নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেইল : [email protected]

বিপ্লব০০৭

...

বিপ্লব০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাজ স্পোক আ বিয়িং : বিধাতা তুমি ফিরে চাও!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২৩



ষষ্ঠইন্দ্রিয় বলছে, কী এক অমোঘ সত্য ঘনিয়ে আসছে ইডিপাসের জীবনে...তারপর একদিন এল সেই ক্ষণ, জানল সে, ডেলফির ওরাকল অনুযায়ী নিজের পিতাকে খুন করে মাকে বিয়ে করে ফেলেছে; জোকাস্টার শয্যায় তাহলে পিতাকে সরিয়ে এতদিন ছেলেই শুয়েছে! বিস্ময়, ঘৃণা, আঘাতে ইডিপাস এবং জোকাস্টা- দু'জনেই হতভম্ব হয়ে যায় মুহূর্তে। জোকাস্টা গলায় ফাঁস ঝুলিয়ে দেয় কিছুক্ষণ পরেই, অভিশাপে অন্ধ হয়ে বাকি জীবন নির্বাসনে কাটায় ইডিপাস।



এই অমর ট্রাজেডির স্রষ্টা গ্রীক নাট্যকার সফোকলস্- এর সময়কালে মায়ের সাথে ছেলের বিয়ের পরিণতিকে এভাবেই দেখানো হয়েছিলো। এই বিয়োগান্তক পরিণতিকে পরবর্তীকালে ড. ফ্রয়েড তাঁর বিভিন্ন রচনায় বিমূর্তভাবে দেখিয়েছেন মায়ের প্রতি ছেলের অ্যাবস্ট্রাকট সেক্সুয়াল অ্যাট্রাকশন নামক প্রচন্ড জটিল সাইকোলজিক্যাল একটি ধারণা প্রতিষ্ঠার স্থূল উদাহরণ হিসেবে।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন (নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না, অন্যদের প্রতি মনযোগী হন), শৈশব থেকেই মেয়ে সাধারণত বাবার দিকে ঝোঁকে, এবং ছেলে অধিক ভালোবাসে মাকে। ভয় পাবেন না। ব্যাপারটা বিমূর্ত, এখানে স্থূল কোন দৈহিক ব্যাপার-স্যাপার নেই। ফ্রয়েডবিরোধীরা পরবর্তীকালে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়েছেন, আমার মতে এরা বুঝতেই চাননি যে, ফ্রয়েড বলেননি- সন্তান মা-বাবার প্রতি স্থূল যৌনভাবে আকৃষ্ট হয়। তবে ফ্রয়েডবিরোধীরা বা গোঁড়া রক্ষণশীলরা যাই বলেন না কেন, ফ্রয়েডের ইডিপাস কমপ্লেক্স (oeidipus- শুদ্ধ উচ্চারণ ওইদিপাস) নামক এই ধারণা শিল্পে-সাহিত্যে-কবির সৃজনশীলতায় শক্ত অবস্থান গেঁড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে প্রাচ্যে অতটা না হলেও, পশ্চিমে ইডিপাস কমপ্লেক্সের প্রভাব ব্যাপক। প্রাচ্য যৌন ব্যাপার-স্যাপারে কথা উঠলেই প্রচন্ড ভয় পায়। ইডিপাস কমপ্লেক্স আঁটানোর মত বিকশিত এখনও হয়নি তার যৌথ-মস্তিষ্ক। ফলে এইসব তার নিকট অবাস্তব কল্পলোকের ধারণা বৈ ভিন্ন কিছু নয়। ইউরোসেন্ট্রিজমের (মানে ইউরোপের আবিষ্কার, আইডিয়া, কালচার...সব কিছুর যে সম্মিলিত প্রভাব) বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে হুমায়ুন আজাদ-ও একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন ইউরোপের উদ্ভাবন বলেই এ থিওরি [ইডিপাস কমপ্লেক্স] এখানে খাটবে না- এই কথা অর্থহীন।


...সাইকোলজিক্যাল কমপ্লেক্সের উপর ডি. এইচ লরেন্সের সান্স অ্যান্ড লাভার্সের কথাই ধরা যাক না কেন। সান্স অ্যান্ড লাভার্সের বিষয়বস্তু হল মা-ছেলে-প্রেমিকার ত্রিমুখী সাইকোলজিক্যাল জটিলতা। পল মোরেল তার সাবালকত্ব অর্জন করে টের পায় কোন মেয়েকে সে ভালোবাসতে পারছে না, কারণ তার আত্না সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছে তার বাবার ভালোবাসা বঞ্চিত মা গারট্রুড মোরেল। ফলে একদিকে মা অন্যদিকে তার প্রেমিকা। প্রেমিকা আর মা পরবর্তীতে অবতীর্ণ হয় মনস্তাত্বিক যুদ্ধে যেখানে তারা দু'পক্ষই চায় পলকে ছিনিয়ে আনতে আয়। শেষপর্যন্ত জয় ঘটে মা'য়েরই। কিন্তু গল্পের শেষে মৃত্যু ঘটে গারট্রুডের। শেলের মত এসে বিঁধে দূরবর্তী শহরের জনকোলাহল...মা-বিহিন পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা পল বসে থাকে...।


কিন্তু এতো গেলে না হয়, সম্পূর্ণ বিমূর্ত ভালোবাসার ব্যাপার-স্যাপার। মার্কেজের অস্কারজয়ী "হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড"- এর কথাই ধরুন। রূপক আকারে লাতিন আমেরিকার এক গোত্রের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই গল্পে...সম্পূর্ণ দেহকেন্দ্রিক স্থূল ব্যাপার-স্যাপার সেখানে, কোন মানবিকতা নেই, আবেগ নেই, ভালোবাসা নেই। যৌনতাকে আর্টের পর্যায়ে উপস্থাপনের জন্য মার্কেজ অপ্রতিদ্বন্ধী, কিন্তু এই বল্গাহীন যৌনতার চূড়ান্ত কোন অর্থ আছে কি? নৈতিকতার সাথে কোন সম্পর্ক? অথবা দুনিয়া-কাঁপানো উপন্যাস নভোকবের "লোলিটা"- পড়া যাক। উদগ্র কামনার আগুনো জ্বলে-পুড়ে ছাই হওয়া হামবার্ট ভালোবাসে তারই মেয়ে লোলিটাকে!


