নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেইল : [email protected]

বিপ্লব০০৭

...

বিপ্লব০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'বিজ্ঞান\' বা সায়েন্সের \'দার্শনিক\' সঙ্কট

২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ২:২৮



অ্যাটমিক বা সাব-অ্যাটমিক লেভেলে পার্টিকলের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য আমাদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা ফিজিক্সের শরণাপন্ন হতে হয়। আমাদের প্রতিদিনকার বাস্তবতায় আমরা যা অবজার্ভ করি এসবের জন্য পদার্থের ক্ষুদ্রতর স্তরে আচরণ নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের সমস্যা হল তাদের মধ্যে অনেকেই ধর্ম যে জীবনবিধান দিয়েছে সেটা নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন। অর্থাৎ মনোথেয়িস্টিক ধর্মগুলো যখন আমাদের বলে একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব মেনে নিয়ে একটা নির্দিষ্ট রুলড ওয়েতে জীবন 'যাপন' করতে তখন তারা বিদ্রোহ করেন।

উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় যে, সূর্যগ্রহণের সময় নবী তার সাহাবাদের বলছেন, দোয়া-দরুদ পড়তে কিংবা কয়েক রাকাত নামায পড়ে ফেলার জন্য। ওদিকে গ্রীক প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা [এনারা আসলে দার্শনিক ছিলেন, এদের প্রকৃতি সম্পর্কিত তথাকথিত পাশ্চাত্য 'দর্শন' থেকেই পরবর্তীতে 'প্রকৃতিবিজ্ঞান' বা আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম] তখন বিস্মিত। কারণ ওদের কাছে খোদা বা আল্লাহ কোন নবী পাঠাননি। অর্থাৎ খোদার সাথে তাদের কোন লিঙ্ক নেই। ফলে প্রকৃতি, প্রকৃতির কাজ-কারবার যেমন: রাতের আকাশে তারা, গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি, সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ ইত্যাদি এদের সামনে হাজির হল এক অপার বিস্ময় হিসেবে। এই দুর্বোধ্য প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য তারা উদ্ভাবন করলো নানান তত্ত্বের, নানান যৌক্তিক ব্যাখ্যার। অর্থাৎ খোদা যখন ওহী নাজিল করে কোন ধরনের 'সত্য' তাদের পাঠাচ্ছেন না, তখনই দেখা দিচ্ছে অনিশ্চয়তা। অনিশ্চয়তা যেখানে আছে সেখানেই দর্শনের উদ্ভব। অর্থাৎ আপনি যখন থিওরি অব এবরিথিং আবিষ্কার করে ফেলবেন তখনই একমাত্র দর্শনের মৃত্যু ঘটতে পারে, তার আগে নয়।


ওদিকে ওহী মানেই নিশ্চয়তা যেহেতু তা খোদার নির্দেশ, এর উপর কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না। ওহী মানেই অ্যাবসুলুট নিশ্চয়তা। নিশ্চয়তা না থাকলেই সেখানে দর্শনের আবির্ভাব। এমনকি অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সেখানে যে দর্শনের উদ্ভব ঘটে সেটা আমরা ধর্মের মধ্যেও দেখতে পাই। দেখুন-- নবীর মৃত্যুর পর খেলাফতের প্রশ্নে কোন ধরনের নিশ্চিত উত্তর ছিলো না জনগনের সামনে যেহেতু ওহী আসা নবীর মৃত্যুর সাথেই বন্ধ হয়ে গেছে। আর আমরা নবীর জীবনী থেকেই অনেকবার দেখেছি যে ওহী-ই তৎকালীন ধর্মানুসারীদের প্রাত্যহিক জীবনের সমাধান-অযোগ্য কঠিন সমস্যাগুলোর সমাধান দিতো ওনার জীবিতাবস্থায়।

নবী মারা গিয়েছেন, ওহী নাজিল বন্ধ হবার পর খেলাফতের প্রশ্নে তাই দেখা দিল এক ধরনের অনিশ্চয়তা, আর এ অনিশ্চয়তা থেকেই শিয়া ও সুন্নী নাম ধারণ করে দু'টি বিভাজন। এই বিভাজন আর কিছুই নয়, এটি আসলে ওহী না থাকার কারণে অনিশ্চয়তা-সৃষ্ট দার্শনিক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান সমাধান শিয়া ও সুন্নী নামধারী দু'টো ভিন্ন দল/গোত্র বা খোলস নিয়ে হাজির। অর্থাৎ খেলাফতের পদে কে আসীন হবেন সেই সমস্যার উত্তর বা নিশ্চয়তা নেই দেখেই সমাধানে আসার জন্য দর্শনের উদ্ভব। যে ব্যক্তি মানুষটির দৈনন্দিন জীবনে মানুষ, প্রকৃতি, বিশ্বজগৎ নিয়ে কোন ধরনের অনিশ্চয়তা নেই তার জীবনে দর্শনেরও কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।


তবে আমাদের প্রতিদিনকার ম্যাক্রোওয়ার্ল্ড বা বা প্রাত্যহিক বাস্তবতাকে যদি আমরা অ্যাকুরেইটলি ধরতে চাই তবে নিউটনিয়ান 'দর্শন' দিয়ে আমাদের কাজ চলে না, কারণ এক্ষেত্রে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের ম্যাক্রোওয়ার্ল্ড-ও আসলে মাইক্রোওয়ার্ল্ড দিয়েই গঠিত। যেমন: আমাদের খালিচোখে দৃশ্যমান এক ফোটা (অনু) পানি আসলে দু'টো হাইড্রোজেন এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে গঠিত। আমরা অ্যাটমিক লেভেলে চলে এসেছি, অ্যাটমগুলোকে ভাঙ্গলে আমরা পাবো সাব-অ্যাটমিক লেভেল- যেখানে আছে ইলেকট্রন, প্রোটন নামক পার্টিকেলগুলো। এ পর্যন্ত যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আমাদের মেনে নিতে হবে, "যেহেতু সাব-অ্যাটমিক লেভেলের পার্টিকলগুলো থেকেই পরমাণু, অণু হয়ে আমরা আমাদের প্রাত্যহিক বাস্তবতায় অবস্থিত পদার্থগুলোকে পর্যবেক্ষণ করছি, সুতরাং সাব-অ্যাটমিক লেভেলের পার্টিকেলগুলোর আচরণ অ্যাকুরেইটলি প্রেডিক্ট করতে পারলে আমরা আমাদের বাস্তবতাকে এক্সাটলি ব্যাখ্যা করতে পারবো।"

এ জায়গায় সমস্যা বাঁধালো আনসার্টেনিটি প্রিন্সিপল যেটি অনুসারে সাব-অ্যাটমিক লেভেলে অবস্থিত পার্টিকলগুলোর আচরণ আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় ১০০% অ্যাকুরেসি দিয়ে প্রেডিক্ট করা।


কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইনটুয়িটিভ ব্যাখ্যার জন্য, আরউইন শ্রডিঙ্গার আরেককাঠি এগিয়ে বললেন যে আসলে মাইক্রোওয়ার্ল্ডের সাথে 'সম্পর্কিত' ম্যাক্রোওয়ার্ল্ডের বাস্তবতা আমাদের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল।

