নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/md.pialuddin

blackant

মানুষ যা বিস্বাস করে তা অনুশরণ করে না কিংবা করতে পারে না, এই দ্বিধা নিয়ে পথ চলা তোমাদের মতই এই আমি

blackant › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাদা অন্ধকার(ছোট গল্প)

২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯

আমি ভাগ্যবান। ভাগ্যবান অনেকভাবে।আমার গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ।এই প্রজাতীতে আমার জন্ম।রহস্যময় এক গ্রহ, যেখানে ফুলের সৌন্দর্য
আমাদের বিমোহিত করে। প্রেমিকাকে দেখে প্রেমিকের হৃদয় স্পন্দন বেড়ে যায়। কড়া শিক্ষকের ধমকে ভাল ছাত্রটিও পড়া ভুলে নির্বোধের মত খাবি খায়।এসব সব ই ফিজিক্স এর ব্যখার অতীত। অথচ মহাবিশ্ব সৃষ্টির Big-Bang থেকে শুরু করে ধংসের Black-Hole সব ই ফিজিক্সে মোড়া। রহস্যময় মানবীয়তা ও প্রকৃতি। আর রহস্য ঘেরা এই গ্রহ 'পৃথিবী'। শুনেছি স্যটেলাইট থেকে পৃথিবী কে নীল মার্বেলের মত দেখায়। একে আরো কত ভাবে দেখা যায় জানি না। তবে পৃথিবীকে আমি যত ভাবে দেখেছি, অনেকেই এই সুযোগ পায় না। আগেই বলে নিই আমি নাবিক, নিঃসঙ্গ জলরাশির বন্ধু ও সহচর। আমার কতশত দিন কতশত রাত কেটেছে এখানে। ডাঙার মানুষ তোমরা কেও দাবি করতেই পারো, সমুদ্রের আবার সৌন্দর্য কি? দিনের বেলায় সাদা, রাতের বেলায় কালো! সাদাকালো এনালগ ব্যকগ্রাউন্ড। ব্যপারটা মোটেও এমন নয়। সময়ের সাথে আকাশের রং যেভাবে পরিবর্তন হয়, মনেহয় কোন মহান চিত্রশিল্পী আস্ত নীল সাগরটাকে রঙের আধার ভেবে আকাশটাকে ক্যনভাস করে নিয়েছে। অবিরত তুলির আঁচড় পড়ছে আর বদলে যাচ্ছে রং। যতদুর তাকাই দিগন্ত হার মানে না। হার মানে চোখ, ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে বারবার। আকাশটা ঢালু হতে হতে ডুবে গেছে নীল ঢেউয়ের মধ্য। আসলেই এই রংটা সাগর থেকে আকাশে উঠে গেছে, নাকি আকাশের প্রতিচ্ছবি সাগরে পড়েছে এটাই এক ধাঁধাঁ। সূর্য উঠার ঠিক আগের মুহূর্তে দিগন্তের কাছে নীলাভ সোনালী সমুদ্রের উপরের আকাশটা গাঢ় নীল। কয়েক মিনিট পরেই ঠিক উল্টো। উপরে হলুদ কিরনের ঝলক ছুটানো আকাশ, নিচে কালচে ঢেও। প্রতিটি ঢেউয়ের মাথায় তখন আগুন জ্বলছে, আগুন নিভছে। এই জ্বলা -নিভা চলে সারা সকাল। জুন-জুলাই এ সাগর উত্তাল থাকে এক ঢেওয়ের ছায়া পড়ে অন্য ঢেওয়ের উপর।ঠিক মাথার উপর যখন রৌদ্র, ঢেওয়ের ছায়া কোথাও নেই। হয়তো আছে বৃক্ষহীন মেঘমুক্ত সাদা ঝলমলে প্রান্তর। আবার মেঘও থাকতে পারে। শুভ্র তুলার মত মেঘ,কালো কিংবা ধূসর রাঙের মেঘ। সবচেয়ে ভাল দেখায় সিঁদুর রঙের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘটা। মনে হয় বিকেলের লাল সূর্যটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে সারা আকাশ ছড়িয়ে গেছে। আসলে ওরা সূর্যের ধার করা আলোটাই আমাদের দেখায়। মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরিটাও অনুভব করার মত। সাগরে চারিদিকে একবার তাকাও,মনে হবে একটা বৃত্ত যার কেন্দ্র তুমি নিজে। এমন সময় যদি সূর্যটা মেঘে ঢাকা পড়ে তবে হঠাৎ পরিবর্তন হবে।