নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নসখা

বিপুল আশরাফ

বিপুল আশরাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ-য-ব-র-লঃ বিমান যাত্রা-১

১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০

চলতে ফিরতে দেশে বিদেশে নানান জায়গায় নানান অভিজ্ঞতা হয়। প্রায়ই মনে হয় লিখে রাখি কিছু কথা। যদি আমার অভিজ্ঞতা কারও কোন উপকারে আসে। হয়ত আজ থেকে অনেকদিন পরে নিজের এই লেখাগুলো নিজেকেই আনন্দের খোরাক যোগাবে কিংবা পথ চলতে সাহায্য করবে। আলসেমি কিংবা ব্যস্ততার কারণে কিছুই লেখা হয়না। তারপর এক সময় মগজের উপর ধুলোর আস্তরণ পড়তে পড়তে সব ভুলে যাই। জন্ডিসের কারণে দেশে এবার বেশ বড়সড় একটা ছুটি পেয়ে গেলাম। আলস্যকেও দিলাম ছুটি। আর লেখার বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিলাম বিমানযাত্রা। গত ৫ বছরে কম করে হলেও ৪০ বারের বেশি বিমানে চড়েছি। চড়েছি বাংলাদেশ বিমান, কাতার, কুয়েত, এমিরেটস, ইতিহাদ, তার্কিশ, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, রায়ান এয়ার, উইজ এয়ার, ইজি জেট, লুফথানসা, সুইস এয়ার, নরওয়েজিয়ান এয়ার, আল ইতালিয়াতে। কয়েকটা পর্বে নিজের এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা লিখে রাখার চেষ্টা করি। সেই সাথে বিমানযাত্রা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা, কিংবা যাত্রীদের সাধারণ কিছু ভুল যা আমরা প্রায়ই করে থাকি তাও লেখার চেষ্টা করব।

জীবনে প্রথম বিমান যাত্রার সুযোগ হয় ২০০৯ সালে। ২ বছরের জন্য ইউরোপিয়ান কমিশনের একটা বৃত্তি পেলাম। সেই সাথে পেলাম বিমানের টিকেট। ভাদ্র মাসের কঠিন গরমে স্যুট টাই পরে এয়ারপোর্টে গেলাম। সঙ্গে মা, ছোট বোন, মামা, মামী, খালা খালু, কাজিন সহ প্রায় ১৫-২০ জনের দল।পরিবারের অতি আদরের ছেলেকে বিদায় দিতে এসেছে সবাই। সে এক এলাহী কারবার। সম্ভবত জীবনে প্রথম বারের মত স্যুট টাই পরে বাইরে বেরিয়েছি। একটু পর পর আড় চোখে দেখছি আমাকে কেউ দেখছে কিনা। কেউ তাকালেই মনে হচ্ছিল আরিব্বাস, নিশ্চয়ই আমাকে খুব স্মার্ট লাগছে। প্লেনে উঠেও স্যুট খুলিনা। মনে আছে রোম এয়ারপোর্টে ট্রানজিটের জন্য এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে সময় কাটাচ্ছি তখন দুজন লোক আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়েছিল। বিদেশিদের কাছেও নিজেকে ব্যাপক স্মার্ট লাগছে মনে করে আমি তো মহাখুশি। পরে বুঝেছিলাম, আমার ওই ঢ্যাং- ঢ্যাঙ্গে শুকনো পাতলা শরীরে, ভাদ্র মাসের গরমে এত দীর্ঘ বিমান যাত্রায় স্যুট টাই পরে যাত্রা করে নিজেকে কেবল সঙ-ই বানাইনি, যাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যটুকুও নষ্ট করেছি। আসলে আমরা যারা প্রথমবার বিমান যাত্রা করি তাদের অনেকের মাথায় কাজ করে, ‘বিদেশ যাচ্ছি, স্যুটেড বুটেড না হয়ে গেলে চলে?’ এতবার বিমানে চড়ার পর এখন মনে হয়, বিমান যাত্রার মত বিরক্তিকর যাত্রা খুব কমই আছে আর সেটা যদি দীর্ঘ যাত্রা হয় তাহলে তো কথাই নেই। তাই যতটুকু সম্ভব আরামদায়ক পোশাকে যাত্রা করা উচিত। একবার আমি একজন বাংলাদেশিকে দেখেছি বেশি আরামদায়ক পোশাক পরতে গিয়ে স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে বিমানে উঠেছে। আরামদায়ক পোশাক যেমন পরা উচিত তেমনি এতগুলো মানুষের সাথে ভ্রমণ করছেন, এজন্য একটু ডিসেন্সিও তো বজায় রাখা উচিত।

