নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেইল : [email protected]

বিপ্লব০০৭

...

বিপ্লব০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোরা : আ ডলস হাউজ

১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:০১



শৈশবে যে ভাবনাগুলো আমাদের অপরিপক্ক মানসপটে ভেসে উঠতো নারীর অধিকার, তাদের স্বাবলম্বী হওয়া এবং আত্নসচেতনা নিয়ে তারই ক্লাসিক রূপায়ণ 'নোরা'। নোরায় ইবসেনের রসবোধের একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত-

মি. র‍্যাংক : যেভাবে নাচছো, মনে হচ্ছে এর উপর তোমার জীবন নির্ভর করছে।
নোরা : তাইতো করছে!

তবে চিঠিটি পাবার পর হেলমারের প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক এবং আকস্মিক লেগেছে যা বেশ দৃষ্টিকটু। এমনকি পরবর্তীতে যখন দ্বিতীয় চিঠিটি হেলমার পায় তখনও তার পরিবর্তন বেশ আকস্মিক। আমার নিজের পড়ে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লেগেছে কারণ তৎকালীন ইউরোপীয় পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার সাথে ভালো সংযোগ ছিল না।

জুলভার্নের গল্পে বিমান, সাবমেরিন কিংবা গোলায় করে চাঁদে অভিযানের বর্ণনা পড়ার আগে তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে গভীর ধারণা না থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট সময়ের সাথে পাঠক-মনের ঘনিষ্ঠতার অভাবে যেমন জুলভার্ন আবেদন হারান এ অনেকটা তেমনই। অবাক হয়ে তাই ভাবছিলাম, আশ্চর্য! নোরার এ মহান ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা কোথায় হেলমারের?

তাই হেলমারদের ঘৃণা করতে গিয়েও এক দার্শনিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সক্রাতেস, প্লাতন কিংবা আরিস্ততেলেসকে প্রথমে ঘৃণা করতাম মানুষে-মানুষে বিভেদ সৃষ্টিকারী বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য। চিন্তার জগতে অচিন্তনীয় পথ অতিক্রম করার পরেও কেন তাঁরা এই মহান সত্যটির সন্ধান পেলেন না যে, পরিবেশ-পরিস্থিতিই প্রায় সকল ক্ষেত্রে মানুষকে অপর থেকে আলাদা করে; কাউকে বানায় দার্শনিক, কাউকে দাস, কাউকে অভিজাত কাউকে ম্লেচ্ছ। কিন্তু পরবর্তীকালের ভাবনায় উপলব্ধিটা ছিলো এই যে আসলে মনীষীরা অবশ্যই মহান, কিন্তু তারপরও যুগের সীমাবদ্ধতা সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। বরং যে যতটুকু নিজের চেষ্টায় যুগের সনাতন ধ্যান-ধারণা ছাড়িয়ে নিজেকে বিকশিত করেছে তার জন্য তাকে প্রাপ্য সম্মান দেয়াটাই কর্তব্য।

মনীষীদের যুগসাপেক্ষ 'চিন্তা'-গুলোকে তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে না দেখা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু তাহলে আবার সমস্যা দাঁড়ায় হেলমারদের মতন লোকজনদের নিয়ে! তাদের সাথে এনগেজমেন্ট বা বোঝাপড়াটা কেমন হবে? নোরার প্রতি হেলমারের ভালোবাসার কোন তুলনাই হয় না, কিন্তু হেলমারের চিন্তা-চেতনা তৎকালীন ইউরোপীয় ধ্যান-ধারণাকে প্রতিফলিত করছে; ভালোবাসার জোর যুগের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ইউরোপীয় পুরুষতন্ত্রের প্রতীক হেলমার নিজের চেষ্টায় সে নিজের যুগ-চেতনা ছাড়িয়ে যেতে পারেনি, এ জন্য হেলমারকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটাও আবার বেঠিক ঠেকে।

শেষবিচারে হেলমারকে ঘৃণার পাত্র নয়, বরং এ স্বীকার করে নিতে হয় যে, সে একজন ভালো মানুষ এবং যুগের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারেনি। হেলমার অপরাধী নয়। সমস্যাটা হল, হেলমার আর নোরা দু’টি ভিন্ন যুগের সন্তান। দ্বান্দিকতা কারণেই তাঁদেরকে আলাদা হতেই হবে। এ ক্ষেত্রে আমি উগ্র নোরাপন্থী। নোরা ও হেলমারের দ্বন্দের মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য কোন ধরনের মধ্যপন্থা মানে সিনথেসিসে বিশ্বাসী নই। তথাপি বর্তমানকালের বহু নারীবাদীই সেই মধ্যপন্থী যারা হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, ”চান আরেকটু স্বাধীনতা, লিপস্টিক, শাড়ি , গহনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ...।”

