নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাজনী

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২


নাজনী
ষোলবার হামার ঘর ভাংগিল তিস্তা নদীত ।
সতেরবারের বার আব্বা ঘরের টিন, বেড়া, হাড়ি, পাতিল, বকরী, ভেড়া, তামান সংসার গরুর গাড়ীত তুলিয়া রওনা দিলি । হামি কিছুই বুঝিনা । হামার বাপ মাও হামাক কোটে নিয়া যায় । হামি নদী দেকি , কাশফুল দেকি , ধু ধু বালুচর দেকি । । মায়ে হামার চোখ মোছে । এরি মধ্যে হামার মনে পড়ি, হামার খেলার বউ পুতুল গুলা আনি নাই ।

গরুর গাড়ী আসিয়া থামিল বুড়ির হাট রংপুর । এটি হল হামার নুতন বাড়ী ঘর । আব্বা হামার কান্দে ।
কয়, হামার সোনার সংসার আছিল, সগ শ্যাষ করি দিলি নদী । আব্বা হামার কোনদিন কামলা খাটে, রিকশা চালায়, জোগালীর কাম করে আর মদ্যে মদ্যে আব্বা, আম্মায় মিলিয়া খবরের কাগজ কাটিয়া আটা দিয়া প্যাকেট বানায় ।
সাথে হামি বসিয়া থাকিয়া দেকি । এটা ওটা আগিয়া দেই ।

বাড়ীর পাশে চড়কের মেলা হয় হামরা তামান ছাওয়া পাওয়া মিলিয়া দল বান্ধিয়া যাই । যার হেরে পকেটত চার আনা, আট আনা একটেকা থাকে তারা জিলাপি খায় । হামার কাছে পাইশা নাই হামি ওর হেরে খাওয়া দেকি জিলাপী ভাজা দেকি । হামার যেদিন পাইসা হইবে সেদিন হামি খামো । দোকানদার হামার মুকের দিক দেখিয়া আধখাওয়া জিলাপী দেয় হামি মনের সুখে খাই ।
জিলাপী ওয়ালা আগ করে - এ তুই মজিদের বেটি নস ।
হামি কই হ ।
ওদিকে যা । তামান নদী ভাংগা পংগপাল আসিয়া বুড়ির হাট সাবার করিল বাহে ।
নদী ভাংগা পংগপাল কি হামি বুঝিনা । কাকো যে কমো সে সাহস এলা না হয় ।

শীতের সমে হামার গ্রামত মিলিটারী আসে । আশে পাশের তাংকু খেত, বাশবাগানোত থাকে । হামরা দলবান্ধিয়া ফির মিলিটারী দেকপার যাই । ধলাবাবু মিলিটারীর বেশি কাছে গেছিল তাই ওয়ার পাছাত মিলিটারী ডাং দিছে । ধলাবাবুর বাপে কয় হামার তাংকু খেতত মিলিটারী থাকে, হামার তাংকু খেতত মিলিটারী হাগে আর হামার ছাওয়াক এলা দেকপার না দেয় ।

বেশ কিছুদিন হলি বাপ হামার অন্য কাম করেনা সারাদিন বাড়ী বসিয়া প্যাকেট বানায় । তিনচারদিন পরে রংপুর শহরত যায়া দোকানে দোকানে প্যাকেট দিয়া আসে । পুরানা পেপার কিনি আনে । আবার নুতন প্যাকেট বানায় । এখন হামিও প্যাকেট বানান শিখছি । হামরা মাও, বাপ, মিলিয়া এখন প্যাকেট বানাই । বাপে কয় তোমার ইসরাফিল মাষ্টার কইছে তুমি বলে ভালই পড়াশুনাত তোমাক ভাল মন্দ খিলাবার কইছে ।

মাও তোমাক যা সামথ্যর মধ্যে আছে তাই খিলামো ।
তোমাক কিন্তু মানুষ হওয়া নাগবে ।
হামার সোনার সংসার শ্যাষ হয়া গেছে হামার কিছু নাই তুমি ছাড়া তোমাক পড়াশুনা শেখা নাগিবে ।
বড় পড়াশুনা করা নাগিবে ।
বড়বড় দেশত বলে নদীত বান্ধ দিয়া নদী আটকে থোয় । হামার দেশত ওগলা কিছু নাই । তামান টেকা চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইন্জিনিয়ার মিলিয়া মারি খায় । জাউরা মোজাম্মেল ইন্জিনিয়ার বোলে ঢাকাত কোটি টেকা দেয়া বাড়ী বানাইছে । হামার বাড়ী, ঘর, সংসার নদীত গেলি আর ওই জাউরা বাড়ী বানাইলি ।