তখন মনে হতে পারে বৃত্তের পরিধি কাছে এগিয়ে আসছে। হয়তো পিছনে তাকিয়ে দেখা যাবে দুরে কোথাও এক চিলতে রোদ। বর্ষাকালে ধূসর রঙের মেঘটা পৃথীবির সাথে আকাশের দুরুত্ব কমিয়ে আনে। আকাশ ভেঙে মেঘ নামে।উথাল পাথাল মেঘ। মেঘটা এত কাছে হয়, মনে হয় এই বুঝি ছুঁয়ে গেল। মাঝে মাঝেই দেখা যায় সাগরের মাঝে বিছিন্ন বৃষ্টি। খুব স্পষ্ট দেখা যায় এক স্থানে বৃষ্টি তার ঠিক পাশেই স্বচ্ছ রোদ। বটগাছ নিশ্চয় দেখেছ,উপর থেকে বোয়া নামিয়ে দিয়ে ভূমি দখল করে। যেটুকুতে বৃষ্টি হচ্ছে, অংশটাকে সাগর পৃষ্ঠ থেকে আকাশ পর্যন্ত ধূসর রঙের বিকট বট গাছের মত মনে হয়। ভাসমান মেঘদল বটগাছের বোয়ার মত নেমে আসে জল হয়ে। আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামলে তৈরি হয় বিষণ্ণ এক তরঙ্গ । দমকা বাতাসের ছন্দে ঝরেপড়া বৃষ্টিধারার নৃত্য ঢেউয়ের নৃত্যকেই যেন অনুকরণ করে। বৃষ্টি থামে কিন্তু হু হু করে বাতাস বইতেই থাকে। বাতাসের তাল সামাল দিয়ে দিয়ে মাছ ধরার নৌকাগুলো দুলতে থাকে পেন্ডুলামের মত। নৌকাগুলো বিশেষ ধরনের।এর কাঠামো অর্ধবৃত্তাকার। অনেকটা পঞ্চমীর চাঁদের মত। বড় বড় ঢেওয়ে দোল খেয়ে যেন টিকে থাকতে পারে তাই এর ডিজাইন এমন। দুর থেকে এগুলোকে ঢেওয়ের মধ্য আড়াল হয়ে আবার জেগে উঠতে দেখা যায়।সামুদ্রিক পাখিদেরও একিই দৃশ্য। albatross, Nelly, গাংচিল, শঙ্খচিল, জলকুক্কুট প্রভৃতি ভাসমান পাখিদেরও নৌকার মত দোল খেতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। এরা কখনো ক্লান্ত হয় না। জাহাজে কত শত দিক নির্দেশক যন্ত্র। কোর্স, বিয়ারিং, ডেস্টিনেশন হাজারো হিসাব নিকাশ। এদের কোন ডেস্টিনেশন নেই, হারানোর ভয় নেই ভাবতেই ভাল লাগে। শুধু দলবদ্ধ ভ্রমণ। কিছু কিছু পাখি আছে খুব সজাগ,হঠাৎ একে অন্যর দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সবাই ডানা ঝাপটে উঠে যায় আকাশে। কোঁ কোঁ শব্দ করতে করতে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলে।
শব্দ ভেসে বেড়ায় বাতাসে, খুব কম সময়ে ঝাঁকের পর ঝাঁক মিলিয়ে যায় দিগন্তে। পানি কেটে পথ চলতে চলতে ক্লান্ত জাহাজ একসময় নোঙ্গর করে। তুলনামূলক কম গভীরতম সাগরে নোঙ্গর করতে হয়। ফলে বেশির ভাগ সময়ে ঘোলা পানিতে থাকি। তেমন কিছু দেখা যায় না। শুধু কালো পিঠ বের করে শুশুক যখন ডিগবাজি খায় সেটা দেখা যায়। স্বচ্ছ পানিতে নোঙ্গর করলে পানির নিচেও অনেক খানি দেখা যায়। দেখা যায় লম্বা