অর্থাৎ কোন ঘটনা আসলে কি ঘটেছে না ঘটেনি- সেটা পর্যবেক্ষণ না করার আগে আমরা বলতে পারি না। এখানে সবচেয়ে যৌক্তিক বক্তব্য হল- ঘটনাটি হয় ঘটেছে, না হয় ঘটেনি। আমাদের প্রতিদিনকার বাস্তবতায় আমরা যেভাবে যা বুঝি বা দেখি, সে অনুযায়ী ঘটনাটি ঘটার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি (মাইক্রোওয়ার্ল্ডের সাথে যখন আমাদের দৈনন্দিন ম্যাক্রোওয়ার্ল্ডকে কানেক্ট করা হচ্ছে)। কিন্তু আসলে 'ব্যাপারটা' হল- আমরা "জানিনা" আসলে কি হয়েছে, "আসলে" কি হয়েছে সেটা নির্ভর করবে আমাদের পর্যবেক্ষণের উপর। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণ করার মূহুর্তেই নির্ধারিত হবে আসলে কি হয়েছে (ঘটনা ঘটেছি কি ঘটেনি)। তার আগে নয়। আমাদের এটা বলা 'ঠিক' হবে না যে "আরে বাবা, ঘটনা একটা না হয় অন্যটা-তো ঘটে গিয়েছেই, এখন পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হলেইতো হয়।" কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী ভয়ঙ্কর সত্যটা হল, "সময়"-এর ধারণায় আমরা যে ভাবছি যে, হয় ঘটনা ঘটেছে, না হয় ঘটনাটা ঘটেনি, এখানে আমরা 'টাইম' দিয়ে যে অতীতের কনসেপশন খাটাচ্ছি তাই ভুল হচ্ছে। সবচেয়ে পারফেক্ট হল, এভাবে বোঝা যে, 'পর্যবেক্ষণ'-এর সময় 'সত্যি' নির্ধারিত হচ্ছে!!



প্রকৃতিবিজ্ঞানের দার্শনিক সঙ্কট কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই জায়গায় স্পষ্ট।

প্রকৃতিবিজ্ঞান শুরু হয়েছিলো ন্যাচারাল ফিলোসফি নাম দিয়ে। তারপর প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা 'দর্শন' থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। হকিং এ কারণে তার ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইমে ঘোষণা দিলেন যে, 'ফিলোসফি ইজ ডেড।'

হকিং-এর মতে, দর্শন প্রথমে গ্রীকদের হাতে শুরু হয়েছিলো প্রকৃতিকে অবজার্ভ করার মধ্যে দিয়ে এবং একে ব্যাখ্যা করার বা বোঝার একটা পদ্ধতি হিসেবে। তখন জ্ঞানের শাখা-প্রশাখা ছিলো অল্প। তাই একজন মাত্র ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব ছিলো একাধারে সকল বিষয়ে পারদর্শী হওয়া। কিন্তু বর্তমানে "জ্ঞান" বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এত বেশি বিকশিত হয়ে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে যে একজন দার্শনিকের পক্ষে কখনই সম্ভব নয় সকল বিষয়ে সমানভাবে পারদর্শী হওয়া। বিশেষ করে বর্তমানে আমরা দার্শনিক বলতে যাদের বুঝি এরা আসলে বিজ্ঞানের দার্শনিক, এরা পদার্থবিজ্ঞান বোঝেন না।


হকিং -এর এককথায় দর্শন ডেড হয়ে যাচ্ছে না। তাছাড়া দর্শনের উচিৎ ছিলো এই প্রশ্ন তোলা যে পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যখন ম্যাক্রোওয়ার্ল্ডের সত্য নির্ধারিত হচ্ছে তখন একজন খাটি দার্শনিক কিভাবে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পারেন? পর্যবেক্ষণ করার সাথে সাথেই সত্যি নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে, তার দার্শনিক মনের মৃত্যু ঘটছে। অর্থাৎ দর্শনের জন্ম অনিশ্চয়তা থেকে এবং পর্যবেক্ষণ সকল অনিশ্চয়তা দূর করে দিচ্ছে। যদিও দার্শনিক সত্যের সন্ধানী, সুতরাং সৎ হলে পর্যবেক্ষণকে তার অস্বীকার করা 'উচিৎ' নয়। কিন্তু নিউটনিয়ান জগতে থেকে সে এতদিন ভেবেছিলো 'সময়' অ্যাবসোলুট, ঘটনাটা যেহেতু 'অতীতে' ঘটেছে বা ঘটেনি সে 'এখন' স্রেফ পর্যবেক্ষণ করে জেনে নিলেই হল। অথচ এখন সে জানছে সময় নিজেও আপেক্ষিক একটা 'জিনিস'। তার নিজের পর্যবেক্ষণের ওপরই আসলে নির্ভর করছে 'সত্য'।

এখন একটি প্যান্ডোরার বাক্স সে কি খুলবে না কি খুলবে না, তা একমাত্র নির্ভর করছে তার প্রজ্ঞার ওপর।

মন্তব্য ৩৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:৪৪

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: কিছু বিষয়রে সাথে পুরোপুরি ঐক্যমত পোষণ করি। তবে প্রথমত দর্শনকে প্রকৃত অর্থে নিরেট বিজ্ঞান বলা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে বরাবরই, অন্তত দর্শনের স্বাভাবিক সংজ্ঞার দিক থেকেও। হেলেনিস্টিক দর্শনবাদ ঘাটাঘাটি করলে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে যায় যে সমসাময়িক অনেক দার্শনিক-ই ধর্মীয় চেতনায় যথেষ্ট প্রভাবিত ছিলেন। তাদের অনেকের অনেক ভাষ্যই আজকের বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক নয়। বিশেষ করে গ্রীক মাইথোলজীর বিভিন্ন চরিত্র এবং তাদের প্রভাব অনেক দার্শনিকের ভাবনার খোরাক ছিলো।

তবে এটাও সত্য বলে মানি যে, বিজ্ঞান সকল প্রশ্নের উত্তর আজো দিতে পারে নি এবং পারবে বলেও বিশ্বাস করিনা। প্রকৃতি এবং ঈশ্বরবাদকে সমার্থক বা একে অপরের পরিপূরক ভাবাটা আমার কাছে কিছুটা বোকামি মনে হয়। থিওরির দিক থেকে আলোর গতিতে ভ্রমণ সম্ভব হলেও বাস্তবে সেটা আদৌ সম্ভব কিনা সে উত্তর জানার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ থেকে এখনো পর্যন্ত মানুষের শতভাগ উপযোগী আর একটা গ্রহ খুঁজে না পাওয়া কিছুটা ভাবনার খোরাক জোগায় বৈ কি!