সেদিন স্কুলত গেলে হেডস্যার কইলে তোমরা কেটা কেটা বৃত্তি দেবেন নাম দেও । ইসরাফিল স্যার হামার নাম দিলি ।
দিয়া কইল শোন নাজনি: প্রতিদিন বাড়ীত যায়া ভাল করে পড়াশুনা করা লাগবে । বৃত্তি কিন্তু পাওয়া লাগবে । হামার স্কুলত থাকিয়া এখনো কেউ বৃত্তি পায় নাই । তুমি বৃত্তি পাইলে স্কুলের নাম হইবে । হামার হেরে বেতন হইবে ।

আব্বায় সেদিন শুক্রবারে হুযুরোক ডাকিয়া আনিল । হামার বৃত্তি পরীখ্খা তাই হুযুর য্যান এনা দোয়া করিয়া দেয় । হুযুর কইলে, মাও নবীজী শিখ্খার জন্য চিন দেশেও যাইতে কইছে । সবচেয়ে বড় সম্পদ হল শিখ্খা ।
রংপুরের আজহারুল ডাকতার তার ভাইবোনেরা লেখাপড়া শিখিয়া কত বড় ইন্জিনিয়ার, ডাকতার হইছে । বাড়ী করছে । সেদিন হামার এক সাগাইওক নিয়া গেইলাম ডাকতার সাহেবের বাসাত । চিকিতসা দিয়া টেকা না নিল । হামার বাড়ী আসার ভাড়া দিল । হামি কইনাম ডাকতার সাহেব যদি কিছু মনে না করেন ছোট মুখত একটা বড় কথা কই ? কইনাম এত বড় পাচতালা বাড়ী করলেন সেটে এলা মানুষ না থাকে ।
ডাকতার সাহেব কয় - এই বাড়ীর সামনে দিয়া আপনি যখন হাটিয়া যাইবেন আপনার ছেলে মেয়ে সহ তখন তাক দেখাইবেন দেখ - পড়াশুনা করলে এত বড় বাড়ী করা যায় । এরই নাম হল শিখ্খা মাও ।

যে স্কুল থাকিয়া কেউ কোনদিন বৃত্তি পায় নাই সেই স্কুলত থাকিয়া আমি হামি বৃত্তি পাই নাম । কেমন করিয়া কি হইল হামি বুঝিবার না পায় । যা প্রশ্ন আসিল হামি লেখিয়া আচ্ছি । হেড স্যার, ইসরাফিল স্যার সগলাই হামাক মিষ্টি খিলায় ।


হঠাত করিয়া হামি য্যান বড় হয়া গেনাম । হামার শরীলের পরিবর্তন হল । একদিন দেখি রক্ত হামার প্যান্ট ভিজিয়া গেইল । মাওক কইনাম । মায়ে কই ওগলা কিছু নয় সব বেটি ছাওয়ারই হয় । ভয় না পান ।
ধলা বাবু দুই আংগুল গোল করিয়া উয়ার মধ্যে আর এক আংগুল দিয়া কি ইশারা দেয়, বাশ বাগানোত ডাকে, হামাক । হামি এলা না বুঝি । পাশের বাড়ীর মতলুব চাচা তাই কোলত বসপার নিয়া হামার বুকত ছোট ছোট উচা জায়গা গুলত হাত দিয়া আস্তে আস্তে চাপ চায় । কয়- তোর চাচী বাড়ীত না থাকলে আসিস । চকলেটের, চানাচুরের টেকা দেম হেনে ।

হামি এলা মাওক কইনাম ধলাবাবুর কতা, মতলুব চাচার কতা । মায়ে কয় বেটি ছাওয়ার শরীলই কিন্তু সমস্যা মাও । খবরদার ওগলার দিকে ফিরেও না তাকান । ওগলা হল জাউরা লোক । মানষের মত বড় জাউরা আর কিচু নাই । তুমি স্কুলত যাবা নেকাপড়া করিয়া সোজা বাড়ীত আসপা । হামরা নদী ভাংগা উঠনা মানুষ । এঠাকার থায়ী মানুষ নই । কাকো এগলা কথা কইলে বিচার তো পামুয় না মানুষ হামাক গ্রাম ছাড়া করিবে তোমাক কইবে খারাপ বেটি ছাওয়া ।

