলাম ... কলকাতা শহরটির পশ্চিম প্রান্তে বইছে গঙ্গা নদী। সে নদী কত বিস্ময়কর ঘটনারই না সাক্ষী। রাণী রাসমণি, দক্ষিণেশ্বরের মন্দির, ঠাকুর রামকৃষ্ণ, সারদা মা, স্বামী বিবেকানন্দ, বেলুর মঠ ... এতগুলি দেবালয় এবং এতগুলি আলোকিত মানুষ গঙ্গাপাড়ের দক্ষিণেশ্বর গ্রামে একসূত্রে বাঁধা পড়ল -এ কি বিস্ময়কর নয়?
১৮৬২ সন। রাণী রাসমণি মারা গেলেন। ততদিনে গদাধর চট্টোপাধ্যায় আপন আত্বিক শক্তিতে ঠাকুর রামকৃষ্ণে উত্তীর্ণ হয়েছেন, ভক্তদের কাছে পরমহংসদেব নামে পরিচিত হয়েছেন। কিন্তু এই পরমহংসদেব শব্দটির অর্থ কি? উইকিপিডিযায় লিখেছে: Paramahamsa (পরমহংস), also spelled paramahansa or paramhansa, is a Sanskrit religio-theological title of honor applied to Hindu spiritual teachers of lofty status who are regarded as having attained enlightenment.
মথুরবাবু অবশ্য রাণী রাসমণির মৃত্যুর পর রামকৃষ্ণের দেখাশোনা করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর অবশ্য রাণী রাসমণির পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম রামকৃষ্ণের আর কোনও খোঁজখবর নেয়নি।
কিন্তু, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কেন এত বিখ্যাত?কেন আমি একুশ শতকে বসে তাঁর কথা লিখছি? কেন তাঁর বাণী শ্রবণ করার জন্য আজও ভক্ত বাঙালি এত ব্যাকূল বোধ করে, অস্থির হয়ে দক্ষিণেশ্বরে ছুটে যায়। কেন তাঁর জীবনী ও বাণী অনুদিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ? বোধকরি এর প্রথম কারণ ঠাকুর রামকৃষ্ণ সমাজের বিদ্যমান অনাকাঙ্খিত অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণটি অত্যন্ত স্পস্ট করেই চিহ্নিত করেছিলেন। সমবেত ভক্তদের সামনে ক্রমাগত ধনসম্পদ (কাঞ্চন) ও নারীলিপ্সার (কামিনী) বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতেন । মধুর ভাষায় বলতেন, ‘কামিনী -কাঞ্চন অনিত্য। ঈশ্বরই একমাত্র বস্তু। টাকায় কি হয়? ভাত হয়, ডাল হয়, কাপড় হয়, থাকবার জায়গা হয়, এই পর্যন্ত। কিন্তু এতে ভগবান লাভ হয় না। তাই টাকা জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। এর নাম বিচার। বুঝেছ।’(শ্রীম কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত। পৃষ্ঠা, ১৮)
রামকৃষ্ণ নিজে কিছু লিখেননি। ভক্তদের সামনে কথা বলতেন একেবারে তাঁর নিজস্ব ঢংয়ে, ভাষায়। অত্যন্ত সহজ সরল যে ভাষাটি ছিল হুগলী জেলার গ্রামীণ ভাষা। ভক্তদের রামকৃষ্ণ বলতেন:
‘ঈশ্বরের নাম গুণ গান সর্বদা করতে হয়। আর সৎসঙ্গ -ঈশ্বরের ভক্ত বা সাধু, এঁদের কাছে মাঝে মাঝে যেতে হয়। সংসারের ভিতর ও বিষয় কাজের ভিতর রাতদিন থাকলে ঈশ্বরে মন হয় না। মাঝে মাঝে নির্জনে গিয়ে তাঁর চিন্তা করা বড় দরকার। প্রথম অবস্থায় মাঝে মাঝে নির্জন না হ’লে ঈশ্বরে মন রাখা বড়ই কঠিন।
যখন চারাগাছ থাকে, তার চারিদিকে বেড়া দিতে হয়। বেড়া না দিলে ছাগল-গরুতে খেয়ে ফেলে।
ধ্যান করবে মনে কোণে ও বনে। আর সর্বদা সদসৎ বিচার করবে। ঈশ্বরই সৎ, কিনা নিত্যবস্তু, আর সব অসৎ, কিনা অনিত্য। এই বিচার করতে করতে অনিত্য বস্তু মন থেকে ত্যাগ করবে।
সব কাজ করবে। কিন্তু মন ঈশ্বরে রাখবে। স্ত্রী পুত্র বাপ মা সকলকে নিয়ে থাকবে ও সেবা করবে। যেন কত আপনার লোক। কিন্তু মনে জানবে যে তারা তোমার কেউ নয়।
কচ্ছপ জলে চরে বেড়ায় কিন্তু তার মন কোথায় পড়ে আছে জান? -আড়ায় পড়ে আছে। যেখানে তার ডিমগুলি পড়ে আছে। সংসারের সব কর্ম করবে কিন্তু ঈশ্বরে মন ফেলে রাখবে।
তেল মেখে তবে কাঁঠাল ভাঙতে হয়। তা না হলে হাতে আটা (গ্রামীণ উচ্চারণ) জড়িয়ে যায়। ঈশ্বরের ভক্তিরূপ তেল লাভ করে তবে সংসারের কাজে হাত দিতে হয়।
কিন্তু এই ভক্তি লাভ করতে হলে নির্জন হওয়া চাই। মাখন তুলতে গেলে নির্জনে দই পাততে হয়। দইকে নাড়ানাড়ি করলে দই বসে না। তারপর নির্জনে বসে সব কাজ ফেলে দই মন্থন করতে হয়। তবে মাখন তোলা হয়।
আবার দেখ, এই মনে নির্জনে ঈশ্বরের চিন্তা করলে জ্ঞান বৈরাগ্য ভক্তি লাভ হয়। কিন্তু সংসারে ফেলে রাখলে ঐ মন নীচ হয়ে যায়। সংসারে কেবল কামিনী-কাঞ্চন চিন্তা।’ (শ্রীম কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত। পৃষ্ঠা, ১৭)
শ্রীম কথিত রামকৃষ্ণের বাণী শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত পাঠ করতে করতে এই ভেবে বিস্মিত বোধ করি যে রাণী রাসমণি দেবী কালী কৃত্বর্ক স্বপ্নে গঙ্গা পাড়ের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার আদেশ পেলেন; কিন্তু রাণী রাসমণি স্বপ্নেও কি ভেবেছিলেন যে দক্ষিণেশ্বরের কালি মন্দিরের ৫ টাকা বেতনের গদাধর চট্টোপাধ্যায় নামে হুগলীর এক গ্রামের এক সেবায়েত ভবিষ্যতে হয়ে উঠবেন ভারতবিখ্যাত এক সাধক? যাঁর ভক্তেরা আজও আকূল হয়ে রামকৃষ্ণকথামৃত পাঠ করে, দক্ষিণেশ্বরে ছুটে যান? এতে করে বোঝা যায় রামকৃষ্ণে ভক্তদের জীবনে রামকৃষ্ণের ভূমিকা আজও অটুট।
কিন্তু, বাংলার সামাজিক ইতিহাসে ঠাকুর রামকৃষ্ণে ভূমিকা ঠিক কোথায়?