লিখার জন্য ধন্যবাদ।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১১

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: দর্শনকে প্রকৃত অর্থে আপনি নিরেট বিজ্ঞান বলতে পারছেন না, অথচ ঘটনা কিন্তু তাই। নিরেট হোক আর নিরেট না হোক, বিজ্ঞানও কিন্তু আসলে এক ধরনের দর্শনই। বিজ্ঞান প্রথমে শুরুই হয়েছিলো প্রকৃতির দর্শন নাম দিয়ে, প্রকৃতিতে যা দেখা যায় সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করেই গড়ে উঠেছিলো বিজ্ঞানের সৌধ যখন তার নাম ছিলো ন্যাচারাল ফিলোসফি। আইজ্যাক নিউটনের বই খুললে আপনি দেখতে পাবেন সেটা নিরেট বিজ্ঞানের ইকুয়েশন আর জ্যামিতিক চিত্রে ভরপুর। আপনার কাছে মনে হবে এটা একটি নিরেট বিজ্ঞানের বই। অথচ বইয়ের নামটা লক্ষ করুন - ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা!! হেলেনিস্টিক সময়টা আসলে প্রকৃতিবিজ্ঞানের অন্ধকার যুগ। ও সময়ের প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করার চেয়ে ভাববাদের কাজ-কারবার বেশি যেগুলো স্টোয়িসিজম, এপিকুরিয়ানিজম বা মিস্টিসিজম নাম নিয়ে প্রকাশিত। এ কারণে হেলেনিস্টিক দার্শনিকদের আমাদের কাছে বিজ্ঞানী মনে হচ্ছে না, বা হেলেনিস্টিক দর্শনকে আমাদের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক মনে হচ্ছে না।

২| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, উহা কি আপনার কাছে পরিস্কার?

২৪ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৪০

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: কোয়ান্টাম মেকানিক্স, পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস, নিউটনিয়ান ডিটারমিনিস্টিক জগতকে ভেঙ্গে আইনস্টাইনের স্পেশাল রিলেটিভিটির আগমন যার ফলে জগতের ডিটারমিনিস্টিক ন্যাচার ভেঙ্গে তা রিলেটিভিটির বৈপ্লবিক ধারণায় প্রবেশ করলো এবং আনসার্টেনিটি প্রিন্সিপল যেটা কিনা প্রকৃতির ডিটারমিনিজমকে পুরোপুরি ভেঙ্গে দিলো এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের তত্ত্বকে ইনটুয়িটিভলি বোঝার জন্য শ্রডিঙ্গারের ক্যাট নামক থট এক্সপেরিমেন্ট----এইসব বিষয়ে আপনার ধারণা বা এই পোস্টের পাঠকের ধারণা যদি পরিষ্কার না থাকে তবে আমার এই পোস্ট নীৎশের রচনার মতন দুর্বোধ্য মনে হবে। অবশ্য দোষ কারো নয়। আমার হাতে সময় থাকে না। আমি খুব দ্রুত অনেকগুলো বিষয়কে পরিষ্কার না করে একসাথে তুলে আনি। কারো বেসিক ক্লিয়ার না থাকলে সেই দোষ আমার ঘাঁড়ে বর্তায় না।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৫৩

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আমি সিম্পলি বলতে চেয়েছি, সায়েন্সের কারণে ফিলোসফি এখনো অকেজো হয়ে যায়নি। অনেকে বলতে চান, বর্তমানে সায়েন্স এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে মানুষের জীবনে যে ফিলোসফির আর প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে ফিলোসফার এর সংজ্ঞা অনুযায়ী ফিলোসফার হলেন সেই ব্যক্তি যিনি জ্ঞানের প্রেমিক এবং যিনি প্রজ্ঞার সাহায্যে সিদ্বান্ত নেন। সায়েন্স বা আধুনিক বিজ্ঞানে প্রজ্ঞার সাহায্যে সিদ্বান্ত নেয়ার কোন ব্যাপার-স্যাপার নেই, এটি সম্পূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানির্ভর একটি পদ্ধতি। আমি আমার এই পোস্টে দেখাতে চেষ্টা করেছি যে, এই আধুনিক সায়েন্সের মধ্যেও একটি দার্শনিক সঙ্কট আছে যে কারণে দর্শনকে এখনো বিদায় জানানোর সময় আসেনি।

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৮

শেরজা তপন বলেছেন: আমার ধারনা আপনি প্রকৃতি বিজ্ঞান, দর্শন আর পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ভালই বোঝেন। আমি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর জীবনী ও তার গবেষনা নিয়ে টুকিটাকি লিখতে গিয়ে এই তিন বিষয়ে এসে লেজে-গোবরে পাকিয়ে ফেলছি। কিস্যু বুঝতে পারছি না- আপনি কি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারেন?

২৪ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৫৫

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আমি আসলে এখনো একজন অনুসন্ধিৎসু পাঠক। যতই পড়ি ততই মনে হয় কিছুই জানি না। চেষ্টা করি মূল বই পড়ে লেখককে বোঝার। তারপরও সিলেবাস বিশাল। বিশেষ করে দর্শনের কথাই ধরা যাক। আমার পক্ষে সম্ভব নয় শুধুমাত্র বার্ট্রান্ড রাসেলের সবগুলো বই পড়ে শেষ করা, কারণ এত বই তিনি লিখেছেন যে সবগুলো পড়া, এগুলো নিয়ে সময় দেয়া-- অসম্ভব কাজ। আবার কে ঠিক 'কি' বলতে চেয়েছেন, এটা ধরতে গিয়েও মুশকিলে পড়ি। যা হোক, আমাকে মেইল করতে পারেন যোগাযোগের জন্য। আমার ব্লগে লেফট সাইডে আমার মেইল দেয়া আছে। মেইল অ্যাড্রেস খুঁজে না পেলে জানায়েন। কমেন্টে দিয়ে দিবো।

৪| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:২৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এত কিছু বুঝার এখন মন মানসিকতা নাই । মানুষ মহামারী হতে বাঁচতে চায় তাই টিকার দরকার আর তা বিজ্ঞানই দিতে পারবে।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৩২

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: প্রয়োজনও নেই। এগুলি ছাড়াই বেশ দিনকাল কেটে যাবে যদি মহামারীতে সাবধানে বেঁচেবর্তে থাকতে পারেন। টিকা বিজ্ঞানই দিবে, তবে পেতে আরো সময় লাগবে।

৫| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫৬

শেরজা তপন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে- কথা হবে

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২৪

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ঠিক আছে। ভালো থাকুন।

৬| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: খুব কঠিন বিষয় নিয়ে লিখেছেন। অল্প কিছু বুঝতে পেরেছি।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০১

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আপনি পোস্টে প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেন এটাই যথেষ্ট। আর বোঝার ব্যাপারে...কি বলবো...। কিছু করার নেই, সায়েন্স আর ফিলোসফি এগুলো একটু কাট্টাখোট্টা, তবে এতে আমাদের কিছু আসে যাবে না। জীবন চলে যাবে জীবনের মতন।

৭| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:৪৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: খুব সম্ভবত আপনি আর আমি একই কথা বলতে চাচ্ছি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। দর্শন এবং বিজ্ঞানকে এক সাথে নিয়ে আলোচনা করলে, আমি বাবা এবং সন্তানের এনালজি প্রায়ই দিয়ে থাকি। তাতে আমার কাছে মনে হয় অনেকের জন্যেই বোঝা সহজ হয়। বাবা থেকেই যেমন সন্তান আসে, তেমনি আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মও মূলত দর্শন থেকেই, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমি যেটা বোঝাতে চেয়েছি ("নিরেট" উল্লেখ করে), বাবা আর সন্তানের মাঝে রক্তের সম্পর্ক থাকার পরেও তারা দু'জন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি যাদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে (শারীরিক, মানসকি, আচরণগত ইত্যাদি)। ঠিক একইভাবে দর্শন এবং বিজ্ঞানের মাঝে গভীর সম্পর্ক থাকার পরেও তাদের মাঝে মৌলিক মতাদর্শে কিছু তীব্র বিরোধ আছে। সময়ের সাথে সাথে সে বিরোধীতা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। নিউটনের বইয়ের নামের ব্যাপারে আমি অবগত আছি। লিখার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২৩

