নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয়নালের পেছনের গল্প

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৯

মফিদুল কে সোহেল ভাই বল্ল চলো, জয়নাল ভাইয়ের সাথে দেখা করবো । মফিদুল সোহেল ভাইকে ভাই ডাকে কিন্তু সম্পর্কটা বন্ধুর মত । সোহেল ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল বাবুর মাধ্যমে । বাবুর মহাখালীর মেসে । বাবু সোহেল ভাইকে ভাই ডাকত । তাই মফিদুল ও ভাই ডাকে । বাবু আর সোহেল ভাই একি ইউনিভার্সিটিতে পড়ত । ইউনিভার্সিটির পাশে মেস হওয়াতে সোহেল ভাই মাঝে মাঝে আসত বাবুর মেসে । মেসের বাকী মেম্বারদের সাথেও সোহেল ভাই এর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল । সোহেল ভাই চুল সামনে থেকে পেছনে টেনে নিয়ে ঝুটি করে বাধত । সোহেল ভাইয়ের কাধে গিটার থাকত । পরনে জিন্সের প্যান্ট আর পায়ে বুট । মেসে এলেই গিটার নিয়ে গান গাইতে বসে যেতেন । আর গানের মাঝে গাজা খেতেন ।

মফিদুলও গলা ছেড়ে গান গাইত সোহেল ভাই, বাবুর সাথে । সোহেল ভাই এর সাথে গাজাও খেত । মফিদুলের ও এমন ইচ্ছা ছিল একটা গিটারের । ছোটবেলাতে মফিদুলের সাথের দু একজন বন্ধু গান শিখতে যেত ক্লাবে । মাসিক চাদা ছিল পচিশ টাকা । মফিদুলের মাসিক পচিশটাকা চাদা দিতে পারার সামর্থ হয়নি আর স্কেলে গানটাও শেখা হয়নি । কেউ গাইলে সাথে গাইতে পারে । গলাকে অনেক উচুতে উঠাতে পারে । নীচেও নামাতে পারে ।

সে সময়টাতে মফিদুলের ঢাকা শহরে থাকবার কোন জায়গা ছিলনা । মফিদুল ঢাকা কলেজে পড়ত । বাবুর বাড়ী মফিদুলের বাড়ীর পাশে হওয়াতে মফিদুল দু চারদিনের জন্য বাবুর মেসে থাকতে যেত । এই মেসে যারা থাকত সবাই বড়লোকের ছেলে ছিল । মফিদুল এদের এই সোনার চামুচ নিয়ে জন্মানো জীবন দেখে মনে মনে আফসোস করত । মফিদুলের পকেটে নেভি সিগারেট কিনবার টাকা থাকত না কিন্তু এরা বেনসন খেত, ব্লাক লেভেল, পার্সপোট খেত । জুয়া খেলত । মেসেই জুয়া হত । কেউ কেউ বিশ হাজার হারত । এই মেসের সবাই মফিদুলকে বাবুর বন্ধু হিসেবেই দেখত । মফিদুলের শার্টের কলারের বসে যাওয়া দাগ, ছেড়া জুতাকে অসম্নান করত না ।

মফিদুল একটা কাজ পেল উওরাতে । ডিশের অফিসে কাজ । লাইনম্যানদের সাথে করে মই নিয়ে ডিশের লাইন লাগোনো । মাস শেষে বিল দেয়া । তাড় ছিড়ে গেলে জোড়া লাগানো । ঠাটাপড়া রোদে মফিদুল দাড়িয়ে লাইনম্যানের মই ধরে আকাশের দিকে তাকিয়েছিল । লাইনম্যান তাড়ের জোড়া দিচ্ছিল একটা টেলিফোনের পোলে । হঠাত সোহেল ভাই ডাক দিলেন । মফিদুল তুমি এখানে ? মফিদুল বল্ল ভাই এখানে ডিশের অফিসে একটা কাজ পেয়েছি । লাইনম্যানদের মই সহ অফিসে পাঠিয়ে দিলে । সোহেল ভাই সিগারেট চা খাওয়াতে নিয়ে গেল । গল্পের মাঝে সোহেল ভাই বল্ল দুপুরের ভাত খেয়েছ ? মফিদুল বল্ল না ভাই । ওকে দাড়াও সোহেল ভাই পকেটে থেকে মোবাইল বের করে ফোন দিল সোহেল ভাইয়ের মাকে । বল্ল মা একজন নিয়ে খেতে আসব দুপুরে । তারপর বল্ল চল । মফিদুল একটু তো তো করছিল । সোহেল ভাই রিকশা ডেকে চড়ে বল্ল ওঠ ।

লিফট দিয়ে উঠে কলিং বলে বাজালে সোহেল ভাই এর ছোটবোন দরজা খুলে দিল । সোহেল ভাইদের সাজানো গোছানো বাড়ী । ডাইনিং টেবিলে চিকন চালের ভাত, ডাল, মাংস, ছোটমাছ, গরুর মাংস । মফিদুল কতদিন পর এমন খাবার খেল মনে নাই । বেশির ভাগ সময় মফিদুল দুপুরে কোকোলা নুডলস এর মধ্যে ডিম দিয়ে খায় । শেষ কবে মফিদুল ভাত খেয়েছিল সেটাও মনে নাই । দশটাকার এক প্যাকেট নুডলস আর পনের টাকার তিনটা ডিম কিনলে তিনবেলা চলে যায় । মানে পচিশ টাকাতে দিনপার ।