হামরা প্রতিদিন সকালে টোংগা বানাই ।
টোংগা বানানো শুরুর আগে আব্বা, মোজাম্মেল ইন্জিনিয়ারোক গালি দিয়া কাম শুরু করে । ওই জাউরা মোজাম্মেল ইন্জিনিয়ারোক য্যান আল্লাহ দুনিয়ার য্যায় প্রান্ততত থাক আল্লাহ যান দেকায় । ওক যান বুঝি দ্যায় । আম্মাক কয় - তোমার আবুল মিয়ার কথা মনে আছে ? ওয়ায় ঢাকাত গেইল পরিবার নিয়া, বড় মাইয়াটা গার্মেন্টস করবার য্যায়া পুড়ি মরছে । ছোট মাইয়াটা বলে খারাপ কাম করি বেরায় । কি সোনার সংসার, আছিলো আবুল মিয়ার । ঐই জাউরা মোজাম্মেল ইন্জিনিয়ার বান্ধের টেক্যাগুলা মারিয়া না খাইলে এতগুলা মানষের আজ এই অবস্থা হয় ।
আম্মায় কয় - তুমি এল্যা এত কতা শুনলেন কোনঠে থাকিয়া ?
আব্বায় উওুর দেয় - পশ্চিম পাড়ার হোসেন আলী ঢাকা থাকিয়া আইছে উয়ায় কইল । কাল উয়ার সাথে টাউনত দেখা হইল । উয়ায় কইল । হামাক কয় যাবেন নাকি এলা ঢাকাত ? হামি কইনাম মাফো চাও দোয়ায় চাও, বাপো । তোর ওত বড় শহরত হামরা না যাই । খায়া না খায়া এলা এটি থাকমো । এটি মরমো ।

আব্বা যে পুরাতন পেপার আনে টাউনত থাকিয়া হামাক পড়তে ভাল নাগে । প্যাকেট বানান হবার আগে হামি তামান পেপার পড়ি । হামার ভাল নাগে পড়তে । দুনিয়াত কত কিছু হয় হামি কিছুই জানিনা ।

ক্লাশ এইটের বৃত্তিও হামি পাইনাম । এইবার হেডস্যার বাড়ীত আসিয়া আব্বাক কইল তোমার মাইয়াক এলা ফশ কর্যা বিয়া না দেন । উয়াক পড়াও । বাপ কয় মাইয়া হামার যতদিন পড়বার চায় উয়াক পড়ামো । ধার, কর্য, দরকার হলে ভিখ্খাত নামমো তাও পড়ামো ।

আব্বাক ভিখ্খা করবার না নাগিল । ক্লাশ এইটের বৃত্তি দিয়া এসএসসি পাশ করিনাম বোর্ড স্টান করিনাম । হামার ছবি দেশের পেপারত ছাপালি । আব্বা সেই পেপার বান্ধিয়া আনিল । এরপর ইন্টারমেডিয়েটে সবাই কইল রংপুর কারমাইকেল কলেজোত ভর্তি হও । কিন্তু বাড়ী থাকিয়া আধা মাইল দুরে বিন্নারটারী আজগড় আলী কলেজের ইউসুফ প্রভেচার বাড়ীত আসিয়া আব্বাক কইল - তোমার বেটি ছাওয়াক হামার কলজোত পড়াও । তোমার বেটি ভাল ছাত্রী । উয়ায় ভাল রেজাল্ট করলে হামার কলেজের নাম হইবে । হামার হেরে নাম হ্ইবে । বেতন হইবে । হামার হেরে কলেজ এমপিও পাইবে ।

ভর্তি হইনাম এলাকার আজগড় আলী কলেজোত ।
একদিন হঠাত করিয়া সাদা রংয়ের তিন জিপ গাড়ী আসিয়া থামিল হামার কলেজোত । গ্রামের ছোট ছোট ছাওয়া পাওয়ারা গাড়ীর পেছনে পেছনে দৌড়িয়া আসিয়া তারাও কলেজের ফিল্টিত জিপ গাড়ী ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেকপার নাগিল । কেউ কিচু বুঝবার না পারে । প্রিন্সিপাল সুধীর কুমার সমাদ্দার স্যার ধুতির কোনা ধরিয়া তার রুম থাকিয়া দৌড়িয়া সামনে যায়া নমস্কার আদাব সালাম দিবার নাগিল । অতিথীরা গাড়ী থাকিয়া নামা মাত্র কয় ক্লাশ রুম কোন দিকে ...