ব্যাখ্যা করছি। রামকৃষ্ণ ছিলেন ভারতীয় ঐতিহ্যের দুটি বিরোধী ধারাক ধারক। তার মানে রামকৃষ্ণ ছিলেন একই সঙ্গে বেদান্তবাদী এবং তান্ত্রিক। ‘রামকৃষ্ণ’ নামটি তিনিই নিজেই গ্রহন করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তাঁর দেহে লীন হয়ে রয়েছেন পৌরাণিক ত্রেতাযুগের অবতার রাম এবং দ্বাপর যুগের ভগবান কৃষ্ণ । রাম হলেন ভারতবর্ষের লোকায়ত ঐতিহ্যের প্রতীক এবং কৃষ্ণ হলেন বহিরাগত আর্য সংস্কৃতির প্রতীক। ঠাকুর রামকৃষ্ণ নিজেকে এই দুই ধারার মিলনস্থল ভেবেছিলেন। বেদান্ত দর্শন আর্যদের চিন্তাভাবনা এবং তন্ত্র হল অনার্য লোকয়ত চিন্তাভাবনা । রামকৃষ্ণ ছিলেন এই দুটি চেতনার প্রচারক। অর্থাৎ তিনি ছিলেন পরস্পর বিরোধী ধারার একই অভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার পক্ষপাতী, বিরোধ কে জিইয়ে রাখা তাঁর মনঃপূত ছিল না। ‘যত মত তত পথ’- রামকৃষ্ণের এই গভীর উপলব্দিহাত উদ্ধতিটি বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু উচ্চারিত এবং বাংলার ইতিহাসে এই উদ্ধৃতিটির এক গভীর তাৎপর্য রয়েছে। ব্যাখ্যা করি। উনিশ এবং বিশ শতকের বাংলায় রাজা রামমোহন রায় থেকে বিধানচন্দ্র রায় বহু কীর্তিমান বাঙালির জন্ম হয়েছিল। এঁদের সাধনায় বাংলার সাহিত্য- বিজ্ঞান-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছিল এমন এক সময়ে যখন উনিশ শতকে বাঙালির ধনসম্পদের ওপর চলছিল ইংরেজ বেনিয়াদের নিমর্ম শোষণ। ছিয়াত্তরের (১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ) মন্বন্তর বাঙালির স্মৃতিতে তখনও দগদগে ঘায়ের মতো বিরাজ করছিল। গ্রামীণ এবং শহুরে বাঙালি পরিনত হয়েছিল ব্রিটিশ শাসন-শোষনে জর্জরিত এবং দিশেহারা। জাতি হিসেবে নিঃশেষিত হওয়া আগে টিকে থাকবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা শোষিত বাঙালি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচন্ড তাগিদ বোধ করে । একটি মহাযুদ্ধ যে আসন্ন সেটি তারা উপলব্দি করে। তবে প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি সমাজ নানা ধর্মমতে বিভক্ত। তা সত্ত্বেও সেই মহাযুদ্ধে বাংলার সাধারণ মানুষসহ সাধুসন্ন্যাসী, ফকিরদরবেশ, আলেম উলামা পীরদরবেশ প্রত্যেকেই আত্মহূতি দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই সামাজিক বৃহৎ ঐক্যের মুহূর্তে রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’-এই সর্বধর্ম সমন্বয়ের বাণী নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত বাঙালি কে নিশ্চয়ই গভীর ভাবে উদ্দীপ্ত করেছিল । কাজেই রামকৃষ্ণের এই অনন্য ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণেই বাঙালি তাঁর কাছে ঋণ স্বীকার করতেই হবে। বাংলার সামাজিক ইতিহাসে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভূমিকা এখানেই ...
