নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন বড়ই আজিব।

বিক্ষত

বিক্ষত › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাঈদীর মামলায় দুই পক্ষের আপিল

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮

খুন-ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।











যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে শাস্তি দেয়নি, সেসব অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষও।



সাঈদীর আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিলের আবেদন জমা দেন। এতে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসাবে জয়নুল আবেদীন তুহিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।



আপিল দায়েরের পর সাঈদীর আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রাইব্যুনাল যে আটটি অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে শাস্তির আদেশ দিয়েছে, ১৩৫টি গ্রাউন্ড দেখিয়ে তাতে আমরা খালাসের আবেদন করেছি।”



মূল আপিল আবেদন ও নথি মিলিয়ে সাড়ে ৬ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।



এর ঘণ্টাখানেক পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সৈয়দ মাহবুবুর রহমান রাষ্ট্রপক্ষে আপিলের আবেদন জমা দেন।



বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৮ ফেব্রয়ারি সাঈদীর উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করেন।



তিনি বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, যার মধ্যে দুটি হত্যাকাণ্ডও রয়েছে।



রায়ে সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়।



একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যে পিরোজপুরে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন, প্রসিকিউশন তা সফলভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে রায়ে জানায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।



আপিল করার পর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দলের সমন্বয়ক এম কে রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে ৮টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। ওই ৮টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রামাণিত হয়েছে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। তবে মাত্র দুটি অভিযোগে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। বাকি অভিযোগগুলোতে ‘মৃত্যুদণ্ড থেকে তুলনামূলক কম শাস্তি হতো’ বলে মনে করায় ট্রাইব্যুনাল আলাদা করে আর কোনো শাস্তির কথা রায়ে বলেনি।



“সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণের পরও এভাবে শাস্তি না দেয়া হচ্ছে আইনের বড় একটি ভুল এবং ন্যায় বিচার নিরুত্সাহিত করা। এটা ট্রাইব্যুনাল করতে পারে না। তাই আমরা সেই ছয়টি অভিযোগেও তার শাস্তি চেয়েছি।



“আমরা মনে করি, ওই অভিযোগগুলোতে উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণ এবং সাক্ষীদের বক্তব্যের আলোকে আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া যায়। তাই চেয়েছি আমরা আবেদনে।”



এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল যে ১২টি অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দিয়েছে, সেগুলোতেও ‘পূর্ণ ন্যায় বিচারের’ আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে এম কে রহমান বলেন, “আপিল বিভাগ সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে এ অভিযোগগুলোতেও ব্যবস্থা নিতে পারে।”



যে কারণে ফাঁসি



ট্রাইব্যুনালের রায়ে ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয় রাজাকার সাঈদীকে।



আরো ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবেই আদালতে প্রমাণিত হলেও অন্য অভিযোগে ফাঁসির আদেশ যাওয়ায় সেগুলোতে কোনো দণ্ড দেয়নি আদালত।



আট নম্বর অভিযোগে সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা ও পারেরহাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়।



রায়ে বলা হয়, এই অভিযোগ প্রমাণে প্রসিকিউশন উপস্থাপিত ২, ৪, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সাক্ষীর উপস্থাপিত প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের ৮ মে পাকিস্তান সেনারা বেশ বড় একটি রাজাকার দল নিয়ে মানিক পসারীর বাড়ি যায়, যে দলে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীও ছিলেন। ওই বাড়ি থেকে ইব্রাহিম ওরফে কুট্টি এবং মফিজ উদ্দিন পসারীকে ধরে নিয়ে আসে। এটা স্পষ্ট যে, সেইদিন পাক বাহিনী ও তাদের স্থানীয় রাজাকাররা বিভিন্ন বাড়ি থেকে মালামাল লুট করেছিল। পারেরহাট বন্দর সংলগ্ন ভাদুরিয়া ও চিতরিয়া গ্রামের রইস উদ্দিন পসারী, হেলাল উদ্দিন পসারী, সাইজুদ্দিন পসারী, মানিক পসারী, নুরুল ইসলাম খান ও অন্যদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল।



