নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিপ্লব ভট্টাচার্য্য

বিপ্লব ভট্টাচার্য্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

আষাঢ়ে রসগোল্লা

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৪৮

আমি তখন ছোট। হাইস্কুলের দুটি ক্লাস পেরিয়ে নিজেকে মোটামুটি বয়স্ক ভাবতে শুরু করেছি (মনে মনে)। সেই সময়ের ভর ভরন্ত এক বর্ষাকাল। আমার এক জেটতুতো ভাই, বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড় (আমার বাবার সমান বয়সী প্রায়); প্রচলিত বিয়ের বয়স পেরিয়েছে অনেক আগে। সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ বিয়ে করে বসলেন তিনি। বিয়ে বলেই শুধু কথা। ভয়ানক টান নববধুর প্রতি। যা দেখে অনেকেই চাপা হাসি নিয়ে মুখ আড়াল করে। তো তিনি বিয়ে করলেন বর্ষার শুরুতে। বিয়ের কয়েকদিন পরে আনুষ্ঠানিকতায় নববধু মানে আমাদের বৌদি গেলেন বাপের বাড়ি। বৌদির বাপের বাড়ি আমাদের পাশের উপজেলায়।
বেশ কদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সারাদিন টিনের চালে একটানা বৃষ্টির শব্দ। পুকুর বিল পানিতে ভরে একাকার। গ্রামের অনেককেই দেখা যাচ্ছে সেই পানিতে। লুঙ্গি কাচা মেরে সেই পানিতে মাছ ধরছে। পানি উঠি উঠি করছে গ্রামের সবচেয়ে বড় রাস্তার ওপর।
আমাদের খুব মজা। জেটতুতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে আসা আত্মীয় স্বজনদের বেশ কজন তখনও রয়ে গেছে। তার মধ্যে কয়েকজন আবার আমার সমবয়সী। সূতরাং খাওয়া-দাওয়া আর ফুর্তি, ফ’র্তি, ফ’র্তি।
তো বৌদিকে বাপের বাড়ি থেকে আনতে যেতে হবে। কে যাবে? এক্ষেত্রে স্বামীপ্রবর আদর্শ। তিনি যাবেন। সংগে আর কে যাবে? যাবেন নাতির বিয়েতে আসা আমাদের অতিবৃদ্ধা এক আত্মীয়া। যার বাড়ি দাদার শ্বশুরবাড়ির কাছে। জামাইকেতো শ্বশুরবাড়িতে কিছু জিনিসপত্র নিতে হবে তার জন্য আমাদের আরেক দূরসম্পর্কীত জেঠতুতোভাই সন্তোষদা যাবে। আর জামাইবাবুর ভাই হিসেবে আমি(উনার নিজের ভায়েরা কি রাজি ছিলেন না!)
তো বৃষ্টি একেবারে বন্ধ হয়না। হয়ত কিছুক্ষণ টিপ-টিপ পড়ছে তারপর আবার ঝম-ঝম, ঝম-ঝম। নির্দ্দিষ্ট দিনে আমরা যাত্রা শুরু করলাম দুপুরের পর। বৃষ্টি পড়ছেই তবে চাপ একটু কম। পিট-পিট, পিট-পিট। গন্তব্য তো দূরের নয়। পাশের উপজেলা। বেলাবেলিতে পৌঁছে যাবো। দাদা একহাতে আমাদের বয়োবৃদ্ধা আত্মীয়াকে হাঁটতে সাহায্য করছেন অন্য হাতে উনার কাপড়ের ব্যগ। সন্তোষদা’র হাতে বিশাল একটি মাছ। আর আমার ভাগে পড়েছে দুটো রসগোল্লার হাঁড়ি( সেইসময় মিষ্টি জিনিসের প্রতি আমার দূর্দমনীয় লোভ ছিল সর্বজনবিদিত। সূতরাং মিষ্টির মর্মটি আমিই ঠিকমত বুঝবো এটা চিন্তা করেই কি দাদা মিষ্টির হাঁড়ি আমার হাতে দিয়েছিলেন?)।
আমরা বড় সড়কে বাস থেকে নামলাম। এখন বৃষ্টি নেই। এতটুক পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। এখান থেকে আরেকটি পাকা সড়ক বেয়ে তিন-চার মাইল যেতে হবে আমাদের; রিকশা অথবা জীপগাড়িতে। কিন্তু কোথায় রিক্সা কিংবা জীপ। থাকবেই বা কোত্থেকে, অল্প কিছুদূর গিয়ে পাকা রাস্তাটি যে পানির মধ্যে ডুব মেরেছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। আসলে আমাদের কাছে খবর ছিল না তখন বৌদিদের এলাকায় তখন বন্যা হচ্ছিলো।
যাহোক জামাইবাবুকে নাছোড় মনে হলো; যেতেই হবে শ্বশুড়বাড়ি এবং আজকেই। অবশ্য আমার কোন চিন্তা নেই। কারণ আমি তো ছোট। যা করবেন উনারা করবেন।
