নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবু

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫০

রফিক উদ্দিন দোতালার বারান্দার বেতের চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিয়ে বসেছেন । পরনে সাদা স্যান্ডো গেন্জি । আর লুংগী । লম্বা সটান পা গুলো ছোট্ট একটা টুলে রাখা । অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এলে লুংগী আর স্যান্ডো গেন্জি গায়ে দিয়ে এই বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা তার একটা অভ্যাস । তারপর মাথার পিছে দুটো হাত দিয়ে সোজা তাকিয়ে থাকেন । এই সোজা তাকিয়ে রফিক উদ্দিন কি দেখেন সেটা তিনি নিজেও জানেন না । রফিক উদ্দিন এই বারান্দাটাতে একা বসে থাকাটা বেশ উপভোগ করেন । নানাবিধ চিন্তা মাথার মধ্যে বিড় বিড় করে । ছোটবেলার চিন্তা, দেশের চিন্তা, ব্যবসার চিন্তা সহ নানাবিধ চিন্তা ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটের পড়াশুনা শেষ করে সাথের বন্ধুরা অনেকেই জীবনের শেষ বিসিএসে জয়েন করল । কেউ দেশের বাইরে গেল ।হাতে গোনা সবেধন নীল মনিদের একজন হয়ে সে একমাত্র ব্যবসাতে এল । কতজন নিষেধ করল । সেশন জটের সময় গুলোতে জহির চাচার হাতির পুলের অফিসে টুকটাক যেতে যেতে ব্যাংকের এলসির কাজ, শিপিংয়ের কাজ, মার্চেনডাইজিংয়ের কাজ, বাইরে থেকে অর্ডার আনার কাজ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, কোয়ালিটি চেক সব ধীরে ধীরে শিখেছিল । জহির চাচার একদিন সাব এজেন্ট হয়ে কাজ শুরু আজও চলছে । সরাসরি অর্ডার আসছে সামান্য । তারপর হাতির পুলে ছোট্ট কারখানা ভাড়া করা, মেশিন পত্র কেনা এমন করেই আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়ছে টুক টাক করে চলছে ।

রফিক উদ্দিনের স্ত্রী মুক্তা বেগম । তিনি বেতের চেয়ারের মাপে সুন্দর কুশন বানিয়ে দিয়েছেন । আগে পিঠে দাগ পড়ত । মাঝে মাঝে বালিশ নিতে হত । কুশন দেয়াতে বেশ আয়েশ করে এখানে বসে আরাম করে পেপার পড়া যায় । চা খাওয়া যায় । মাঝে মাঝে ঝিমুনী এলে ঘুমানো যায় । মাঝে মাঝে শিরিন বেগম নিজেও এসে বসেন । পান চাবাতে চাবাতে রফিক উদ্দিনের সাথে কথা বলেন ।


পাশের জায়গাওয়ালা কালিদাস বাবু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে । জায়গার মাঝেখানে একটা সাইনবোর্ড । এই জমির মালিক এডভোকেট কালিদাস চন্দ্র । জজ কোর্ট ঢাকা । চেম্বার ২৩২ কাজির দেউরি । সাইন বোর্ডের বাশটার রং কালো হয়ে গিয়েছে । কবে যেন ভেংগে পড়ে । হঠাৎ হঠাৎ মাসে ছয়মাসে কোন এক শুক্রবারে জায়গা দেখতে আসেন এডভোকেট কালিদাস বাবু ।

শুক্রবারে যেহেতু বাসাতেই থাকা হয় তাই কালিদাস বাবুর হঠাৎ হঠাৎ আগমনে দেখা হয় । কালিদাস বাবু কালো কোর্টের আড়ালের রাশভারী উকিল মানুষ না । কথা বলেন ঢাকাইয়া ভাষায় । উকিল ব্রেনের প্যাচানো লোকও না । প্রথম দিন পরিচয়ে সেটা বুঝে গেছেন রফিক উদ্দিন । প্রাচীরের সাথে লাগানো কোন রকম একটা ভাংগা গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকেই প্রথম দিন বলেছিলেন জায়গা তো হালায় ঠিক আছে ।
রফিক উদ্দিন বারান্দাতেই ছিলেন । বারান্দার লম্বা তারে ঝুলানো গামছাতে মুখ মুছ ছিলেন । একটু অবাক হয়ে উওর দিয়েছিলেন আমাকে বলছেন ?
এডভোকেট কালিদাস : আপনি ছাড়া আর কারে কমু কন দেহি ? আশে পাশে আর কোন বাড়ীওয়ালা আছেনি ? আমি তো ভাবলাম মাটি কাইডা চারা সহ কেউ উঠাই লইছে । এখন তো দেহি ঠিক আছে ।

প্রথম দিন লোকটার কথা শুনেই ভাল লাগে । রফিক উদ্দিন চা খেতে বাসায় ডাক দিলে কালিদাস বাবু উওর দেন উকিল, পুলিশ রে মানষে কিন্তু বাসায় ডাহেনা । কোন বিপদ হইলে বুইঝেন উকিল দায়ী না ।
চা খাবার পর বেশ আলাপ করেছিলেন সবার সাথে । জানিয়েছিলেন সময় হলে বাসা বাড়ী করবেন ।
তারপর প্রশ্ন করেছিলেন জায়গা কিনার সময় এই হালার লীডারের ফাপরবাজীতে পড়ছেন নাহি ?