যদিও লোলিটার বিশ্লেষণ খুবই জটিল পর্যায়ের কাজ, লোলিটার ভাষামানও খুবই উঁচুস্তরের, এমনকি লোলিটায় সাইকোলজিক্যাল জটিলতাও ভালোভাবেই আছে। গল্পের শেষদিকে লোলিটার লম্পট প্রেমিককে খুন করে হামবার্ট কারাগারে বসে তার মৃত্যুর প্রতীক্ষার প্রহর গোনে...জানে না সে এখন কোথায় আছে লোলিটা- কিন্তু লোলিটাকে নিয়ে তার আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ দেহ ছাড়িয়ে মানবিক হামবার্টকে ফুটিয়ে তোলে পাঠকের চোখে। হামবার্টের করুণ পরিণতি পাঠকের চোখে জল না এনে পারবে না। নৈতিক দ্বন্ধে পুড়বে মন। আপনি হামবার্টকে ঘৃণা না করেই ভাবতে বাধ্য হবেন প্রথমবারের মতন, আসলে নীতি-নৈতিকতার মূল অর্থ কোথায় নিহিত?

ইউরোপীয়-আমেরিকান উন্নত দেশগুলোর মানুষের যৌথ-সাইকোলজি খুবই উন্নত পর্যায়ের, তারা যে বিষয়ের উপর প্রফেশনাল হোক না কেন গড়ে সাধারন মানুষেরা সাইকোলজি/সাবকনশাস/লিটারেচার/ফিলোসফি/ম্যাথ ইত্যাদি সম্বন্ধে একটি গ্রহনযোগ্য ধারণা রাখে (সম্ভবত এজন্যই এরা এইসব অকাজ-কুকাজ করেও বেশি!)। বিশেষ করে হলিউডের মুভিগুলো আর সিরিয়ালগুলো দেখলে এ বিষয়টি টের পাওয়া যায়। এ কারণেই সেখানকার বহু সচেতন বাবা-মায়েরা (ফ্রয়েডে প্রভাবিত হয়ে) অতিরিক্ত ভয়ও পান এই বিষয়টি নিয়ে! সন্তানদের কিভাবে বড় করে তোলা উচিৎ- এর উপর বার্ট্রান্ড রাসেলের On Education বইটি লিখেছিলেন। তিনিও তাঁর বইতে খুবই ইডিপাস সমস্যা নিয়ে চ্যাপ্টার রাখতে বাধ্য হয়েছেন যদিও তিনি তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দিয়েছেন এ ব্যাপারে অতি-সচেতনতাকে। তবে রাসেল তিনি গোঁড়া রক্ষণশীল নন। ...সমস্যা হল, আমরা ইতিমধ্যেই ভুলে গেছি যে, হাজার হাজার বছর আগেতো মায়ের সাথে ছেলের দৈহিক সম্পর্ক খুবই সাধারণ একটি বিষয় ছিল! রাহুল সাংকৃত্যায়ণের "ভোল্গা থেকে গঙ্গায়" এর ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যায়। ঈশ্বরবাদী ও রক্ষণশীলদের তোপের মুখে পড়েছিলেন রাহুল তার বইটি প্রকাশের পর, যদিও এইসব বিরোধী পন্ডিতরা পরিষ্কারভাবে দেখাতে ব্যর্থ কেন তারা প্রাচীনকালে এ ধরনের সম্পর্কের অস্তিত্বের বিরোধী...। আমাদের অঞ্চলের (ভারতের একেবারে আদিম স্তরের) কথা না হয় বাদ দিলাম; হাজার বছর আগের মিশর ঘুরে আসুন- ভাই-বোনের দৈহিক সম্পর্ক খুবই সাধারণ একটি বিষয় ছিল ওখানে, এমনকি জেনেসিস আর এক্সোডাসে বাবার সাথে মেয়ের দৈহিক সঙ্গম, ভাই-বোনের বিয়ে খুবই সাধারনভাবে দেখানো হয়েছে। ইহুদিদের আদি ইতিহাস, হাজার হাজার বছর আগেকার আদিম সাম্যবাদী সমাজ, বা কয়েক হাজার বছর আগের মিশরে যাওয়ারও দরকার নেই; স্রেফ যদি হাজারখানেক বছর আগের প্রাচীন গ্রীস কিংবা রোমে ঘুরে আসি তাহলেও দেখতে পাই সেখানে যৌন-সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমকামিতাকে দেখা হতো সাবালকত্ব অর্জনের অপরিহার্য ধাপ হিসেবে। মহামতি আলেকজান্দারের সাথে তার বন্ধুর প্রেমের কাহিনী স্থূলভাবে না হলেও প্রচ্ছন্নভাবে দেখানো হয় হলিউডের ছবিগুলোতে। প্লাতনের সিম্পোজিয়ামে (Symposium) নামক মাস্টারপিস বইটিতে প্রেম জিনিসটি কি এইটা নিয়ে ফিলোসফারদের এক দুর্দান্ত বিতর্কের মাঝে দেখি সক্রাতেইসের (Socrates) বন্ধু এলসিবিয়াদেস বহুদিন চেষ্টা করেছিলো সক্রাতেইসকে প্রলুব্ধ করতে (বুঝেন ব্যাপারখানা) ! মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক ছেলের প্রেমে অন্ধ হয়ে কাটিয়েছিলেন রোমান সম্রাট হাড্রিয়ান।