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: দুঃখিত আপনাকে আগে বাড়িয়ে জ্ঞান দেয়ার জন্য। তবে আমার লেখার মূলপয়েন্ট সম্পর্কে আপনার অভিমত দিলে বাধিত হতাম। ইদানিং একটা কথা উঠেছে, সেটা হলো নীৎশের ঈশ্বরের মতন দর্শনের মৃত্যু ঘটে গেছে । অনেকেই বলছেন, বিজ্ঞান এখন এতটাই স্বাধীন যে পদার্থবিজ্ঞানের আর দর্শনের মুখাপেক্ষী হবার প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা আবিষ্কার হবার পরে এমনটাই মনে করেন অনেকে। আর হকিং তার 'ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম' বইয়ে এই ট্রেন্ডটা নিয়ে অল্প দু'কয়েক কথায় 'ফিলোসফি ইজ ডেড' বলাতে একেকজন একেক বক্তব্য রাখছেন। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। আমি আমার বক্তব্যে বলতে চেয়েছি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যেই এক ধরনের দার্শনিক স্ববিরোধ লুকিয়ে আছে। বিশেষ করে 'সময়'-কে যখন আমরা আর পরম আর শ্বাসত কিছু না বলে এটাকেও একটা পরিবর্তনশীল রাশি হিসাবে বাস্তবতার অংশ হিসেবে গণ্য করি তখনই এই স্ববিরোধটা দেখা দেয়।

৮| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:

আপন বলেছেন, "অনেকে বলতে চান, বর্তমানে সায়েন্স এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে মানুষের জীবনে যে ফিলোসফির আর প্রয়োজন নেই। "

-কে কে আপনাকে বলছে?

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী প্রতিমন্তব্যে আসার :জন্য। আমি আসলে উদাসী স্বপ্নের অনেকগুলো পোস্ট পড়ে দেখলাম তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ব্যাপক দখল রাখেন। বাট দর্শন প্রসঙ্গ আসলেই উনি বলেন, এইটা একটা পিস অব শিট। তার একটা পোস্টই আছে এ নামে যে, "দর্শন - আ পিস অব শিট"। উদাসী স্বপ্নের বক্তব্য অনুযায়ী, কোয়ান্টাম মেকানিক্স আবিষ্কার হবার পর থেকে সায়েন্সের আর দর্শনের কোন প্রয়োজন নেই। তার মতে, বিজ্ঞান এখন দার্শনিকদের ছাড়াই স্বাধীনভাবে চলতে পারে। উনার সাথে এ ব্যাপারে আমার কনফ্লিক্ট লেগেছিলো এবং আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আমার যৌক্তিক বক্তব্যের মাধ্যমে উনাকে আমি প্রত্ত্যুত্তর দেবো, নিজের বক্তব্য গোছাতে আমার সময় লেগে গিয়েছে।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৪৯

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: দর্শন : এ পিস অব শিট - এই যে লিঙ্ক দিলাম আপনাকে। এই লিঙ্কই আমার পোস্টের শানে নযুল।

৯| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

সত্যপীরবাবা বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। তবে শেষের দিকে তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছেন বলে, কারো কারো কাছে অসংলগ্ন মনে হতে পারে। যদি সম্ভব হয়, শেষের ৪/৫ টি প্যারা নতুন করে লিখুন।

আপনার একটি প্রতিমন্তব্যের বিষয়ে খানিক দ্বিমত। এক প্রতিমন্তব্যে বলেছেন "সায়েন্স বা আধুনিক বিজ্ঞানে প্রজ্ঞার সাহায্যে সিদ্বান্ত নেয়ার কোন ব্যাপার-স্যাপার নেই, এটি সম্পূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানির্ভর একটি পদ্ধতি।" -- বিজ্ঞানের অনেক সূত্রর সূত্রপাতই প্রজ্ঞার মাধ্যমে --- সরাসরি কোনো পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ ছাড়াই শুধুমাত্র প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করেই সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সরাসরি পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণের উপায় ছিল না বা নেই।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৪১

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ঠিকই ধরেছেন। শেষের প্যারাগুলোতে আরো গুছিয়ে প্রকাশ করা যেতো। আমার হাতে সময় এলেই আরো গোছানো প্রকাশ হবে। বিশেষ করে আমি ট্রেন্ডিং একটা অসমাপ্ত বিতর্কের সমাপ্তি ঘটাতে চেষ্টা করছি। বিজ্ঞানের কোন সূত্রই প্রজ্ঞার সাহায্যে হয়নি। যদি হয়েও থাকে, যেমন ধরুন : ডেমোক্রিটাসের অ্যাটম থিওরি-- যেটা অনুযায়ী অ্যাটমকে আর ভাঙ্গা যায় না--- এই তত্ত্বটি বর্তমানে বিজ্ঞানে অচল কারণ ডেমোক্রিটাস যখন তার অ্যাটমিক থিওরিতে বলছেন অ্যাটমকে আর ভাঙ্গা যায় না তখন এটি আর বৈজ্ঞানিক থিওরি থাকেনি, এটি অনেকটা আপনার কথিত প্রজ্ঞার সাহায্যে বর্ণিত একটা ফিলোসফি হয়ে গেছে, তাই এটি পরিত্যক্ত, পরিত্যাজ্য। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা প্রজ্ঞার সাহায্যে বৈজ্ঞানিক থিওরি দেন না। বিজ্ঞানে প্রজ্ঞার কোন স্থান নেই। নিউটন, গ্যালিলিও, কোপার্নিকাস, আইনস্টাইন-- কেউই প্রজ্ঞার সাহায্যে কোন হাইপোথিসিস প্রণয়ন করেননি। তারা হয় প্রকৃতি বা ন্যাচারকে পর্যবেক্ষণ করেছেন কিংবা তাদের পূর্ববর্তীদের বিভিন্ন ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্টের রেজাল্টের উপর বেইজ করে নতুন তত্ত্ব পেশ করেছেন থট এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে।

১০| ২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আন্তরিক ধন্যবাদ।

২৪ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৪

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ঠিক আছে। আপনার আন্তরিকতার স্পর্শ পেয়ে আমি বাধিত। আপনার পোস্টগুলা পড়ি, তবে মন্তব্য করা হয়ে ওঠে না।

১১| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৩:৪০

সত্যপীরবাবা বলেছেন: @লেখক, ক্ষীণ সন্দেহ হচ্ছে যে আপনি প্রজ্ঞা যে অর্থে ব্যবহার করছেন, আমি সেই অর্থে ব্যবহার করছি না। প্রজ্ঞার অর্থ আমার কাছে -- উপলব্ধি-জাত জ্ঞান। সরাসরি উদাহরন দেই --- আলোর গতি ধ্রুব, এই বেগ পর্যবেক্ষকের অবস্থার উপর নির্ভর করে না। সময় এবং দৈর্ঘের নিত্যতার প্রচলিত ধারনাকে ভেঙে এই যুগান্তকারী অনুকল্প আইনস্টাইন তাঁর প্রজ্ঞার মাধ্যমেই স্হির করেছিলেন, কোনো পরিক্ষার মাধ্যমে নয়। আপনি যদি মাইকেলসন-মর্লি পরিক্ষার কথা বলেন, সেটা ছিল ইথারের সাপেক্ষে পৃথিবির গতিবেগ বের করার চেষ্টা -- কোনো ভাবেই আলোর গতিবেগ ধ্রুব কিনা তার পরিক্ষা না।