রফিক উদ্দিন হেসে উওর দিয়েছিল তা বৈকি একটু ঝামেলা করেছিল ।
এডভোকেট এডভোকেট কালিদাস আমার লগেও । পরে আমার এক বন্ধু হাইকোর্টের বিচারক তারে দিয়া এক ফোন দেওনে হালায় ছুটছে । তারপরেও ত্রিশ হাজার টেকা হালারে দেওন লাগছে চা খাওনের লাইগা । হালায় চায়না এই এলাকা অন্য কারও দহলে যাক । কেউ জায়গা বেচলে আগে তারে জানাইতে হইবো ? মগের মুল্লুক ।

রফিক উদ্দিন - কি করবেন দাদা এমনটাই তো চলছে ।
এডভোকেট কালিদাস - কথা খারাপ কন নাই ক্যা । দিন কে দিন দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়গা ।

দশ কাঠার এই প্লট কিনে বাড়ী বানাতে রফিক উদ্দিনের মাথার ঘাম পায়ে পড়েছে । লীডারের মাস্তান কে টাকা দিতে হয়েছে । উপরওয়ালা দিয়ে ফোন করাতে হয়েছে । রফিক উদ্দিন এক সময় ভেবেছিল বায়নার টাকা যতটুকু পায় ফেরৎ নিয়ে ভেগে যাবে । কিন্তু পরে বিষয়টা একটু সহজ হয়ে যায় । লীডার কে ধরার জন্য আর্মীর ফরমান জারি হলে লীডার সহ লীডারের চেলা চামুন্ডা সবাই গা ঢাকা দেয় সেই সুযোগে বাড়ীর ভিত্তি দিয়ে তিনতলা উঠিয়ে ফেলে । হাউস বিল্ডিংয়ের লোন ব্যাংকের ম্যানেজার পাশ করতে গড়িমশি করছিল । তাকে তার পার্সেন্টেজ ছেড়ে দেয়া মাত্র লোন পাশ করে । কি করে যেন সব একবারে হয়ে যায় ।


সেই প্রথম দিনের পর থেকে এডভোকেট কালিদাস যেন রফিক উদ্দিনের পরিবারের মানুষ হয়ে যায় । বউ বাচ্চা নিয়ে রফিক উদ্দিনের বাসায় দাওয়াত খেয়ে যায় । রফিক উদ্দিন কে কালিদাসের ছেলের অন্ন প্রাশনে দাওয়াত দেয় । কালদাস রফিক উদ্দিন কে জানায় ওকালতি করে আর কই টাকা পাই দাদা । সময় সুযোগ হলে একদিন বাসা বাড়ী করমুনে । ততদিন আপনি জায়গা দেইখা রাইখেন ।
রফিক উদ্দিন হাসে ।


আর কিছুখন পর বিকেলের সোনালী আলো মিলিয়ে যাবে । একটু দূরের বড় রাস্তা থেকে লোকাল গাড়ী গুলোর ক্যাচর ক্যাচর শব্দ পাওয়া যায় । ঝড়, বৃষ্টি, কার্ফু যা কিছুই হোক এই লোকাল গাড়ী গুলো এই শহরে চলে । মাঝে মাঝে এই গাড়ী গুলোর প্যাসেন্জার কে ঘুমের ওষধ খাইয়ে সব কেড়ে নেয়া হয় । অথবা খুব ভোরের গাড়ী গুলোতে ডাকাতরা চড়ে । মানুষের সর্বস্য কেড়ে নেয়ে । সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলে মাঝে মাঝে ও বাবা গো ও মা গো, ধর ধর চিৎকার, চেচামেচি শোনা যায় । বন্দুকের গুলির আওয়াজ শোনা যায় । মাঝে মাঝে এমন ভয়ংকর রাত পেরিয়ে সকাল হলে দেখা যায় দুটো একটা মৃত মানুষের দেহ পড়ে আছে রাস্তার পাশের নালাতে ।
মৃত মানুষটা কে ?
কোথায় বাড়ী ঘর ?
কে আত্মীয়, পরিজন কিছুই জানা যায়না ।
একটু বেলা বাড়লে পুলিশ আসে । দু একজনের সাথে কথাবার্তা বলে তারপর মৃত মানুষটাকে চাটাই মোড়া করে ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে যায় । বাশের চাটাইতে শেষ হয়ে যায় এক জীবনের গল্প । এরপর এলাকার সমস্ত গলিতে, ছোট চায়ের দোকানে, মানুষের মনে শুরু হয় ভয় । সন্ধ্যা রাতে কিছুদিন পুলিশের বাশি ফোকানো, হাকডাক টহল থাকে । তারপর একদিন পুলিশের টহল নাই হয়ে যায় । সময় যেন এমন আবর্তে এই গলিতে ঘুরতে থাকে ।

আজকের পত্রিকাটাতে এখনো চোখ বোলান নি রফিক সাহেব । প্রথম পাতার ছবিতে দেখা যাচ্ছে পিঠ মোড়া করে বাধা কিছু ছাত্রের ছবি । খবরের শিরোনাম "জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনীর সাড়াষি অভিজান" বিদেশী পিস্তল সহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার বাস্তব গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.