এরা ডলস হাউজের সংস্কার সাধন করতে চান যখন তা ভেঙ্গে ফেলাটাই আবশ্যক।


---------------
১৬/০২/২০১০

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: নোরা নামে আমার একটা বন্ধু ছিলো।

১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০২

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: বন্ধুদেরকে ধরে রাখতে হয়, ছেড়ে দিতে নেই।

২| ১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০৮

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: নাটকটি বিখ্যাত হয়েছে যুগের কারণে, কিন্তু আপনি যদি গভীর মনোযোগ দিয়ে নাটকটি পড়ে থাকবেন, দেখবেন নোরা মোটেও সর্বজনীন বা সৎ স্বাধীনচেতা কোনো চরিত্র নয়, বরং বিভ্রান্তি, স্বার্থপরতা ও জালিয়াতির প্রচুর মিশেল তার চরিত্রে।

১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:১৬

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আমার মনোযোগে সম্ভবত কোথাও ঘাঁটতি রয়েছে বলে নোরাকে ঠিকমতন বুঝতে পারিনি আমি-- এইটা হল আপনার বক্তব্য। আমি কিন্তু নোরাকে সৎ স্বাধীনচেতা বা সর্বজনীন কোন চরিত্র হিসেবে দেখিনি। আমার ফোকাস দু'টো বিষয়ের উপর, ১। হেলমারের জন্য নোরার মহান 'ভালোবাসা' আর ২। ডলস হাউজের সংস্কারের পরিবর্তে একবারে এটিকে ভেঙ্গে ফেলা। আপনার পাঠে নোরার মধ্যে আপনি বিভ্রান্তি, স্বার্থপরতা আর জালিয়াতির প্রচুর মিশেল পেয়েছেন। সেটা একটু ডিটেইলস বললে আমিও আমার মতন করে কিছু কথা বলতে পারতাম।

৩| ১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:১০

বিজন রয় বলেছেন: নোরা একটি ভীষণ লাভিং ক্যারেক্টার।

ভাল লেখা।
++++++++

১৩ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:৩০

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: নোরাকে ভালো না বেসে উপায় নেই!

৪| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:৫৭

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: নারী স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাসী তারা নোরার কথা গুলোই বলে আসছে আজ পর্যন্ত।তবে ইসলামের সাথে কন্ট্রাডিকশন আছে।

১৪ ই জুন, ২০২০ সকাল ৮:১৮

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: নারী স্বাধীনতার সাথে ইসলামের কন্ট্রাডিকশন নাকি নোরার কথার সাথে ইসলামের কন্ট্রাডিকশন?

৫| ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:০৩

শের শায়রী বলেছেন: জুলভার্নের গল্পের সাথে ইবসেনের লেখার চমৎকার তুলনা ভালো লেগেছে।

১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫০

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: তাও বলেন নাই যে, কিসের সাথে কি মেলান! জুলভার্নের গল্পগুলো পড়লে এখন আর তেমন একটা আলোড়িত হই না, কারণ তিনি তার গল্পে যা যা কিছু প্রেডিক্ট করছেন অধিকাংশই মানুষ আজ আবিষ্কার করে ফেলেছে। বাট তার সময়কার কথা চিন্তা করলে এটা অবিশ্বাস্য লাগে যে ঐ সময়ে বসে তিনি এত কিছু কিভাবে কল্পনা করলেন? অ্যারাউন্ড দা ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ, মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড, মাস্টার অব দা ওয়ার্ল্ড-- এইগুলার আমেজ আজো ভোলার নয়। কিংবা ক্যাপ্টেন নিমো, ফিলিয়াস ফগ, ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস, রোবার-- একেকটা অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। আমার পড়া তার শেষ বইটা হল, মাস্টার জ্যাকারিয়াস। তার সময়ে বসে তিনি এ বইতে ২০০০ সালের যে প্রযুক্তির যে কল্পনা বর্ণনা করছেন সেগুলা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.