![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোজই পত্রিকার পাতা খুললে কিবা চ্যানেলে দেখা যায় ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে বিশাল মানব বন্ধন। তাছাড়া চলে এখানে অভিযোগ ,অনুযোগ, ছোটখাট প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ। পাশাপাশি লাঠিপেটা,জলকামান, টিয়ার গ্যাস তাও যে দেখিনা এমন নয়। কথায় বলে আগে ঘরে বাতি তার পর মসজিদ মন্দিরে। আগে পেটে দাও তার পর পিঠে। আগে বাঁচো তার পর বাঁচাও। তাই ভূমিকাতেই একটা কথা না বললে নয়। আজ আমরা যারা মানব বন্ধন করছি তার ভোক্ত ভোগি কিন্তু আমরা নিজেরাই। আর যে বিষয় নিয়ে করছি সেটাও আমাদের কৃত কর্মের ফল।
তাহলে ছোট্ট একটি গল্প শুনুন।
ছোট বেলায় প্রাইমারী লেবেলে একটি গল্প পড়েছিলাম। টোনা আর টুনি দু’জন স্বামী-স্ত্রী। তাদের এক আত্নীয় এসে বললো তাদের বাড়িতে দাওয়াত খাবে। শুনে তো তারা অবাক। অভাবের সংসার। কি দিয়ে যে কি করবে। কি আর করবে দাওয়াত দিতেই হলো। রান্না বান্না শেষ হলো। এরই মাঝে মেহমান না আসতেই টোনা টুনির প্রচন্ড ক্ষিধে পেলো। দু’জনে ভাবলো ক্ষতি কি, তার আগে আমরা না হয় একটু খেয়ে নেই। প্রচন্ড ক্ষিধে নিয়ে দু’জন খেতে বসে পাতিলের সব খাবার খেয়ে সাবাড় করে ফেললো। মুশকিলের কথা। কি করবে এখন ? মেহমান তো আসার সময় হলো। তাৎক্ষণিক বুদ্ধি করে দু’জনেই পালিয়ে গিয়ে গাছের মগঢালে চুপ চাপ বসে রইলো। গল্পটা কেন বললাম ? নাই বা বলি কি করে ?
সরকার হলো রাষ্ট্রের অভিবাবক। সে আইন করে দিয়েছে বাল্য বিবাহ যৌতকের বিবাহ,নারী নির্যাতন, ইভটিজিং এ সবই নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব করা যাবেনা। ভালো কথা। আমরা অভিভাবক এবং তরুন প্রজন্ম তারা ও মানতে বাধ্য এসব করা যাবেনা। তবুও সবই হচ্ছে অহরহ সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে আনাচে কানাচে। কেন হচ্ছে তাহলে ? তার দুটি কারন। প্রথমে তরুন প্রজন্মের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। আজকের তরুন প্রজন্ম যে ভাবে আপত্তিকর পোষাক পরিচ্ছেদ পরে বিশেষ করে ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে খোলা মেলা শরীরে যে ভাবে রাস্তায় নেমেছে (গণ জাগরন মঞ্চের কথাই ধরা য্ক) এই ভাবে চলতে চলতে গল্পের ওই টোনা টুনির মত রান্না করতে করতে এতই প্রচন্ড ক্ষিধে লেগে যায় তাদের, তখন তারা মেহমানের কথা তথা সরকারের আইনের কথা ভুলে গিয়ে ক্ষিধের জ্বালায় পালিয়ে বিয়ে করে রাষ্ট্র, সমাজ এবং অভিভাবককে বিব্রত কর অবস্থায় ফেলে দেয়। এখানে সরকারের কি করার আছে বলুন ? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত হচ্ছে নিজের বিবেক। যতক্ষণ না নিজের বিবেককে সচেতন ও বিল্ডআপ না করবে ততক্ষণ আইন ও বেকায়দায় পড়ে থাকবে।