কেউ একজনকে জামাইবাবু সামনের পানির গভীরতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। ঐ লোক বললো “এই কোথাও গোড়ালী, কোথাও হাঁটু সমান”। অতএব জামাইবাবুবে আর পায় কে! আমাদের উদ্দেশ্য করে বলল “গাড়ি টারি তো নেই, চল হাঁটি। রাস্তা তো আমি চিনি। বেশি দূর নয়”। আমরা হাঁটতে থাকলাম। কিন্তু রাস্তা কৈ? সব দিকেই তো পানি। ঐ লোকটার কথা যে ঠিক ছিল না সেটা একটু পরই টের পাওয়া গেল। হয়ত জামাইবাবুর অত’্যতসাহের কারণে সেই লোক পানির গভীরতা কমিয়ে বলেছিলেন। প্রথম দিকে কাপড় বাঁচানোর জন্য আমরা কাপড় গুটানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পানি কাপড় চোপড় ভিজিয়ে হাঁটু, কোমর, হয়ে কখনো কখনো বুক পার হয়ে যেতে লাগলো। অবশ্য পানির গভীরতা সর্বোচ্চ কতটুকু ছিল তা বলা যাচ্ছে না। কারণ কোথাও কোথাও আমরা প্রায় সাঁতরে যাচ্ছিলাম। জামাইবাবু তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ- অতএব নিশ্চিত ছিলাম শেষ পর্যন্ত আমরা অবশ্যই পৌঁছাব। জামাইবাবুর বগলদাবা হয়ে থাকা আমাদের সেই বয়েবৃদ্ধা আত্মীয়া তাঁর কষ্ট ও বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন অজানা কারও উদ্দেশ্যে শ্রাব্য-অশ্রাব্য নানা উক্তি করে।
জামাইবাবু ও আত্মীয়া সামনে আর আমি, সন্তোষ’দা তাদের পেছন পেছন হাঁটছি। জলমগ্নতার আকস্মিকতার ঘোর কেটে গেলে আমি সচেতন হই- আমার হাতে পরমারাধ্য রসগোল্লা সম্পর্কে। কি করা যায়? একটু পিছিয়ে পরলাম আমি। অন্যদের আড়ার করে হাঁড়ির ঢাকনা ফাঁক করে রসগোল্লা গলাধকরণ করতে লাগলাম আমি। কিন্তু কোনভাবে সন্তোষ’দা বুঝে ফেললেন। তিনিও কথা বলার ছলে আমার পাশে চলে এলেন এবং আকারে ইঙ্গিতে বোঝালেন মিষ্টির প্রতি তার দূর্বলতার কথা। নীরব সমঝোতায় দু’জনে আরো বেশ কয়েকটা মিষ্টি খেয়ে ফেললাম।
এবার আমি সচকিত হলাম হাঁড়িতে মিষ্টির সংখ্যা এত কমে গেলে একটা বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সুতরাং আর মিষ্টি খাওযা যাবে না। ইতিমধ্যে অন্ধকার হয়ে এসেছে। আমরা এখনো গন্তব্যে পৌঁছুতে পারিনি। পানির গভীরতা বুক থেকে কমছেই না বরং মাঝে মাঝে গর্তে কিংবা খানাখন্দে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি (ভাগ্যিস সন্তেষদা’র হাতের মাছটি জীবিত ছিলো না)
এই আবছা অন্ধকারে মিষ্টির প্রতি লোভ আবার আমার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। কি করি? মিষ্টিতো আর খাওয়া যাবে না। হঠাৎ আমার মাথায় বুদ্ধি এলো; মিষ্টিতো খাওয়া যাবে না। কিন্তু মিষ্টির রসতো খাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মিষ্টির হাঁড়ির ঢাকনা ফাঁক করে এক একটা রসভরা জবজবে রসগোল্লা বের করে আনি আর চুষে ওটিকে শুকনো মিষ্টি বানিয়ে আবার হাঁড়ির ভিতরে রাখি।
একসময় ক্লান্তি আর অবসন্নতা নিয়ে আমরা দাদার শ্বশুড়বাড়ির কাছে গিয়ে পৌঁছালাম। কিন্তু এখান থেকে ঐ বাড়ি যাওয়ার পথটি বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। একেতো অন্ধকার, তাছাড়া বাড়ির দিকে যাওয়ার সরু রাস্তার দু’পাশে দুটি পুকুর সবই এখন পানির নীচে। কোন দিকে যাই?
এই প্রথম জামাইবাবুর মেজাজ বিগড়োতে দেখলাম। বুক পানিতে দাঁড়িয়ে দাদা চিৎকার করে মৃত শ্বশুড়ের নাম করে তাঁর ছেলেকে অর্থাৎ তাঁর শালাকে ডাকছেন “.........-র পুত, .........-র পুত”। কিছুক্ষণ তারস্বরে ডাকাডাকির পর একপর্যায়ে পানির ওপর দিয়ে একটা আলোকবিন্ধু এগিয়ে আসতে দেখলাম। আরো কিছুটা কাছে আসার পর বুঝলাম ওটা হারিকেন। দাদার শ্বশুড়ের পুতই এসেছে বটে। শেষ পর্যন্ত পুকুর বাঁচিয়ে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো। আমরা সবাই ঐ বাড়িতে যেমন পাওয়া গেল কাপড় পড়ে আমাদের কাপড় ছাড়লাম। শরীর পরিস্কার করলাম জমিয়ে রাখা বৃষ্টির পানি দিয়ে। প্রাথমিক আপ্যায়ন হিসেবে চা দেওয়া হলো সাথে আমাদের দেয়া সেই মিষ্টি। তবে সেই মিষ্টি আমি খেয়েছিলাম কিনা মনে নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:১৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: আপনার গল্প পড়ে রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে করছে।এই রাত দুপুরে এখন রসগোল্লা কই পাই!

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮

এক্সপি বয় বলেছেন: আমিও রসগোল্লা লাভার ভাই.।.।.।.।.। গল্প পরে তো মাথায় রসগোল্লার ভুত চেপে বসেছে আবার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.