![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পোড় খাওয়া সূর্যটা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে মুখ লুকিয়েছে মেঘের আরালে, সাদা মেঘ পরম মমতায় জরিয়ে ধরেছে তাকে, খানিকটা উদ্ভ্রান্ত, খানিকটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে । বাতাসটা ভারি দুষ্টু, বারে বারে খোঁচা দিয়ে মেঘকে তাগাদা দেয়, পাছে কেও দেখে ফেলে । বাতাশের দুষ্টুমিতে মেঘ তাই সরে সরে যায়, আবার সূর্য জেগে ওঠে, ভীষণ ক্লান্ত সে, ক্লান্তির আবহে নিজের তেজতাও কমিয়ে দিয়েছে সে । এমন ই এক পড়ন্ত বিকেলে, গন-জাগরন শাহবাগ চত্বরের গান্দা নালা ধরে এগিয়ে চলছে এক পাগল, গায়ে তার শত ছিন্ন ছেরা ছালা । দাড়ি আর গোঁফে অনেকটা বাবুই পাখির বাসার আদল নিয়েছে, চোখে তারও রাজ্যের ক্লান্তি জরিয়েছে ওই ক্লান্ত সূর্যটার মত । গায়ের ছুঁচো মাখা গন্ধে রাস্তার কুকুরটাও এড়িয়ে চলছে তার স্পর্শ । বিড়বিড় করে কি যেন বকছে অবিরাম ধাড়ায়, মনে হচ্ছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডর সমস্ত অভিশাপকে দূর করার গুরু দায়িত্ব সে তার ছোট্ট কাঁধে নিয়ে মন্ত্র পড়ে যাচ্ছে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মত । শাহবাগ চত্বর এখন ভীষণ উত্তাল রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে, অনেকটা উৎসব এর আমেজ চারিদিকে, কেও গান করছে, কেও শ্লোগান এ মুখরিত, আবার কেও প্ল্যাকার্ড হাতে বসে আছে উদাস পানে । বাচ্চারাও এসেছে মা-বাবার সাথে, ভীষণ আনন্দ তাদের, এ যেন আরেকবার ঈদের আনন্দ গায়ে মেখে মুড়মুড়ে পাঁপড় খাওয়ার আনন্দ হুল্লোড় । একটি ছোট্ট বাচ্চা তার বাবার মুখের দিকে ভারী কুতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে, সে তার বাবাকে কোনদিন চিৎকার করতে শোনেনি, বাসায় সারাদিন মা ই চিৎকার করে আর বাবা মেনিমুখোর মত মুখ লুকিয়ে ডুবে থাকে বইয়ের সাদাকালো অক্ষরের মাঝে। আজ সেই বাবার হঠাৎ করে কি হোল ? কেমন উত্তেজনায় তার ঠোঁট কাঁপছে যেন এখনি কালবৈশাখীর প্রবল থাবায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে সমস্ত শহরটাকে । বাবা বলছে, রাজাকারের চামড়া তুলে নেব আমরা, সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই রাজাকারটা কে, এটাকি তবে গরু না ছাগল। গত বছর তারা একটা ছাগল কোরবানি দিয়েছিলো ঈদে, বাবার ছোট্ট কোলে বশে সে দেখেছিলো ছাগল কোরবানির ভয়ঙ্কর দৃশ্য, তার মোটেও ভাল লাগেনি, মনে হচ্ছিলো আহারে এই ছাগলটাকে আর সে কোনদিনও কাঁঠাল পাতা খাওয়াতে পারবে না । সেই সময়ই একজন কেও বাবাকে বলেছিল, চাচা ছাগল এর চামড়া ত তোলা হোল, মাংশটা এবার ভাগ করেন। তবেকি রাজাকার ছাগল বা গরুর আরেক নাম। পাগলটা এবার তার মন্ত্র থামিয়েছে, বাজখাই গলায় কচুপাতার মত সজিব এক তরুনিকে জিজ্ঞেশ করছে, রাজাকার কে গো, রাজ্যের ঘৃণা জ্বলে উঠে তরুনির চোখে, যেন এক আগ্নেয়গিরির জলন্ত জ্বালামুখ এখনি পুড়িয়ে খাক করে দেবে পাগলটাকে । ভয়ে পাগলটা সরে আসে খানিকটা । ছুঁচোর উৎকট গন্ধটা গন্ধকের মত উস্কে দেয় তার মনের আগুনটাকে, সে চিৎকার করে বলে উঠে, রাজাকার তুই, রাজাকার তোর মত পাগল। ভিড়ের মাঝে এক ঢেউ খেলে যায় বর্ষার মত, সবাই সমস্বরে বলতে থাকে “তুই রাজাকার”,...”তুই রাজাকার”...।“তুই রাজাকার”...।
পাগল ভয় পেয়ে দৌড় লাগায়, এ যেন আরেক একাত্তর, যখন সে সত্যি রাজাকার ছিল, যখন সে নিজের হাতে পুড়িয়ে ছিল কত মালাউনের ঘর, কত শত ঘরের যুবতী কন্যাকে মা – বাবার সামনে ধর্ষণ করেছে সে, আবার মায়ের কোল থেকে ছোট্ট দুধের শিশুকে কেড়ে নিয়ে, মাকে পাঠিয়েছে পাক-সেনাদের কাছে , যেতে না চাইলে বলত তাইলে কিন্তু তোর ছোট্টরে দিয়া দিমু হানাদারগো হাতে, কমু তুই মুক্তির বউ আর এইটা মুক্তির পোলা, দেখিস মুক্তির নাম শুনলে বুটের লাত্থিতে কেমুন তোর পলার মজক বাইর কইরা দেয় । কিন্তু তারপর তো দেশ স্বাধীন হল, সেও পালিয়ে গেল তার গ্রাম ছেড়ে । তারপর সব অন্ধকার ... কিছু মনে নেই তার, কিন্তু এরা জানলো কি করে যে সে রাজাকার । সেতো পাগল, তার গায়ে তো লেখা নেই যে সে রাজাকার । দেশ স্বাধীনের পরও পাগল এত ভয় পাইনি কোনদিন, সে ছুটছে তার একবোঝা অতিত নিয়ে, পেছন থেকে ভেশে আসছে ...”তুই রাজাকার”...”তুই রাজাকার”...”তুই রাজাকার”।
©somewhere in net ltd.