প্রিন্সিপাল স্যার কয় - স্যার আমার রুমত বসিয়া একটু চা পানি খায়া তারপর ক্লাশরুমে যাইতেন ...
অতিথীদের একজন কইল চা পানি খাইতে তো আসি নাই । দেখতে আসছি । চলুন ক্লাস রুমে । এরপর সোজা আসিয়া ঢুকিল হামার হেরে ক্লাশ রুমত । মাসুমা ম্যাডাম ইংরেজী ক্লাশ নিতিছিল । মাদার ইন ম্যানভিল গল্প পড়াইবার নাগছিল । হঠাত করিয়া এত মানুষ দেকিয়া ম্যাডাম সহ হামার হেরে সবার হুলকুম শুকিয়া গেল । এই দলের মদে প্রিন্সিপাল স্যারের চেহারা দেকলে মনে হতিচে স্যার জমের সামনে খাড়া হয়া আছে ।

অতিথীর হেরে মদে গংগাচড়ার টিএনও সাহেব সবার পরিচয় করেয়া দিলো । একজন শিখ্খা মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব আর একজন রংপুরের ডিসি । এরপর রংপুরের জেলা শিখ্খা অফিসার । গংগাচড়া থানার শিখ্খা অফিসার ।
যুগ্ম সচিব স্যার কয়- তোমরা কি পড়ছ...
হামরা উওর দিনাম - ইংরেজী স্যার ।
যুগ্ম সচিব স্যার - ইংরেজীর কি পড়ছ...
একজন খাড়া হয়া উওর দিল মাদার ইন ম্যানভিল গল্প স্যার ।
যুগ্ম সচিব স্যার - এই গল্পের লেখক কে ...
ক্লাশ নিশ্চুপ । ম্যাডাম কিছু কবার ধরছে । তাক ডিসি স্যার হাত দিয়া ইশারা দিয়া থামে দিল ।
যুগ্ম সচিব স্যার - আর কেউ কি জানেন ...
হামি খাড়া হয়া কইনাম - মারজোরি কিনান রাউলিং স্যার ।

যুগ্ম সচিব স্যার - ওনি ছেলে না মেয়ে ...
ক্লাশের দুই একজন - ছেলে স্যার ।
হামি উওর দিনাম - মেয়ে স্যার ।
যুগ্ম সচিব স্যার - উনি কোন দেশের ...
পুরা ক্লাশ নিশ্চুপ ।
ফির আমি খাড়া হয়া উওর দিনাম - আমিরিকার স্যার ।

যুগ্ম সচিব স্যার - ওনার সম সাময়িক আর একজন আমেরিকার লেখকের নাম বলতে পারবা ...
পুরা ক্লাশ চুপ । ডিসি স্যার সচিব স্যারের দিকে দেকিয়া শুকনা হাসি দিতিচে । এই হাসির মানে যারা রাউলিং জেন্ডার জানেনা তাদের এমন প্রশ্ন করা কি ঠিক হল ।

যুগ্ম সচিব স্যার এবার ম্যাডামের দিকে তাকালেন । এই তাকানোর মানে হইল আপনি জানেন কি না ...এই নীরবতার মদে হামি খাড়া হয়া অন্ধকারত ঢেল মারার ন্যাকান কইনাম উইলিয়াম ফকনার স্যার ।
সবাই ভুত দেকার ন্যাকান চেহারা বানাল ।

যুগ্ম সচিব সাহেব এবার ইংরেজীতে প্রশ্ন করল - হোয়াট ইজ দ্যা ইমপরটেন্ট ডিফরেন্স বিটুইন ফকনার এন্ড রাউলিং ..
হামি খাড়া হয়া উওর দিনাম - ফকনার ওয়াজ নোবেল লরিয়েট এন্ড রাউলিং ওয়াজ পুলিতজার উইনার ।
সচিব সাহেব হাত তালি দেয়া শুরু করিল বাকীর শ্যাষ করিল । পরে শুননাম কলেজের এমপিও পাশ হইছে ।


হামিও এইচএসসিত বোর্ড স্টান করিয়া পাশ করনাম । ফির এলা হামার ছবি পেপারত আসিল । কলেজের দুই ছাত্র একজন ঢাকাত যায়া একজন রাজশাহীত যায়া ভার্সিটির ভর্তি পরীখ্খার ফরম তুলিয়া আনিল । পুরন করিয়া উয়ারা যাইয়া ফির জমা দিয়া আসিল । স্যার, ছাত্র ছাত্রিরা মিলিয়া বাস ঠিক করিল ভর্তি পরীখ্খা দিবার যামো ঢাকাত আর রাজশাহীত ।

পয়লা হামি বাপ মায়োক ছাড়িয়া বাড়ীর বাইরে । উয়ারা কান্দে । পিচঢালা ঘাটা সারি সারি গাছ । বুয়েট, ঢাকা ভার্সিটি, রাজশাহী ভার্সিটি তিন জাগাতি টিকনাম । সবাই কইল বুয়েটত ভর্তি হও । কলেজের প্রিন্সপাল স্যার কইল বুয়েটোত ভর্তি হও । হলত সিট পাইনাম । বুয়েটে মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিংত ভর্তি হইনাম ।

