নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে ফোকলোর

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১১



ওর ডাক নাম ছিল শিমুল । ওকে আমরা বন্ধুরা ডাকতাম তুরা বানু ওরফে স্যার আবু ইষ্টার্ন টিউব । এই নামের মাহত্ত্ব কি বা কেন এমন নাম, কে দিয়েছিল এই রাশভারী নাম তা আজ আর জানা যায়না জানতে গেলে বেশ গবেষনার প্রয়োজন আছে । আর এই গবেষনা করতে গেলে (বুড়া আমলীর তল) বুড়া তেতুল গাছের নীচে চা শেষ করে, মুখে পান নিয়ে তামাক জ্বালিয়ে শুরু করতে হবে । তাহলে হয়তোবা এই নামের মাহত্ব বের হতেও পারে ।

পরনে আমার হাফ প্যান্ট, উপরে স্যান্ডো গেন্জি দৌড় শুরু করলাম শিমুলের বাড়ীর উদ্দেশ্যে । শিমুলের বড় ভাই বকুল ভাই মারা গেছে । কারেন্টের শক খেয়ে । উপস্থিত জমায়েত মানুষকে শিমুল বলছে কি করে বকুল ভাই মারা গেল আর কাদছে । সেটাই বোধহয় ছিল আমার দেখা বা বোঝার প্রথম মৃতু্ । এতগুলো মানুষের সামনে শিমুলের কথা বলার বয়স না । অন্য সময় হলে সে সাহস হতনা এতগুলো মানুষের সামনে এমন করে কথা বলার । কিন্তু কাছের মানুষের মৃতু বাকী কম বয়সীদের বয়স বাড়িয়ে দেয় । চিন্তার পৃথিবী আলাদা হয়ে যায় । ছোটরা বড়দের মত চিন্তা করতে শেখে ।


ঈদের আগের রাত গুলো ছিল আমাদের আনন্দের রাত । একসময় আমাদের লিডার ছিল রাজু ভাই, সাগর, রুপম । রাতের অন্ধকারে রাজু ভাই সামনে পেছনে পুরো দল । সামনে রাজু ভাই সিগারেট জ্বালিয়ে বলত সবাই সিগারেট জ্বালা আমরা পেছনে সিগারেট জ্বালাতাম । প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজ থেকে বাকী মুসল্লিরা ঘাড় ধরে বের করে দিত আমাদের সেখানেও রাজু ভাই লিডার । পরে রাজু ভাই আমরা মিলে সবার পেছনে ঘাসের উপর নামাজ পড়তাম । মসজিদে আমরা নামাজে দাড়ালে হাসতে হাসতে বাকী মুসল্লিদের নামাজ নষ্ট করতাম । তাই ঘাড় ধরে বের করে দেয়া প্রকল্প চালু হল আমাদের জন্য প্রতি শুক্রবার ।

তিন লিডার রত্ন রাজু ভাই, সাগর, রুপম । তারা সপ্তাহে অন্তত একদিন পাড়ার মুরুব্বী তোফাজ্জল সাহেবের বন্দুকের দাবরানী খেতেন । তোফাজ্জল সাহেব বংগবন্ধুর সর্ব কনিষ্ট এমপি ছিলেন । পাড়ায় লাইসেন্স করা দুটো বন্দুক ছিল একটা আমাদের আর একটা তোফাজ্জল সাহেবের ।

এই যে বিড়ি খাবার ট্রেনিং শুরু হল তা যে কোন অকেশনে চলত । ক্লাশ স্কিচ বা সেভেনে পড়ি । একবার আমি, বিদ্যুত সেই তোফাজ্জল সাহেবের পুত্র । বন্ধু মিলটনের বাসার সামনে দিয়ে তামাক খেতে খেতে যাচ্ছি । মিলটনের বাবার গা থেকে তখনকার ট্রিপল ফাইভ সিগারেট আর পারফিউম মিলে চমতকার একটা গন্ধ বেরোত । ওনি যে রাস্তা দিয়ে হেটে যেতেন বোঝা যেত ওনি গিয়েছেন বা আসবেন । শার্টের বুক পকেটে ট্রিপল ফাইভ সিগারেটের প্যাকেট থাকত । শার্টের বুকের উপরের একটা বোতাম সবসময় খোলা থাকত । লোমশ বুক বোঝা যেত । তার চোখের দিকে তাকিয়ে কেউ কথা বলবে ওতবড় সাহস ওই তল্লাটে কারও ছিলনা । একবার ম্যাকগাইভার, দ্যা টিম, ফলগাই, বা নাইট রাইডার এমন কোন একটা সিরিয়াল দেখবার আগে কারেন্ট গেল আমরা সবাই মিছিল নিয়ে গেলাম ওয়াবদা ভাংবো বলে । মালেক চাচা কোথা থেকে সাদা এইচএস হোন্ডা নিয়ে হাজির হলেন ওয়াবদার গেটে । সেই চোখ দিয়ে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করলেন চলে যা । লিডার রাজু ভাই সহ আমরা প্রায় ত্রিশ, চল্লিমজন জন ছেলে মিউ করে মিউ করে ফিরে এলাম । কিছুখন বাদেই কারেন্ট এল ।

