![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাহাড়, ঘাস, ফুল, নদী খুব প্রিয়। পেশা সাংবাদিকতা। লিখতে ও পড়তে ভালবাসি। টোটেম গৌতম বুদ্ধ। [email protected] *কপিরাইট ©: লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
[সিরাজ সিকদারকে নিয়ে এ পর্যন্ত কম লেখা হয়নি। বেশীরভাগ লেখাই মনে হয়েছে, কোনো দলীয় স্বার্থ পূরণের জন্য। আবার ব্যক্তি সিরাজের জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে অনেকে তার বিপ্লবীত্বকে খাটো করেছেন। তারা আসলে তার আত্নত্যাগকেই কটাক্ষ করেছেন। প্রচলিত এই সব দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে বলে ধারাবাহিকের শিরোনামে 'অন্য আলোয় দেখা' কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। আর এটি মোটেই সিরাজ সিকদারের সংক্ষিপ্ত জীবনী বা তার কর্মকাণ্ডের সামগ্রীক মূল্যায়ন নয়। বরং এটি ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে নির্মোহভাবে এই শহীদ দেশপ্রেমিক বিপ্লবীকে দেখার একটি ছোট্ট প্রয়াস।]
প্রথম পর্ব
আবার পাইপ গান এতো বেশী গরম হয়ে আসে যে/ ক্রমশ এর ব্যবহার কমে আসছে...সুবিমল মিশ্র।
নকশালী মূল্যায়ন: আই অ্যাম দা পার্টি!
১৯৬৬ সালের চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের একটি বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে দুই বাংলায়। 'গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও' মাওসেতুং এর এই দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা যুদ্ধ, তথা সশস্ত্র কৃষক বিপ্লবের রনোনীতি গ্রহণ করে যুদ্ধপূর্ব সময়ের বামপন্থী দলগুলোর একাংশ। সাধারণভাবে এসব বামদলগুলো পিকিংপন্থী (পরে নকশাল) হিসেবে চিহ্নিত হয়। এরই একটি পূর্ব বাংলার কমিউন্স্টি পার্টি; এই পার্টির নেতৃত্বে ছিলো আবার দুটি ভাগ। একটি অংশ টিপু বিশ্বাস ও দেবেন সিকদার মুক্তিযুদ্ধকে 'জাতীয় মুক্তি আন্দোলন' হিসেবে চিহ্নিত করেন। তারা ১৯৭১ সালে রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গ এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে তোলেন পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ। তবে স্পষ্টতই এর বেশীরভাগ প্রতিরোধ যুদ্ধই পরিচালিত হয় মুজিব বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এর আগে অগ্নিগর্ভ যুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশে ১৯৬৯-৭০ সালে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর ন্যাপের নেতৃত্বে লাল টুপির সম্মেলন এবং সন্তোষ কৃষক সম্মেলনেও পিকিংপন্থী নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তো পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (দেবেন সিকদার) কেন্দ্রীয় নেতা আজিজ মেহের ১৯৬৯ সালে সার্বক্ষনিক কর্মী হিসেবে পার্টির ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল আঞ্চল তদারকির দায়িত্ব পালন করেন। এরই মধ্যে ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের নয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে সারাদেশে সামরিক আইন জারী করেছেন।
প্রকাশ্য রাজনীতি ছেড়ে আত্নগোপনে থেকেই পার্টির নেতারা চেষ্টা করলেন মাওবাদী ছোট ছোট গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার। মূল দায়িত্ব দেয়া হলো আজিজ মেহেরকে। বরিশালে একজন অ্যাডভোকেটের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের সঙ্গে আজিজ মেহেরের প্রথম দফা বৈঠক অসফল হয়। পরে মাওপন্থী ছাত্রদের একটি গ্রুপ তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করে পার্টিতে যোগ দেয়। এর পর ঐক্যের ডাক নিয়ে আজিজ মেহের সাক্ষাৎ করেন সর্বহারা পার্টির প্রধান সিরাজ সিকদারের সঙ্গে।