বিদেশের ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী কাউকে দেখলে পাসপোর্টটা অনেক্ষণ নেড়ে চেড়ে দেখবে, কয়েকবার করে চেহারা দেখবে তারপর নিতান্তই অনিচ্ছাসত্তে পাসপোর্টে সীল দিয়ে ইমিগ্রেশন ক্রস করার অনুমতি দিবে, অথচ আপনার পাশেই অন্য দেশীরা খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন ক্রস করে ফেলবে এরকম কথা আমি বহুবার শুনেছি, পত্রিকায় পড়েছি। আমি আজ পর্যন্ত এধরনের কোন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি। খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই নিজেদেরকে এই হীনমন্যতা থেকে অবশ্যই বের করে আনতে হবে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে যখন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চলে এসেছিল, আমাদের দেশে তখনও সেই হাতে লেখা পাসপোর্ট চালু ছিল। যার কারণে ইমিগ্রেশন অফিসাররা প্রায়ই বুঝতে পারত না কোথায় name, কোথায় surname, কোথায় Date of birth. হাজার হাজার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হ্যান্ডল করে হঠাত করে যখন এরকম হাতে লেখা পাসপোর্ট এসে পড়ে ইমিগ্রেশন অফিসাররা ঠিক ঠাহর করতে পারেনা কোথায় কোন তথ্য আছে। বাংলাদেশি নাগরিকরা যখন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পাওয়া শুরু করল তখন থেকে এসমস্যা অনেকটাই কেটে গেল। আরেকটা ব্যাপার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশি আছে যারা পাসপোর্ট জালিয়াতি, ভিসা জালিয়াতি বা অন্য উপায়ে সেসব দেশে ঢুকে পড়ে। ধরুন একটা দেশে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশি আছে। স্বাভাবিকভাবেই সে দেশের ইমিগ্রেশন অফিসাররা একটু বেশি সতর্ক হবে। কিন্তু তাই বলে আমরা সবাই ভয়ে ভয়ে থাকব, ইমিগ্রেশন অফিসারের সামনে মুখ কাচু মাচু করে রাখব কিংবা ভাবব, আমার দেশ গরীব তাই আমার পাসপোর্ট নিয়ে এতক্ষণ নাড়াচাড়া করছে এটা একদমই ঠিক না। ইমিগ্রেশন অফিসার কিছু জিজ্ঞাসা করলে সুন্দর করে হাসিমুখে তার উত্তর দিন। অযথা ভয় কেন পাবেন? মনে রাখবেন আপনি যখন বাইরে যান আপনি আপনার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। কাজেই আপনার সব কিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে ‘be bold and confident’. বিদেশি দেখলেই অতি বিগলিত হয়ে যাওয়া অথবা কাচু মাচু করার স্বভাব থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত।

দুটো মজার অভিজ্ঞতার কথা বলে এই পর্ব শেষ করি।

একবার সম্ভবত এমিরেটসে করে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছি। আমার পেছনের সিটের একজন আরেকজনকে বলছে, ‘শুনলাম প্লেনে উঠলে বলে বিমানবালারা গা হাত পা টিপপা দিব। কই কেউইতো আইলনা গা টিপতে’। আমি বলতেও পারি না, ‘হে ধরণী দ্বিধা হও’, কারণ ধরণী দ্বিধা হলেও এত উপর থেকে ধরণীতে মুখ লুকাবার সুযোগ কই? বিমানবালারা প্লেনে হাত পা টিপে দেয় এই ধারণা নিয়ে যে কেউ বিমানে উঠতে পারে সেটা আমার চিন্তারও বাইরে ছিল।