তাহলে আজকের আধুনিক আমরা যখন চমকে উঠি যখন যৌন-অজাচার, অবৈধ সম্পর্ক ইত্যাদি শব্দের ব্যবহারে, তখন আমরা আসলে কি বুঝি? নীতি-নৈতিকতা...? আসলে কিছুই বুঝি না। আমরা স্রেফ মানবিকতা, নীতি-নৈতিকতা, আবেগ-ভালোবাসার যে ফ্রেইমওয়র্কে বেড়ে উঠছি সেইটা অনুযায়ী কিছু এক্সপ্রেসন শো করি। আমাদের "ভালোমানুষি"-র কোন ক্রেডিট নেই এখানে। আমরা কখনো কি চিন্তা করেছি যে, ছোটবেলা থেকে মুরুব্বীদের যে সকল নানান উপদেশ শুনি সেগুলো গভীরতর অর্থে কি বুঝায়? নিজেদের জীবনে আমাদের এসবের আসলে কোন ভূমিকাই নেই। আমরা জানি, আধুনিক সময়ে ওগুলো ওয়ার্থলেস


গুরুজনের উপদেশ, "ভালো হয়ে চলো", "অন্যের উপকার ক্ষতি কর না,"- এইসব শুনতে নিশ্চয় আমাদের এখন আর ভালো লাগে না। কেন? কারণ এইসব আমরা বহুবার শুনেছি (এবং আমরা এখন জানি, আমাদের বাস্তব জীবনে এসবের আর প্রয়োজন নেই)। সুতরাং আমাদের বর্তমান যুগ অনুযায়ী দরকার নতুন উপদেশ, নতুন থিওরি। আসলে পশ্চিম বহু আগেই বের করে ফেলেছে যে এইসব উপদেশের মাঝে একটা বড়সড় সমস্যা আছে। সমস্যাটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন সক্রাতেইস (Socrates) আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। ...প্লাতনের (Plato) আরেক মাস্টারপিস "দা রিপাবলিক"- এ সক্রাতেইসের শিষ্য গ্লুকন, থ্রাসিমেকাসসহ আরো কয়েকজনের সাথে একটি দুর্দান্ত তর্ক-বিতর্কে আমার দেখতে পাই, সকল পরিস্থিতিতে "ভালো" হয়ে চলাটা আসলে খুব একটা সহজ কাজ নয় এমনকি চূড়ান্তে গিয়ে এই "ভালো হয়ে" থাকটা কোন অর্থই বহন করে না। "ন্যায়" শব্দটা আসলে এক ধরনের প্যারাডক্স।



একটু খেয়াল করলেই টের পাওয়া যায়, "উচিৎ" (ought) বলে একটা শব্দ আছে পৃথিবীতে। আমাদের কি করা উচিৎ এবং কি করা উচিৎ নয়। এইটার সাথেই নীতি-নৈতিকতা জড়িত। সোজা কথা কারো বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। এখন সমস্যা হল, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাদের কি আচরণ করা উচিৎ, আর কোনটি করা উচিৎ নয়- এর কি কোন সার্বজনীন সূত্র আছে? আগে-ভাগেই উত্তরটা বলে দেই- নাই। এ কারণেই সমাজবিজ্ঞান/অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলো নীতি-নৈতিকতা বাদ দিয়ে সমাজকে আলোচনা করতে চেষ্টা করে। আমরা ওসব বাদ দিয়ে ফিলোসফিতে আসি। দর্শন জিনিসটা সোজা জিনিসকেও প্যাঁচ কষে দেখায় (কথায় আছে, শিক্ষিত লোক জল ঘোলা করে খায়!), তবে দর্শন যাই বলে থাকুক, আমরা আমাদের অন্তর দিয়ে অনুভব করি, নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু একটা আছে। বাট্রান্ড রাসেলে সাথে এ নিয়ে ফাদার কপলেস্টোনের এক দুর্দান্ত আলোচনা রয়েছে। আসলে, আমার ভেতরকার নীতির বোধ বলে কিছু একটা--- দার্শনিকদের সমস্যাই ছিল, এই কিছু একটা কি- তাকে সংজ্ঞায়িত করতে চেষ্টা করতে চেষ্টা এবং তারা টের পেয়েছেন কাজটি খুব সহজ নয়! কি করা উচিৎ, কি করা উচিৎ নয়- এসব নিয়ে দ্বন্ধে পুড়েছেন গুরু লালনও, তিনি দেখেছেন- নীতি-নৈতিকতা আপেক্ষিক, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তা পরিবর্তিত হয়।



"শুকর-গরু দু'টি পশু,

খাইতে বলিছেন যিশু,

তবে কেন মুসলমান-হিন্দু পিঁছেতে হঠায়?



...এক দেশে যা পাপ গণ্য,

অন্য দেশে তাই পুণ্য...

পাপ-পূণ্যের কথা আমি কারে শুধাই?"