এবার আসা যাক বাল্যবিবাহ, আভিভাবক এবং সরকাকারকে নিয়ে কিছু কথা। বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের উপর খবরদারী করা ,ঘরে ঘরে গিয়ে নজর দারী করা কখনোই সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়,যতক্ষণ না বাল্য বিবাহের মূল হোতা তাদের অভিভাবকরা না বুঝবে যে বাল্যবিবাহ আইনে নিষিদ্ধ ছাড়া ও এটা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। তবু এ কাজটি এ দেশের সমাজে প্রতিনিয়তই হচ্ছে এবং চলে আসছে। কিন্তু কেন ? কারন দরিদ্র পরিবারে কন্যা দায়, অভাবের তাড়নায় প্রবাসী পাত্র পেলে সে যে বয়সেরই হোক বিয়ে দেয়া। গ্রাম এবং মফস্বল এলাকার বখাটে ছেলেদের ইভটিজিং এর হাত থেকে মুক্তি পেতে এবং সমাজে যে ভাবে ডিজিটাল প্রেমের সয়লাব, তাতে কথায় কথায় তাদের মাঝে প্রেম হয়ে যায়। প্রেম হলেই তারা মনে করে এবার তাদের পালিয়ে বিয়ে করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় সে ভয়ে অভিভাবকরাও বাল্য বিবাহে ঝুঁকে পড়ে। অচ্ছা, এমন বেহায়াপনা আর নিলাজ বিয়ে কেনই বা মেনে নেবে অভিভাবক ? কারন দোলনা থেকে শুরু করে বিয়ের আগ পর্যন্ত কি না করে একটি সন্তানের জন্য ? কত স্বপ্নই না দেখে তারা। অথচ তাদের নিলাজ আর বেহায়াপনা একটি সিদ্ধান্তের জন্য অভিভাবকের সে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুর মার হয়ে যাবে ?
ন্যাশনাল সার্ভে অন চাইল্ড ম্যারেজ এন্ড সেল্ফ ম্যারেজের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা স্বেচ্ছায় গোপনে বিয়ে করে সেটেল হয়, এক বছরের মাথায়ই সে বিয়েতে ডিভোর্স বা ছাড়া ছাড়ির প্রবনতা দেখা দেয়। কারন: ইনফিডিলিটি বা একের আড়ালে অন্যের ব্যভিচারী,দুর্বল বিশ্বাস, কথায় কথায় ডিভোর্সের হুমকি,দ্রুত প্রেম ফুরিয়ে যাওয়া, অবহেলা, এডিকটেড বিহ্যাভিয়ার এবং কখনো কখনো নো সেক্স ই এর অন্যতম কারন।
আর একটি বিষয় বহির্ভুত কথা যা না বললেই নয়। এ দেশে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সরকার কি না করেছে ? কত লেখালেখি কত আইন, কত সামাজিক আন্দোলন। বন্ধ হয়েছে ? আমি সরকারের ব্যর্থতার কথা বলছিনা। হ্যাঁ হয়েছে কেবল গরিবের ক্ষেত্রে। বিশিষ্ট আইন জীবি গাজী শামসুর রহমান বলেছেন,ধনী আর ধনীর মধ্যে আইন বেকায়দায় পড়ে,গরীবে গরীবে আইন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ধনী আর গরিবের মাঝে গরিবেরই পরাজয় নিশ্চিত। ঢাক ঢোল পিটিয়ে স্টেডিয়াম ভাড়া করে দশহাজার মেহমানের আপ্যায়ন করে মেয়ের বিয়ে দেয়া এবং লরী বোঝাই করে কোটি টাকার উপহার সামগ্রী মেয়ের সাথে দেয়া এটাকেে ইংরেজীতে গিফ্ট বললেও বাংলায় যৌতুক বলাটা কি দোষ হবে ?
তাই বলছি,বাল্য বিবাহ বন্ধের দাবী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘটা করে একটা দুটা মানব বন্ধন করে দায়িত্ব শেষ করার চাইতে আমরা যারা অভিভাবক, কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো বোন, বিশেষ করে তরুন প্রজন্মকে বলছি। ঘরে ঘরে আমরা যদি নিজেরাই সচেতনতার পরিচয় দিয়ে এসব সামাজিক ব্যধিকে সমাজ মুক্ত করতে পারি তাহলে আমাদের সু নৈতিকতা আর রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা মিলেই এসব কুপ্রথার অবসান ঘটানো সম্ভব।
©somewhere in net ltd.