বাকী কথা আজিজ মেহেরের ভাষ্যে:
...একটি গ্রুপ কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে তখন বিকশিত হচ্ছে ঢাকায় এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। যদিও তার সম্পর্কে বামপন্থী-বুদ্ধিজীবী মহলে নানা বিভ্রান্তি। কেউ মনে করতেন, এরা অ্যাডভেঞ্চারিস্ট, সন্ত্রাসবাদী; কেউ মনে করতেন, সিরাজ সিকদার হচ্ছেন সিআইএ'র এজেন্ট। তবে আমাদের পার্টি এ বিষয়টি এমন একপেশে, যান্ত্রিকভাবে দেখতো না।
আমি মনে করি, কমরেড সিরাজ সিকদারের একটি বিপ্লবী আকাঙ্খা ছিলো। কথাবার্তা, চলাফেরা-- সবকিছুর মধ্যে ছিলো একটা আকর্ষণীয় ব্যপার। তরুণ ছাত্রকর্মী, যারা বিপ্লবের জন্য ছিলো ব্যাকুল, তারা সহজেই আকৃষ্ট হয়েছিলো। তারা কয়েকটা গেরিলা গ্রুপ করে, কয়েকটি সরকারি অফিসে বোমাবাজী করে, দেয়াল লিখনে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো। বিশেষ করে সিরাজ সিকদারের থিসিস আকৃষ্ট করেছিলো ছাত্র-তরুণদের।
কিন্তু আমরা মনে করতাম, এদের কর্মকাণ্ডে যতটা রোমান্টিক বিপ্লবী উপদান আছে, ততটা মার্কসীয় উপাদান নেই।
তবু অনেক চেস্টার পর ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় কমরেড সিরাজ সিকদারের সঙ্গে আমার দেখা হলো। উনি আমাদের পার্টির দলিলই পড়েননি! তার ব্যাগে দলিল ভড়ে দিলাম। সব শুনে উনি বললেন, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কোনো ইচ্ছা 'তার বা তার পার্টির' নেই। কথা শুনে মনে হলো: উনিই পার্টি!
কথাবার্তার সময় সিরাজ সিকদার বার বার তার কোটের পকেট থেকে মাওসেতুং এর লাল বই (কোটেশন ফ্রম মাওসেতুং, রেড বুক হিসেবে সারা বিশ্বে বহুল প্রচারিত) বের করে দু-এক পাতা দেখে নিচ্ছিলেন। ওনার শোল্ডার হোল্ডারে একটা রিভলবার দেখতে পেলাম। সব কিছুই যেনো একটা 'শো' বলে মনে হচ্ছিলো।
মনে হলো, উনি একজন উচ্চাকাঙ্খী বামপন্থী নেতা। রোমান্টিক কর্মকাণ্ডের জন্য তার গ্রুপের কিছুটা বিকাশ হয়তো হবে; তার কোনো ভবিষ্যত নেই। আমাদের পার্টির ঐক্য হলো না।...
---
তথ্যসূত্র: ১। স্মৃতি শুধু স্মৃতি নয়, আজিজ মেহের, শোভা প্রকাশ, একুশে বইমেলা, ২০০৪। ২। বাংলাদেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও মুনতাসির মামুন সম্পাদিত।
---
ছবি: সিরাজ সিকদার, আন্তর্জাল।
---
(চলবে)
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫২
বিপ্লব রহমান বলেছেন: পাঠ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৩
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বেশী দেরী হরে দিলে খেই হারিয়ে যায়!
পারলে তাগাতাড়ি দিয়েন
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৩
বিপ্লব রহমান বলেছেন: আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
আশাকরছি, প্রতিদিন একটি পর্ব পাবেন। এরপর সব কয়েকটি পর্ব এক সঙ্গে পাবেন।
৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তাগাতাড়ি = তাড়াতাড়ি
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৪
বিপ্লব রহমান বলেছেন: আরে! আমি তো তাড়াহুড়োতে 'তাড়াতাড়ি'ই পড়েছি!
৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৮
দূর আকাশের নীল তারা বলেছেন: সিরাজ শিকদার ভারতীয় আগ্রাসনের বিরোধীতা করেছেন - সেটা খুবই ভাল কথা। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি কি কি কাজ করেছেন? ব্যাংক লুট, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার মাধ্যমে তিনি কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, বুঝিয়ে বলবেন কি?
