![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাইরে আমি সেলেব্রিটিও না, ইভটিজারও না, নারীর বিশেষ সুবিধা গ্রহনকারীও না, চেতনা ব্যাবসায়িও না, বুদ্ধিজীবীও না। আমি ইস্টুডেন্ট মানুষ, বিদ্যা বেঁচে খাই আর হুমায়ুনের গল্পের হিমুগিরি করি।
-ফুসকাগুলো অনেক ভালো তাই না।
-হু,অনেক ভালো।
-তোমার কি মন খারাপ?
তপু চুপ করে আছে।ওর মন খারাপ করা সময়গুলোতে ও কিছু বলে না।আকাশের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকে।
প্রিয়াঙ্কা আবারো জিজ্ঞেস করলো,তোমার কি মন খারাপ?
তপু ফুসকার দিকে উদাস তাকিয়ে থেকে কিছু বলবে এমন ভাব করে আবার কি ভেবে কিছুই বলল না।
প্রিয়াঙ্কা এইবার তপুর অনেকটা কাছে সরে এসে হাত চেপে ধরলো।অনেকটা অসহায় গলায় বলল,তোমার কি হইছে?প্রতিদিন কতো কথা বল।আজ চুপ কেন?তুমি যদি কিছু না বল আমি কেঁদে ফেলবো।
তপু এইবার উত্তর দিল,কাল রাতে আব্বু ফোন করেছিল।আম্মু খুব অসুস্থ।ডক্টররা আম্মুকে নিয়ে খুব একটা আশাবাদী না।
মুহূর্তেই পিনপতন নীরবতা বয়ে গেল চারিদিকে।প্রিয়াঙ্কা খুব ভালোভাবেই জানে তপু তপুর মাকে কতো বেশী ভালবাসে।এই তপু নামের ছেলেটার মা আর বাবা ছাড়া আর কে আছে এই পৃথিবীতে?প্রিয়াঙ্কা তপুর কাধে হাত রাখল।
তপু কিছুক্ষন পর বলল,আমি কাল গ্রামে যাবো।তুমি এইদিকটায় সামলে থেকো।আজ আমি উঠি। ফোনে কথা হবে।ভাল থেকো।
কথা অনেকখানি অসমাপ্ত রেখে তপু এগিয়ে গেলো।
প্রিয়াঙ্কা তপুর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছে।কি ভেবে জোর গলায় তপু বলে ডাক দিল।
তপু থমকে দাঁড়িয়েছে।প্রিয়াঙ্কা দৌড়ে এসে তপুকে জড়িয়ে ধরল।প্রিয়াঙ্কা কাঁদছে,তপুও কাঁদছে।
চারদিকের অকর্মণ্য মানুষগুলো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।এই মানুষগুলোর তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কি করার আছে??
প্রিয়াঙ্কা তপুর চোখ মুছে দিতে দিতে বলল।আম্মুর শরীর কি খুব খারাপ?
-হু,খুব খারাপ।আর তুমিতো জানই আম্মু প্রায়ই অসুস্থ থাকেন।এইবারের অসুস্থতাটা অনেক বেশী।
প্রিয়াঙ্কা বাচ্চার মতো বলল,আমিও যাই তোমার সাথে?
-না,তুমি ঢাকাতেই থাক।গ্রামে তোমাকে নেয়ার মতো পরিস্থিতি নাই।বুঝইত গ্রামের মানুষরা...............