তার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে একবার আমি আর জিনাত দেশে ফিরছি। ইস্তানবুল থেকে ঢাকায় আসার ফ্লাইটে বলতে গেলে আমরা সবাই বাংলাদেশি। যেখানে সিট তার কিছু সামনেই টয়লেট। প্রায় ৭ ঘন্টার যাত্রা ছিল। বিমান ইস্তানবুল থেকে ছেড়ে আসার পর সবার যেন টয়লেটে যাওয়ার স্রোত লাগল। উড্ডয়নের পর পরই সেই যে টয়লেটে যাওয়া শুরু হল, ৭ ঘন্টা পরে ঢাকায় ল্যান্ড করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত একটা টয়লেটও ফাঁকা পাওয়া গেল না। পুরো ৭ ঘন্টা বিমানের সব টয়লেট এভাবে ব্যবহৃত হতে আমি জীবনে কোনদিন দেখি নাই। মানুষ খাচ্ছে আর তার একটু পরেই টয়লেটে যাচ্ছে। খাবার শেষ হয়ে গেলে কেবিন ক্রুদের ডেকে ডেকে পানীয় নিচ্ছে আর টয়লেটে যাচ্ছে। বিমানের ক্যাপ্টেন অ্যানাউন্স করল প্লেন ল্যান্ড করবে সবাই যেন প্রস্তুতি নেয়, সিট বেল্ট সাইন জ্বলে উঠল। অথচ তখনও টয়লেটে যাওয়ার লাইন। যেন পেটের সব বর্জ্য বিমানে ঢেলেই বাংলাদেশে ল্যান্ড করতে হবে। বেচারা টয়লেটের উপর আমার বেশ মায়াই হচ্ছিল। কত আর লোড নেওয়া যায়? :P

পরের পর্বে আরও কিছু নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করব।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫

নক্‌শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: সুন্দর লেখা। পরের পর্বে আরো কিছু পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬

বিপুল আশরাফ বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

ইমরান আশফাক বলেছেন: চমৎকার হচ্ছে, এগিয়ে যান।

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫

ভ্রমন কারী বলেছেন: আপনার অভিঙ্গতা জানতে সাথে আছি, চালিয়ে যান।
++++++++

৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩১

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: ‘শুনলাম প্লেনে উঠলে বলে বিমানবালারা গা হাত পা টিপপা দিব। কই কেউইতো আইলনা গা টিপতে’ - সত্যিই বলেছে ? যাক, নিশ্চই বাংলায় বলেছিল... রক্ষা!

আমি বিমান বা যে কোন ভ্রমণের আগের দিন থেকে নরমাল খাবার খাই, রিচ ফুড এভয়েড করি, জার্নিকালিন পানি বা ফ্লুইড খাই অল্প করে অনেকবার. এটা অভিজ্ঞতা থেকে করি এবং নিজেকে শারিরীকভাবে স্বস্থিতে রাখতে পারি.

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৪

বিপুল আশরাফ বলেছেন: নিজের কানে না শুনলে হয়ত আমিও একথা বিশ্বাস করতাম না। :)

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৮

আন্ধার রাত বলেছেন:
টয়লেটপ্রিয় আমরা! :P

৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫

কলমের কালি শেষ বলেছেন: =p~ =p~গল্পগুলো জোশ । আপনার লেখনী অনেক ভাল লাগলো । +++++

৮| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৬

বিপুল আশরাফ বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে। চেষ্টা করব খুব শীঘ্রি পরের পর্ব নিয়ে হাজির হতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.