নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে ফোকলোর

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৯

পাচ বছর গুলশান গিয়েছি কামলা খাটতে । আর গত তিন বছর হল যাই ডায়াপার কিনতে । যে ডায়াপার গুলশানে পাওয়া যায় বাইশ্শো টাকায় সেই ডায়াপার এগোরা, মিনাবাজার, লজ্বা ফার্মা, সরি লাজ ফার্মাতে পাওয়া যায় উনত্রিশশো প্লাস ভ্যাট । মানে হাজার তিনেকের মামলা । যে পারফিউম গুলশান মার্কেটে ছয়শো সেই পারফিউম আলমাসে এগারোশো প্লাস ভ্যাট । এসির বাতাস আর দাড়োয়ান দরজা খুলে দিয়া বাকী টাকা ।

এই শহরে ব্যবসাপাতির লাইনটা এরকমি । সোয়ারিঘাট, কাওরান বাজারের একখানা তিনশো চারশ টাকার ইলিশ মাছ হাতিরপুলে ছয়শ, সাতশো । কাওরান বাজারের তিনশ টাকা কেজির শিং মাছ হাতিরপুল, মগবাজারে সাতশো আটশো । আর একখানা ইলিশ মাছ মিনাবাজার, এগোরা, স্বপ্ন তে হাজার ও সাথে প্লাস প্লাস ভ্যাট ।

মিনাবাজার, স্বপ্ন, এগোরাতে বিপদে পড়ে কিছু কিনতে ঢুকলে মাছ দেখি । বলি এই মাছ আপনারা আনেন কোথা থেকে ? বলে স্যার আমাদের হাওর, বাওর বিল, ঝিল ভাড়া নেয়া সেখান থেকে মাছ আসে । তাহলে কাওরান বাজারে ভোর সাড়ে পাচটা ছয়টার দিকে আপনাদের গাড়ী দেখি ? উওরে বলে তা কি করে সম্ভব ? অন্যদের হতে পারে আমাদের তো সম্ভবি না । আমি উওর দেই ঠিক ঠিক ঠিক । ভুলও দেখতে পারি । সেই ছোটবেলা থেকে দেখছি । এখনো চলছে দেখা সো ভুল হতেই পারে ।

সেবার দেখলাম লাজ লজ্বা ফার্মার মালিক মা কে নিয়ে বই লিখেছেন বইটাও বিক্রী করছেন প্লাস প্লাস এ । ছোটবেলার গল্পর কথা মনে হত হাসমুরগী ঘরে তোল, দাদীকে ওষধ খাওয়াও । লেখক বই পড়ার কথা বলেন নি । লজ্বা ফার্মা, দাদা দাদী সহ সবার জন্য ওষধও দিচ্ছেন সাথে বইপড়া । মিনাবাজারে গেলেও তাকের মধ্যে মালিকের লেখা বই দেখা যায় । বিক্রী প্লাস প্লাস এ ।

তিনবছর গুলশান মার্কেটে যেতে যেতে কিছু ব্যবসায়ির সাথে জানাশুনা হল । গেলে চা খাওয়ায় । এ রকম একজন ছিল মির্জা সাহেব । ধপধপে সাদা পান্জাবী পরেন পায়ের টাকনুর উপর পর্যন্ত । মাথায় সাদা টুপি ।

একদিন বল্লাম আপনারে এই ব্যবসাতে মানায় না ।
বল্ল কেন ? বল্লাম আপনার চেহারা কুতুববাগের পীর সাহেবের মত । একটা দরবার শরীফ খুললে ভাল কামাই রোজগার হত ।
মির্জা সাহেব হাসেন । বলেন মজা নেন আমার লগে আপনার কি আমারে নোয়াখাইল্লা মনে হয় । দরবার শরীফ খইল্ল্যা বমু ।
আমি বিক্রমপুইরা । দ্যাশে টেকা যদি কাগজের নোট না হইয়া কয়েন হইত আমাগো বিক্রমপুর সাত হাত মাটির নীচে যাইত গা ।

একদিন মির্জা সাহেবের দোকানে চা খাচ্ছি একজন কাষ্টমার ওয়াইপস কিনবে যেটা দিয়ে হাগু করলে বাচ্চাদের পশ্চাদদেশ পরিস্কার করে সেটা খুলে দেখতে চাচ্ছেন । ঠাটা পরা গরমের দিন ছিল, মির্জা সাহেব একটু তুঘলকি মেজাজে ছিলেন কাষ্টমার কে বললেন মিয়া লইবেন এক পিচ ওয়াইপস হেইডা আবার খুইল্ল্যা দেখতে চান । ন্যাকরা দিয়ে পাছা মোছা পোলা আমার আম্রিকা গেছে । ক্লাশে ফাষ্ট হইছে ।

কাষ্টমার চলে গেলে আমি হো হো করে হাসলাম । মির্জা সাহেব বলেন হাসেন ক্যা । ঠিকি তো কইছি । পোলায় আমার আম্রিকার ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গেছে । পোলায় যখন হইছে তখন তো এইসব ছিলনা । ন্যাকরা দিয়া পাছা মুছছি । পোলার কনভোকেশনে আম্রিকা গেছি । পোলার আম্রিকান ধবধবা সাদা চামড়ার স্যার রে সালাম দিছি । সেই স্যার ক্ইচে ওয়ালাইকুম ছালাম । কি কন মিয়া আমরা বিক্রমপুইরা । আমাগোা তোলা আশি টেকা ।

সেদিন গুলশান যেতে গিয়ে দেখি বামের লেন পুলিশ আটকায় দিয়েছে । সাহস করে জানতে চাইলাম । পুলিশ বল্ল গুলশান এক নাম্বার মার্কেটে আগুন লাগছে । মির্জা সাহেবের দোকানের ম্যানেজার কে ফোন দিলাম ম্যানেজার বল্ল ভাইজান সব শেষ । রাতে বাসায় টিভিতে দেখলাম মির্জা সাহেব হাউ মাউ করে কাদছেন ।

কয়েকদিন পর আবার গেলাম গুলশানে ডায়াপার কিনতেই । পাশের মার্কেটে ছো্ট্ট একটা দোকানের গলিতে দাড়িয়ে মির্জা সহেব ডায়াপার ব্রিকী করছেন । ম্যানেজার দুই হাতে প্রায় দশটা ডায়াপার নিয়ে গলিতে গলিতে ঘুরছে । মির্জা সাহেবের বয়স যেন এক যুগ বেড়ে গেছে । মির্জা সাহেব বললেন আজ তো আপনারে চা খাওয়াতে পারমু না । আমি হেসে দিয়ে বল্লাম আমি খাওয়াই । মির্জা সাহেব বললেন না সরতে পারতাছিনা । কোনরকমে এই খাড়ানোর জায়গাটা পাইছি । এই মার্কেটেও বহুদিন কারেন্ট নাই । কি হইবো কিছ্ছু বুঝতাছিনা । পুরা ছাদ ধইসা পরছে । কবে ঠিক হইবো কে জানে । ডায়াপার কিনে নিয়ে চলে এলাম ।

প্রশ্ন একটা মাথায় ঘুরছিল কেউ কি মার্কেটের পিলার ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়াতে আগুন ধরে গেল । নাকি মানুষে মানুষে ধাক্কাধাক্কি করাতে আগুন ধরল । মির্জা সাহেবের শরীরে অবশ্য ধাক্কাখাক্কির কোন চিহ্ন দেখি নাই ।

ইকবাল রোড
২৮/০১/২০১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.