থট এক্সপেরিমেন্টে 'experiment' শব্দ থাকলেও এটা কোনোভাবেই কোনো physical experiment না --- ঘুরে ফিরে সেই প্রজ্ঞা ব্যবহার করেই চিন্তা-ভাবনা।

ভালো থাকুন, আরো লিখুন। আমার নিজে লেখার সামর্থ্য নাই -- আপনারা লিখলে কমেন্ট করে নিজের উপলব্ধি-জাত জ্ঞান যাচাই এর সুযোগ পাই।

২৫ শে জুলাই, ২০২০ ভোর ৪:২৭

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: হুম...আমারও সন্দেহ হচ্ছিলো 'প্রজ্ঞা' নিয়ে আপনি যে অর্থে মিন করেছেন ঐ অর্থে আমি বুঝিনি। ব্যাপারটা আলাদা বিবেচনার দাবি রাখে। পরে সময় করে রিকমেন্ট করছি। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন।

২৬ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৩৫

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। মাইকেলসন-মর্লির যে পরীক্ষা ছিলো সেটা ইথারের সাপেক্ষে পৃথিবীর গতিবেগ বের করার 'চেষ্টা' ছিলো-- এইটা আপনাকে কে বলেছে বা কোথায় আপনি এ তথ্য পেলেন পরিষ্কার নয়। আলোর মিডিয়াম হিসেবে বিজ্ঞানীরা ইথার নামক একটি ক্ষেত্রের কল্পনা করেছিলেন যেটা পুরো মহাবিশ্বে সর্বত্র অস্তিত্বমান, এবং মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষা ছিলো ইথারের অস্তিত্ব প্রুভ করার একটি পরীক্ষা। তাদের পরীক্ষার রেজাল্টের সাহায্য নিয়ে পরবর্তীকালে নিউটনিয়ান অ্যাবসুলুট টাইমের কনসেপশনকে ভেঙ্গে দিয়ে আইনস্টাইন সিদ্বান্ত টেনেছিলেন যে, যেকোন বেগে গতিশীল পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে আলোর গতিবেগ ধ্রুব থাকবে যেহেতু টাইমের সংকোচন-প্রসারণ হচ্ছে পর্যবেক্ষকের গতিবেগ কমা-বাড়ার সাথে। আপনি আরেকবার ব্যাপারটা একটু চেক করে দেখবেন সময় হলে। ভালো থাকুন।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ ভোর ৪:৩১

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আপনি লিখেছেন যে, "সময় এবং দৈর্ঘ্যের নিত্যতার প্রচলিত ধারনাকে ভেঙে এই যুগান্তকারী অনুকল্প আইনস্টাইন তাঁর প্রজ্ঞার মাধ্যমেই স্হির করেছিলেন, কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে নয়।" বক্তব্যটি সঠিক নয়। আইনস্টাইন ঠিক কিভাবে সময়, দৈর্ঘ্য এবং ভরের নিত্যতার প্রচলিত ধারণা ভাঙ্গার আইডিয়া পেয়েছিলেন এ বিষয়ে একটি বই আছে [Einstein: His Life and Universe] যে বই অনুসারে 'জিনিয়াস' নামে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি সিরিজ তৈরি করেছে যে সিরিজে (সম্ভবত ৩ বা ৪ নম্বর এপিসোডে) দেখানো হয়েছে আইনস্টাইন কিভাবে এই ধারণা পেয়েছিলেন। তিনি তার আইডিয়াগুলো অনেকটা উপলব্ধি থেকেই পেয়েছিলেন এটা ঠিক, বাট তার উপলব্ধিগুলো প্রকৃতিবিজ্ঞানের বেঁধে-দেওয়া কাট্টাখোট্টা সূত্রনির্ভর উপলব্ধি। তিনি এগুলো ঠিক দার্শনিকদের 'প্রজ্ঞা'-র সেন্স থেকে পাননি। এ বিষয়ে যদি চান তবে আরো কথা বলা যেতে পারে পরবর্তীতে।

১২| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ ভোর ৬:৫৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: একজন দার্শনিক শুধু প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়েই চিন্তা করেন না। তিনি সমাজ, বিশ্ব রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি নিয়েও কাজ করেন ( যে সব বিষয় নিয়ে বিজ্ঞান সরাসরি কাজ করে না)। পক্ষান্তরে বিজ্ঞান এসব নিয়ে কাজ করে না। এসব নিয়ে কাজ করার জন্য দার্শনিকের প্রয়োজন সব সময়েই থাকবে। আগে দার্শনিকের দ্বৈত ভূমিকা ছিল। এসব বিষয় আসলে বিজ্ঞানের আওতার বাইরে ( যেমন ধর্ম, ইতিহাস, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সাহিত্য ইত্যাদি) কিন্তু দার্শনিকরা এটা নিয়ে কাজ করেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে বিজ্ঞানের যেমন গণ্ডি আছে তেমনি দর্শনেরও গণ্ডি আছে। কারণ এই যুগে দার্শনিকদের প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না। কারণ সেটা নিয়ে বিশদভাবে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা। অনেক আগে যেহেতু প্রকৃতির জ্ঞান কিংবা রাজনীতি সবই আজকের তুলনায় সরল ছিল তাই দার্শনিকরা সব বিষয় নিয়েই কথা বলতেন। কিন্তু এখন বিজ্ঞানেরও হাজার শাখা হয়েছে। তাই পদার্থ বিজ্ঞানী জীব বিজ্ঞান নিয়ে বলেন না। তাই বিজ্ঞান যেহেতু সব বিষয়ের উপর কাজ করে না তাই বাকি বিষয় গুলির জন্য দার্শনিকের প্রয়োজন আছে। বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কার অমানবিক ( উদাহরণ; অ্যাটম বোমা) কিন্তু দর্শন অমানবিক কোনও বিষয় অনুমোদন করে না। দর্শনের উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ। বিজ্ঞানের এরকম কোনও বাদ্ধবাধকতা নাই। একজন বিজ্ঞানী মানবিক গুন না থাকলেও সে বিজ্ঞানী হতে পারেন। কিন্তু একজন দার্শনিক কে অবশ্যই মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতে হবে। বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে বিবেক নেই কিন্তু দর্শন বিবেকহীন কাজকে প্রশ্রয় দেয় না। বিজ্ঞানের গভিরে না যেয়েও একজন দার্শনিক বিজ্ঞানের ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। কাজেই দর্শন এবং বিজ্ঞান দুইটারই প্রয়োজন আছে।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩১

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: পোস্ট দিতে হবে আপনার মন্তব্যের রিকমেন্ট করতে গেলে। আপাতত একটু বিরতি।

