নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আগন্তুক কাক

আগন্তুক কাক

আমি অতি ক্ষুদ্র শ্রেনীর একজন মানুষ। এতই ক্ষুদ্র যে দুর থেকে দেখা যায়না। দেখার জন্য কাছে আসা প্রয়োজন।

আগন্তুক কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: চাঁদ ও জোত্‍স্না

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১৫

মজিদ সাহেব বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে আছেন। গত দুই বছর ধরে ভদ্রলোক বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে শোয় না। তার পিঠে একটা ফোড়া হয়েছিল। বাধ্য হয়েই তাকে উবু হয়ে শুতে হয়েছিল তখন। ফোড়া ভাল হয়ে গেছে। কিন্তু এতদিনে তার উবু হয়ে শুয়ে থাকার অভ্যাসটা আর ভাল হয়নি।

বিছানা নরম হলে উবু হয়ে শুয়ে বেশ আরাম পাওয়া যায়। বিছানা একটু শক্ত হলেই ঝামেলা।

মজিদ সাহেব চির বেকার একজন মানুষ। চির বেকাররা একটু অলস টাইপের হয়।

বেকারত্বের স্বাদ উপভোগ করার জন্য আলসতা প্রয়োজন।

তাই বালুর বস্তা হয়ে সে সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকে। বাজারে তার ২ ডজন দোকান আছে। তাই মাসের শেষে বালিশের তলায় টাকা চলে আসতে অসুবিধে হয় না।

অচরন বালুর বস্তার মত হলেও আকার অকৃতিতে সে মোটামোটি ছোটখাট একজন তিতুমীর।

মন্টু এসে অনেক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছ। ঘুমন্ত বাবার পিঠের দিকে সে চেয়ে আছে। উবু হয়ে শুয়ে থাকার কারণে মজিদ সাহেব চেহারা দেখা যাচ্ছে না। তাই আপাতত পিঠের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় নাই।

মন্টু খুব মৃদুস্বরে কাশি দিয়ে মজিদ সাহেবকে নিজের উপস্থিতিটা বুঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু সেই কাশির শব্দ মজিদ সাহেবের কানে প্রবেশ করল বলে মনে হয় না।

মজিদ সাহেব এখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা স্বপ্ন দেখছেন। খুবই অস্থির স্বপ্ন।

মন্টুর কাশির শব্দে তার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। সেই সাথে স্বপ্নটাও হারিয়ে গেল।

মন্টু দ্বিতীয়বার শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে একটা কাশি দিল। সেই কাশির শব্দে আরেকটু হলে মজিদ সাহেবের কানের পর্দা ফেটে যেত।

মজিদ সাহেব ধরমরিয়ে বিছানায় ওঠে বসলেন। তার গুনধর পুত্রেটি সাথে সাথেই তাকে টুক করে একটা সালাম দিয় বসল।

এরকম অপ্রত্যাশিত সালামে মজিদ সাহেব কিছুটা বিব্রত।

ছেলের দিকে সে সকরুন দৃষ্টিতে তাকাল। ছেলের মুখটা শুকিয়ে ঝালমুড়ির ঠোঙ্গার মত হয়ে গেছে। শরীরটা শুকিয়ে মটরসুটি হয়ে গেছে। আর চেহারার অবস্থা হয়েছে ঠিক গাজাখোরদের মত। নিজের ছেলেকে নিয়ে এসব ভাবতে তার খারাপ লাগছে। তবে ঘটনা সত্যি।

মন্টুর গালে খোচা খোচা দাড়ি। সে দাত বের করে হাসতে হাসতে বলল, "বাবা, কেমন আছেন?"

ছেলের দিকে তাকিয়ে মজিদ সাহেবের কান্না পাচ্ছে। কান্না লুকানোর জন্য চট করে সে অন্য দিকে মুখটা ফিরিয়ে নিল। চোখের পানি এসে গেলে সর্বনাশ। কঠিন হৃদয়ের এই মানুষটির কোমলতাটা নিজের ছেলের কাছে প্রকাশ পেয়ে যাবে।

অনেক কষ্টে মজিদ সাহেব চোখের পানি দমন করল।

আদর করে ছেলে নাম রেখেছিল মন্নান। এখন সবাই বলে মন্টু। আরো সাতাশ বছর আগের কথা। আশ্বিন মাস। সেদিন আকাশে অনেক বড় একটা চাঁদ ওঠেছিল। মজিদ সাহেব অনুভব করেছিল বাবা হওয়ার স্বাদ।

আজও সে একজন বাবা।

ছেলে আজ তাকে জিজ্ঞাসা করছে- বাবা, কেমন আছেন?