নুতন এক জীবন শুরু হইল । ক্লাশ , এসাইমেন্ট, পড়াশুনা, পরীখ্খা, টিউটোরিয়াল, মিডটার্ম, ফাইনাল । আর একটা টিউশনি । আমার ডিপামেন্টর টিচারের মেয়ে কে । এরিমাঝে ছুটিতে বাড়ী গেলাম । আমাকে গ্রামের মানুষ দেখতে আসে । ঠোংগা ওয়ালা মজিদের বেটি বুয়েটত পড়ে । স্বাধিনতার পরে বুড়ির হাটের আমি প্রথম মেয়ে যে বুয়েটে চান্স পেয়েছি ।

শীত জাকিয়ে এসেছে উওরের শহরে । ছোট্টবেলার দেখা সেই মিলিটারীরা আবার এসেছে তাদের শীতকালীন যুদ্ধ মহরায় । এবার তাদের বাংকার বাড়ীতে ঢোকার মুখে খুড়েছে । বাড়ী থেকে বের হতে গেলে, ঢুকতে গেলে ঘুরে যেতে হবে বেশ কিছু পথ । তিনজন অফিসার দাড়িয়ে আছেন সাথে জোয়ান রা । আর দুরে দাড়িয়ে উৎসুক মানুষ । একজন লুটেনেন্ট কর্নেল, একজন কর্নেল, আর একজন মেজর । মিলিটারীর র্যাংক ফরমেশন সবি আমার পড়া হয়েছে সামান্য পড়ার সাথে শুধু বাংলাদেশের না পৃথিবীর বহু দেশের ।

আমি সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে ইংলিশে বল্লাম যার মানেটা দাড়াল বাংকারটা একটু সরে খুড়লে ভাল হয় । আমার ইংলিশ শুনে দাড়ানো অফিসাররা ভিড় করে থাকা দুরে দাড়ানো মানুষ বিস্মিত হলেন । সাপ বিড়াল ঢোকা, চাল নেই, চুলু নেই, ভাংগা বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসা মেয়ে ইংলিশে বলছে । কর্নেল সাহেব ইংলিশে উওরে বললেন যুদ্ধের অগ্রগামী সৈন্যদলের প্রতিরখ্খা বুহটা এই বরাবর তাই বাংকার গুলো । আর কেউ বলেনি সমস্যাটা বল্লে আগেই সরিয়ে ফেলতাম ।

আমি আবার ইংলিশে উওর দিলাম ভয়ে কেউ কিছু বলেনি । আর এখন তো আমি বল্লাম । আর আমি যদি ডিফেন্স বা এটাকিং এর ডিপলয়মেন্টটা দেখতে পারতাম আর আপনার অস্ত্রের কাভারেজ টা জানতে পারতাম তাহলে আপনাকে অংক করে বুঝিয়ে দিতে পারতাম । পরে কর্নেল সাহেব আমার পরিচয় জেনে দাড়ানো মেজর সাহেব কে ইশারা দিলেন তার হাতের ম্যাপটা দেখাবার জন্য । আমি ফিজিক্চ এর সুত্র দিয়ে অস্ত্রের এমুনেশন এর গতি জেনে নিয়ে বোঝালাম এনিমি লাইনে একি আঘাত হবে যদি বাংকার আমার ব্যবহারের রাস্তাটা থেকে দুরেও খোদাই করা হয় ।

সবাই যেন হা করে তাকিয়ে রইলেন । সামান্য মেয়ে যার গায়ে ত্রিশ টাকা গজের কাপড়ের জামা সে এক যুদ্ধবাজ ঝানু কর্নেল কে ফিজিক্চ এর সুত্র দিয়ে যুদ্ধ বিদ্যা বুঝিয়ে দিল । কর্নেল সাহেব আমাকে আর্মীতে যোগদানের পরামর্শ দিলেন । আমি উওরে বল্লাম আমি মানুষের অগ্রযাত্রার আবিস্কারে বিশ্বাসী যুদ্ধের তত্বে নয় । জীবনে এই প্রথম মনে হল ঘুরে দাড়াবার সাহস আমি অর্জন করলাম । তোমার শক্তি আছেই বলেই তুমি শক্তিমান নও । আমি গ্যান দিয়ে তার মোকাবেলা করতে পারি ।