১৩| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১১

আহমেদ জী এস বলেছেন: বিপ্লব০০৭,





ভালো লেখা কিন্তু স্ববিরোধিতাও আছে খানিকটা । একদিকে যেমন এই কথা বিশ্বাস করে লিখেছেন যে "ওহী মানেই নিশ্চয়তা যেহেতু তা খোদার নির্দেশ, এর উপর কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না। ওহী মানেই অ্যাবসুলুট নিশ্চয়তা। " সাথে এই মতামতও রেখেছেন যে খোদা ওহী নাজেল করে “ সত্য” পাঠান। অন্যদিকে বিজ্ঞানকে নিয়েও আলোচনা করেছেন। "ওহী" যখন আছে তখন বিজ্ঞানকে তো তার সত্যাসত্য -পর্যবেক্ষন, পরীক্ষন, বিশ্লেষণ করতেই হয়। ওহী সত্য না মিথ্যে নিয়ে আসে তা তো যাচাই করতেই হয়। অনিশ্চয়তা যেখানে আছে সেখানে তো অনেক অনেক ভাবনার উদয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই যেমন এই করোনাকালিন ঈদে বাড়ী যাওয়া নিয়ে অনেকেরই অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেই অনিশ্চয়তা থেকেই তারা অনেক ভাবনা চিন্তা করে, বুদ্ধি বা জ্ঞান খাঁটিয়ে একটি না একটি পথও বের করে ফেলবেন।
বিজ্ঞানীরা কিন্তু নির্দিষ্ট রুলড ওয়েতে জীবন 'যাপন' করার ভয়ে বিদ্রোহ করেন না । করেন “সত্য” টি জানার জন্যে।

চাঁদগাজীকে দেয়া প্রতিমন্তব্যে বলেছেন "সায়েন্স বা আধুনিক বিজ্ঞানে প্রজ্ঞার সাহায্যে সিদ্বান্ত নেয়ার কোন ব্যাপার-স্যাপার নেই, এটি সম্পূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানির্ভর একটি পদ্ধতি।" কিন্তু নিউটন মহাশয় তো মাটিতে আপেল পড়ার ঘটনা থেকেই তার প্রজ্ঞা বা বুদ্ধিমত্তা দিয়েই মধ্যাকর্ষনের সূত্র আবিষ্কার করেছেন। আর্কিমিডিসের সূত্রও কিন্তু সে রকম প্রজ্ঞাময় ভাবনা থেকে আসা ও সেই প্রজ্ঞার সম্প্রসারণ।

সত্যপীরবাবা ঠিকই বলেছেন, “ বিজ্ঞানের অনেক সূত্রর সূত্রপাতই প্রজ্ঞার মাধ্যমে”। নিউটনের আপেলের ঘটনা, আর্কিমিডিসের পানিতে নামার ঘটনাও তাই।

সাড়ে চুয়াত্তর এর এই বাস্তব কথার সাথে একমত যে -“একজন দার্শনিক শুধু প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়েই চিন্তা করেন না। তিনি সমাজ, বিশ্ব রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি নিয়েও কাজ করেন ( যে সব বিষয় নিয়ে বিজ্ঞান সরাসরি কাজ করে না)। পক্ষান্তরে বিজ্ঞান এসব নিয়ে কাজ করে না। এসব নিয়ে কাজ করার জন্য দার্শনিকের প্রয়োজন সব সময়েই থাকবে।“

ইফতেখার ভূইয়া যা বলেছেন তাও ঠিক - “বাবা থেকেই যেমন সন্তান আসে, তেমনি আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মও মূলত দর্শন থেকেই, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। ......... বাবা আর সন্তানের মাঝে রক্তের সম্পর্ক থাকার পরেও তারা দু'জন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি যাদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে (শারীরিক, মানসকি, আচরণগত ইত্যাদি)। ঠিক একইভাবে দর্শন এবং বিজ্ঞানের মাঝে গভীর সম্পর্ক থাকার পরেও তাদের মাঝে মৌলিক মতাদর্শে কিছু তীব্র বিরোধ আছে।“

আমার মনে হয় 'বিজ্ঞান' বা সায়েন্সের মধ্যে 'দার্শনিক' সঙ্কট কিছু নেই , সংকট উভয়ের ভেতরেই আছে তাদের তাদের নিজস্বতায় । বিজ্ঞানের আছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর সংকট, তেমনি দর্শনের আছে সমাজ, বিশ্ব রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম নিয়ে সংকট। আসলে কোনও কিছুই “পরম” বা এ্যাবসোলিউট নয় , শ্রোয়েডিঙ্গারের বেড়ালের মতো -আছে অথবা নেই; ঘটেছে অথবা ঘটেনি।

মন্তব্য - প্রতিমন্তব্য বেশ জমে উঠেছে এবং প্রজ্ঞার দেখাও মিলছে।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৭

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ১। একদিকে যেমন এই কথা বিশ্বাস করে লিখেছেন যে "ওহী মানেই নিশ্চয়তা যেহেতু তা খোদার নির্দেশ, এর উপর কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না। ওহী মানেই অ্যাবসুলুট নিশ্চয়তা। "

আপনাকে একটি প্রশ্ন করি। আরবে যখন সূর্যগ্রহণ হচ্ছে তখন আরবে খোদার (আল্লাহ) প্রেরিত নবী সবাইকে বলছেন, নামায আদায় করে ফেলতে, দোয়া-দরুদ পড়তে। এবং আমরা জানি তিনি তার পক্ষে যথেষ্ট সাপোর্টও পেয়েছেন। ওদিকে একই ঘটনা যখন গ্রীসে ঘটছে তখন সেখানকার মানুষজন কেন প্রবল অনিশ্চয়তায় ভুগছে, কেন তারা প্রকৃতির কাজ-কারবারে বিস্মিত, প্রকৃতির কাজ-কারবারে তাদের ঔৎসুক মনে কেন এই প্রশ্ন- যে হচ্ছেটা কি আসলে, গ্রহণের ব্যাখ্যাটা কি? গ্রীকরা কেন প্রকৃতির কাজ-কারবারে চিন্তামগ্ন হয়ে জন্ম দিল পাশ্চাত্য দর্শনের? কারণ দেখুন গ্রীসে প্রকৃতির কাজ-কারবার এক অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছিলো। গ্রীকরা বুঝেছিলো প্রকৃতি তাদের বোধগম্য নয়, তাদের এই অনিশ্চয়তাই দর্শনের জন্ম দিলো যে দর্শন আমরা আরবে পাচ্ছি না। কারণ আরবে সকল দর্শনের, সকল অনিশ্চয়তার সমাধান দিচ্ছে ওহী যা গ্রীসে ছিলো না অর্থাৎ গ্রীসে আমরা কোন প্রফেটকে পাচ্ছি না। ফলে আরবের তৎকালীন বাস্তবতায় ওহী মানেই আমি দেখতে পাচ্ছি এক ধরনের অ্যাবসুলট আদেশ বা নিশ্চয়তা যার উপর কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারছে না। সেইম ঘটনার নিদান হিসেবে নবী দিচ্ছেন ওহী, আর গ্রীকরা সূচনা করেছে পাশ্চাত্য দর্শনের বা প্রকৃতিবিজ্ঞানের।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:০৭

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ২। "ওহী" যখন আছে তখন বিজ্ঞানকে তো তার সত্যাসত্য -পর্যবেক্ষন, পরীক্ষন, বিশ্লেষণ করতেই হয়। ওহী সত্য না মিথ্যে নিয়ে আসে তা তো যাচাই করতেই হয়। অনিশ্চয়তা যেখানে আছে সেখানে তো অনেক অনেক ভাবনার উদয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এ ব্যাপারে পরে আলোচনা চালাতে হবে।

৩। বিজ্ঞানীরা যদি (মনোথেয়িস্টিক) ধর্মের আদেশ মেনে চলেন তবে আমি মনে করি তার জীবনে দর্শনের বা প্রকৃতিবিজ্ঞানের কোন প্রয়োজন নেই। আমি বুঝি না বর্তমানে একজন সৎ প্রকৃতিবিজ্ঞানী কিভাবে মনোথেয়িস্টিক কোন একটি ধর্মকে নিজের জীবনে মোকাবিলা করবেন?