দার্শনিক হলেন তারাই যারা চিন্তার সমস্ত সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে চেষ্টা করেন অন্যদের থেকে অগ্রসর চিন্তা-ভাবনা করতে, তবে এভাবে চিন্তা করতে দোষ কোথায় যে শয়তান-ই আমাদের প্রকৃত প্রভূ? ঈশ্বর, ভালো, স্বর্গ, দেবদূত এসবকে পজিটিভলি ভেবে এসবকে কেন্দ্র করে আমি বড় হয়ে উঠেছে, গুরুজনরা কিছু একটা ধারণা দিয়েছেন আমাকে যার নাম "ভালো"- বাট তার অপজিটে যে বড় হয়ে উঠছে তার কাছেওতো তার ধারণাটি তার সাপেক্ষে "ভালো", আমার সাপেক্ষে "খারাপ" (Evil)! এমনকি ফিলোসফিতে এটি একটি ভালো সমস্যা ছিল যে, যে মানুষটি গুন্ডা-বদমাশদের সাথে ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে উঠেছে তার অপরাধের জন্য আপনি কি তাকে দায়ী করতে পারেন কি না? যদিও বড় হবার সাথে সাথে সে তার বিপরীত আদর্শও দেখেছে, সে কেন ভালো হল না- এগুলা আসলে নীতিবাগীশদের কুতর্ক। নীতিবাগিশ বুঝতে চায় না যে চোরের নীতি হল চুরি করা।



সাহিত্যে-চলচ্চিত্রে অনেক ভিলেন চরিত্রকে গল্পের মূল (ন্যায়ের ধারক) চরিত্রকে বলতে শোনা যায়, "Think yourself. There's nothing called Evil, Join me and everything will seem good!"



কিন্তু নিজের ভেতর আমরা কিছু একটা অনুভব করি। যুগের বাস্তবতায় মানবিক অনুভূতিগুলো যতই ক্ষয়ে যাক না কেন; মানুষ হিসেবে নিজের ভেতরে আমরা প্রত্যেকেই অনুভব করি মানবিকতার বোধ। এই আমি যে আজো বুঝি না সত্যিকার অর্থে আমার অস্তিত্বের অর্থ কি- সে কি অন্যকে অসহায় দেখলে করুণা বোধ করি না? আমরা সবাই করি। তাহলে নিশ্চয় আমার ভেতর কিছু একটা আছে, যার সম্পূর্ণ অপজিটে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না (যেটাকে আপনি মানবিকতা, শুভর অনুভূতি, মনুষ্যত্ব- যাই বলেন...।)



কিন্তু এইবার দেখুন মূল সমস্যা। আপনার ভিতরের সমস্ত অনুভূতি, মানবিক বোধ সমাজ-সংস্কৃতি এবং ছোটবেলা থেকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াই তৈরি করেছে! এগুলোও চূড়ান্তে গিয়ে অস্থায়ী- মানতে কষ্ট হলেও গ্রামে মফস্বলে বাস করে আপনি যে ঘটনায় আগে শিউরে উঠতেন/চমকে উঠতেন, ভেবে দেখুন কঠোর বাস্তবতার মাঝে বসবাস করে অভ্যস্ত হয়ে নিত্য সেই ঘটনা দেখতে দেখতে এখন আর আপনার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়াই হয় না! প্রতিদিন রাস্তার পাশে বহু নি:স্ব-অসহায় মানুষকে দেখতে পান (কয়জনকে আর সাহায্য করবেন, ইদানিং কি বিরক্তও লাগে না?), প্রতিদিন বের হলেই ভিক্ষার থালা নিয়ে হাজির হয় নানান কিসিমের বুড়ো-বুড়ি, এমনকি শক্ত-সমর্থ লোকজনও; এই যে হাজার হাজার অসহায় মুখ, (আপনিও নিজেওতো আসলে খুবই অসহায় এক অর্থে!)...আপনি এইসব মুখের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন (মাঝে মাঝে দু'একটা ব্যতিক্রমে যে মন খারাপ হয় না তা না, তবে ব্যতিক্রমগুলোও যদি গণহারে দেখেন তাতেও আপনি অভ্যস্ত হয়ে যাবেন একদিন...।)



মানতে কষ্ট হলেও, আন্তরিক ভাবে যদি নিজেকে নিয়ে ভাবেন তবে বুঝবেন, মানুষ আসলে সবকিছুর সাথেই একসময় নিজেকে মানিয়ে নেয়।



নীতি আপেক্ষিক, ভালো-মন্দ আপেক্ষিক, মানবিকতার মাঝেও নানান ভেজাল...আপনার মানবিকতা আপনার পরিবেশের সৃষ্ট। হিটলার গণহারে ইহুদিদের মেরেছিলো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যা শতাব্দীর কলঙ্ক হয়ে আছে; তবে হিটলারে আবেগ, যুক্তি আর জ্ঞানের ফলায় এঁফোড়-ওফোঁড় হয়ে যাবেন যদি তার আত্নজীবনী "মাইন ক্যাম্প" পড়েন। মিত্রবাহিনীর হাতে নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনে হিটলার পালিয়ে যেতে বলেন তার সুন্দরী স্ত্রী ইভাকে।...কিন্তু ইভা তার কথা না শুনে তার সাথেই থেকে যান, হিটলারের মৃত্যুর পর পরই ইভাও আত্নহত্যা করেন- এতই ভালোবাসতেন স্বামীকে- যে কি না ইতিহাসের চোখে এক নৃশংস খুনী...। কিভাবে দেখছেন ব্যাপারটাকে? পশ্চিমা দর্শনের পতাকাবাহী বাট্রান্ড রাসেল ইত:স্তত করছেন যখন বিধাতার পতাকাবাহী ভাববাদের ধারক ফাদার কপলেস্টোন প্রশ্ন ছুড়ছেন, "বলুন, কি বা কে সে যা আপনাকে বলছে নাৎসীদের কাজ অনুচিৎ ছিলো?" মন হয়তো ব্যাখ্যা দাঁড় করে ফেলায় কিছু একটা, কিন্তু আমরা বুঝি জগত ভয়াবহভাবে জটিল। এইসব জটিলতা থেকে বহুদূরে গিয়ে রবিঠাকুর তাঁর কাব্যে-গল্পে-গানে কী এক সত্য-সুন্দর-শ্বাসতের কথা বলেন। আমি তাঁর কবিতা পড়ছি, তাঁর গান শুনছি নিবিষ্ট হয়ে; কিন্তু আজো বুঝলাম না এই মহান সত্য-শ্বাসত সুন্দর জিনিসটা আসলে কি?



"সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম...

আঘাতে আঘাতে বেদনায় সে কখনো করে না বঞ্চনা...

কবিগুরু, একবার তোমার চরণধুলি দাও, সত্য-সুন্দর পথেই থাকবো আজীবন। কিন্তু সত্য কোথায়? তাঁর এই ধোঁয়াশাপূর্ণ সত্য-সুন্দর যে কী তার কোন হদিশ পাওয়া যায় না। বহু পরে, হুমায়ুন আজাদের প্রবন্ধগুচ্ছ নামক একটা বইয়ে অসাধারণ একটি আর্টিকল লেখা হয়েছিলো যেখানে ড. আজাদ রবিঠাকুরের এই সত্য-সুন্দরকে তুলোধনা করেছেন।

বিশ শতকের যুগ চূড়ান্ত অবিশ্বাসের যুগ, কোন সত্যিই সত্যি নয় আজ...সবই আপেক্ষিক- যেকোন কিছু বিশ্বাস করতে আজ তাই বড় ভয় পাই। শামসুর রাহমান তাঁর অসাধারন একটা কবিতায় একবার ফুটিয়ে তোলেন একজন অসহায় মানুষকে "যে জানাজায় গিয়ে তার মৃত বন্ধুর কান্নারত সুন্দরী স্ত্রীর বুকের উদ্ধত স্তন দেখে আলোড়িত হয়- এবং সে মুহূর্তে নিজের প্রতিই অবিশ্বাসে স্তম্ভিত হয়ে যায়!" (কী ভয়াবহ জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার- চিন্তা করসেন?) নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও আজ আর বিশ্বাস করতে মন চায় না। কত ধরনের জটিলতা. মানসিক-শারীরিক! ফেইসবুক ফ্রেন্ড-লিস্ট হাইড করে দিসি তাড়াতাড়ি...বন্ধুরাই জীবনকে বন্ধুর করে তুলে।



প্রাচ্যের অবিকশতি মস্তিষ্ক এখনও তাই আমাদের বাল্যকালে উপদেশ দেয়, অন্যের ক্ষতি কর না, ভালোমানুষ হও! কেন আমরা অন্যদের ভালো হয়ে চলার উপদেশ দেই? এই ভালো হয়ে থাকার অর্থটা কি? পাঁকে পড়লে পরিস্থিতি অনুযায়ী ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরও মিথ্যা বলেছে- তাও সরল টাইপের মিথ্যা নয়, জঘন্য কথার চালবাজি! নিজের প্রতি সৎ হলে আমরা খুব সহজেই বুঝবো যে- সার্বজনীন ভালো, সত্য, সুন্দর-- এইসবই বোগাস কথাবার্তা। পৃথিবীতে সবই পরিবর্তিত হয়ে চলছে, "ভালো" বলতে আমরা যা বুঝি- তাও।



তাহলে ভালোর বিপরীতে মন্দের ধারণাটা কি? শয়তানের উপাসনা করায় সমস্যা কোন জায়গায়? বলে রাখি, ধার্মিকদের সাথে, বিশেষ করে তাবলীগি বন্ধুদের বৃথা তর্কে আমার আগ্রহ নাই এসব নিয়ে। আমাদের অনেকেই সমকামীদের প্রতি বিতৃষ্ণা পোষণ করি (আমি নিজেও)। কিন্তু সমকামীদের আমরা ঘৃণা করি কেন? ওরা জাস্ট আমাদের বিরোধী ফ্রেইমওয়র্কে কাজ করে। এর বেশিতো কিছু নয়! যৌনতা নিয়ে আজ যে ভারত এত রক্ষণশীল, সেই ভারতে কয়েকশো বছর আগে যান; কামসূত্র পড়ুন- ইন্ডিয়াই একমাত্র ভূ-খন্ড যে যৌনতাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে..। অথচ সেই বিশাল ভূ-খন্ডে আজ দেখুন, তিন ভাগে তিন ধরনের নীতি-নৈতিকতা! মসজিদের নগরী ঢাকা শহর, এত মসজিদ পৃথিবীতে আর কোন শহরে নাই- এখানেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি চলে

"ভালো হয়ে চলো,", "মিথ্যা কথা বলো না...", "অন্যের ক্ষতি করো না..."- এইসবের কথাবার্তার কোন মূল্য নেই আধুনিক কালে। সক্রেটিস, আলেকজান্ডার কিংবা হাড্রিয়ানরা না হয় উন্নতস্তরের প্রেমের ব্যাপার-স্যাপার বুঝতেন, আধুনিক সমকামিদের তাঁদের পর্যায়ের নয় বলে তাদেরকে আমি ঘৃনা করতাম একসময়। কিন্তু যখন থেকে আবার ইতিহাস-দর্শন পড়ি, তখন সেই ঘৃণা প্রশমিত হয়ে অস্বস্তিতে রূপ নেয়।



রাত যখন বাড়ে তখন বিভ্রান্ত হই। কি অর্থ তবে ভালো হয়ে চলার? আসলে ভালো হয়ে থাকা মানেটা কি চূড়ান্ত অর্থে? আছে কি কোন সার্বজনীন সূত্র যার সন্ধান পেলে "ভালো" হয়ে থাকা যায়? এই জগতে এত তথ্য, এত তত্ত্ব, এত ধরনের শারীরিক-মানসিক মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা।