নয়জন সাক্ষীর উপস্থাপিত বক্তব্যে দেখা যায় , পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকারদের দেখে ইব্রাহিম ওরপে কুট্টি এবং মফিজ উদ্দিন পসারী পালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। সে সময় রাজাকাররা তাদের ধরে এনে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে নিয়ে আসে পারেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে। পথে একটি ব্রিজের নিকটে পাকিস্তানী সেনারা ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে হত্যা করে এবং মফিজ উদ্দিনকে ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করে। রাতে মফিজ উদ্দিন রাজাকারদের হাত থেকে পালাতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ৭ নম্বর সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারী ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী। রাজাকার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ভাগ্যক্রমে তিনি জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন।



“তিনি খুবই সুনির্দিষ্টভাবে সত্যায়ন করেছিলেন যে, অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য হিসাবে তাদেরকে ধরে অপরাধস্থলে নিয়ে যান। চূড়ান্তভাবে ইব্রাহিম কুট্টি পাক সেনাদের হাতে নিহত হন। এই অবস্থায় ইব্রাহিম কুট্টিকে খুন, আগুন দিয়ে বেসামরিক মানুষের ঘর-বাড়ি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষেত্রে আমরা প্রসিকিউশনের ৭ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যকে অবিশ্বাস করার মতো কোন কারণ খুঁজে পাইনি। এর মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।”



১০ নম্বর অভিযোগে বিসাবালীকে হত্যা ও উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় আগুন দেয়ার অভিযোগ আনা হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে।



রায়ে এ বিষয়ে বলা হয়, ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে বিসাবালী হত্যা ও ২৫টি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রমাণে প্রসিকিউশন ৩ জন সাক্ষীর উপস্থাপিত প্রমাণাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। অভিযুক্ত সাঈদী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এটা ঘটিয়েছিলো। প্রসিকিউশনের ১, ৫ ও ৯ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাঈদীসহ স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে উমেদপুর গ্রামের হিন্দু পাড়া আক্রমণ করে মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে। সেখানে তারা অজ্ঞাতনামা বেসামরিক ব্যক্তিদের ২৫টি বসবাসের ঘরে আগুন দেয়।



“এটা স্পষ্ট যে, রাজাকাররা বিসাবালী নামে এক বেসামরিক ব্যক্তিকে ধরে নির্যাতন করে। এরপর তাকে নারিকেল গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। পরে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর প্ররোচনায় তাকে সেখানে রাজাকাররা গুলি চালিয়ে হত্যা করে।”



প্রসিকিউশনের পাঁচ নম্বর সাক্ষী মাহতাবউদ্দিন হাওলাদার ও নয় নম্বর সাক্ষী আলতাফ হোসেন হাওলাদার চাক্ষুস সাক্ষী হিসাবে অভিযুক্তের প্ররোচনায় বিসাবালীকে হত্যা ও হিন্দুপাড়ায় আগুন দেয়ার বিষয়টি প্রমাণ করেছেন।



“আগুন দেয়ার ধরন দেখেই বোঝা যায় যে, ঘটনার হোতারা বড় ধরণের ধ্বংসযজ্ঞ করতে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুপাড়ায় আগুন দিয়েছিলো। এটাও স্পষ্টভাবে গোচরে এসেছে যে, অভিযুক্ত ইচ্ছাকৃতভাবে বিসাবালী হত্যায় সহায়তা করেছিলেন, এটাকে সহজ করে দিয়েছিলেন। এই হত্যা ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ তার উপস্থিতিতে এবং অংশগ্রহণে সংগঠিত হয়। এটা ভালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি হত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’



এই দুই অভিযোগ ছাড়াও ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।



এছাড়া ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি, যার মধ্যে পিরোজপুর সদর, মাসিমপুর বাসস্ট্যান্ড, পারেরহাট বাজার ও হোগলাবুনিয়ায় গণহত্যা এবং লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের বাবা, পিরোজপুরের পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ছিল।



২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর সাঈদীর রায় ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের মামলার তৃতীয় রায় হয়।



প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়।



আর একই ট্রাইব্যুনালে ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চলছে সারা দেশে।



ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষ উভয়েই আপিল করেছে।

সুত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১

tumpa roy বলেছেন: লুইচ্চা সাইদী। তাড়াতাড়ি ফাসি চাই।

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০০

বিক্ষত বলেছেন: কোন সমঝতা নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.