-আচ্ছা, ঠিকাছে,আমাকে নিতে হবে না।
-তুমি চিন্তা করো না,আমি আম্মুকে ঢাকায় নিয়ে আসবো।ঢাকায় ডাক্তার দেখালে হয়ত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
আচ্ছা,তুমি এখনই যাও।দেরি করো না।আম্মুর জন্যে চিন্তা করো না।ইনশাল্লাহ,উনি সেরে উঠবেন।আর আমাকে নিয়ে একদম ভাববে না।আমি ঠিক সব সামলে ভালো থাকবো।ভালো করে দেখে শুনে যেও।পৌঁছে অবশ্যই আমাকে জানাবে।নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করো।আর আম্মুকে নিয়ে চলে এসো ঢাকায়।দেরি হয়ে যাচ্ছে তোমার।
ভালো থেকো।
-তুমিও ভালো থেকো।কোন কিছুর প্রয়োজন পরলে তুহিন ভাইকে জানাবা।আমি যাই।
তপু বাসস্টান্ডে গিয়ে সিলেটের টিকেট কাটল।ট্রেন আসতে বিশ মিনিট বাকি।এই সময়টুকুতে এককাপ চা খাওয়া যাক।তপু জানত না,তপু যখন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে,তখন তার সবচেয়ে আপনজন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল।
তপুর বাবা মহসিন আলী কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।তপুই বাবা মার একমাত্র সন্তান।প্রিয়জনের মৃত্রুর এই কঠিন সময়টিতে তাকে শান্তনা দেয়ার মত কেও ছিল না।শুন্যঘরে প্রিয়জনের লাশের সামনে দাড়িয়ে তিনি অনেক বেশী শুন্যতায় ভুগছিলেন।
ধীরে ধীরে চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লো।আশেপাশের প্রতিবেশী,আত্মীয়স্বজন সবাই এসে জমা হচ্ছে।
মানুষের মৃত্রু খবর হয়ত অনেক বেশী দ্রুত ছড়ায়।তপুর বাবা অধিক শোকে অনেকটা কঠিন হতে পেরেছেন।তিনি প্রথমে তপুর মা,তপুর মা বলে কেঁদেছিলেন।এখন আর কাঁদছেন না।তপুর মায়ের লাশের সামনে ঠায় বসে আছেন।
অনেকটা জোর করে মহসিন আলীকে তপুর মা’র কাছ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।তপুদের আত্মীয় স্বজনেরা সুর করে মৃত্রুর কান্না কাদছেন,কেও কেও কুরআন তেলাওয়াত করছে।
সবাই মৃতের লাশ দাপনের ব্যাবস্থার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে।
পৃথিবীটা কতো অদ্ভুত!একজন মানুষ বেঁচে থাকতে কতো ক্ষমতাবান।তার জন্যে কতো আয়োজন।কিন্তু মৃত মানুষকে বিদায় করতে মানুষের এত তাড়া কেন?
তপুর বাবা কিছুই বলছেন না।শুধু একবার তার বড় ভাইকে ডেকে বললেন,যা করার তপু এসে করবে।
তপু বাসায় এসে পৌঁছেছে রাত দশটায়।তপুর মা মারা যাবার প্রায় আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে।ততক্ষনে মৃত্রুশোক অনেকখানি নিভে এসেছে।সারা বাড়িতে শুনশান নীরবতা।একজন মৃত মানুষের জন্যে কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেলা যায়।একসময় সেই চোখের পানিও শুকিয়ে যায়।
তপুর বাড়িতে পা দিয়েই গা চমচম করে উঠলো।তপু মা মা করে কয়েকবার ডাকল।কিন্তু তপুর মা কোথায়?তিনি ক্লি তপুর ডাক শুনতে পাচ্ছেন?হয়ত শুনতে পাচ্ছেন,মায়েরা সন্তানের ডাক মৃত্রুর পরও শুনতে পান।
তপুর বাবা বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলেন।তিনি দৌড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন এবং হাওমাও করে কাঁদতে লাগলেন।
তপু যখন তার বাবাকে ফোন করে জানিয়েছে,সে বাড়ি আসছে।তার একটু পরই তপুর মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।তপুর খুব কাছের মানুষের মৃত্রু সংবাদ আর ছেলের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তপুকে কিছুই জানানো হয় নি।
মহসিন আলী কাঁদতে কাঁদতে ধরা গলায় ছেলেকে তার মায়ের মৃত্রু সংবাদ দিলেন।
তপু কয়েক মুহূর্তের জন্যে চারিদিক শুন্য অনুভব করলো।সে কিছু শুনতে পাচ্ছে না কিংবা যা শুনেছে তা সে বিশ্বাস করতে পারছে না।মায়ের মৃত্রু সংবাদ শোনার পর তার একমাত্র সন্তানের কাছে কেমন অনুভুত হয়,তা লেখক হিসেবে বর্ণনা করার মতো এত বড় দৃষ্টটা আমার কোথায়?