আগে একবার উল্লেখ করেছিলাম দেহ ছাড়া যেমন আত্মাকে কল্পনা করা যায় না তেমনি রাণী রাসমণি ছাড়া রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা ভাবও অকল্পনীয় .. ঠিক সেরকমই ঠাকুর রামকৃষ্ণের আলোচনায় রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাণপুরুষ বিশিষ্ট বাঙালি যোগী স্বামী বিবেকানন্দর (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) প্রসঙ্গটি অনিবার্যভাবেই এসে যায়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দর দীক্ষাদাতা, মন্ত্রদাতা, অর্থাৎ গুরু । কিন্তু, স্বামী বিবেকানন্দ ঠাকুর রামকৃষ্ণর অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা কতটা অন্তরে ধারণ করতে পেরেছিলেন? এই প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। এ প্রসঙ্গে ড. আর. এম দেবনাথ তাঁর ‘সিন্দু থেকে হিন্দু’ বইতে লিখেছেন: “রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাণপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ১৮৯৮ সালে কাশ্মীরে একটি সাত-আট বছরের মুসলমান মেয়েকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করেন। (কৃষ্ণ কুমার দাস:প্রবন্ধ: কুমারী যখন দেবী: সংবাদ প্রতিদিন: কলকাতা: ২৬.৯.৯৮)। এই নিষ্পাপ ও পবিত্র মেয়েটি ছিল মাঝির কন্যা।” (পৃষ্ঠা, ৯০)
বিস্তারিত পাঠ করুন-
Click This Link
তথ্যসূত্র:
শ্রীম কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত (দে’জ পাবলিশিং । মাঘ ১৪০৮)
Click This Link
রণজিৎ কর: সনাতনধর্ম : মত ও মতান্তর (রুক্কু শাহ ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স; ফেব্রুয়ারি ২০১২)
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: প্রথম আলো (আনন্দ পাবলিশার্স)
এ আর দেবনাথ : সিন্ধু থেকে হিন্দু (রিডার্স ওডেজ; ২০০১)
http://en.wikipedia.org/wiki/Ramakrishna
উৎসর্গ: দীপান্বিতা অনেক দিন ধরেই যে আমাকে বলে আসছিল উনিশ শতকের কলকাতার ওই আলোকিত মানুষগুলি সম্বন্ধে লিখতে
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৩৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৪৫
গাজী খায়রুল হাসান বলেছেন: ভালো লাগলো।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৫৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:০১
কবিরাজ_কুশল বলেছেন: আপনার প্রতিটি পোস্টই অনেক তথ্যবহুল । অনেক ভালো লাগলো । আর পোস্টে প্লাস ।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৩
কোহিন বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম,
ভ্রাতা
এই বাংলা-পাক-ভারতবর্ষে অনেক কিছুরই অভাব রহিয়াছে। যাহা সংখ্যাই এতোই বেশী যে হয়তো গণনা করিয়া শেষ করা যাইবে না। কিন্তু আর যাহারই অভাব থাকুক পীর-ফকির, ঠাকুর-দরবেশের অভাব নাই। আবার আমাদের দারিদ্র্যতারও অভাব নাই। আমি বলিতেছি না যে এই সকল পীর-ঠাকুরগণ আমাদের অভাবের জন্য দায়ী। কিন্তু এতো সংখ্যক পীর-ঠাকুর থবকব সত্ত্বেও সকল বিষয়ে পশ্চিমা-শাসকগণের নিকট হেটমুন্ড হস্ত পাতিতে হয়। উহাই বড় পরিতাপের কথা। তখন এইসকল ঠাকুরগণ আর তাহাদের অনুসারীগণের অলৌকিক ক্ষমতাসকল কোথায় থাকে?
২. রামকৃষ্ণের উপর মবতব কালী নাকি ভর করিতেন। তখন ঠাকুর পরমহংসের বাহ্যজ্ঞান থাকিতো না। তাহা লুপ্ত হইয়া যাইতো। পশ্চিমবঙ্গের আরেক বুদ্ধিজীবী বাবু শিবনারায়ণ রায় তাহার এক কিতাবে লিখিয়াছিলেন যে দরিদ্র-পিতার সন্তান রামকৃষ্ণ মূলত মৃগীরোগে ভুগিতেন! সময়মতো চিকিত্সা না-করাইবার কারণে তাহা আর আরোড়গ্য হয় নাই। এই ঠাকুরই হইলেন অনেকের প্রাণের ঠাকুর। সারদা দেবীর কতাও কম শুনিতে পারা যায় না। তাহাদের অনেক অলৌকিক ক্ষমতা তাহাদের বরে নিঃসন্তানরমণীর সন্তান লাভ হইতো, দীন-দুখীদের দারিদ্র্যতা লাঘব হইতো অথচ তাহারা নিজেরাই ছিলেন নিঃসন্তান। ছিলেন দরিদ্র। অন্যের কৃপার উপর নির্ভর করিয়া জীবন কাটাইতে হইয়াছে। তাহাদের গুণবাণ শিষ্য বিবেকানন্দও দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। উহা কোনো অপরাধ নহে। কিন্তু ধর্মের কদলী বিক্রয় করিয়া অসহায়, হতাশাগ্রস্থ মানুষকে ধোকা দিয়া নিজের-নিজের বৈষয়িক উন্নতি করিতে দ্বিধা করেন নাই। দেশের মানুষ না-খাইয়া থাকিলেও পীর-ঠাকুরগণের চেহারার রশ্মি ক্রমাগত উজ্জ্বল হইতে থাকে। আমাদের এই বঙ্গেও তাহার নমুনা রহিয়াছে।
মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করিয়া যাহারা নিজের-নিজের বৈষয়িক উন্নতি ঘটাইয়াছেন (এখনও অনেকে ঘটাইতেছেন) তাহাদিগকে আর যাহাই হউক শ্রদ্ধা করিতে পারি না। তাহাদের অনুসারীগণকেও নহে।
পরম করুণাময় আমাদিগকে সৎ পথে চলিবার শক্তি দিন। ছহি-ছালামতে থাকিবেন।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৫২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনি লিখেছেন, এতো সংখ্যক পীর-ঠাকুর থবকব সত্ত্বেও সকল বিষয়ে পশ্চিমা-শাসকগণের নিকট হেটমুন্ড হস্ত পাতিতে হয়।
আপনার মন্তব্য সত্য। সবাই জানে। তবে দেবী কালীও যে স্বাধীনতার মন্ত্রে তরুণযুবকদের উজ্জ্বীবিত করেছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় সে কথাও উল্লেখ করলে ভালো হত। নাকি জানেন না?
আপনি লিখেছেন, এতো সংখ্যক পীর-ঠাকুর থবকব সত্ত্বেও সকল বিষয়ে পশ্চিমা-শাসকগণের নিকট হেটমুন্ড হস্ত পাতিতে হয়।
এখন যে পশ্চিমা-বিশ্বের মানুষ ভারতবর্ষের কাছে মাথা নত আত্ম্যাধতিব শান্তির জন্য মাথা নত করছেন। তা কি জানেন না?
আমার মৃগীরোগ আছে।
আপনি আমাকে ঘৃনা করবেন?
কেন?
আমি দরিদ্র বলে? আমার চিকিৎকার খরচ নাই বলে?
ছিঃ!
আপনি লিখেছেন...এই ঠাকুরই হইলেন অনেকের প্রাণের ঠাকুর।
রামকৃষ্ণ প্রাণের ঠাকুর হয়েছেন এই কথাগুলির জন্য ...
