নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে ফোকলোর

১২ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:০৭



বড় বোন মনি আপার সাথে পারতাম না । ওর এক কষানো থাপ্পর খেয়ে আমি দাত কপাটি লাগাতাম । দাত কপাটি লাগিয়ে আর খুলতাম না । মরার ভান করে থাকতাম । যাতে আর মারতে না পারে । আম্মা বলত মাথায় পানি দে । তোর আব্বা এলে সবাই কে বাড়ী থেকে বের করে দেবে ।

জমির ধান ভাংগাতে যেতাম ধানভাংগা মিলে। চুরি করে চাল বেচে নায়ক রুবেলের মুভি দেখতে যেতাম শঠিবাড়ী ।
কয়েকবছর আগে নায়ক রুবেলের সাথে দেখা । কি যে আফসোস আমার । এই বি.সির জন্য আমি আম্মার ধান চুরি করে বেচে মুভি দেখতে যেতাম ।

আব্বার হাতে মার খাবার অসংখ্য স্মুতি আছে কিন্তু আম্মার হাতের মার খাবার কোন স্মৃতি নাই । স্কুল থেকে এসে আম্মাকে বাসায় না পেলে দুনিয়া উল্টে যেত । মনে মনে ভাবতাম তারমানে আম্মা কি না বলে নানীবাড়ী চলে গেল । দৌড় দিতাম পাশে বড় আপার বাসায় । হ্যা আম্মা আছে । দেখে মন শান্ত হত ।

একটা বয়সে আম্মা, মনি আপা রিকশায় উঠলে আমার জায়গা হত রিকশার পা দানীতে । ওখানে বসে থাকতাম আর মনি আপাকে গালি দিতাম । দ্বারা বড় হই আগে । ঠিকি আমি আম্মার পাশে বসবো ।

দুধের স্বর থেকে ঘি বানানো হত । যে কড়াইতে ঘি বানানো হত আমি বলার আগেই মনি আপা বলত আমি ভাত দিয়ে কড়াই মুছে খাব । মুরগীর রান ও চামড়া আমি মুখ দিয়ে বের করার আগেই মনি আপা বের করা শেষ । গরুর চিবিয়ে খাবার মত হাড় আমি বলার আগেই মনি আপার বলা শেষ । এমন করে আমার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যেত দিনের পর দিন ।

রিকশার হুডে সামনে কাপড় লাগিয়ে নানাবাড়ী যেতাম আম্মার সাথে । আমি কাপড়ের নীচ দিয়ে মাথা বের করে সবুজ প্রান্তর দেখতাম । আব্বা মারতে এলেই দৌড়াইয়া আম্মা পর্যন্ত পৌছাতে পারলেই আর তার পিঠের পিছনে লুকাতে পারলে পৃথিবীর নিরাপদ আবাসস্থল পেতাম ।

নানাবাড়ী গেলেই নদীতে গোসল । ওই যে যেতাম আসার নাম নেই । আমার মামাতো ভাই- লুপু ভাই কাচা বাশের কন্চি নিয়ে নদী অভিমুখে যাত্রার খবর পাওয়া মাত্র পালিয়ে এসে আম্মার পিছনে লুকাতাম । সাতখুন মাফ । লুপু ভাই বলত জানেন না ফুপু ও দুপুর বারটায় নদীতে গেছে এখন বেলা তিনটা । আমি না গেলে হারামজাদা এখনো সাতার কাটত ।


বাসার সামনে কেউ হোন্ডা রাখলে হোন্ডার সাইলেন্সার পাইপে পাটখড়ি ঢুকানো ছিল আমার নেশা । আম্মা পাটখড়ি দিয়ে চুলার পাশে বসে রান্না করছে । আমি পাশে বসে থাকতাম । জলন্ত পাটখড়ির পেছন দিয়ে ধোয়া বের হত আমি আব্বার মত করে সিগারেট খাওয়ার ভান করে টানতাম । মুখ দিয়ে ধোয়া বের হত । আম্মা বলত তোর আব্বা দেখুক আগে । ব্যাস ধরা খেলাম একদিন । তারপর কানপট্টি গরম করা থাপ্পর ।

আব্বার মারের ভয়ে বাসায় ঢুকতাম না । তাকিয়ে থাকতাম আব্বা কখন নামাযে বসে । নামাযে বসা মাত্রই রান্না ঘরে গিয়ে বলতাম আম্মা ভাত দাও । আম্মা বলত তাড়াতাড়ি খেয়ে পালা ।

এমন পালাতে পালাতে জীবন থেকে পালিয়ে গেল কতগুলো বছর । আমি আম্মার চেয়ে লম্বা হলাম । শুধু পারিনা লম্বা রাস্তা পেরিয়ে সাই করে ছুটে যেতে আম্মার কাছে । এখানে আসবার পর আম্মাকে বল্লাম বলতো আম্মা আমি কোথায় থাকি বা কতদুরে থাকি ? তোমার কি মনে হয় ?
আম্মা উওর দেয় বাবারে তুই দেওয়ার (দেওয়া মানে সম্ভবত মেঘ বা আকাশ ) ওপারে থাকিস । মানচিত্র, গুগল কোন কিছু জানা নেই । আমার আম্মার সহজ সরল উওর ।

পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা । সন্তান মানুষ করার মত, এবং ফৃ হোটেল চালাবার মত, স্বামীর সেই হাতে গোনা টাকায় পাকা অর্থনীতিবিদের মত সংসার নামক এক কঠিন বাহন কে চালিয়ে নেন । আমৃত্যু বিনা পারিশ্রমীকে। যার কোন স্বীকৃতি আজীবন মেলেনা ।

হ্যাপি মাদারস ডে ।


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: পবিত্র আবেগ

২| ১২ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:১৫

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: মন জুড়িয়ে যাবার মত লেখা! অসম্ভব ভাল লেগেছে।

৩| ১২ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:২৭

লীনা জািম্বল বলেছেন: বেশ সুন্দর ও আবেগমাখা বাস্তব লেখা

৪| ১২ ই মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩৬

ওমেরা বলেছেন: লেখায় পারিবারিক জীবনের সুন্দর ছবি এঁকেছেন খুব ভালো লাগল। অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১০:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন আবেগময়।

৬| ১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:২৮

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মমতাময়ী কেবল মায়েরাই হয়ে থাকেন।আর সে জন্য সন্তানদের মনে তার প্রতি এতো বেশী ভালোবাসা বিরাজ করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.