তপু আর তপুর বাবা অনেকক্ষণ হাওমাও করে কেঁদেছেন।পুরো গ্রাম শুনেছিলো তাদের সেই গগনবিদারী শেষ কান্না।
তপু তার মায়ের কাছে গেলো।মা মা বলে শিশুর মতো ডাকল।তপুর মা সেই ডাকে সাড়া দেন নি।
মৃত্রুর পর মায়েরা এত নিষ্ঠুর হয়ে যায় কেন?মায়েদের নিষ্ঠুর হওয়া মানায় না।
তপু মায়ের দাপন সম্পন্ন করে বাসায় ফিরে এল।দাপন কাজ শেষ করতে করতে সকাল হয়ে গেলো।
তপু বাবাকে অনেক জোরাজুরি করল।তবুও মহসিন আলী তার স্ত্রীর কবর ছেড়ে আসলেন না।তিনি একটু পর ফিরবেন বলে তপুকে বাসায় যেতে বললেন।তপু বাবাকে একা থাকার সুযোগ করে দিয়ে বাসায় ফিরে এলো।
তপু বাসায় এসে বিছানায় এলিয়ে পড়লো।দীর্ঘ ক্লান্তিতে তপু নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লো।তপুর ঘুম ভেঙ্গে দেখল সে ঘেমে একাকার।অবাক করা বিষয় হচ্ছে তপু তার মা’কে স্বপ্নে দেখেছে।অস্পষ্ট সেই স্বপ্নের কিছুই তপু মনে করতে পারল না।
তপু ঘুম থেকে উঠেই তার বাবাকে খোঁজ করলো।বাড়ীর কোথায়ও মহসিন আলী নেই।তপু দৌড়ে তার মায়ের কবরের কাছে গেলো।মহসিন আলী স্ত্রীর কবরের পাশে বসে আছেন। তপু বাবাকে জোর করে বাসায় নিয়ে এলো।তপুর খালা দুজনকেই গোসল করতে পাঠালেন।মাতাহীন খাওয়ার টেবিলে তপু কিছুই খেতে পারল না।
তপু সমস্ত মৃত্রুর পরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ঢাকায় রওনা হল।তার বাবাকে বারবার তার সাথে নিয়ে আসত চাইল।কিন্তু মহসিন আলী কিছুতেই রাজি হলেন না।তপুর ফুফু হামিদা বেগমকে বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে এসেছে তপু।
এইদিকে প্রিয়াঙ্কা কঠিন সময় পার করছে।বাবা মা প্রিয়াঙ্কার জন্যে একজন সুপাত্র ঠিক করলো।
তপু ঢাকায় গিয়ে প্রিয়াঙ্কার সাথে সবার আগে দেখা করলো।প্রিয়াঙ্কা এই ঘটনার পর তপুকে তার বাড়ীর প্রতিকুল পরিবেশের কিছুই জানায় নি।
-কেমন আছ,তপু?
-এইত,তুমি?
-হু,আছি।
-তুমি অনেক শুকিয়ে গেছ?
তপু,তুমি নিজেকে সামলে নাও।সবাই তো পৃথিবীতে আজীবন বেঁচে থাকে না।একদিন না একদিন সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়।তুমি ভেঙ্গে পড়লে আমি কি করবো?
-প্রিয়াঙ্কা,আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব,আজ যাই।
তপু দুলে দুলে এগিয়ে যাচ্ছে।প্রিয়াঙ্কা তাকিয়ে আছে।
মায়ের মৃত্রুর পর তপু কেমন জানি হয়ে গেছে।প্রিয়াঙ্কার সাথে দেখা করে না,ইউনিভার্সিটিতে যায় না,বন্ধুদের সাথেও কথা বলে না।অনেকটা একা হয়ে গেলো তপু।মায়ের মৃত্রুশোক তপু মেনে নিতে পারছে না।
প্রিয়াঙ্কা একদিন তপুর মেসে উপস্থিত হল।তপু প্রিয়াঙ্কার সামনে বসে আছে।প্রিয়াঙ্কা তপুর হাত ধরে টেনে মেস থেকে বাহিরে নিয়ে এলো।রিক্সা ডেকে সোজা স্যালুন দোকানে নিয়ে চুল কাটালো,শেভ করালো।তপুর সামনে প্রিয়াঙ্কা কঠিনমুখে কিছু কথা বলল।
-শুন তপু,আমি তোমার মানসিক অবস্থা বুজতে পারছি।আম্মুর চলে যাওয়া তোমাকে কঠিনভাবে আঘাত করেছে,এটা আমি বুঝি।এইভাবে চুপ করে থাকলে জীবন চলবে না।তুমি বাবাকে একা রেখে এসেছ,উনার একা থাকতে যে কি পরিমান কষ্ট হচ্ছে তা কি তুমি জান?তুমি শুধু তোমার দিকটাই দেখলে বাবার কথা কি ভেবেছ।তুমি কালই বাবাকে ঢাকায় নিয়ে আসবা।আমি তিনরুমের একটা ফ্ল্যাট দেখে রেখেছি।এই মেস ছেড়ে বাবাকে নিয়ে ওখানে উঠবা।
নিজের কথাগুলো বলতে গিয়েও বলে নি।
-বাবা,ও হচ্ছে প্রিয়াঙ্কা।ও আমার ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।এই ফ্ল্যাটটা প্রিয়াঙ্কাই ঠিক করে দিয়েছিল।
-আসসালামুয়ালাইকুম বাবা,কেমন আছেন?