ঠোটওলামাছ, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ সহ অসংখ্য জলজ জীব। দিনরাত্রি সব সময় চলে এদের কারো না কারো আনাগোনা। এই আনাগোনা কেও আলোতে করে, কেও আঁধারে। রূপালী চাঁদের আলোয় পথ চিনে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে কচ্ছপ ডাঙায় আসে ডিম পাড়তে। ডিম পেড়ে বালি দিয়ে ঢেকে চলে যায় গভীর সমুদ্রে। পূর্ণিমারাতে জোয়ারে যেসব মা কচ্ছপ আসে ভাটার টানে চলে যায়। ডিম দেওয়ার পর এদের শরীর ক্লান্ত শক্তিহীন হয়ে যায়। এমন অনেক মা কচ্ছপ ভাটার সময় বালিতে আটকে যায়। আর ফিরে যেতে পারে না। সেন্টমার্টিনে এদের আটকে থাকা মৃতদেহগুলো দেখে অসম্ভব মায়া লাগে। জেনে অবাক হই, ডিমথেকে বের হওয়া কচ্ছপের বাচ্চা গুলোই একদিন গভীর সমুদ্রে ফিরে এদের মায়েদের খুঁজে বের করে। যাদের মা তাদের জন্ম দিতে গিয়ে মারা গিয়েছিল তারা আর খুজে পায় না। মায়েদের আত্মত্যগ এরা অনুভব করে কিনা কে জানে!
জেলিফিস গুলোর শরীর বর্ণহীন, তাই পানিতে থাকা অবস্থায় দেখা যায় না। অনেক সময় অসুস্থ জেলিফিস সৈকতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। উৎসুক পর্যটকদের দেখা যায় জেলিফিসের পেট চিরে ছোট সামুদ্রিক মাছ বের করে মজা দেখছে। আমার ভাল লাগে না, কষ্ট লাগে। কষ্টের রেষটা নিয়েই ফিরে আসি জাহাজে। এমন কোন এক রাতে হয়তো আবার ডেকে দাড়িয়ে বাইরের আকাশটায় চোখ মেলি । হয়তো নিকষ অন্ধকার,কিংবা এক ফালি চাঁদ। আবার সময় চক্রে পেয়েও যেতে পারি সুষম বৃত্তাকার পূর্ণ এক চাঁদ। এই চাঁদটা আকশের যেদিকে হেলে থাকে সেদিকে একটা আলোর পথ তৈরি করে। একদম সত্যিই আলোর পথ। আমি থেকে চাঁদ ও সাগর তলের ভার্টিক্যল রেখা পর্যন্ত বিশ ফিট চওড়া এক আলোর পথ। যেন পথের পিচ গলিত স্বর্ন , আর পাথর গুলো স্বর্গীয়। প্রতিফলিত সোনালী আলোর সোজা পথ। চাঁদ যেদিকে যায় আলোর পথ সেদিকে যায়। জাহাজ ঘুরে গেলে আলোর পথ ঘুরে যায়। সমুদ্রের জোছনার আলো বাঁধ ভাঙা স্রোতের মত। উছলে পড়া এই আলো পানি থেকে আবার আকাশটাই ছড়িয়ে যায়। চোখ ভাল হলে মাঝারি হরফে লেখা বইও পড়া যায়। এমন রাতে অনায়াসে গুন গুন করে "আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তেরি মাতাল সমীরনে।। " বনের জোছনা হয়তো আরো রহস্যময়।চাঁদের এই আলো বুকের মধ্য কিসের যেন শুন্যতা তৈরি করে। কিসের শুন্যতা তা জীবনব্যাপী খুঁজে চলেছি। পাইনি এখনো। যা হোক এক সময় সারা পৃথিবীতে রহস্য ছড়াতে ছড়াতে সেও সাগরে ডুবে যায়। শুরু হয় নতুন দিন। আবার সূর্য্য উঠে, সূর্য ডুবে। সন্ধা নামে আঁধার ঘনায়। সময়কে ফাকি দিয়ে ঋতু বদলে যায়। মনকে আর ধরে রাখা যায় না। ডাঙায় ফিরতে অসম্ভব ইচ্ছা করে। যখন জাহাজ চলতেই থাকে অথচ ডাঙার দেখা পাওয়া যায় না, 'স্থল কি তবে নাই' এমন হাস্যকর