৪। নিউটন-আর্কিমিডিসের সূত্রগুলো বলা চলে 'প্রজ্ঞা' থেকেই এসেছে, যে 'প্রজ্ঞা' দর্শনের অন্তর্ভুক্ত 'প্রজ্ঞা' বলতে যা বুঝি সেই প্রজ্ঞাই। কারণ আদিতে নিউটনও একজন ফিলোসফার ছিলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃতির ফিলোসফার যিনি প্রকৃতির নিয়ম-কানুনকে গণিতের ভাষায় সুসংবদ্ধ করেছেন। কিন্তু দর্শন যতই বিকশিত হয়ে নানান শাখা-প্রশাখা ছড়াতে লাগলো, এবং প্রকৃতিবিজ্ঞান নামে দর্শনের একটি শাখা অ্যালজেবরা, ম্যাথ এবং জিওমেট্রির সাহায্য নিয়ে প্রকৃতির নিয়মগুলোকে সুস্পষ্ট থেকে সুস্পষ্টতর করতে শুরু করলো প্রকৃতিবিজ্ঞান নাম নিয়ে, ততই দেখা গেলো 'প্রজ্ঞা' আর আগের সেন্সে সায়েন্সে ব্যবহৃত হচ্ছে না। উদাহরণ দেই। আপনি 'ইথার'- এর আইডিয়াকে প্রকৃতিবিজ্ঞানের 'প্রজ্ঞা' বলতেই পারেন, কিন্তু আইনস্টাইনের থট এক্সপেরিমেন্টগুলো কোনভাবেই ঠিক দর্শনের 'প্রজ্ঞা'-জাত কোন কিছু নয় যেমনটি এর আগে সত্যপীরবাবা দাবি করেছেন। আমি আইনস্টাইনের উপর ন্যাট জিওর একটি সিরিজে এ বিষয়ে কিছু তথ্য পেলাম। আইনস্টাইন যে কাজটি করেছেন সেটি হল পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের রেজাল্ট এবং

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:২৫

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ন্যাচারের বিভিন্ন প্লেসে নিজেকে বিভিন্নভাবে ইমাজিন করে (যেমন, তিনি যদি একটি ফোটন কণিকা হতেন তবে টাইমকে তার 'ফোটনীয়' অস্তিত্ব থেকে কিভাবে স্পেসিফাই করতেন, স্পেসের মধ্য দিয়ে তিনি আলোর গতিতে ছুটলে কি দেখতে পেতেন চারপাশে তাকিয়ে) এই ধরনের যৌক্তিক ইমাজিনেশনের সাহায্য নিয়ে তার তত্ত্বগুলো পেশ করেছেন। তিনি ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টকে কিংবা সময়, ভর, দৈর্ঘ্যের আপেক্ষিকতার আইডিয়া যেভাবে এক্সপ্লেইন করেছেন তা সম্পূর্ণই তার স্টাডি, পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের রেজাল্ট, আর থট এক্সপেইমেন্ট চালিয়ে করেছেন। এটাকে কোনভাবেই পিউর দর্শনের প্রজ্ঞা বলা চলে না। আমি দর্শনের প্রজ্ঞার যে বিশুদ্ধ সংজ্ঞা সেটা বলতে বুঝি আপনি আপনার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সেটা বাস্তবতায় অ্যাপ্লাই করছেন। যেমন আমি আমার জ্ঞান থেকে বুঝি 'নাস্তিকতাই সঠিক কিংবা সংশয়বাদী একজন ধার্মিক অপেক্ষা অধিক সঠিক', কিন্তু আমার প্রজ্ঞা আমাকে বলে যে নাস্তিকতা বা সংশয়বাদের প্রচার না করে চুপ থাকতে। এইটা আমার দার্শনিক প্রজ্ঞা। আধুনিক বিজ্ঞানীরা ঠিক এই প্রক্রিয়ায় কাজ করেন না। তারা যৌক্তিক এবং কাট্টাখোট্টা লজিক্যাল পথে তাদের তত্ত্ব পেশ করেন। এখানে দর্শনের 'প্রজ্ঞা'র কোন স্থান নেই। আমি আপনার সাথে এ ব্যাপারে একমত হতে পারি যে নিউটন যখন দেখলেন, আপেলটি মাটিতে পড়েছে আকাশে না 'পড়ে', তখন তার প্রজ্ঞাই তাকে বলেছিলো যে কোন একপ্রকার শক্তি একে মাটির দিকে টানছে। কিন্তু তারপরও কি বলা যায় না যে, এটাতো একটা লজিক্যাল ডিডাকশনই, এখানে নিউটনের এই রিয়েলাইজেশনকে প্রজ্ঞা নাম দেবার কোন দরকার আছে?

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৬

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ৫। সাড়ে চুয়াত্তর এর এই বাস্তব কথার সাথে একমত যে -“একজন দার্শনিক শুধু প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়েই চিন্তা করেন না। তিনি সমাজ, বিশ্ব রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি নিয়েও কাজ করেন ( যে সব বিষয় নিয়ে বিজ্ঞান সরাসরি কাজ করে না)। পক্ষান্তরে বিজ্ঞান এসব নিয়ে কাজ করে না। এসব নিয়ে কাজ করার জন্য দার্শনিকের প্রয়োজন সব সময়েই থাকবে।“

সাড়ে চুয়াত্তরের এই কথার বিপরীতে আমার বলার কিছু নেই। এগুলো আমারও কথা। তবে আমি আরেকটু সামনে এগিয়েছি। ক্লোনিং নিয়ে একসময় সারাবিশ্বে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিলো ডলি নামের একটি ভেড়াকে নিয়ে। সে সময় একটি দার্শনিক প্রশ্ন উঠেছিলো, যে 'মানব-ক্লোনিং' করা কি 'উচিৎ' নাকি উচিৎ নয়? খেয়াল করেন, বিজ্ঞানে উচিৎ-অনুচিৎ অর্থাৎ এথিক্সের কোন বালাই নেই। মানবক্লোনিং প্রক্রিয়াটি বের করাতে বিজ্ঞানের কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু দর্শন কিংবা আমাদের প্রজ্ঞা অনুভব করে, টের পায় যে কোথাও একটা সমস্যা আছে। আমি কি চাইবো আমার অবিকল একটি ক্লোন তৈরি করা হোক যার অতীত ইতিহাস এবং সবকিছু ঠিক আমারই মতন হবে? এ প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান দেয় না। বিজ্ঞান শুধুই নির্বিচারে কাজ করে যায়। এই ধরনের সঙ্কটগুলোতে আমাদের পথ দেখাতে পারে একমাত্র দর্শন বা দার্শনিকের প্রজ্ঞা। কিন্তু হকিং যখন বলেন, ফিলোসফি ইজ ডেড তখন তিনিও নিশ্চয় কিছু একটা মিন করেছেন। আমি আমার এই পোস্টে ঠিক সেই পয়েন্টেই কথা বলেছি। হকিংরা (সম্ভবত) বলতে চান যে, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিস্কারের পরে দর্শনের আর কোন প্রয়োজন নেই, দর্শনের সমস্ত সমস্যার সমাধান এখন বিজ্ঞানই আরো সঠিকভাবে আরো সুস্পষ্টভাবে দিতে পারে। এ অর্থে হকিং বা হকিং-মনোভাবসম্পন্ন অন্যান্যদের কাছে ফিলোসফি ইজ ডেড। এজন্য আমাকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সৌধের উপর দর্শনের মৃতদেহ আবার রেসারেক্ট করতে হয়েছে।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৭