‘কামিনী -কাঞ্চন অনিত্য। ঈশ্বরই একমাত্র বস্তু। টাকায় কি হয়? ভাত হয়, ডাল হয়, কাপড় হয়, থাকবার জায়গা হয়, এই পর্যন্ত। কিন্তু এতে ভগবান লাভ হয় না। তাই টাকা জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। এর নাম বিচার। বুঝেছ।’(শ্রীম কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত। পৃষ্ঠা, ১৮)
রামকৃষ্ণ নিজে কিছু লিখেননি। ভক্তদের সামনে কথা বলতেন একেবারে তাঁর নিজস্ব ঢংয়ে, ভাষায়। অত্যন্ত সহজ সরল যে ভাষাটি ছিল হুগলী জেলার গ্রামীণ ভাষা। ভক্তদের রামকৃষ্ণ বলতেন:
‘ঈশ্বরের নাম গুণ গান সর্বদা করতে হয়। আর সৎসঙ্গ -ঈশ্বরের ভক্ত বা সাধু, এঁদের কাছে মাঝে মাঝে যেতে হয়। সংসারের ভিতর ও বিষয় কাজের ভিতর রাতদিন থাকলে ঈশ্বরে মন হয় না। মাঝে মাঝে নির্জনে গিয়ে তাঁর চিন্তা করা বড় দরকার। প্রথম অবস্থায় মাঝে মাঝে নির্জন না হ’লে ঈশ্বরে মন রাখা বড়ই কঠিন।
যখন চারাগাছ থাকে, তার চারিদিকে বেড়া দিতে হয়। বেড়া না দিলে ছাগল-গরুতে খেয়ে ফেলে।
ধ্যান করবে মনে কোণে ও বনে। আর সর্বদা সদসৎ বিচার করবে। ঈশ্বরই সৎ, কিনা নিত্যবস্তু, আর সব অসৎ, কিনা অনিত্য। এই বিচার করতে করতে অনিত্য বস্তু মন থেকে ত্যাগ করবে।
সব কাজ করবে। কিন্তু মন ঈশ্বরে রাখবে। স্ত্রী পুত্র বাপ মা সকলকে নিয়ে থাকবে ও সেবা করবে। যেন কত আপনার লোক। কিন্তু মনে জানবে যে তারা তোমার কেউ নয়।
কচ্ছপ জলে চরে বেড়ায় কিন্তু তার মন কোথায় পড়ে আছে জান? -আড়ায় পড়ে আছে। যেখানে তার ডিমগুলি পড়ে আছে। সংসারের সব কর্ম করবে কিন্তু ঈশ্বরে মন ফেলে রাখবে।
তেল মেখে তবে কাঁঠাল ভাঙতে হয়। তা না হলে হাতে আটা (গ্রামীণ উচ্চারণ) জড়িয়ে যায়। ঈশ্বরের ভক্তিরূপ তেল লাভ করে তবে সংসারের কাজে হাত দিতে হয়।
কিন্তু এই ভক্তি লাভ করতে হলে নির্জন হওয়া চাই। মাখন তুলতে গেলে নির্জনে দই পাততে হয়। দইকে নাড়ানাড়ি করলে দই বসে না। তারপর নির্জনে বসে সব কাজ ফেলে দই মন্থন করতে হয়। তবে মাখন তোলা হয়।
আবার দেখ, এই মনে নির্জনে ঈশ্বরের চিন্তা করলে জ্ঞান বৈরাগ্য ভক্তি লাভ হয়। কিন্তু সংসারে ফেলে রাখলে ঐ মন নীচ হয়ে যায়। সংসারে কেবল কামিনী-কাঞ্চন চিন্তা।’ (শ্রীম কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত। পৃষ্ঠা, ১৭)
রামকুষ্ণ প্রাণের ঠাকুর হয়েছেন মৃগীরোগের জন্য নয়!
আপনি লিখেছেন ...সারদা দেবীর কতাও কম শুনিতে পারা যায় না। তাহাদের অনেক অলৌকিক ক্ষমতা তাহাদের বরে নিঃসন্তানরমণীর সন্তান লাভ হইতো, দীন-দুখীদের দারিদ্র্যতা লাঘব হইতো অথচ তাহারা নিজেরাই ছিলেন নিঃসন্তান। ছিলেন দরিদ্র।
সারদা মা পরম প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “সন্তোষের সমান ধন নেই, আর সহ্যের সমান গুণ নেই।"
তিনি কেন ধন চাইবেন, সন্তান চাইবেন, তিনি কি জানতেন না নারী মাত্রই সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা থাকে না। অবশ্যই জানতেন। আর রামকৃষ্ণ এবং সারদা মা নিজেরা অলৌকতার দাবি করেছিলেন না দুর্দশাগ্রস্থ মানুষ তাদের কাছে যখন ছুটে গেল তখন তাদের আশ্বাস অলৌকিকতায় পরিনত হল যেরকম বাংলাদেশের হাজার হাজার দরগা শরীফে দেখা যায়।
রামকৃষ্ণএবং সারদা মায়ের কাছে মানুষ বাণীর জন্য যেন। সে বাণী রামকৃষ্ণ কথামৃতে লেখা রয়েছে। এখানে অলৌকিক কিছু নাই। পইড়া দেখতে পারেন।
আপনি লিখেছেন ...তাহাদের গুণবাণ শিষ্য বিবেকানন্দও দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। উহা কোনো অপরাধ নহে। কিন্তু ধর্মের কদলী বিক্রয় করিয়া অসহায়, হতাশাগ্রস্থ মানুষকে ধোকা দিয়া নিজের-নিজের বৈষয়িক উন্নতি করিতে দ্বিধা করেন নাই।
যাক স্বীকার করলেন তাহলে দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করা দোষের কিছু না। স্বামী বিবেকানন্দ জীবনভর দার্শনিক তত্ত্ব আলোচনা করেছেন। এ্ই বিষয়টি তাঁর রচনাবলী সাক্ষ দেয়। আপনার ভাষায় ধর্মের কদলী বিক্রয় করে নি। যাদের হৃদয়ে
দার্শনিক তত্ত্ব আলোচনা করার ঝোঁক প্রবল থাকে তারা সাদাসিদেই হয়।
আপনি লিখেছেন মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করিয়া যাহারা নিজের-নিজের বৈষয়িক উন্নতি ঘটাইয়াছেন (এখনও অনেকে ঘটাইতেছেন) তাহাদিগকে আর যাহাই হউক শ্রদ্ধা করিতে পারি না। তাহাদের অনুসারীগণকেও নহে।
আপনার এই কথার সঙ্গে আমি সহমত পোষন করি।
ধন্যবাদ।
৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৫
মো: আবু জাফর বলেছেন: আগের মতই আবারো ভাল লাগলো
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:২৬
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
চমৎকার পোস্ট।
এরকম পোস্ট আরো চাই।
উৎসর্গ টা ও ভালো লাগলো, দীপান্বিতা দি অনেক প্রিয় এক ব্লগার।
****
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রা ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী জানি।
এমন অনেকেই।
ব্রাহ্ম ধর্ম সমন্ধে জানতে চাই, আপনার একটা পোস্ট আশা করছি।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ব্রাহ্ম ধর্ম সম্বন্ধে লিখব।