এমন কোন কিছু কি আছে যার মাধ্যমে আমরা ঠিক করতে পারি আমাদের কিভাবে চলা উচিৎ? গুরু লালন বলেছেন, "সত্য বল, সুপথে চল- ওরে আমার মন...।" সত্য বলতে চাই, সুপথে চলতে চাই। কিন্তু টের পাই, তা খুব একটা সহজ নয়। খারাপ হতে পয়সা লাগে না। ভালো হওয়া অনেক অনেক কঠিন। দা আলকেমিস্টের কোয়েলো বলেছিলেন, "তোমার হৃদয় যা বলে, তুমি সেই পথে চল। Always listen to your heart!" কিন্তু আমার হৃদয় যে মরে যায়নি, তা কে ঠিক করবে? অ্যাডলফের হিটলারে মাইন ক্যাম্প পড়ে প্রবলভাবে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি, সেই হিটলারওতো তার হৃদয়ের বাণী-ই শুনেছিলেন! মিষ্টি মেয়ে আনা ফ্রাংক, পৃথিবী-কাঁপানো আনা ফ্রাংকের ডায়েরি পড়ে কে আলোড়িত হয়নি? শৈশবে যে অ্যানা ফ্রাংকের ডায়েরি পড়ে, ওর করুণ মৃত্যুর কাহিনী পড়ে বিষণ্ণ হয়েছি...আহ্! হের হিটলার! মানবজাতির সার্বিক উন্নতির জন্য তোমার চোখে আবার সেই অ্যানা ফ্রাংকেরও কোন মূল্য নেই! এই হিটলারের বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে আপনারা দেখবেন, হিটলার কি পরিমাণ ভালোবাসতো তার মাকে! তারমানে দাঁড়ালো আসলে আমি/আমরা প্রত্যেকেই একটি ফ্রেইমওয়র্কের মধ্যে বসবাস করি? ভালো-মন্দ, যৌনতা, ব্যভিচার, দুর্নীতি, অপরের ক্ষতি করা- এগুলি আসলে জাস্ট কিছু কনসেপশমাত্র?



আছে কি কোন অর্থ?



রাত বাড়ে। আকাশের দিকে চেয়ে মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াই। মনে হয়, তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে যেসব আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে- তার অধিকাংশই অনুচিৎ। এ জগতের এক বিশাল মহত্তর কোন অর্থ আছে যা বুঝতে পারলে আমরা উপলব্ধি করতে পারবো, কেন এইসব অবাধ যৌনাচার সমর্থনযোগ্য নয়, কেন নেশার জগতে ডুবে থাকাটাও "ভালো" নয়, কেন ছোটবেলায় গুরুজনেরা উপদেশ দিতেন "ভালো" হয়ে চলতে, অন্যের ক্ষতি না করতে; কেন আমাদের ভালো হয়ে চলা উচিৎ, এবং সেইটা কিভাবে চলা উচিৎ। সব বিভ্রান্তি কেটে যাবে। সক্রেটিস, আলেকজান্ডার, লোলিটা, ইডিপাস- ইত্যাদি সব ধরনের নৈতিক সমস্যার একটা সমাধান পাওয়া যাবে। আহা, সেই ছোটবেলার নস্টালজিক ছড়া...



"I remember, I remember

The House where I was born,

The little window where the sun came

peeping in at morn!"



I remember, I remember

The roses red and white,

The violets and the lily cups--

Those flowers made of light!

...."

কোথায় হারালো আমাদের শৈশবের সেই নিষ্পাপ কলংকহীন দিনগুলো? সেই ধুলো-পড়া জানলা, সেই সব খেলার সাথীরা, সেইস ধুসর দিন,- আজ আমাদের জীবনের চারপাশে তাকিয়ে দেখি প্রেম-ক্রোধ-হিংসা-দ্বেষ-ব্যর্থ প্রেমের যন্ত্রণা-মানবিকতা-অশুভ-সমকামিতা-উভকামিতা-নেশা সব মিলে-মিশে একাকার।





সূর্য ডুবে গেছে বহু আগেই। এখন রাত অনেক অনেক গভীর।



একবিংশ শতক চূড়ান্ত অবিশ্বাসের এক যুগ, কোন সত্যিই সত্যি নয় আজ...সবই আপেক্ষিক- যেকোন কিছু বিশ্বাস করতে আজ তাই বড় ভয় পাই। ভয় হয় তোমাকেও! নিজেকেই-যে মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না আর! তারপরও মাথার উপরে একরাশ তারা-ভরা আকাশ যতই দেখি ততই বিস্মিত হই...চারিপাশের এইসব সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে রাতের আকাশ আমাকে বলে, যুগে যুগে মহৎ মানুষেরা কিছু একটা সন্ধান পেয়েছিলেন, যা সত্য, শ্বাসত, সুন্দর, মহত্তর।

আছে কি এ জগতের গভীরতর মহত্তর কোন নৈতিক শ্বাসত সূত্র!!


মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫৩

বর্ণা বলেছেন: যত চিন্তা করবেন আরও অনেক বাঁক খুঁজে পাবেন।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:০০

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: কী দরকার এত চিন্তার বলেনতো! আপনি কি কাল্পনিক সংখ্যার সাথে পরিচিত??

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:০৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: নীতি নৈতিকতা, আদর্শ.... এসব আমাদের সুশৃঙ্খলিত ভাবে জীবনযাপনে ভূমিকা রাখছে। সময়ের প্রয়োজনে এসব সৃষ্টি হয়েছে, হচ্ছে, হচ্ছে।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:০৭

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আপনার কথায় ব্ল্যাকলিস্টের (হলিউডের সিরিয়াল) টম কিনের কথা মনে পড়লো, "প্রিন্সিপল ইজ বিচ!"