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৭
বিপ্লব রহমান বলেছেন: ধীরে ভ্রাতা, ধীরে।... তার পার্টি, এমন কী ব্যক্তি সিরাজের করুণ পরিনতির কথাও পরের পর্বগুলোতে আসবে। আশাকরি আগামীতেও সঙ্গে থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ।
৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৪
মাধুকরী বলেছেন: আকাশের নীল তারা বলেছেন: সিরাজ শিকদার ভারতীয় আগ্রাসনের বিরোধীতা করেছেন - সেটা খুবই ভাল কথা। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি কি কি কাজ করেছেন? ব্যাংক লুট, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার মাধ্যমে তিনি কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, বুঝিয়ে বলবেন কি?
্্্্্্্্্
দেখা গেল দালালের , ব্যাংক লুটে কারা মত্ত ছিল সবাই জানে !
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:০৩
বিপ্লব রহমান বলেছেন: ধীরে ভ্রাতা, ধীরে।... তার পার্টি, এমন কী ব্যক্তি সিরাজের করুণ পরিনতির কথাও পরের পর্বগুলোতে আসবে। আশাকরি আগামীতেও সঙ্গে থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ।
৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২০
দূর আকাশের নীল তারা বলেছেন: @মাধুকরী: কোন অন্যায়কেই সর্মথন করি না - সে যেই করুক। বিচার বর্হিভূত সকল হত্যাকান্ডের নিন্দা করি, সে মুজিব আমল, জিয়া আমল বা যে আমলেই হোক।
স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশের জন্য সিরাজ শিকদারের একটা ভাল কাজ দেখান দয়া করে।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৫৬
বিপ্লব রহমান বলেছেন: আবারো আপনার প্রতিক্রিয়া পেয়ে ভালো লাগলো। পুরো লেখাটি পড়ার বিনীত অনুরোধ।
৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৪৮
মাধুকরী বলেছেন: @দূর আকাশের নীল তারা,,,,,,,,,,,,
শেখ মুজিবের বাকশালীও শাসনের , রক্ষি বাহিনীর প্রতিবাদ করা কি ভাল কাজনা ! জাসদের কর্মীদের উপর নির্যাতন এর প্রতিবাদ করা কি ভাল কাজ না ?????
২২ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:১৮
বিপ্লব রহমান বলেছেন: অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায় সঙ্গত-- এটি অবশ্যই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা গোষ্ঠি-বিপ্লবে ঠেকেছিল; নতুন সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই। অনেক ধন্যবাদ।
৮| ০৩ রা মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:১১
দূর আকাশের নীল তারা বলেছেন: @মাধুকরী: ব্যাংক লুট, নিরীহ পুলিশ বাহিনীর সদস্য হত্যা কিভাবে শেখ মুজিবের বাকশালীও শাসনের ও রক্ষি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয় আমি বুঝি না; ব্যাংক লুট করে সিরাজ শিকদার তো জনগণকে বিপদে ফেলল। পুলিশ বাহিনীর সদস্যটি তো সৎ উপায়ে চাকরী করে, তারও বউ আছে, বাচ্চা আছে, দোষ হলে তার উপরওয়ালার হতে পারে, তার তো কোন দোষ নেই। সে তো হুকুমের গোলাম। তাকে হত্যার মাধ্যমে কিভাবে প্রতিবাদ হতে পারে।
২২ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:২১
বিপ্লব রহমান বলেছেন: আপনি যেভাবে বলছেন, সিরাজ সিকদার ঠিক সেভাবে "জনগণকে বিপদে" ফেলেনি, যতটা বিপদে পড়েছিল স্বৈরশাসক মুজিব সরকার। পুরো পর্বটি পড়লে আশাকরি আপনার ধারণা আরো পরিস্কার হবে। অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৭
দুঃখবিলাসী বলেছেন: "সিরাজ সিকদার পাকিস্তানকে উপনিবেশবাদী , ভারতকে অধিপত্যবাদী এবং আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থী আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।"
সিরাজ সিকদারের দূরদর্শিতা ছিল বলতে হবে। লোকটি এত আগেই বাংলাদেশের শত্রুদের চিনতে পেরেছিলেন।