ধন্যবাদ।
৭| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩৮
অনিক আহসান বলেছেন: আধ্যাতিকতা প্রচারের পাশাপাশি রামকৃষ্ণ পরমহংস বর্ধিষ্ণ বঙ্গীয় সমাজে কুসংস্কার উৎপাদন ও জিয়িয়ে রাখার ক্ষেত্রে যথেস্ট বড় ভুমিকা রেখে গেছেন। এর জের এখনো পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে টানতে হয়।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৫৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। খন্ডিত মন্তব্য ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। তবে রামকৃষ্ণের বাণীই মূল মনে হয় আমার কাছে। আর তিনি যেহেতু তান্ত্রিক ধারার সাধক, সে কারণে তাবিজ/কবজের উর্ধে নয়। আর তান্ত্রিক সাধনা তো হাজার বছরের বাংলার লৌকিক ধারা। (ভালো কি মন্দ না বলছি না ) জন্মের পরই তা তিনি দেখেছেন । এর জন্য রামকৃষ্ণকে দোষ দেওয়া অর্থহীন।
ধন্যবাদ।
৮| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৪১
প্রদীপ নাথ বলেছেন: দারুন পোষ্ট।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৫৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৯| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৫৯
তুষার কাব্য বলেছেন: আপনার প্রতিটি পোস্টই অনেক তথ্যবহুল । অনেক ভালো লাগলো ।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:০১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
১০| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:১২
জাগরূ৪৯ বলেছেন:
"তা ছাড়া ইংরেজদের কৃপাদৃষ্টি তো রয়েছেই "।
"দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পিতা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর রাণী রাসমণির স্বামী রাজচন্দ্রের কাছ থেকে দু লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। সেই টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না -পারাতে ঠাকুরদের জমিদারির একটি পরগণা রাণী রাসমণি অধিগ্রহন করেন।দ্বন্দের এই কারণ। আবার সেই অর্থনৈতিক দ্বন্দ ধর্মীয় রূপ নিয়েছিল। "
"তিনি আরও মুদ্রা ব্যয় করে ব্রাহ্মণদের মুখ বন্ধ করলেন। "
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:২১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: জ্বী। নিশ্চয়ই পুথিবীজোড়া অনেক বিশুদ্ধ মানুষ ও অনেক পরিশুদ্ধ সমাজের তুলনায় এই প্রশ্নবিদ্ধ কথাগুলি চিহ্নিত করলেন।তাহলে আপনাকেই বলি আমি তো জানি এ পৃথিবী দোষেগুণে ভরা মানুষের।
আর আমি তো এই পোষ্টে মানুষের কাহিনীই লিখেছি।
তো দোষযুক্ত মানুষের কিছু আলোকিত বিষয় থাকতেই পারে। পারে না?
অনেক ধন্যবাদ।
১১| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:৪২
জাগরূ৪৯ বলেছেন: এই সকল বিষয় মৌলিক অধর্ম। এই সকল দোষযুক্ত মানুষের আলোকিত বিষয় থাকতে পারে না।
তাই "পন্ডিত ব্রাহ্মণদের মুদ্রাগুলি দান করা হল।’'
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:৫২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনি লিখেছেন, এই সকল বিষয় মৌলিক অধর্ম। এই সকল দোষযুক্ত মানুষের আলোকিত বিষয় থাকতে পারে না।
সহমত।
কিন্তু, এই সূত্র মানলে ঠগ বাছতে গা উজার করার মত অবস্থা হবে এবং গত ৫ হাজার বছরের কোনও ধর্মনেতাই বাদ পড়বে না। আপনিও তা জানেন।
সব শেষে আপনার কাছে দুটি বিনীতি প্রশ্ন।
১ এই পোস্টটি কি ধর্মীয় পোস্ট? না অবিভক্ত বাংলার বিশেষ এক সময় কে নিয়ে তথ্য ভিত্তিক (যতদূর সম্ভব) পর্যালোচনা বা বা আখ্যান বা গল্প বা বৃত্তান্ত বা কাহিনী?
২ আমি কি এই পোস্টে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি?
ধন্যবাদ।
১২| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:৫৯
জাগরূ৪৯ বলেছেন:
"ঠিক সে রকমই গঙ্গাতীরে আরেকটি রূপকথার মতন এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল।"
এই পোস্টটি রূপকথার পোস্ট।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:০৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: রাজচন্দ্র নামে কলকাতার এক ধনী যুবক একদা গঙ্গাতীরে রাসমণি নামে এক সুন্দরী বালিকাকে দেখে মুগ্ধ হয় এবং বিবাহ করে। এই ঘটনাটি পরবর্তীকালে কয়েকটি ঘটনার সূত্রপাত করে। যে ঘটনাগুলির ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে বলে আমি মনে করি। এই গঙ্গাপাড়ে ঘটনার আরম্ভ বা সূত্রপাত তা এমনই আশ্চর্যজনক যে আমার কাছে রূপকথার মতন মনে হয়েছে। সে জন্য লিখেছি -
"ঠিক সে রকমই গঙ্গাতীরে আরেকটি রূপকথার মতন এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল।"
না এই পোস্টটি ঠিক রূপকথার পোস্ট নয়। ওই গঙ্গাপাড়ে ঘটনার আরম্ভটুকুই আমার কাছে রূপকথার মত মনে হয়েছে। মূলত এই পোস্টটি অবিভক্ত বাংলার বিশেষ এক সময় কে নিয়ে তথ্য ভিত্তিক (যতদূর সম্ভব) পর্যালোচনা বা বা আখ্যান বা গল্প বা বৃত্তান্ত বা কাহিনী?