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:০৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: আপনার পোস্ট'টি বেশ তথ্যবহুল ছিলো।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:১৬

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: কপি-পেস্ট পোস্ট -তো, তাই!

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:০৫

ঢাকার লোক বলেছেন: কোনো একটা বিশেষ সমাজে বিশেষ সময়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে যা বেশির ভাগ লোকের কাছে ভালো বলে গণ্য হয় তার বিপরীত কিছু না করাই মঙ্গল। বিপরীত কিছু করে সমাজে অনাসৃষ্টি করা যে কোনো ধর্ম বলেন, যে কোনো ন্যায় নীতি বলেন, কোনো কিছুই সমর্থন করে না । এটুকু মেনে চলা খুব কঠিন হওয়ার কথা নয় যেহেতু এতে বেশিরভাগ লোকের স্বার্থ ও সমর্থন থাকবে ।
সুন্দর লিখেছেন, লেখার স্টাইল ভালো ! শুভকামনা !!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:১৩

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: মার্কস বলছেন, পুঁজি হলো এমন একটা ধারণা/কনসেপশন বা বস্তুগত সৃষ্টি (মানুষের সৃষ্টি) যা একমাত্র বেঁচে থাকতে পারে নিজের ক্রমশ ফুঁলে-ফেঁপে ওঠার মধ্য দিয়ে। আর এ প্রক্রিয়ায় সে এমন একটা বাস্তবতা সৃষ্টি করে যাতে আপনার কথিত "বেশির ভাগ" লোক শোষিত হয়, এখান শোষণ বলতে সারপ্ল্যাস ভ্যালু উৎপাদন যা ভোগ করে সংখ্যালঘু একটা গোষ্ঠী। মার্কস আহবান জানাচ্ছেন, কমুনিস্ট হলো তারাই যারা এই শোষিত "বেশির ভাগ লোককে" নিয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী মার্কস তাহলে এখনো বাতিলের খাতায় পড়েননি, এমনকি নৈতিক দিক দিয়েও!!

৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৩৫

বাকপ্রবাস বলেছেন: বেশ ভাল ও সুন্দর তবে কোন সমাধান নাই আপেক্ষিক ছাড়া কোন গতি নাই

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৫৯

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: যথার্থ বলেছেন। নিউটনীয়ান জগৎ-ই ভালো ছিলো, আইনস্টাইন এসে প্যাঁচ কষে দিলো!

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:০৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: বস, ভালোভাবে বাঁচতে চাইলে এসব ভাবনা এড়িয়ে চলাটাই ভালো।

বন্ধুর বউ খুব রূপসী, দেখলে মনে অন্য খেয়াল উকি দেয়। ধর্ম, সমাজের তৈরি নীতি নৈতিকতা আমাদের এই খেয়াল দমিয়ে রাখে। যদি ধর্ম,সমাজের কোন নিয়ম, বাধাবিপত্তি না থাকতো তাহলে কি হতো?

চোরের নীতি চুরি করা। আমাদের ওদিকে শতবছর পূর্বে, চোরপল্লী নামের একটা পল্লী ছিল। চোর পল্লীর মানুষদের কাছে চুরি স্রেফ একটা পেশা। তবে তারা তাদের পল্লীতে চুরি টুরি করতো না। নিজ পল্লীতে চুরি করা অনুচিত এই নীতি তারা মানতো। কেন না মানলে তারা শাস্তির ব্যবস্থা করতো। তাহলে চোরের নীতি চুরি করা এই কথাটারিবা ভিত্তি কি?

কেউ কেউ বলেন, চোর পল্লীর চোর সর্দার মারা যাওয়ার পর তারা চুরি ছেড়ে দিয়েছে। এর একটা কারণ হতে পারে, সর্দারের মৃত্যুর পর চুরির নিয়মনীতি না মানা, নিয়মভঙ্গকারীদের বিচার না হওয়া। যার ফলে নিজেদের পল্লীতে চুরি বেড়েছে। অতঃপর, মারামারি, যায়জামেলায় তাদের ঐক্য নষ্ট হয়েছে। এবং আস্তে আস্তে বাধ্য হয়ে ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছে।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:১৬

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: এইটা অনেক আগের লেখা ছিলো, কপি-পেস্ট মারলাম। B-)

চোরের নীতি চুরি করা, মানে ক্যারেক্টার অনুযায়ী একটা এথিক্যাল বা মোরাল কোড মেনে চলা আর কি। ডাকাত ডাকাতিই করবে, সে অন্যায় ভাবে অন্যের সম্পদ লুঠ করে নিয়ে যাবে এইটাই সে, ডাকাত যখন চুরি করে, তখন সে একধরনের এথিক্যাল কোড ব্রেইক করে। ডাকাত কখনো চুরি করতে পারে না। আপনি চোরপল্লীর প্রাথমিক যে বর্ণনা দিছেন, ওইখানেও একধরনের এথিক্যাল কোড দেখা যাচ্ছে, পরে যেটা না থাকার কারণে চোরপল্লী নামক সিস্টেমটা ব্রেইক করেছে।

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:২৮

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সেটাই। সমাজ, সভ্যতা এমন শতসহস্র নিয়ম কানুন সৃষ্টি করে একটা সিস্টেমের মধ্য চলছে। কেউকেউ নিয়ম ভাঙ্গতে চাইছে। টাইমিং যথাযথ হলে বিপ্লবের মাধ্যমে নিয়ম ভেঙ্গে অন্য নিয়ম তৈরি করছে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, একটা সময় মানুষ আবারো সভ্যতার সূচনালগ্নে ফিরে যাবে। এইসব নিয়ম, নীতি নৈতিকতা কিছুই মানবে না। সবকিছুর ভেতর তুমুল শূন্যতা কিংবা অর্থহীনতা খুঁজে পাবে।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৪৬