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: ৬। ফিলোসফি ইজ ডেড। কিভাবে? কারণ কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী আমার পক্ষে কখনোই ১০০% অ্যাকুরেইট প্রেডিকশন করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এখানে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকবে। অনিশ্চয়তা যেখানে আছে সেখানে দর্শন এসে সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সমাধান দেওয়ার কথা। কিন্তু গ্রীকদের থেকে আরম্ভ হয়ে নিউটন হয়ে দর্শন প্রকৃতিবিজ্ঞান নাম নিয়ে এতদিন প্রচুর সমস্যার সমাধান দিলেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সে এসে দর্শন আর কাজ করতে পারলো না। এখানে আমাদের পথ দেখায় গণিত যা প্রব্যাবিলিটি নিয়ে কাজ করে কোন একটি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা হিসেব-নিকেশ করে বের করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ দর্শন যখন ব্যর্থ কোয়ান্টাম মেকানিক্স এসে তখন উদ্ধার করতে এগিয়ে এলো গণিত। তাই আধুনিক প্রকৃতিবিজ্ঞান বিশেষ করে পদার্থবিদ্যায় আর দর্শনের কোন প্রয়োজন নেই, ফিলোসফি ইজ দাজ ডেড (রাজনীতি, ইকোনমিকস, ধর্ম-- এগুলোর জন্য ফিলোসফি টিকে থাকবে এটা মানছি), বাট কোয়ান্টাম মেকানিক্স গণিত দিয়ে ফিলোসফিকে কষে চপেটাঘাত করে তার মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দিলো। এজন্যই আমাকে এত কথা বলতে হচ্ছে।

১৪| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৫৯

সত্যপীরবাবা বলেছেন: @লেখক,
বিষয় বহির্ভূত জিজ্ঞাসা: কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি "কিভাবে এবং কেন" এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়?

৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৩১

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: কোয়ান্টাম মেকানিক্স 'কিভাবে' এবং 'কেন' -এর চেয়ে বরং 'কোথায়'-- এই প্রশ্নের একটা উত্তর দেয়। ক্লাসিকাল ফিজিক্স অনুযায়ী কোন অবজেক্টের (বিশেষ করে সেলেস্টিয়াল বডি বা অবজেক্টগুলো) যেকোন একটি মূহুর্তে এর বিভিন্ন প্যারামিটারগুলো জানা থাকলে যেমন ধরেন, আদিবেগ, ত্বরণ, থ্রি ডাইমেনশনাল স্পেসের মধ্যে অবজেক্টটির অবস্থানের কো-অর্ডিনেট --- এসব জানা থাকলে আমরা প্রেডিক্ট করতে পারতাম একটা নির্দিষ্ট সময় পরে এই অবজেক্ট বা বডিটিকে কোথায় দেখা দিবে (এভাবেই চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণের প্রেডিকশন করা হয়)। এটাই ম্যাক্রোওয়ার্ল্ডের ডিটারনিমিস্টিক বাস্তবতা। কিভাবের উত্তর তখন নিউটন দিয়েছিলেন ম্যাথমেটিক্যাল সূত্র দিয়ে (ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা), আর কেন-র উত্তর দিয়েছিলেন মহাকর্ষের ধারণা আমদানি করে। তখন স্পেস এবং টাইম ছিলো অ্যাবসোলুট। আইনস্টাইন পরে এই 'কেন'-র উত্তর আরো দুর্দান্তভাবে দিয়েছিলেন স্পেস-টাইম নামক ফোর-ডাইমেনশনাল রিয়েলিটি দিয়ে যেখানে টাইম আর অ্যাবসোলুট কিছু নয়, বরং এটি পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভরশীল (প্রকৃতিবিজ্ঞান পর্যবেক্ষক ছাড়া অচল)। আইনস্টাইনের তত্ত্বে স্পেস-টাইমের মধ্যে ভারী অবজেক্ট (সূর্য) স্পেস-টাইমকে অবজেক্টির চারপাশকে বাঁকিয়ে দেয়, ফলে তুলনামূলকভাবে কম ভরের অবজেক্টগুলো (গ্রহ) এই বক্র স্পেস-টাইমের কার্ভেচারের মধ্যে পড়ে গিয়ে ঘুরতে থাকে।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স মূলত পদার্থের ক্ষুদ্রতর স্তরে পদার্থটি যে পার্টিকেলগুলো দ্বারা গঠিত সেগুলোর আচরণ ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোয়ান্টামে মেকানিক্সে কেন কিংবা কিভাবে থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল কোথায়। লক্ষ্য করুন নিউটনিয়ান ডিটারমিনিস্টিক সায়েন্স বা প্রকৃতির ফিলোসফি থেকে আমরা নিশ্চিত ছিলাম অবজেক্ট বা বডিটিকে কোথায় দেখতে পাওয়া যাবে, বাট সেইম অবজেক্টটিতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্টিকেল দ্বারাই গঠিত। অথচ এই ক্ষুদ্র পার্টিকেলগুলো আচরণ (মাইক্রোওয়ার্ল্ড) আমরা অ্যাকুরেইটলি প্রেডিক্ট করতে পারছি না, আমরা বলতে পারছি না যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন একটি পার্টিকেলের আদিবেগ বা অবস্থান জানা থাকলে ভবিষ্যতের কোন একটি সময়ে এই কণাটির অবস্থান কোথায় হতে পারে, কারণ কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী আপনি কখনোই একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন একটি পা্টিকেলের অবস্থান এবং বেগ (ভরবেগ) ১০০% নিশ্চয়তা নিয়ে মাপতে পারবেন না (এটা ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ দ্বারা প্রমাণিত আনসার্টেনিটি প্রিন্সিপল নামে)। আপনি সর্বোচ্চ যেটা পারবেন গণিতের প্রব্যাবিলিটি দিয়ে এটিকে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে কোথায় পাওয়া যেতে পারে তার একটা সম্ভাবনা প্রেডিক্ট করতে পারবেন।

১৫| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০৭

সত্যপীরবাবা বলেছেন: @লেখক,
পুরোনো একটি বিষয় উল্লেখ করছি, যদিও আপনার উৎসাহ এই বিষয়ে এখনও আছে কিনা জানি না -- সেটা হল Michelson-Morley Experiment এর উদ্দেশ্য। ইথারের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব প্রমান তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না, তাঁরা ইথারের অস্তিত্ব আছে ধরে নিয়েই তাঁদের পরীক্ষা শুরু করেছিলেন --- পরীক্ষার আপাত ব্যর্থতা বা হতবুদ্ধিকর ফলাফল থেকেই অন্য বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছিলেন ইথারের অনস্তিত্ব সম্পর্কে। নিচের লিংকে বিস্তারিত পাবেন (Michelson এবং Morley এর লেখা American Journal of Science এ প্রকাশিত )
On the Relative Motion of the Earth and the Luminiferous Either

https://history.aip.org/exhibits/gap/PDF/michelson.pdf

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.