ধন্যবাদ।
১৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩
অনিক আহসান বলেছেন: ইমন ভাই সাধক হিসাবে রামকৃষ্ণ পরমহংস বিখ্যাত হতে পারেন কিন্তু তিনি মানসিক ভাবে যথেস্ট সুস্থ ছিলেন কিনা এ নিয়ে সন্দেহ আছে। উনাকে মোহহীন চোখে দেখলে অনেক রুপই ধরা পরে..উনি ভালো পরিমান বর্ণ বিদ্বেষী, ব্রাহ্মণ্যবাদী ছিলেন।
শুদ্র রানি রাসমনির মন্দিরে পৌরহিত্বের জন্য সর্বাত্বক বাধা দিয়েছিলেন। তিনি ভাই রামকুমারকে বলেছিলেন “আমার পিতা ও পূর্বপুরুষরা কেউ শূদ্রের অন্ন গ্রহণ করেনি, এই মন্দিরে পৌরহিত্য গ্রহণ করে তিনি সর্বপ্রথম একাজ করবেন এবং তাতে চাটুজ্জে পরিবারের কলঙ্ক হবে। "
তিনি মন্দিরের প্রসাদ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং স্বহস্তে রান্না করে খেতেন। একপর্যায়ে ঐ মন্দির প্রতিস্টাতার নাম থেকে রানি রাসমনির নাম কাটানোর পরেই রামকৃষ্ণ ক্ষান্ত হন।
রামকৃষ্ণ পরম হংসর শিক্ষা নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বিখ্যাত হয়েছিলেন।আবার বলা উচিত নরেন্দ্র বিখ্যাত না হলে দক্ষিনেশ্বরের অখ্যাত কালি সাধককে মানুষ এভাবে চিনতো কিনা সন্দেহ আছে। পরম হংসের শিষ্য স্বামিজী কি ভাবতেন কি বিশ্বাস করতেন তা কিন্তু একটু খোজ নিলেই বেরিয়ে আসবে।
আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে নেহায়েত অজ্ঞ গ্রাম্য পুরোহিতে মতই তিনি বলেছেন..
"ডাক্তার উকিল ও দালাল এদের ঈশ্বর লাভের পথে এগোন কঠিন।"
"মনটা যদি ঔষধের ফোটায় পড়ে থাকে, তবে কি করে সে অসীম অনন্তকে চিন্তা করবে?"
এলেবেলে কেউ এ কথা বললে সমাজে যত না প্রভাব পরে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব পরে তার মত একজন জনপ্রিয় সাধক এ কথা বললে।
তার মানসিক সুস্থতা নিয়েও নিকট আত্মীয়দের সন্দেহ ছিলো তাই তারা ওঝা থেকে শুরু করে কোলকাতার সবচেয়ে বড় ডাক্তার গঙ্গাপ্রসাদ সেনকেও ডেকে এনেছে। কিন্তু তিনিও বিফল হয়েছেন রামকৃষ্ণকে সুস্থ করতে। তার অসুস্থতার অনেক উদাহারনই দেয়া যায়।
রামকৃষ্ণ পরমহংস বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে তন্ত্র মন্ত্র প্রথার মত ব্যাধিকে প্রাতিস্টানিক রুপ দিয়ে গেছেন ।
নারীদের নিয়ে রামকৃষ্ণ পরম হংসর কিছু অমিয় বাণী
‘কামিনী নরকস্য দ্বারম্। যত লোক স্ত্রী লোকের বশ’।
* নারী নরকের দ্বার।
*আমি মেয়ে বড় ভয় করি। দেখি যেন বাঘিনী খেতে আসছে। আর অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ, ছিদ্র সব খুব বড় বড় দেখি! সব রাক্ষসীর মত দেখি।
*মেয়ে মানুষের শরীরে কি আছে – রক্ত, মাংস, চর্বি, নাড়ীভুঁড়ি, কৃমি, মূত্র, বিষ্ঠা এই সব। সেই শরীরের উপর ভালবাসা কেন?
*দেখ না, মেয়ে মানুষের কি মোহিনী শক্তি, অবিদ্যারূপিনী মেয়েদের! পুরুষগুলোকে যেন বোকা অপদার্থ করে রেখে দেয়। যখনই দেখি স্ত্রী-পুরুষ এক সঙ্গে ব’সে আছে, তখন বলি, আহা! এরা গেছে।
*হাজার ভক্ত হলেও মেয়েমানুষকে বেশীক্ষণ কাছে বসতে দেই না। একটু পরে হয় বলি – ‘ঠাকুর দেখো গে যাও’; তাতেও যদি না উঠে, তামাক খাবার নাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি।
*যদি স্ত্রীলোক ভক্তিতে গড়াগড়ি যায়, তবুও তার কাছে যাতায়াত করবে না।
*মেয়ে মানুষের সঙ্গে থাকলেই তাঁদের বশ হয়ে যেতে হয়।
*মেয়ে ভক্তদের গোপাল ভাব- ‘বাৎসল্য ভাব’ বেশি ভাল নয়। ঐ ‘বাৎসল্য’ থেকেই আবার একদিন ‘তাচ্ছল্য’ হয়।
*মেয়ে মানুষের গায়ের হাওয়া লাগাবে না; মোটা কাপড় গায়ে দিয়ে থাকবে, পাছে তাঁদের হাওয়া গায় লাগে।
রামকৃষ্ণ পরমহংস কে নিয়ে একটা পুর্ন পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা রাখি।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:০১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: রামকৃষ্ণ পরমহংস কে নিয়ে একটা পুর্ন পোস্ট এর অপেক্ষাই রইলাম। আসলে আমরা কেউই সময়, দেশকাল লোকাচার এবং প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধ্বে উঠতে পারি না। রামকৃষ্ণের কাছ থেকেও আমরা তাই আশা করতে পারি না।
৭নং মন্তব্যে আপনি লিখেছেন আধ্যাতিকতা প্রচারের পাশাপাশি রামকৃষ্ণ পরমহংস বর্ধিষ্ণ বঙ্গীয় সমাজে কুসংস্কার উৎপাদন ও জিয়িয়ে রাখার ক্ষেত্রে যথেস্ট বড় ভুমিকা রেখে গেছেন। এর জের এখনো পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে টানতে হয়।
এটা তো খুবই কমন কথা হল। যে একজন উনিশ শতকীয় তান্ত্রিক সাধক বঙ্গীয় সমাজে কুসংস্কার উৎপাদন ও জিয়িয়ে রাখার ক্ষেত্রে যথেস্ট বড় ভুমিকা রাখবেন।
আমার প্রথম প্রশ্ন এই যে একজন উনিশ শতকীয় তান্ত্রিক সাধকএর বাণী কি সবই অগ্রহণযোগ্য?এমন কিছু কি আমরা আবিস্কার করতে পারি না?