-এইতো,মা ভালো।
-তুমি কেমন আছ?
-আমি ভালো আছি ।
প্রিয়াঙ্কা মাঝে মাঝে তপুর বাসায় আসে।আজ ও পায়েশ রেঁধে এনেছে।
-বাবা,দেখুনতো পায়েশতা খেতে কেমন হয়েছে।আমি রান্না খুব একটা পারি না।তবুও আপনার জন্যে খুব আগ্রহ নিয়ে এই পায়েসটা তৈরি করেছি।
মহসিন আলীর প্রিয়াঙ্কাকে খুব পছন্দ হয়েছে।মেয়েটা যখন তাঁকে বাবা বলে ডাকলো,অজানা আনন্দে তার চোখ ভিজে উঠেছে।মেয়েটা খুব আদুরে আর সংসারী।তপুর জন্যে এইরকম একটা মেয়েই চাই।আর মেয়েটা সবসময় মহসিন আলীকে ভালবাসামাখা কণ্ঠে “বাবা” “বাবা” বলে ডাকছে।মহসিন আলীর মেয়ে ছিল না।অচেনা এই মেয়েকে পেয়ে তিনি আনন্দে অভিভূত।মহসিন আলী মেয়েটার স্পর্শে স্ত্রী শোক অনেকটাই ভুলতে পেরেছেন।মেয়েটা সময় পেলেই বাসায় এসে খোঁজ খবর করছে।মাঝে মাঝে মজার সব রান্না করে খাওয়াচ্ছে।
প্রিয়াঙ্কার বাসায় যে বিয়ের কথা হচ্ছিলো তা হঠাত করেই ডুবে গেলো।প্রিয়াঙ্কা এই বিষয় নিয়ে কিছুই বলল না।বরং মনে মনে কিছুটা শান্তি পেল।অদ্ভুত বেহায়া প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া মেয়েরা বিয়ে ভেঙে গেলে পৈশাচিক আনন্দ পায়।
তপু আবার আগের মত হতে শুরু করেছে।চাকরি আর মাস্টার্স দুইটাই চালিয়ে যাচ্ছে।
-বাবা,বিরিয়ানিটা কেমন হয়েছে?
মহসিন আলী আনন্দিত গলায় বললেন,খুব ভালো,খুব ভালো।আমার খুব পছন্দ হয়েছে।তুমি তো খুব ভালো রাঁধো, মা।
-তুমি তপুকে একটু ডাকো তো।ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
তপু আর প্রিয়াঙ্কা মহসিন আলির সামনে বসে আছে।ওরা বুজতে পারছে না বাবা কি(?) বলবেন।।
মহসিন আলী বলতে শুরু করেছেন।তপু ও প্রিয়াঙ্কা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার সিদ্ধান্তে তোমরাও খুশি হবে আমি এমনটাই আশা করি।আমি ভেবেছি তোমাদের বিয়ের আয়োজন করবো।
বাবার এই আকস্মিক প্রস্তাবনায় তপু আর প্রিয়াঙ্কা দুজনেই বেশ অবাক হল।তপু সামলে নিয়ে বলল,বাবা,তুমি যা ভাবছ ব্যাপারটা সেইরকম না।প্রিয়াঙ্কা আর আমি ভালো বন্ধু।কিন্তু এইভাবে আমরা কখনো ভাবিনি।
তপু আর প্রিয়াঙ্কার সাথে সম্পর্ক আছে।তবে তপু প্রিয়াঙ্কাকে ওভাবে কখনোই বলেনি।বাবার কথায় প্রিয়াঙ্কা কি(?) ভাবছে,তা ভেবে তপুর খুব লজ্জা হচ্ছে।
কিন্তু তপুকে অবাক করে দিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলল,বাবা আমার এতে আপত্তি নেই।আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে বরং আপনার এবং আপনার ছেলের যত্নকরা আমার জন্যে খুব সোজা হবে।বাসা থেকে নানা কষ্ট করে এমনিতে আসতে হয়।
তপু ভালো রকম শক খেয়েছে।প্রিয়াঙ্কা এইভাবে উত্তর দিবে তপু বিশ্বাসই করতে পারছে না।ও কিছু বলছে না।