থিৃ পয়েন্ট এইট জিপিএ নিয়ে ব্যাচেলরস শেষ করলাম মাষ্টার্সে এপ্লাই করলাম ইউসিএল বার্কেলে তে । ওরা একসেফট করল স্কলারশিপ, টিএ শিপ সহ । পার্সপোর্ট হল ভিসা হল আমেরিকার । জীবনের প্রথম বিমানে । জানালা দিয়ে তাকিয়ে আমার সেই ভাংগা বাড়ী দেখতে পেলাম । যেন বিমানের জানালা আর আমার বাড়ীর দরজা একটা সমান্তরাল রেখা ।

কি করে সময় পেরিয়ে গেল মাষ্টার্স শেষ হল । ফান্ডিং সহ পিএইচডি শেষ করলাম । জীবনের প্রথম চাকুরী পেলাম নাসাতে । মজার ঘটনাটা এখানেই ঘটল । তামাম দুনিয়া থেকে পর্যটকরা নাসা ঘুরতে আসে । বাংলাদেশী এক ভদ্রলোক এলেন পরিবার সহ নাসায় বেড়াতে । কেনেডি স্পেস সেন্টারের ওখানে আমি স্নাকবারে অপেখ্খা করছিলাম আমার এক বন্ধু আসবে বলে ।

আমি ফোনে আমার এক বন্ধুর সাথে বাংলায় কথা বলছিলাম ।
শুনে পাশের টেবিলের একজন ভদ্রলোক বললেন আপনি কি বাংলাদেশী বল্লাম হ্যা ।
বল্ল আমিও । কিন্তু এখন কানাডিয়ান । বাংলাদেশের কোনদিকটায় আপনার বাড়ী ?
বল্লাম রংপুর
আগ্রহ নিয়ে বল্ল ও তাই । রংপুরের কোথায় ?
বল্লাম গংগাচড়া ।
শুনে খুব খুশি হয়ে বললেন আমার শৈশব কেটেছে রংপুরে । এরিমাঝে ভদ্রলোকের স্ত্রীর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ।
রংপুরে কেন ছিলেন ? বল্ল বাবার চাকুরীর সুবাদে ।
আপনার বাবা কিসে ছিলেন ?
বল্ল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইন্জিনিয়ার । আব্বুর দায়িত্বে ছিল গংগচড়ার তিস্তা নদী ।
আমি বল্লাম আপনার আব্বুর নাম কি মোজাম্মেল ?
খুব বিস্ময় নিয়ে বল্ল জানলেন কি করে ? পরে বল্ল অবশ্য জানারই কথা আমার আব্বু ভিষন সত ও ভাল মানুষ ছিলেন ।

সেই কর্নেল সাহেবের মত চোখে চোখ রেখে বল্লাম - ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড সিমশন নামের এক ডিভোর্সী মহিলার প্রেমে পড়ে নাকি রাজত্ব ত্যাগ করেছিলেন । গল্প এমনটাই সবার মুখে মুখে আছে । কিন্তু নীরেট সত্য হল তিনি রাজা হবার জন্য হিটলারের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন । ইংল্যান্ডের গুরুত্বপুর্ন স্থাপনার ঠিকানা হিটলারের হাতে দিয়েছিলেন ।

প্রসংগ অন্যদিকে নেয়াতে ভদ্রলোক একটু অবাক হলেন । বাংলাদেশে সবার বাবা, মা যারা সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা তারা সবাই সত । কিন্তু পুরো দেশ দুনীতিতে চ্যাম্পিয়ন । তো, আপনার আব্বুর সততা জানে কোলকোন্দ, মহিপুর, বিন্নারটারীর মানুষ ।

আপনার আব্বুর কারনে গংগাচড়ার কোলকোন্দ, মহিপুর, গ্রামের শতশত মানুষ কে স্থানারিত হতে হয়েছিল । সোনার সংসার ভেংগে টুকরো টুকরো হয়েছিল । অনেক বাবা জীবদ্দশায় জেনেছিল তার মেয়েটা অভাবে পড়ে বেশ্যা হয়েছে । আপনি কানাডিয়ান হয়েছেন আর কেউ বারবনিতা হয়েছে, আপনার কানাডায় বাড়ী গাড়ী হয়েছে আর শতশত মানুষের শেষ সম্বল ভিটে মাটি হারাতে হয়েছে নদীতে । এই চরম সত্য টুকু আপনাকে জানাতে পেরে আমার আব্বার দীর্ঘশ্বাস কিছুটা কমাতে পারলাম ।

ভদ্রলোক কোন টু শব্দটি করলেন না । খুব ভাল করে জানতেন বাপ ছিল একটা দুনীতিবাজ । মুখ নীচু করে স্ত্রী কে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন । এসেছিলেন ঘুরতে সেটা মাটি করলাম আমি ।