দুই। আমি মনে করি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কল্যাণ কিংবা অকল্যাণ একজন মানুষের কৃতকর্ম দিয়ে নির্ধারণ করা সম্ভব না, উচিতও না। এটা যুক্তির কথা অনিক। কেননা, রামকৃষ্ণ বাংলার কুসংস্কারচ্ছন্ন সামাজিক আবহের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। নারীর প্রতি অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি হীন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তিনি লাভ করেছে সামাজিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরেই।
রামকৃষ্ণ পরম হংসর শিক্ষা নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বিখ্যাত হয়েছিলেন।আবার বলা উচিত নরেন্দ্র বিখ্যাত না হলে দক্ষিনেশ্বরের অখ্যাত কালি সাধককে মানুষ এভাবে চিনতো কিনা সন্দেহ আছে।
এই কথাটাও মেনে নেওয়া গেল না।
এক. বিশ্বের মানুষ স্বামী বিবেকানন্দকে দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সেই স্বামী বিবেকানন্দ আবার রামকৃষ্ণকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। নিশ্চয়ই এখানে একটা ব্যাপার আছে। আমি বারবার বলছি অলৌকিকতা নয় রামকৃষ্ণের বাণীই তাঁর বিখ্যাত হওয়ার কারণ। এখানে বলে রাখি বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের অবতারতত্ত্ব মানতেন না। তাতে তার শিষ্যত্ব গ্রহন করা আটকায়নি।
যা হোক। মূলকথা হল আমার পোস্টের শিরোনাম রাণী রাসমণি এবং শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। আমার পোস্টের শিরোনাম: ঠাকুর রামকৃষ্ণ যিনি উনিশ শতকের কলকাতার কুসংস্কারের মন্ত্রবীজ রোপন করেছিলেন নয়ভ হ্যাঁ। এমন লেখাও হতে পারে বৈকী। কিন্তু আমার এই পোষ্টের বিষয় তা নয়।
ধন্যবাদ।
১৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:১০
কিরিটি বলেছেন: পোস্ট টা খুব সুন্দর্। বেশীরভাগই আগেই জানতাম কিন্তু খুব সুন্দর ভাবে ঘটনা গুলোকে একীভূত করেছেন। ধন্যবাদ এজন্যে। শুধু এক্টা ব্যাপার্। আর্য আর অনার্য দের মধ্যে দ্বন্দ নিরসনের ব্যাপারে পরমহংসদেবের সাধনা বিষয়ক কথাটার ভিত্তি কি? আমি জানতাম সাকার আর নিরাকার ঈশ্বরের মধ্যে সংযোগ সাধনে উনার বিশেষ অবদান আছে। সনাতন ধর্ম আর ইসলাম ধর্মের মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য 'সাকার তত্ত্ব ' সেই সমস্যা নিরসনে উনার ভূমিকা ছিল। 'যত মত তত পথ ' এই অমর বাণী উনার সাধন জীবন থেকেই নেওয়া। আমি জানি এটা ধর্মীয় পোস্ট না। প্রসংগক্রমে চলে এসেছে। আশা করি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৯
ইমন জুবায়ের বলেছেন: যারা সনাতনধর্মের অনুসারী তারা প্রধানত পাঁচটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত। শৈব (প্রধান দেবতা শিব ) শাক্ত (প্রধান দেবী শক্তি। শক্তি=কালী দূর্গা ইত্যাদি) বৈষ্ণব (বিষ্ণু) বেদান্ত (বেদ/উপনিষদ)সৌর (প্রধান দেবতা সূর্য )এবং গাণপত্য (প্রধান দেবতা গনেশ) । বিরোধ তেমন নেই আবার একেবারে নেই বললেও ভুল হবে। বাংলায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শাক্ত এবং বৈষ্ণবদের বিরোধ লক্ষ করা যায়। এই সব বিরোধই অন্যভাবে মীমাংশা করতে চেয়েছিলেন রামকৃষ্ণ যখন বাংলা ইংরেজ বেনিয়াদের শাসনে জর্জরিত। তবে এই বিরোধ নিস্পত্তিরর পথটিও খুব পরিস্কার নয়। এর মানে তিনি বলেছেন যত মত তত পথ। কিন্তু বলেননি আমি সাম্প্রদায়িক বিরোধ নিষ্পত্তি করছি আমার জীবনাচরণে। যেমন রামকৃষ্ণ ছিলেন শাক্ত । অর্থাৎ তিনি শক্তির উপাসনা করতেন। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণাশ্বরের শক্তি দেবীর নাম ভবতারিণী। কিন্তু রামকৃষ্ণের ২০ বছর ধরে শিক্ষাদানের বিষয় বেদ এবং উপনিষদ। কথামৃততে আপনি তাই দেখবেন। তিনি তন্ত্রমন্ত্রের কথা বললে কি আর ভক্তেরা থাকত? বিষয়টি অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়। তন্ত্র হল অনার্য নিষাদদের ধর্মীয় চিন্তা যা চরিত্রে মাতৃতান্ত্রিক । অন্যদিকে বেদবেদান্ত হল আর্য পুরুষতান্ত্রিক। এই দুটো ধারাকেই রামকৃষ্ণ মিলিয়েছেন। শ্রীচৈতন্যদেব বিপরীত বিহারের মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করেছেন। বলেছেন, আমা অন্তরে রাধী বহিরঙ্গে কৃষ্ণ।শ্রীরামকৃষ্ণও তাই করেছেন। অন্যভাবে। তান্ত্রিক মতে শাক্তদের মূল শক্তি আবার শিব। এভাবে শৈবদেরও দলে টানলেন তিনি ।
ধন্যবাদ।
১৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৩
ভারসাম্য বলেছেন: মূলতঃ ব্রিটিশ মদদেই ভারতবর্ষে " ব্রাহ্ম " নামে নতুন একটা ধর্মের উদ্ভব হয়েছিল যার চেতনায় নিরাকার ঈশ্বরতত্ত্ব থাকলেও এটা যে একটা আরোপিত ধর্ম তা অনেকের কাছেই সুস্পষ্ট ছিল।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার তখন ব্রাহ্মধর্মের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল। ঠাকুর পরিবার তখন শিক্ষাদীক্ষা ও সুরুচির দিক এগিয়ে ছিল। তাঁরা তৎকালীন জমিদারগণের মধ্যে তুলনামূলক যথেষ্ট উদারমনাও ছিলেন যে কারনে তাদের জমিদারির বৈভবও ধীরে ধীরে কমে আসছিল। এ ক্ষেত্রে রাণী রাসমণি সহ আরো অনেক জমিদার পরিবারের সাথে জোঁড়াসাকোর ঠাকুর পরিবারের সুপ্ত কিছু বিরোধও ছিল।
যাই হোক, নব প্রতিষ্ঠিত " ব্রাহ্মধর্ম" জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজের গুটিকয় এলিট শ্রেণীর কাছে গৃহীত হলেও বৃহত্তর লোকায়ত বাঙালী সমাজে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং দক্ষিণেশ্বর এর মন্দির লোকায়ত ঐতিহ্যধারার সাথে কিছুটা সংগতি রেখে মূলতঃ আর্য ব্রাক্ষণ ভাবাধারাই অক্ষুন্ন রাখলে তা বৃহত্তর সমাজে বেশি গৃহীত হয়।
এখানে রাণি রাসমনির স্বপ্নে কালীমাতার আদেশপ্রাপ্তি সাপেক্ষে মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও আসলে এটা আমার কাছে রাণি রাসমনির সমাজে আরেকটু জাতে ওঠার একটা চেষ্টা বলেই মনে হয়। এর সাথে জমিদার পরিবারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক প্রতিযোগীতার ব্যাপারও জড়িত ছিল।
