নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে ফোকলোর

১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩৭

গতকাল রাত ১১টায় গুলশান গেলাম । পুলিশের সিকিউরিটি পোষ্ট বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে । বিশেষ করে হোন্ডাওয়ালা আর সিএনজির প্যাসেন্জার কে চেক করা হচ্ছে । রাতের গুলশান কে দেখে থমকে গেলাম । রাস্তাঘাট যেন জনমানব শুন্য । আলো আধারীর রাস্তায় চোখে পড়ল দু একটা নেড়ী কুকুর, দু একটা ছুটে চলা প্রাইভেট কার আর পুলিশের গাড়ী গুলো ইমারজেন্সি আওয়াজ দিয়ে ছুটে চলেছে


রেষ্টুরেন্ট গুলো কোনরকম আলো জ্বালাতে হয় বলে জ্বেলেছে । ভিতরে মানুষ নেই কোলাহল নেই । অন্য সময় রেষ্টুরেন্টে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের খেলার জায়গা চিতকার চেচামেচি ভরা থাকত । এই শহরের বেশির ভাগ ছোট ছেলে মেয়েদের আনন্দ আয়োজন বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টের ছোট খেলার জায়গা গুলোর প্লাষ্টিকের বল সহ আরও কিছু । আর বাসায় কমপিউটার, ট্যাব, মোবাইল । এরা নদী, মাঠ, গরু, ছাগল, ভেড়া, গাছ কিচ্ছু চেনেনা । আমার মেয়ে কোরবানীর খাশিকে বলে অাচ্ছা বাই ।

ফখরুদ্দিনের সময় আমাদের অফিসের পিকনিক ছিল মৌলভীবাজার টি গার্ডেনে । সকাল আটটায় বাস ছাড়বে । সে রাতে ছিল কার্ফু । ভোরবেলা বাসা থেকে বের হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে যখন রাস্তায় এলাম তখন মনে হল সাড়া রাত শহর ময় যেন তান্ডব বয়ে গেছে । দু একটা নেড়ী কুকুর ছাড়া রাস্তায় কোন জনমানব নেই । এই নেড়ী কুকুর গুলো যেন অন্ধকার সময় কে, দানবিকতাকে জানিয়ে দেয় । আবার আর একদিন দিনে কার্ফু দুই কি তিনঘন্টার জন্য শিথিল করল । মোবাইলের নেটওয়ার্ক খুলে দিল । সাতটায় আবার কার্ফু শুরু হবে । কিন্তু কাজ শেষ করে আসাদগেটে এলাম ৬.৫০ মিনিটে । শেষ গাড়ীতে লাফিয়ে উঠলাম । টেকনিক্যাল যাওয়া মাত্র আর্মী সবাইকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দিল । যে যার মত মিলিয়ে গেল । আমি মিলিয়ে যেতে পারলাম না । সামনে ডিউটিরত আর্মী । ফুটপাত ধরে ইয়া নফসি পড়তে পড়তে মিরপুরের দিকে আগালাম । আমার পাশে দুটো শহুরে ভবঘুরে গাই আর বাছুর হেটে যাচ্ছিল ওদের মনে হল আমার বিপদের পরম বন্ধু । ওদের আড়াল হয়ে সামনে কিছুদুর গিয়ে দৌড়ে বাসা ।

শেখ হাসিনা কে গ্রেনেড হামলার সে সন্ধ্যায় ঢাকা ভার্সিটি থেকে হেটে হেটে সলিমুল্লাহ রোড এলাম । কি করে যেন হঠাত রাস্তা গুলো ফাকা হয়ে গেল অজানা ভয়ে । আমার মত বেশ কিছু মানুষ হাটছিল কিন্তু কেউ কারও সাথে কথা বলছেনা । সবাই যেন সবার অচেনা । মনের অজান্তে সবাই যেন কথা বলে যাচ্ছে আর সেকথা যেন ভয়ের সুতাতে গাথা ।
আমার মনে পড়ল সেই বিখ্যাত সাউন্ড অফ সা্ইলেন্স গানের কথা -

পিপল টকিং উইদাউট স্পিকিং
পিপল হিয়ারিং উইদাউট লিসেনিং
পিপল রাইটিং সং
দ্যাট ভয়েস নেভার শেয়ার
এন্ড নো ওয়ান ডেয়ারড ।

