![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শরীরে ইয়া মোটা সুচ ঢুকিয়ে রক্ত বের করে নিচ্ছে- বিষয়টি চিন্তা করলেই আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। এই ভয়ে বাঁধন থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকতাম। এরই ভেতর একদিন জানতে পারলাম আমাদের হলের এক বন্ধু সজীব রক্ত দেবার পর মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। এখন ভার্সিটি মেডিকেলে চিকিত্সাধীন । সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম এই জীবনে আর রক্তদান কর্মসূচী না।
কিন্তু এই গাট্টাগুট্টা শরীরে সরাসরি রক্ত দেবনা বলাও যায়না। তাই কেউ ব্লাড ডোনেট করতে বললে প্রচন্ড আফসোসের অভিনয় করে বলতাম "আমি তো গতমাসের 3 তারিখে রক্ত দিয়েছি ।" অথবা "ইস দুইমাস আগেই রক্ত দিলাম যে !"
অবশেষে একদিন হিমেলের এর প্রচন্ড অনুরোধে প্রথমবারের মত বারডেম হাসপাতালে গেলাম রক্ত দিতে । পেশেন্ট ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আনু স্যারের এক আত্মীয়।
আমার জীবনেও সেই কালো মুহুর্তটি এল ।নার্স সুচ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ফিরলাম। কয়েক মিনিট পরে অত্যন্ত অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম পুরো ব্যাপারটি যন্তণাহীন এবং সহজ ।তারপরও আমার মন বলছিল , রক্ত দেওয়া শেষে ওঠে দাঁড়ালেই মাথা ঘুরে ধুপ করে পড়ে যাব । কিন্তু তার আগেই স্যার আমার জন্য ঠান্ডা পানি , বেশ কিছু ফলমূল এবং জুস আনলেন। নার্স বলল শুধুমাত্র পানি খেলেই নাকি রক্তশূন্যতার অর্ধেক পূরণ হয়ে যায়।
হাসপাতাল থেকে আসার আগে রোগীর সাথে দেখা করতে গেলাম। উনার আন্তরিক কৃতজ্ঞতাবোধ এবং আশির্বাদ আমার কালো কুত্সিত মনকে এবং এতদিনের মিথ্যাচারকে প্রতি মুহুর্তে ক্ষতবিক্ষত করছিল । উনি বললেন "আমার শরীরে তোমার রক্ত ঢুকবে । আজ থেকে আমাদের সম্পর্ক রক্তের ।"
এরপর থেকে গত চার বছরে ধরে বায়েজিদ, সানভি, মেহেদির ডাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে ছুটে চলেছি রক্তের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করার নেশায়।।
'রক্তের সম্পর্ক' কথাটার গভীরতা তখন সেই মুহুর্তে বুঝতে না পারলেও আজ বুঝি। আজ বুঝি একব্যাগ রক্ত একজন অচেনা মানুষকে কতটা কাছে আনতে পারে । এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা একজন মানুষের কৃতজ্ঞতা কতোটা আন্তরিক হতে পারে । একব্যাগ রক্ত কতগুলো মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। একব্যাগ রক্ত। জাস্ট একব্যাগ রক্ত । ।
©somewhere in net ltd.