তবে এখানে একটা ভাল দিক হল, ব্রাহ্মধর্ম যেখানে ব্রিটিশদের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত ছিল সেখানে দক্ষিণেশ্বর এর মন্দির কিছুটা প্রভাবমুক্ত ও অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী থাকায় এবং এই মন্দির লোকায়ত সমাজে অধিকতর গৃহীত হওয়ায় পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে পরোক্ষভাবে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছিল।
এর বাইরে "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত" এরও আলাদা একটা মূল্যায়ন করা যায়। অবমূল্যায়নও করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা করা যায় যা পরিশেষে "ঠগ বাছতে কম্বল উজাড়" এর মতই অবস্থা তৈরী করবে।
সুন্দর লেখায় প্লাস।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৪৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
১৬| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৯
দীপান্বিতা বলেছেন: খুব ভাল লাগল, ইমনভাই!......বেশ গর্ব বোধও করছি!
আমার মনে হয়, যে সময় ইংরেজি শিক্ষায় বাংলার মানুষের মনে নবজাগরণ ঘটছে, ডিরোজিও ও তাঁর ছাত্র এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রভাব বারছে, অন্যদিকে রাজা রামমোহন ও দেবেন্দ্রনাথদের ব্রাহ্মসমাজের প্রাধান্য সমাজে গুরুত্ব পেতে চলেছে সে সময় হিন্দু ধর্ম বাংলা সমাজে নতুনরূপে পুনরুজ্জীবিত করতে রামকৃষ্ণ
এবং স্বামী বিবেকানন্দ বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন এবং রাণী রাসমনি ও সারদা মা সেই পথকে আরো মসৃণ করে তুলেছেন......
০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৪৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন:
এর পর দক্ষিণেশ্বর গেলে ছবি দিও।
১৭| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৮:১৩
রাজদরবার বলেছেন: বিবেকানন্দ অসাম্প্রদায়িক ছিল, এটা চরম ভুল ধারণা। তার রচনাবলীতে ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম সাম্প্রদায়িক বক্তব্য রয়েছে। কারণ বিবেকানন্দ তৎকালীন সময়ের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। যারা পাঠ্য হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্রের বইকে গ্রহণ করত। শুধু তাই নয়, ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকীরা যে সংগঠনগুলোর সাথে জড়িত ছিল সেগুলোই স্বাধীন ভারতে বিজেপি বজরং দল হয়েছে।
Mohammed claimed that the Angel Gabriel
came to him in a cave one day and took him on the
heavenly horse, Harak and he visited the heavens.
But with all that, Mohammed spoke some
wonderful truths. If you read the Koran, you find
the most wonderful truths mixed with
superstitions. How will you explain it? That man
was inspired; no doubt, but that inspiration was as
it were, stumbled upon. He was not a trained Yogi,
and did not know the reason of what he was doing.
Think of the good Mohammed did to the world,
and think of the great evil that has been done
through his fanaticism! Think of the millions
massacred through his teachings, mothers bereft
of their children, children made orphans, whole
countries destroyed, millions upon millions or
people killed! (1.184)
এরকম বহু উক্তি রয়েছে বিবেকানন্দের বইতে। সবগুলো একসাথে পাবেন এখানে
http://www.mediafire.com/?bxrqv53evpywy9a
আর বিবেকানন্দের ইংরেজি রচনাবলীর লিঙ্ক এগুলো
Click This Link
Click This Link
এভাবে ৯টি পর্বই রয়েছে এই সাইটে। এখান থেকে মিলিয়ে দেখতে পারেন।
০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৪৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।লিঙ্কগুলি পড়ে দেখব।
১৮| ০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:২১
রাহি বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। +++
০৯ ই জুলাই, ২০১২ ভোর ৬:২০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ
১৯| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ রাত ২:১০
রাশমী বলেছেন: গল্পের মত ইতিহাস বলার শিল্প আপনার মত আর কাউকে পাইনি.... পরোমহংস , রাসমনি এদের নাম শুনেছিলাম কিন্তু ইতিহাস জানা ছিলনা.... অনেক ভাল লাগলো...ভাল থাকবেন!
০৯ ই জুলাই, ২০১২ ভোর ৬:২০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ
২০| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৭:৩৮
হাছন রাধা করিম বলেছেন: Undoubtedly you are one of the most skillful and charisnatic writer. But I'm sorry to say that the subject matter of this post was a racist and bigot and I don't think that he deserve any respect in any form either from you or anyone else who even remotely believe in Islam.
২১| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৭:৪০
হাছন রাধা করিম বলেছেন: *CHARISMATIC*
২২| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৫৬
মুখচোরা বলেছেন: তর্ক বেশ জমে উঠেছে। তর্ক ভালো। আমার মতো সাধারন পাঠকরা এ থেকে অনেক কিছু জানতে পারে। ভারসাম্যের করা মন্তব্য ১৫ তে অন্তত একটা ভুল আছে যা না ধরলেই নয়। বাগধারাটি হবে 'ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়' কম্বল নয় কারন কম্বলে কোন ঠগ থাকে না । নতুবা বলা যেতে পারে লোম বাছতো কম্বল উজাড়। ধন্যবাদ।
০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৩৯
ইশতিয়াক আহমেদ চয়ন বলেছেন: ভালো লাগলো পোস্ট ++++
০৯ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ চয়ন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৩০
রাতুল_শাহ বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।