এলাকার মানুষজন আর কেউ মজিদ কে এখন আর ঠোংগা মজিদ বলেনা । এখন মজিদ সাহেব বলে । মজিদের বউ আয়েশা বেওয়াকে আগে অনেকেই ডাকত আয়শা মাই, আয়শা বেটি, ঠোংগা বেটি এখন নাজনীর মা ডাকে, ভাবী ডাকে । পিছনে অন্য কিছু বললেও সাথে যোগ করে ঠোংগা বেচিয়া আম্রিকা, বুড়ির হাট থাকিয়া নাসা । যে সে মদ্দের কাম নয় ভাইও । মজিদ ও তার বউ আম্রিকা থেকে ঘুরে এসেছে । দুজনি হজ্ব করেছে। হজ্বে যাবার সময় সাথে সেই সোবহান হুযুর কেও নিয়েছিল । যিনি মজিদের মেয়েকে ক্লাশ ফাইভে বৃত্তি পরীখ্খার আগে দোয়া করতে এসেছিলেন । নাজনি বলেছিল । হুযুরকেও সাথে নিতে সব টাকা নাজনী দিয়েছে । হুযুরের পরিবারের জন্য প্রতিমাসে মজিদ হুযুর কে দশ হাজার টাকা করে দিয়ে আসে সেটাও নাজনী বলেছে । তার ছেলে মেয়েদের যেন পড়াশুনার ব্যাঘাত না হয় ।

আমেরিকা যাবার সময় বিমানের বিজনেস ক্লাশের সিটে বসবার পর জানালা দিয়ে সেও মেয়ের মত বুড়ির হাটের ভাংগা বাড়ী আর বিমানের জানালা বরাবর একটা সরল রেখা দেখেছিল ।

মজিদ নুতন করে এক বিঘা জায়গা কিনে চারতলার ভিত্তি দিয়েছে । এই বছরের মধ্যে বাড়ী হয়ে যাবে । ডাকতার আজহারুল হকের মত সেও একটা বাড়ী বানাতে চায় । হুযুরের সেই কথা মজিদের মনে আছে । নাজনীরও মনে আছে । নাজনী বলেছে বাড়ী কর মজিদেরও ইচ্ছা ছিল । মজিদের ইচ্ছা তার বাড়ীর সামনে আসিয়া যেন বাপ ছাওয়াক কয় দেখছেন মায়ো দেখছেন বাপো পড়াশুনা করিলে এংক্যা বড় বাড়ী করা যায় ।

নুতন বাড়ী না হওয়া পর্যন্ত আগের বাড়ীতেই থাকতে হচ্ছে । আগের বাড়ীর ভাংগা ঘর মেরামত করার জন্য মজিদ মেয়েকে কিছু টাকা পাঠাতে বলেছিল । ঘরের টিনের চালে ফুটো বন্ধ করতে হবে কিছু চাল বদলাতে হবে সেজন্য । ঝড়ে গাছের ডাল ভেংগে টিনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে । নাজনীর সাবেক স্কুলে আর কলেজে নাজনী দুটো লাইব্রেরীর কথা বলেছিল সেটার টাকার কথাও মজিদ বলেছিল ।