মহসিন আলী তপুর দিকে তাকিয়ে হাসছেন।কিরে তুই এমন পেঁচার মতো মুখ করে আছিস কেন?তোকে তো আত্মহত্যা করতে বলছি না।নাকি তুই অন্য কাওকে পছন্দ করিস!এই কথা বলে তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন।
সেই হাসিতে প্রিয়াঙ্কার সাথে তপুও যোগ দিল।
-বাবা,আপনার চা টা নিন।দেখেছেন আপনার ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।একটা কাজও নিজে করতে পারে না।এখন ডাকছে কেন জানেন ওর মোবাইল খুঁজে পাচ্ছে না। একটা কিছুও বোকাটা সামলে রাখতে পারে না।
মহসিন আলী লক্ষ করছেন,মেয়েটা বিরক্তির স্বরে কথাগুলো বলতে চেষ্টা করছে।কিন্তু সে পারছে না।তার গলায় ভালোবাসার ছাপ স্পষ্ট।
মহসিন আলী হাসপাতালের বারান্দায় দাড়িয়ে আছেন।তপুও কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে।ছেলেটার চেহারায় ভয় আর লজ্জার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।সেই ছোট্ট তপু আজ কতো বড় হয়েছে।আজ ওর ঘরে নতুন সুখের অতিথি আসার অপেক্ষায়।
বারান্দা থেকে শিশুকান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।মহসিন আলী দৌড়ে গেলেন।নবাগত শিশুকে এই সুন্দর(!) পৃথিবীতে স্বাগত জানাতে হবে।
প্রিয়াঙ্কা মহসিন আলীর আনন্দ দেখে হাসছে।ওর আজ অনেক আনন্দ হচ্ছে।প্রিয়াঙ্কার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে মা হওয়ার আনুন্দের মতো দ্বিতীয় কোন আনন্দ অনুভূতি নেই।সত্যই নেই।
প্রিয়াঙ্কা এতক্ষন লক্ষ করে নি।তপু দরজা ধরে দাড়িয়ে আছে ।ওর চোখেমুখে লজ্জা আর অদ্ভুত আনন্দ খেলা করছে।
-বাবা,দেখুন না আ[পনার ছেলে কিভাবে বোকার মতো দাড়িয়ে আছে। এই তুমি ওভাবে দাড়িয়ে আছো কেন?ভেতরে আস।তোমার মেয়েকে দেখবে না।
-এই,তপু বলত আমার দাদুর চেহারা কার মতো হয়েছে?মুখে রহস্যের হাসি চেপে মহসিন আলী ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন।
প্রিয়াঙ্কা আহ্লাদী গলায় বলল,এই বলনা কার মতো হয়েছে দেখতে?
-আমি বলতে পারছি না,বাবা।
-তুই ভালো করে দেখ,বলতে পারবি।
-আচ্ছা বাবা,তুমি বল না।
প্রিয়াঙ্কাও তপুর সাথে সুর করে বলল,বাবা বলেন না দেখতে কার মত হয়েছে?
একটা জটিল রহস্য উদ্ধার করে ফেলার ভঙ্গিতে মহসিন আলী বললেন,আমার দাদুভাইয়েরর চেহারা অবিকল তপুর মায়ের মত হয়েছে।
তপু অবাক হয়ে ওর কন্যার দিকে তাকিয়ে আছে।অনেকদিন পর তপু তার মায়ের চেহারাটা দেখতে পেল!প্রিয়াঙ্কার মুখে সুখের হাসি।সেই হাসিতে হাসপাতালের এই ক্ষুদ্র কক্ষ জলমল করছে।
মহসিন আলীর স্ত্রীর কথা মনে পড়ায় চোখ ভিজে উঠেছে।তপুর মা থাকলে আজ কত আনন্দ করতেন!নাকি তিনি আছেন(!)?তিনি এই আনন্দ মুহূর্তে না থেকে পারেন না।এই সুখ সবার জন্যে উন্মুক্ত।চলে যাওয়া মানুষরাওএই সুখের অংশীদার!
তুহিন ভাই মিষ্টি নিয়ে এসেছেন।
ওরা সুখে আছে........
©somewhere in net ltd.