পরের দিন ভোরে বের হলাম ঠিক রাস্তা যেন জনমানব শুন্য । অজানা এক ভয় ধেয়ে চলে ধমনি বেয়ে । পর্দার আড়াল থেকে নিজের শহর দেখে, নিজের বেড়ে উঠা রাস্তা দেখে শহুরে নাগরীক । ঘরটাই যেন বিপদ থেকে বাচবার শেষ ভরসা ।
ছোটবেলায় মাগরীবের আজানের আগে বাসায় ফিরতে হবে এটাই ছিল বাসার অঘোষিত নিয়ম । মাদ্রাসা, হাইস্কুল মাঠে খেলতে খেলতে মুয়াজ্জিনের আল্লাহু আকবার শোনা মাত্র বাসায় দৌড় । ঠিক গেটের সামনে এসে দেখি পায়ে স্যান্ডেল নাই । আবার দৌড় মাঠে সেখানেও স্যান্ডেল নাই । আবার দৌড় বাসা কোন রকমে ছেড়া স্যান্ডেল ম্যানেজ করে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসা । হাটুর নীচে সাড়া দিনের ধুলা ময়লা সাদা হয়ে আছে । আর চোখে ক্লান্তির ঘুম । চোখের পাতা খোলা রাখা যায়না । আব্বা অন্য ঘরে নামাজ পড়ছে । কখন চোখের পাতা এক হয়ে গিয়েছে মনে নাই । হঠাত পিঠে পড়ল পেয়ারার ডালের এক বারী । আব্বা জারুলের ডাল, পেয়াররা ডাল সযত্নে রাখতেন আমাদের তিনভাইকে পেটানোর জন্য । ঘুম গেল উদ্ধ গগনে আমি দৌড় । পিছনে আব্বার গলা এত বলি দুপুরে ঘুমা ঘুমাবিনা । থানডার ক্যাটস দেখবি । তোকে থানডার ক্যাটস দেখাচ্ছি । আমিও থানডার ক্যাটসের মত দৌড় ।

চয়নদের বাসায় দুপুরে থানডার ক্যাটস দেখতে যেতাম । বাসায় টিভি ছিলনা । ওদের সাদা কালো ফিলিপস টিভি ছিল । টিভির এন্টেনার উপর কাক বসলে টিভি ঝির ঝির করত । সেই কাককে আবার বাটুল দিয়ে মারতাম । কখনো এন্টেনার বাশ ধরে এদিক সেদিক ঘোরাতাম । ভিতর থেকে বলত ঠিক আছে ঝিরঝিরি ক্লিয়ার আস । ভিষন ভাল মানুষ চয়নের বাবা হাসি মুখে আমাদের অত্যাচার সহ্য করেছেন । বলত বেটা মার্বেল খেলবি, তাস খেলবি বাসার সামনেই খেল দুরে যাবি কেন ? আমরা ম্যাচের খোশা জমিয়ে লোহার খোলা দিয়ে তাস খেলতাম । আর আনন্দ ছিল নিয়ন ভাইয়ের মামার রকেট । যেটা তিনবিঘা জমির উপর নামত । সেই গল্প । সেই গল্পের নিয়ন ভাই চয়ন আর সেই বাড়ীতে নেই, চয়নের আব্বু প্রয়াত হয়েছেন । বাড়ীটার সামনে দাড়ালে আজও ফিরে যাই সেই দিনে ।
দিনগুলো চলে যায় । রাত হয় । রাতের ভয় ফিরে আসে দিনে । নিরীহ নিপাট তাবেলা সিজার কে মেরে অন্ধকারের এই শহর কে যেন আরও অন্ধকারে ফেলে । আর ফিরে আসে সেই গানের লাইন ।

হ্যালো ডার্কনেস মাই ওল্ড ফেন্ড
আই হ্যাভ কাম টু টক উইথ ইউ এগেইন ।
বিকজ এ ভিশন সফটলি ক্রিপিং
এন্ড দ্যা ভিশন দ্যাট ওয়াজ
প্লানটেউ ইন মাই ব্রেইন
স্টিল রিমেইনস উইথইন দ্যা সাউন্ড অফ সাইলেন্স ।

১০/১০/২০১৫
ইকবাল রোড

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.