রংপুর শহরে কাজ শেষ করে সোনালী ব্যাংকের ধাপ ব্রান্চে গেল মজিদ সাথে সোবহান হুযুরও আছে । টাকা তুলবে এজন্য হুযুর কে নেয়া । ব্যাংকে মানুষের ভিড় ভাট্টা কম । সবাই বেশ অলস সময় কাটাচ্ছে । মেয়ের পাঠানো টাকা তুলতে গিয়ে মজিদ আর সোবহান হুযুর ব্যাংকের লাইনে দাড়ায় । ব্যাংকের অফিসার গোপন সংখ্যা আর টাকার পরিমান জানতে চাইল ? মেয়ের এমন টাকা তুলতে তুলতে মজিদের অভিগ্যতা হয়েছে এই ব্রান্চে মজিদ প্রথম । এর আগে বুড়ির হাট থেকেই তুলত । গোপন সংখ্যা বলে । টাকার পরিমান ৩৫ লাখ শুনে অফিসার মজিদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে যিনি টাকা পাঠিয়েছেন তিনি কে হন ? মজিদ বলে মেয়ে । ব্যাংক অফিসার কে মজিদ নিজের ভোটার আইডির কপিটা এগিয়ে দেয় । অফিসার বলে একটু দাড়ান । অফিসার উঠে ম্যানেজার এর রুমে যায় । ফিরে এসে বলে আপনারা একটু ম্যানেজার সাহেবের সাথে দেখা করেন । মজিদ আর হুযুর ম্যানেজার এর রুমে যায় । ম্যানেজার সাহেব বসতে বলে । তারপর জিগ্যেস করে
আপনারা কোথায় থেকে এসেছেন?
মজিদ উওরে বলে বুড়ির হাট ।
টাকা কোথায় থেকে এসছে ?
আম্রিকা ।
কে হন যিনি টাকা পাঠিয়েছেন ?
মেয়ে ।
ওনি কি করেন ?
চাকুরী ।
কোথায় চাকুরী করেন
মজিদ - আমি তো উগলা বুঝি সুঝিনা - কি নাসা না ফাসা এরকম কোথায় ।
কেন টাকা পাঠাল ?
মজিদ - ঘরের টিন বদলান লাগে আর কিছু চালের ফুটা বন্ধ করান লাগে আর মেয়ে কইছিল তার স্কুল, কলেজে একটা লাইব্রেরী করবে এল্যা তাই ।
আপনার সাথে ইনি কে ? ওনি আমাদের মসজিদের হুযুর ।
ম্যানেজার সাহেব যেন হা হয়ে তাকিয়ে রইলেন ।
আপনি কি করতেন ?
মজিদ - ঠোংগা বানাইতাম ।
ঠোংগা বানিয়ে মেয়েকে পড়ালেন কি করে ?
আমি পড়াইনাই । মেয়ের পড়া সে নিজেই পড়ছে । ফাইভে বৃত্তি দিয়া এইট পর্যন্ত । এইটের বৃত্তি দিয়া টেন । টেনের টাকা দিয়া কলেজ । কলেজের টাকা দিয়া বুরেটে । তারপর জানিনা ওতশত বুঝিও না ।
বুরেট মানে
হুযুর - ঢাকায় ইন্জিনিয়ারিং পড়ে যে, সেইখানে ।
ম্যানেজার - বুয়েট ?
মজিদ -ওই হল ।
আপনার কি সোনালী ব্যাকে একাউন্ট আছে ?
জি আছে ।
কোন শাখাতে বুড়ির হাট ।
সব টাকা নিয়ে যাবেন কি করে ? মজিদ তাকিয়ে থাকল । চিন্তা করল কথা সত্য । বল্ল তাহলে কিরা যায় ?
ম্যানেজার বলে সব টাকা কেরি করা তো মুশকিল । আপনি আমাদের ব্রান্চে জমা দিলে বুড়িরহাট থেকে উঠাতে পারবেন । এখন ব্যাংক অনলাইন । বাংলাদেশের যে কোথাও থেকে এই টাকা উঠাতে পারবেন ।
লাইনটাইন তো বুঝিনা কাম হইলেই সারে ।

ম্যানেজার চা খাওয়ালেন মজিদ আর হুযুর কে । বাকী সব এমপ্লয়ীদের ডেকে এনে পরিচয় করিয়ে দিলেন মজিদ আর হুযুরের সাথে।
ফ্লাটটার বারান্দার বেলকুনিতে বসলে একটু দুরে খোলা সবুজ মাঠ, গাছের সারি তার কিছুটা সামনে ডিসট্রিক কলাম্বিয়া দিয়ে বয়ে যাওয়া পটোম্যাক নদীটা চোখে পড়ে । দৃশ্যটা দেখলে নাজনীর মনে পড়ে চড়কের মেলার কথা । গরম জিলাপি ভাজার কথা, হাভাতের মত, লেল্যচের মত তাকিয়ে থাকবার কথা । এজীবনে কত দেশের খাবার খেল নাজনী কিন্তু চড়কের মেলাতে সেই দোকানদারের দেওয়া আধা খানা জিলাপীর স্বাদ যেন আজও জিহবাতে লেগে আছে ।

উৎসর্গ: নারী দিবসে বাংলাদেশের সকল নারীকে । যারা সবচেয়ে অর্থনীতিবিদ । যারা সংসার নামক বিশাল এক ডিপামেন্ট হাসি মুখে সামলান ।

৮/৩/২০১৬
ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর
বিশেষ ধন্যবাদ : সজিব বুয়েট ।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একি গল্প?!

না সত্যি কাহিনি!

রুপকথাকেও হার মানেনো এই সময়ের রুপকথা যেন। মুগ্ধ হয়ে পড়ে গেলাম।

সত্যি হলে নাজনীর বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা! নাজনির প্রতিও। প্রতিকুলতাকে জয় করতে স্বপ্নের সাহসের এক অনন্য উদাহরন নাজনী।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩

কিবরিয়া জাহিদ মামুন বলেছেন: বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর যেকোন দেশের কোন সংগ্রামী নারীর গল্প এটা হতে পারে । আপনার উপলব্ধির জন্য সময় নিয়ে পড়বার জন্য ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.