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: দা আউটসাইডারকে মনে পড়লো। একটা সুশৃঙ্খল সিস্টেমকে টিকিয়ে রাখার জন্য, সিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে সব নিয়ম-কানুনের মধ্যে দিয়ে মানুষ একে-অপরের প্রতি রিঅ্যাক্ট করে এগুলো সবগুলো মিলিয়ে যদি একটা কমন ফ্রেইমওয়র্ক তৈরি করে, তবে কামুর আউটসাইডার হল সেই ব্যক্তি এই ফ্রেইমওয়র্কের বা এর সীমানার বাইরে বাস করে। সমাজে তবে তার অবস্থান কোথায়? আউটসাইডারে মারসো ক্যারেক্টারটা সমাজের এই সব যুক্তি, মারপ্যাঁচ, এথিক্যাল কোডের খেলা বোঝেনি; তাই পরিণতিও তাকে বরণ করতে হয়েছে করুণভাবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত পাঠক তার চোখ দিয়েই দেখে তুমুল শূন্যতা কিংবা অর্থহীনতায় মধ্যে থাকা এক সমাজকে... যে সমাজ যুগে যুগে এথিক্যাল/মোরাল কোড রচনা করে সিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষা করতে চেষ্টা করছে, কিন্তু কোন এত নৈর্ব্যক্তিক বিচারে শেষপর্যন্ত এইটা তুমুল শূন্যতা কিংবা অর্থহীনতাকে মানুষের অর্থবহ করে তোলার প্রচেষ্টাই!

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:০৮

বর্ণা বলেছেন: নাহ ।

৯| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৪৯

বিজন রয় বলেছেন: অসাধারন!! জাস্ট অসাধারণ!

আপনার লেখা আগে পড়েছি কিনা মনে পড়ছে না।

ভাল লাগল আপনার পড়শোনার পরিধি জেনে। সব বড় বড় দার্শনিক ও লেখকদের এবং তাদের লেখা নিয়ে বিশ্লেষণ করে এই লেখা লিখেছেন। আজকাল এসব নিয়ে কেউ ভাবে না, কেউ লেখেও না।

সবাই আছে ধর্ম নিয়ে, ফলে মানুষ আর সমাজ যাচ্ছে রসাতলে।

অটঃ আপনি কি শিক্ষক, কমিউনিস্ট?

২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: EEE (Electrical & Electronics Engineering) - এ পড়াশোনা করছি, কারেন্টের মিস্ত্রী বলতে পারেন। কমিউনিস্ট নই।

১০| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: সূভা কি হাওয়া
লাক্ষো রুপাইকা দাওয়া।
#উর্দু সান
শুভ সকাল।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: কেহতে হ্যাঁয় মেরি মওত্ পর
উসকো ভি ছিন্ হি লিয়া
ঈশক্ কো মুদাতোঁ কি বাদ
এক মিলা থা তরজুমাঁ।---ফিরাখ

১১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৪৯

Mohammad Israfil বলেছেন: হা হা হা। এসব ফাও চিন্তা বাদ দিয়ে। ইসলাম ধর্মে ফিরে এসো। আল্লাহর পথে চলো। দেখবে দুনিয়া খুবই সহজ এবং শান্তিময় হয়ে গেছে। আল্লাহর কাজে ব্যস্ত থাকো।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ;)

১২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: দ্যা আউটসাইডারের বাংলা অনুবাদ কয়েকবছর আগে পড়েছিলাম। অসাধারণ!

আমাদের সমাজ ক্যামুর আউসাইডার বা মারসো ক্যারেক্টারদের ভালোভাবে নেয় না। দুশ্চরিত্রা, চোর, ডাকাতদের, দুইনাম্বারদের সম্পর্কে অবগত হয়েও অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের সম্মান দেখাতে হয়। কারণ, সমাজে তারা এই কোডটাও এড করে রেখেছে।

কাউকে কান্না করতে দেখলে আপনাকেও কাঁদতে হবে। নইলে সমাজ ভালো চোখে দেখবে না।
অর্থাৎ, ভান ভণিতা কিংবা এক্টিং না জানা মানুষকে সমাজ সমাজের ভিতরে রাখতে চায় না। ক্যামুর দ্যা আউটসাইডারকে এভাবেই সমাজ বের করে দেয়।
সমাজের ভিতরে থাকতে হলে সমাজের নিয়মনীতি মানতে হবে। এটাই চুড়ান্ত।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: তবে মাধুকরী উপন্যাসে বলা হয়েছিলো, সমাজের উচ্চপদে যারা আসীন তারা নাকি লোয়ার ক্লাসের পার্সনদের সামনে নিজেদের সরল আবেগ প্রকাশ করতে পারে না, পরিস্থিতি কাঁদার মতন হলেও কাঁদতে পারে না...এতে তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়।

১৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: হুম। তেমনি ক্ষতির শঙ্কা থাকায় সমাজের সামনে নিম্নবিত্তরা অনেকসময় নিজেদের মতামত, ভাবনা শেয়ার করতে পারেনা। এলিট শ্রেণীর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত হাসি মুখে মেনে নেয়।

ক্যামুর উপন্যাসের অনুবাদ প্রথমবার পড়ার পর আমাকে নতুন করে ভাবিয়েছে। সমাজে ধীরেধীরে আউটসাইডার ক্যারেক্টারের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিষ্ঠিত মুখোশদারী, অসাধু, দুশ্চরিত্রাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানলে এখন অনেকেই ভানিতার সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকে। এঁদের সংখ্যা বাড়লে সম্ভবত কোড ফেইল করবে। এবং নতুন কোড ক্রেট হবে। কেউ আর এলিট শ্রেণীর দুইনাম্বাদের রেসপেক্ট দেখাবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.