বিদুত কে বল্লাম মালেক চাচা আসছে মনে হয় । গন্ধ পাচ্ছি । সিগারেট ফেল দৌড়াই । বিদুত বলে আরে রাখ কে কি বলে দেখবো । আমি ভয়ে দৌড় । ধরা খেল বিদুত । যখন চাচা শুনল সে এমপির সাহেবের ছেলে আর যায় কোথায় । কান ধরে উঠ বস করানো হল । কানের নীচেও বোধহয় দু একটা দিলেন । আমি লুকিয়ে অন্ধকারে দেখলাম । আমার তথ্য তিনি নিলেন । আমি দোয়া ইউনুস পড়া শুরু করলাম । সেই রাত পেরিয়ে কতদিন কতরাত চলে গেল হঠাত একদিন শুনলাম মালেক চাচা নেই । আজও তার সেই স্মার্ট লুক, মনে পড়ে ।

একবার কোন এক ঈদের আগের রাতে আমরা প্রায় বিশ পচিশজন গলা ছেড়ে রাস্তা দিয়ে জেমসের মা গানটা সদ্য নেমেছে মার্কেটে । গানটা গাইতে গাইতে যাচ্ছিলাম । যে মুহুর্তে মিলটনের বাসা পেরিয়ে পরাগের নানার বাসার সামনে গিয়েছি ওম্নি বাসার ভেতর থেকে পরাগের শামীম মামা দৌড়ে বেরিয়ে এই তোমরা কারা ? বাবু আছে নাকি এর ভেতরে ? বাবু পরাগের নাম । হুংকার শুনবা মাত্র পরাগ অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে । সাথে আমরাও । ধরা কে পড়ল তা আর জানার সময় নাই । জীবন বাচানো ফরজ । কতদিন শামীম মামার হোন্ডাটা চালিয়েছি । একটু তোতলা ছিলেন ।

একবার পরাগ কে বকা দিচ্ছিলেন আমাদের সামনে । মা মা মা মানুষ হবানা আমার মত দুই দুই দুই পয়সার ঠিকাদার হবা । জুম্মা জুম্মা সাতদিন হাটুর বয়সী ইন্জিনিয়ার কে স্যার স্যার করবা । তেল দিবা । তাহলে ঠিকাদারী কর । সন্ধায় মামা পড়তে বসতেন তখন কার্তিক দা, নাড়ু দা বাসার জানালায় এসে দাড়িয়ে চুপি চুপি ডাকত শামিম এ শামিম । মামা বই রেখে পালিয়ে যেতেন । নিজের বাপের খাশি চুরি করে বেচে পরে আবার মাইকিং করছি । বদমায়েশ তোমাদের চেয়ে কম ছিলাম না । এগুলো করে কোন লাভ হয় নাই । মানুষ হতে পারি নাই । লেখাপড়াটা করতে পারি নাই ।

কতরাত শামীম মামা, কার্তিক দা, নাড়ুদা কে দেখেছি বাসায় এসে গল্প করতে । ওরা বাসায় এলে আমি ভিষন খুশি হতাম রাতের পড়াটা কোনরকম করলেই চলবে । বা আব্বার মার খাওয়া নাও লাগতে পারে । কার্তিক দা ডিভি পেয়ে আমেরিকা গেলেন, নাড়ুদার খবর জানিনা । গত কোরবানীর ঈদে বাড়ী গেলাম বড় আপার বাসায় আমি শামীম মামা, মামি, আর তার ছেলে প্রায় রাত দেড়টা পর্যন্ত গল্প করলাম । কাল রাত বারটায় বন্ধু মিলটনের ফোনে জানলাম শামীম মামা আর নেই । ঢাকার রাস্তায় পার হতে গিয়ে দুঘটনায় মারা গেছেন । এমন করে প্রতিদিন কে কত প্রিয়জন হারাচ্ছে কে তার খবর রাখে । শুধু খবর হয় ভোটের সময় । নিরাপদ সড়ক সে যেন এক দুর অতীত । নিরাপদ সড়ক দিবসে সেমিনার, আলোচনা, ভালোচনা, বিরানী, ক্যামেরা, টিভি, টকশো তারপর শেষ ।

ইকবাল রোড
মোহাম্মদপুর ।
০৯/০৪/২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.