শেষ যেদিন মফিদুল আর দুই লাইনম্যান ভাত রান্না করেছিল সেদিন খেয়েছিল আলু ভর্তা, ডাল আর পেপে ভাজি দিয়ে । ডাল আলুভর্তার সাথে পেপে ভাজি থাকা মানে পোলাও বিরানী খাওয়ার মত ব্যাপার । সকালে রান্না করে সারাদিন ওটাই খেতে হত । ভাতের মধ্যে পিপড়ারা এসে ঢুকে যেত । সেগুলো বেছে বেছে খেতে হত । মফিদুল বলত বেটা পিপড়ারা বোধহয় জানেনা আমরা সাতার জানি ।

খাওয়া হলে সোহেল ভাই মফিদুল কে নিজের রুমে গিয়ে কিছুখন গিটার বাজালো । সোহেল ভাই বল্ল ঘুমালে ঘুমাতে পার । বিকালে চা নাশতা করে যেও । মফিদুলের খুব লজ্জা লেগেছিল । এত বড়লোক মানুষ সোহেল ভাই মফিদুল ভাবেনি । এত সুন্দর বিছানাতে ঘুমানো টা ঠিক হবেনা । কি মনে করে কি ভুল হয়ে যায় । বিদায় নেবার সময় সোহেল ভাই এর মা এল । এসে বল্ল সোহেল কে ফোন দিয়ে বাবা দুপুুরে চলে এস যখন মনে হয় । সোহেল ভাই এর দিকে ফিরে সোহেল ভাই এর মা বল্ল ওকে তুই নিয়ে আসবি ।

মফিদুলের শুকনো চেহারাতে সোহেল ভাই এর মা কোন একটা মমতার জায়গা খুজে পেয়েছিল বোধহয়। মফিদুল খুব লজ্জা পেয়েছিল । আর মনে মনে ভেবেছিল পৃথিবীর তাবত মমতাময়ী মায়েরা এই মমতার জায়গাটা বোধহয় খুজে পান । সোহেল ভাই নীচে এল মফিদুলের সাথে সিগারেট খেয়ে বিদায়বেলা আবার মনে করিয়ে দিল মা কি বলছে শুনছ । মফিদুল হেসে বল্ল আসব ভাই ।

এমন করে সোহেল ভাই কি করে মফিদুলের কাছের মানুষ হয়ে গেল সাথে সোহেল ভাই এর পরিবার । একবার সোহেল ভাই ওনার নানারবাড়ী নিয়ে গেল মফিদুল কে । মফিদুলের মনে হয়েছিল সোহেল ভাই এর চেয়ে মা সোহেল ভাই এর চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল । কি জানি মেয়েরা হয়ত তার বাবার বাড়ী কাউকে দেখাতে পারলে আপ্যায়ন করতে পারলে বেশি খুশি হয় । ফিরে আসার পর সোহেল ভাই এর মা খুটে খুটে জানতে চেয়েছে সোহেল ভাই এর কাছে মফিদুলকে সোহেল ভাই কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছে ।

সেদিন সোহেল ভাই যখন বল্ল যাইবা নাকি জয়নাল ভাই এর সাথে দেখা করতে । মফিদুল রাজী হল অফিসে কাজ না থাকলে মফিদুল সোহেল ভাই এর সাথে টো টো করে ঘুরে বেড়ায় । পথে সোহেল ভাই বল্ল জয়নাল ভাই একটা প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে আছে । অফিসের নীচে গিয়ে সোহেল ভাই ফোন দিল জয়নাল ভাই কে । নীচে নেমে এলে মফিদুল একটু আটকে গেল । এতো সেই জয়নাল মফিদুলের বাড়ীর পাশের । মফিদুল আর জয়নাল একি স্কুলের ছাত্র । জয়নাল মফিদুলের চেয়ে প্রায় চার পাচ বছরের জুনিয়র ছিল । সোহেল ভাই পরিচয় করিয়ে দিল জয়নাল ভাই ও মফিদুল । মফিদুল হ্যান্ড শেক করল । জয়নাল মফিদুলকে পুরো না চেনার ভান করল । মফিদুল ও আর আগ বাড়িয়ে কিছু বল্ল না ।

ফিরে আসবার সময় সারাটা পথ মনে পড়ল জয়নালের সাথে ঘটে যাওয়া স্মৃতিগুলো । জয়নালের কারনে মফিদুলের প্রথম প্রেম হয়েছিল । জয়নাল জানত মফিদুল নুড়ি কে পছন্দ করত । জয়নাল, নুড়ি, শাফিনা, হেলেনা, তোতা এক সাথে প্রাইভেট পড়ত । জয়নাল নিজে চিঠি লিখে নুড়ির নামে চালিয়ে মফিদুল কে দিয়েছিল । পরে মফিদুল জেনেছিল চিঠিটা নুড়ি লেখেনি ।

চলবে ....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.