মজিদ সাহেব কঠিন দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকাল। এই বেহায়া ছেলের গালে ঠাস করে একটা চর মারতে ইচ্ছে করছে। অনেক কষ্টে সেই ইচ্ছাটাকে দমন করলেন। আজকের দিনে ছেলের গালে সে চর মারতে চায় না। কারণ আজকের দিনে তার দাদু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মজিদ সাহেব ছেলের হাতে ১টহাজার টাকার একটা নোট গুজে দিয়ে বলল, "যা, বৌমার কাছে যা। যদি সুসংবাদ হয় এই টাকা দিয়া মস্টি কিনবি। আমি কালকে সকালে আরো মিস্টি নিয়া আসুম।"

মন্টু ইতস্ত করতে করতে বলল,"অই বাড়িতে আমি যামু না।"

শ্বশুর বাড়িতে যেতে ছেলে অনীহা প্রকাশ করছে। মজিদ সাহেব আজ আর উত্তেজিত হয়ে কিছু বলল না।

ছেলের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, "আজকে তোর যাওয়া উচিত। তোর মা ওই বাড়িতে গেছে। তুই না গেলে মানুষে খারাপ বলবে।"

মন্টু মাথা নিচু করে সম্মতি জানাল। অন্যদিন হলে সে রাজি হতো না। আজকে কেন যেন খুব যেতে ইচ্ছে করছে। শ্বশুর বাড়িতে বিয়ের পরে সে মাত্র দুইবার গেছে। আজ আবার যাচ্ছে।

রাত হয়ে গেছে। আকাশে আজ অনেক বড় একটা চাঁদ।

মন্টু শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বড় শালা হেসে দিয়ে বলল, "দুলাভাই কেমন আছেন?"

মন্টুর মা ছেলেকে দেখে কেঁদে দিয়ে বলল, "বাবা তুই আইছিস? বউমার অবস্থাতো ভালো না। হাসপাতালে নেওয়া লাগবো।"

বাড়ির সবাই খুব ব্যাস্ত। এতিমধ্যেই উঠানে একটা অটোরিক্সা এসে থেমেছে।

সুপারি গাছের নিচে দাড়িয়ে মন্টু একটা সিগারেট ধরাল।

আকাশের দিকে তাকাল। আকাশে আজ বড় একটা চাঁদ।

মন্টু ঠিক করল, তার যদি ছেলে হয় তবে নাম রাখবে চাঁদ। আর যদি মেয়ে হয় তবে নাম রাখবে জোত্‍স্না।

ভাবতে খুব ভাল লাগছে।

রীনার অবস্থা নাকি খুব খারাপ। রীনা কি মারা যাবে?

স্ত্রী আজ মরনাপন্ন।

কিন্তু মন্টুর তেমন একটা খারাপ লাগছে না।

সিগারেটটা সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই বাড়ির ভিতর থেকে সে একটা শব্দ শুনতে পেল। সারা শরীরে সে একটা শিহরন অনুভব করল। বাড়ির ভিতর থেকে একটা নবাগত শিশুর ওয়াও ওয়াও চিত্‍কার ভেসে আসছে।

"জামাই, তোমার ছেলে হইছে।"

মন্টু শুকনো কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল, "রিনা কেমন আছে?"

"ভাল।"

মন্টু বাড়ি থেকে বের হয়ে মিস্টি আনার জন্য রওনা হলো।

ছোট শালাটা আজান দিতে শুরু করল।

মাদ্রাসায় পড়ে। আজানের সুরটা বড়ই সুন্দর।

মন্টুর মনটা আজকে কিরকম যেন করছে। আনন্দ।

কিরকম আনন্দ তা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।

মিস্টি নিয়ে সে বাড়ি ফিরল ঘন্টা খানের পর। মন্টুর মা এসে ছেলেকে তার কোলে তুলি দিল। ছেলের দিকে ভালকরে তাকাল মন্টু। ছেলেটা তার দিকে চেয়ে আছে। ঠিক যেন বাবাকে চিনতে পারছে না। মন্টু ছেলেকে কোলে নিয়ে শপথ করল। কি শপথ করল সেটা সেই ভাল জানে।

এতক্ষন সবাই গভীর উত্‍কন্ঠার ভিতরে ছিল। তাই জামায়কে সঠিকভাবে আপ্যায়ন করা সম্ভব। এতক্ষনে মন্টুর দিকে সবার নজর পড়ল।

শ্বশুর মশাই বললেন,"জামাইরে কিছু খাইতে দিছিস?"



রীনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। সেটা কাউকে বলতে খুব লজ্জা পাচ্ছে। ১২-১৩ বছরের একটা মেয়ে এসে বলল, "রীনা বুবু আপনারে ডাকে।"





মন্টুকে দেখে হাসল রীনা।

"কিছু খাইছো?"

"হুম"

"ছেলেটা দেখতে ঠিক তোমার মতো হইছে।"

মন্টু কিছু বলল না। শুধু চেয়ে রইলো। রীনার মুখে মলিন হাসি।



রাত বাড়ছে।

মন্টু বাইরে এসে দাড়াল।

আকাশে আজ অনেক বড় একটা চাঁদ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩১

আমি সাজিদ বলেছেন: সুন্দর।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৫৫

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: পড়ছি :) সরল, সুন্দর!

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৯

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার হয়েছে, পড়ে ভাল লাগল।

৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:০৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: বেশ ভালো গল্প।

৫| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:১৬

আগন্তুক কাক বলেছেন: আপনাদের কথা শুনে অনুপ্রানিত হলাম।.....
অনেক ধন্যবাদ।

৬| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:১৫

মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর সরল গল্প । বাচ্চা হওয়া ছাড়া আর কোন কাহিনী নাই গল্পে ।

৭| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালো লাগলো !

৮| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৮

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ভালো লাগলো। চমৎকার বর্ণনা।

৯| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩১

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন: ভালো লাগলো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.