শংকা জন্ম নেয় মনে। দম বন্ধ লাগে যখন দেখি চারিদিকে কুয়াশায় ঢাকা। আলো থেকেও নেই। সাদা অন্ধকার! আশে পাশের মার্চেন্ট শীপ গুলো আর দেখা যায় না। চলে আলোর জন্য অপেক্ষা। জীবনানন্দের মত সবুজ ঘাসের দেশ খুঁজতে থাকি। আবেগের শক্তির কাছে এক সময় দুরুত্ব হার মানে। পা রাখি মাটিতে। মাটি আর পানির গন্ধের পার্থক্য টা ধরা পড়ে। আগেকার সেই চির চেনা পৃথিবীতে নিজেকে অসহায় লাগে। আবার ভালোলাগে এমন কিছু বিষয় যা মোটেও ভাল লাগার কথা নয়। যেমন পুরনো গাড়ির ডিজেল পোড়া ধোয়ার গন্ধ, ট্রাফিকের ভিড়ে ধূলির গন্ধ। শহরের তোমরা গাড়ির হর্ণের যে শব্দে অতিষ্ঠ, সেটা হঠাৎ করে আমার কাছে হাহাকার তৈরি করে। মনে হয় ইস কোথায় যেন হারিয়ে ছিলাম! মিস করেছি খুব। কাঁচা বাজারে যায়, ছোট খাটো পন্যও দরদাম করে কিনতে ভাল লাগে। দাম্পত্য কলহ যদি কিছু রেখে যায়, এসে দেখি কলহ রুপান্তর হয়েছে ভালোবাসায়। আর অভিযোগুলো কোমল হতে হতে অভিমানে। আবার ভেবে অবাক হই যখন দেখি যত আবদার ছিল তাও কমেছে।,তবে মন্দ কি! সময় অবসরে গ্রামে ফিরে যায়। সাংঘাতিক ভাল লাগে। গ্রামে গিয়েও হঠাৎ কারো চেহারার সাথে, সহকর্মী কোন নাবিকের চেহারার মিল পেয়েছি বলে মনে হয়। ভাল ভাবে লক্ষ্য করি। কোন মিল নেই। আসলে অবচেতন মন সাগরকে ভুলতে পারেনি। সবকিছুতে তুলনা করে চলেছি অবিরত। দ্বায়িত্ব আর কাজের চাপ মনের মধ্য অস্থিরতা তৈরি করে। বুঝি আবার ফিরতে হবে জলের ঠিকানায়। সময় আবর্তিত হয়। গভীর রাতে সবায় ঘুমিয়ে পড়ে। আমার দুচোখ নির্ঘুম মরুভূমি। মনের মধ্যে কঠিন কিছু প্রশ্ন বিঁধে থাকে। আমি অকৃতি-অধম জেনেও পরম করুনাময় যা দিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছি কতটা। জীবন বেলার সময়গুলো হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত।এগিয়ে যাচ্ছি সেই সময়ের দিকে যেদিন মুখোমুখি হব এই নিখুঁত সৃষ্টির কারিগরের কাছে। তাই সকল বৈরিতার মাঝেও ইতিবাচক হয়ে সুখী হতে চেষ্টা করি। আমার মত যে সবাই সুখী তাও না। কারন তারা অনুভব করে অন্যভাবে।আমি অভিযোগ করতে ভালবাসি না।অপরদিকে বাস্তবতা আর অনুভবগুলোর মাঝখানে শক্ত দেয়াল তুলে রাখি না। যখন যা হয় সব মেনে নিতে চেষ্টা করি। ফলে শক্ত হতে গিয়েও পারি না।ঠোট কেঁপে উঠে। চলে আসার সময় 'সে' তার চোখের পানি মুছে ভীত অভিযোগের চোখ তুলে তাকায় আমার দিকে। আমি হাসি হাসি মুখে বেরিয়ে পড়ি। সব অনুভূতি স্বাভাবিক থাকে। মাঝ সাগরে আসার পর কোন এক দিন বাবা-মা পরিবার সবার কথা একসাথে ঘুর্ণিপাক বইয়ে দেয়। অজান্তে চোখ দিয় টপ টপ করে পানি পড়তে থাকে।সবার অগচরে সাগরে আরোও কয়েক ফোটা লোনা পানি যোগ হয়। মহান আল্লাহর প্রসংসা করে শুধু চেয়ে থাকি দুচোখ যেখানে শেষ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.